আড়াই বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। স্থানীয় একটি ক্লিনিক থেকে চিকিৎসার পর সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার চিত্র ফুটে উঠে ভুক্তভোগীদের বক্তব্যে। এদিকে থানা পুলিশ দাবি করছে, এটা ধর্ষণচেষ্টা নয়, অর্থ হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে সাজানো নাটক! তবে প্রতিবেশী কয়েকজন বলছেন, শিশুর প্রস্রাবের রাস্তায় মারাত্মকভাবে ক্ষত সৃষ্টি হয়, এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
গত ১০ মে বিকেলে ভুক্তভোগী শিশুর মা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগসূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের নোয়াগাঁও (বড়চালা) গ্রামের সেলিম ওরফে পাগলা সেলিমের বাড়িতে চলতি মাসের ৩ তারিখে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত সেলিম (৫০) ওই গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত সেলিম পলাতক রয়েছে।
শিশুর মা জানান, তারা স্বামী সন্তান সহ সেলিমের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। তার স্বামী একজন অটোরিকশা চালক। গত বুধবার (৩ মে) দুপুরে সে বাজারে ছিল। আর শিশুর মা রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিল, এমন সময় শিশুটির কান্নার শব্দ শুনে এগিয়ে এলে শিশুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে দেখা যায় এবং পাশেই সেলিম বসা ছিল। এই বিষয়ে সেলিমকে জিজ্ঞেস করলে কাউকে বিষয়টি না বলার অনুরোধ করেন। শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে বাঁধা দেয়, পরে সেলিম বাড়ি থেকে চলে গেলে শিশুকে হোতাপাড়া এলাকায় স্থানীয় একটি ক্লিনিকে পরে গাজীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। কিন্তু সেখানে তারা কোনো পরীক্ষা করাননি, তারা প্রথমে ভর্তি নিতে চাননি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিশুর পিতা বলেন, পরবর্তীতে গাজীপুর সদরের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি নিলেও আমাকে কোনো কাগজপত্র দেয়নি। আমাদেরকে পরিপূর্ণ চিকিৎসার আগেই জোরপূর্বক বের করে দিয়েছে, কোনো কাগজপত্র ছাড়াই। আমরা যে ওই হাসপাতালে গিয়েছিলাম, এর কোনো প্রমাণ-ই আমাদের হাতে নেই। শ্রীপুর থানায়-ও দুইবার লিখিত অভিযোগ করেছি। আমাদের কাছে কোনো কপি না দেয়ায় তারা আমাদের সাথে চরমভাবে দুর্ব্যবহার করেছে। এরপর পূণরায় আমরা লিখিতভাবে অভিযোগ দিলেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা পাচ্ছি না। এদিকে আসামি সেলিম পাগলা ঘটনার পর থেকে গাঁ ঢাকা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, আগে থেকেই সেলিমের স্বভাব ভালো না। তার বাসায় কোন একটা ভাড়াটিয়া বেশিদিন থাকে না। আমরা দেখেছি শিশুটির যৌনাঙ্গের পাশে প্রচুর রক্তকরণ হয়েছে। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
স্থানীয় একজন আওয়ামীলীগ নেতা আবু সাঈদ কামাল বলেন, তার প্রস্রাবের থলিতে অপারেশন হয়েছিল। তবুও সে শয়তান শ্রেণির মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার জন্য এরকম কাজ স্বাভাবিক। তদন্ত সাপেক্ষে বিচার হওয়া দরকার।
শ্রীপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক এসআই রিপন আলী খান বলেন, শিশুটির রক্তক্ষরণের ঘটনা ঘটেছে এটা সঠিক। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে জানতে পারি, শিশুর হাতে মরিচ ছিল তার নিজের হাতের চুলকানিতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা হাসপাতালে কথা বলেছি ডাক্তার বলেছে এটা হাতের চুলকানিতেও ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে বা অন্য কিছুতেও হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, অভিযুক্ত সেলিমের লিঙ্গ নাই। তাই তার ফিলিংস ও থানার কথা নয়। আর যদি ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটেও থাকে, তাহলে সেটা ( ৩ মে ) তারিখেই ঘটেছে, কিন্তু অভিযোগ দিয়েছে ৬ তারিখে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে বাড়ির মালিককে ফাঁসিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে এমন অভিযোগ দিয়ে থাকতে পারে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি এ এফ নাসিম বলেন, যার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তার মূত্রথলি আলাদা করা। মরিচ নিয়ে খেলার বিষয়টি জানতে পেরেছি, এ বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।