বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। সোমবার দেয়া এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, নির্বাচনে সব দল অংশ না নেয়ায় আমরা হতাশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাজ্য। ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার একটি বিবৃতি দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে।
তাতে আরও বলা হয়েছে- বাংলাদেশের জনগণ, গণতন্ত্রের প্রতি তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য করেছে যে, ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। বিরোধী হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিন অনিয়মের খবরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। অন্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র তার দৃষ্টিভঙ্গিতে একমত যে, এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। এই নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করেনি বলে আমরা হতাশ। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নির্বাচনের সময়, নির্বাচনের আগের মাসগুলোতে যে সহিংসতা হয়েছে তার নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত এবং এর হোতাদের জবাবদিহিতায় আনতে বাংলাদেশ সরকারকে আমরা উৎসাহিত করি। সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আমরা সহিংসতা এড়ানোর আহ্বান জানাই। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করা, বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষা ও নাগরিক সমাজের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি, গণতান্ত্রিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাজ্য। সোমবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে এ কথা। এতে আরও বলা হয়, গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে গ্রহণযোগ্যতা, অবাধ ও সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতার ওপর। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মানবাধিকার, আইনের শাসন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। নির্বাচনের সময় ধারাবাহিকভাবে মেনে চলা হয়নি এসব মানদণ্ড। নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে বিরোধী দলের উল্লেখযোগ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এতে আমরা উদ্বিগ্ন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নির্বাচনের আগে, নির্বাচনী প্রচার চলাকালে সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের নিন্দা জানাই আমরা। বলা হয়েছে, রাজনীতিতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কোনো স্থান নেই। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি সব রাজনৈতিক দল। এ কারণে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভোট দেয়ার যথেষ্ট বিকল্প ছিল না। বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। একটি টেকসই রাজনৈতিক সমঝোতা ও সক্রিয়া নাগরিক সমাজের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি মতভিন্নতা দূর করে জনগণের স্বার্থে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অভিন্ন পথ বের করার আহ্বান জানায় যুক্তরাজ্য। এই প্রক্রিয়ায় সমর্থন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।