ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকা টাইমস এক প্রতিবেদনে লিখেছে, আন্তর্জাতিক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সতর্কতা সত্ত্বেও সৌদি আরবে আধুনিক দাসপ্রথা অব্যাহত রয়েছে।
সৌদি আরবের জনসংখ্যা প্রায় তিন কোটি ৬০ লাখ যার মধ্যে প্রায় বিদেশী শ্রমিক রয়েছে এক কোটি। পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশসহ, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে এসব শ্রমিকরা এখানে এসে শ্রম দিচ্ছে। এসব শ্রমিকের জীবনমান ও অবস্থার দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় সেখানে তারা অত্যন্ত অবমাননাকর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। যদিও ১৯৬৪ সালে সৌদি আরবে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করা হয়েছে কিন্তু সেখানে কর্মরত অসংখ্য শ্রমিক অনেকটা দাশের মতোই মানবেতর জীবন যাপন করছে। বিভিন্ন তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে সৌদি আরবে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকরা মাত্রাতিরিক্ত কাজের কারণে তারা খুবই ক্লান্ত, এমনকি পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানির সংকটে ভুগছে।
শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সৌদি আরবে কফিল ব্যবস্থা চালু রয়েছে যার কারণে শ্রমিকরা সৌদি কফিল বা নিয়োগকর্তার ওপর নির্ভরশীল। যদিও সরকার দাবি করেছে কফিল ব্যবস্থা নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে কিন্তু বাস্তবে এ ব্যবস্থা চালু আছে। সৌদি এসব নিয়োগকর্তারা নিজেদেরকে বিদেশি শ্রমিকদের মালিক মনে করে এবং তাদের পরিচয়পত্র আটকে রাখে যাতে তারা সৌদি আরবের বাইরে যেতে না পারে। এরপর মালিকরা তাদেরকে ইচ্ছামতো খাটায়। জাতিসংঘ থেকে বলা হয়েছে শ্রমিকদের পরিচয়পত্র আটকে রাখা মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং এ থেকে বোঝা যায় জোর করে শ্রমিকদেরকে খাটানো হচ্ছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের সাথে দুর্ব্যবহার ও তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এমনকি যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ঘটছে। একজন বিদেশি শ্রমিকের মজুরি সৌদি শ্রমিকদের চাইতে অনেক কম। অনেক লম্বা সময় ধরে বিদেশি শ্রমিকদের খাটানো হয়। এমনকি কোনো কোনো মালিক দিন-রাত ধরে তাদের অধীনস্থ শ্রমিকদের কাছ থেকে জোর করে অতিরিক্ত কাজ আদায় করে।
বিদেশি শ্রমিকদের কেনা বেচা চলে, এমনকি এজন্য নিলাম অ্যাপ্লিকেশনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। ব্রিটিশ দৈনিক টাইমস লিখেছে, শ্রমিক কেনাবেচা সংক্রান্ত এ ধরণের নিলাম অ্যাপ্লিকেশন খুবই জনপ্রিয়। শ্রমিক নিলাম অ্যাপ্লিকেশন সৌদি আরবের বৃহত্তম ও জনপ্রিয় অনলাইন বাজার হিসাবে পরিচিত। প্রতিদিন সৌদি নাগরিকদের মাধ্যমে গৃহকর্মী, নার্স, চালক, মালী ইত্যাদি কাজে বিদেশি শ্রমিক বিক্রয় ও ভাড়ার জন্য কয়েক ডজন বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়।
বিদেশি শ্রমিক কেনাবেচার এই বাজার এতোটাই সরগরম যে এর জন্য কালো বাজারিও গড়ে উঠেছে। কোনো কোনো সৌদি মালিক জানিয়েছে আরো লাভের জন্য তারা তাদের চাকরদেরকে নিলামে তুলবে। কারণ তারা ঘরের বাচ্চাদের সাথে ঠিকমতো সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারছে না অথবা আরবি ভাষা না জানার কারণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
সৌদি আরবে বিদেশী শ্রমিকদের অবস্থার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কিছুদিন আগে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়ে সৌদি আরবে কর্মরত শ্রমিক ও আশ্রয় নেয়া লোকদের অবস্থার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অ্যামনেস্টি আরো বলেছে, সৌদি আরবে বিদেশি কর্মী ও শরণার্থীরা নির্বিচারে আটক, অবিচার ও নির্যাতনের শিকার হয়। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে তদন্তের অনুমতি দিচ্ছে না। বলা যায় সৌদি আরবে শ্রমিকদের অবস্থা নব্য দাসপ্রথায় রূপ নিয়েছে।