ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। এর প্রধান উৎস হলো সূর্যের আলো, তবে কিছু খাবারেও এটি পাওয়া যায়। তবুও, অনেক সময় সূর্যের আলোতে পর্যাপ্ত সময় কাটানো বা ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াও পর্যাপ্ত হয় না। তখন অনেকেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়াই ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ভিটামিন ডি শরীরে শোষিত হতে গেলে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হতে হয়। যেহেতু এটি একটি চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামিন, তাই খাদ্যের চর্বি, পেটের রস, অগ্ন্যাশয়ের নিঃসরণ, যকৃৎ থেকে পিত্ত এবং অন্ত্রের সঠিক কার্যক্রম ভিটামিন শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হার্ভার্ড হেলথ অনুসারে, শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। চলুন, সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা
ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হলে শরীর ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস ঠিকভাবে শোষণ করতে পারে না। এর ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায়, ব্যথা হয়, এমনকি হাড় ভাঙার ঝুঁকি বেড়ে যায়। পেশি ব্যথা বা দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। ইয়েল মেডিসিন অনুসারে, গুরুতর ঘাটতির কারণে বিশেষ করে বয়স্কদের হাড় ভঙ্গুর হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
পেশি দুর্বলতা ও খিঁচুনি
পেশি কার্যক্রমে ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভিটামিন ডি-এর অভাবে পেশি দুর্বলতা, ব্যথা বা খিঁচুনির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। বোন রিপোর্টের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশেষ করে যারা রোদে কম সময় কাটান, তাদের মধ্যে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে।
দাঁতের সমস্যা
যদি আপনি নিয়মিত দাঁতের গহ্বর বা দুর্বল দাঁতের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তবে এর পেছনে ভিটামিন ডি-এর অভাব একটি কারণ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ঘাটতি মুখের বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে, যেমন দাঁতের ক্যারিস, পিরিয়ডোনটাইটিস এবং অন্যান্য সমস্যা।
চুল পড়া
ভিটামিন ডি কেরাটিনোসাইট নামক কোষের কার্যক্রমে ভূমিকা রাখে, যা চুলের বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। ভিটামিন ডি-এর অভাবে এই কোষগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, ফলে চুলের ক্ষতি বা অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়।
ক্লান্তি ও মানসিক অস্বস্তি
যথেষ্ট বিশ্রামের পরও যদি ক্লান্তি দূর না হয়, তবে এটি ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির কারণে হতে পারে। এর ফলে অলসতা, মেজাজ পরিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হতে পারে।
ক্ষুধা কমে যাওয়া
ভিটামিন ডি লেপটিন নামক হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে, যা ক্ষুধার অনুভূতির সঙ্গে সম্পর্কিত। এর অভাবে ক্ষুধা কমে যেতে পারে। দ্য জার্নাল অফ স্টেরয়েড বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি-তে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, লেপটিন নিয়ন্ত্রণে ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পরামর্শ
ভিটামিন ডির ঘাটতি দূর করতে আপনাকে যা করতে হবে। রোদে পর্যাপ্ত সময় কাটানে হবে। ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার, যেমন মাশরুম, সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসুম, এবং ভিটামিন ডি-যুক্ত দুধ খাওয়ার অভ্যাস করুন। তবে কোনো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শরীরে ভিটামিন ডির সঠিক মাত্রা বজায় রাখা হাড়, পেশি, দাঁত এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। সঠিক যত্ন নিন এবং সুস্থ থাকুন।