ফ্রান্সে গর্ভপাতকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি
Advertisements

বিশ্বে প্রথমবারের মতো ফ্রান্সের সংবিধানে গর্ভপাতকে একটি অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ‘যার যার শরীরের স্বাধীনতা তার নিজের’ এই প্রতারণামূলক শ্লোগানের অজুহাতে গর্ভপাতকে বৈধতা দেয়া হয়েছে।

বলা যায়, পশ্চিমা সভ্যতা সন্তান গ্রহণের বিশ্বাসকে গুরুত্বহীন করে তুলেছে এবং তাদের চিন্তাবিদরা এও বিশ্বাস করেন যে, সময়কে নিজের জন্য ব্যবহার করা উচিত। অর্থাৎ সন্তান লালন-পালনের জন্য জীবনের সুখ সুবিধাগুলোকে ত্যাগ করা উচিত নয়।

পশ্চিমা সভ্যতায় ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদের যে জোয়ার চলছে তাতে শিশুকে উপদ্রব বা ঝামেলা মনে করা হয়।

ইরানের বিশিষ্ট আলেম আয়াতুল্লাহ হাবিবুল্লাহ শাবানী মোতাগীর মতে, যখন কোনো দেশের নীতিমালা নারীদেরকে খেলার জিনিসে পরিণত করে এবং পরিবার ও নারীকে লালসার পূজারিদের হাতিয়ারে পরিণত করে, যার ফলে পরিবার ও সমাজ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং নারীকে কেবল ভোগের সামগ্রী মনে করা হয় তখন তা পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আধুনিক পাশ্চাত্যের বৈশিষ্ট্য হলো পারিবারিক বন্ধন ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা বা গুরুত্বহীন করে দেখা। পশ্চিমা সভ্যতা প্রযুক্তি, শিল্প ও পুঁজিবাদের কাছে স্নেহ, দয়া ও ভালবাসাকে বিসর্জন দিয়েছে এবং পরিবারের ভিত্তি দুর্বল করেছে।

পাশ্চাত্যের উদারনীতিবাদে, শিশুদেরকে পরিবারের বস্তুগত বা বৈষয়িক উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে বাধা বলে মনে করা হয় এবং এ কারণে তারা সন্তান ধারণ ও লালন পালনের বিরোধিতা করে। তারা আরো মনে করে, অন্য মানুষকে লালন পালন করার পেছনে সময় না দিয়ে বরং নিজের কথা ভাবা উচিত। তাই আপনার যদি একটি বৈধ সন্তান থাকে, তাহলেও তাকে চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে পাঠান যাতে আপনি নিজের আরাম আয়েশের জন্য সময় ব্যয় করতে পারেন।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ বনি ইসরাইলদের অনুগ্রহ করেছিলেন এবং অত্যাচারী ফেরাউন ও তার গোত্রের লোকদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করেছিলেন। তাদের অত্যাচারের একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে, তারা পুত্র সন্তানদেরকে হত্যা করতো এবং কন্যা সন্তানকে জীবিত রাখতো। যেমনটি আল্লামা তাবাতাবাঈ তার আল-মিজান গ্রন্থে ফেরাউনের অত্যাচারের বিষয়টি এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, ‘তারা বনী ইসরাইলের নারীদেরকে জীবিত রাখতো যাতে তাদের ওপর জুলুম, নির্যাতন ও শোষণ বা কর্তৃত্ব খাটানো যায় এবং নারীদের শালীনতা কেড়ে নিয়ে তাদেরকে জৈবিক লালসা পূরণের হাতিয়ারে পরিণত করা যায়’।

আধুনিক যুগে, শিশুদের শূন্যতা পূরণ করতে ঘরে পোষা প্রাণী রাখা হয়। পবিত্র কুরআনের বিধান আধুনিক যুগের এই দৃষ্টিভঙ্গিকে ঐশী শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করে। কেননা সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে পিতামাতারা জন্য এমন এক বড় নেয়ামত যাতে, তারা উপকৃত হতে পারে এবং সেইসাথে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভালবাসা ও স্নেহের বন্ধন অটুট থাকে। অথচ পাশ্চাত্যে মানুষ এমন এক প্রাণীতে পরিণত হয়েছে যারা শিশুকে তাদের ব্যক্তিগত আরাম আয়েশ ও জৈবিক লালসা পূরণের প্রতিবন্ধক হিসেবে মনে করে।

বাস্তবতা হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তাকে বাদ দিয়ে মানুষের জীবনের পূর্ণতাপ্রাপ্তি ও বিকাশ সাধন যেমন সম্ভব নয় তেমনি মানবীয় মূল্যবোধ ও উচ্চতর নৈতিক গুণাবলীরও কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। তখন মানুষ আত্মাবিহীন কেবল জীবনসর্বস্ব প্রাণী হিসেবে বিবেচিত হবে। তাদের কাছে বেহেশত এবং মৃত্যুর পর অনন্ত জীবন একটি কল্পকাহিনীর মতো মনে হবে এবং এই চিন্তা তাদেরকে পশুর চেয়েও নীচে নামিয়ে আনবে।

ইসলামে, পরিবারকে সবচেয়ে পবিত্র ও শক্তিশালী ভিত্তি হিসাবে দেখা হয় এবং আল্লাহই বলেছেন যে, নারীদেরকে সমাজে সতী ও বিনয়ী হতে হবে এবং ফেরাউনের উপাসকদের লালসা থেকে দূরে থাকতে হবে।

ইরানের ইসলামি বিপ্লবের নীতিমালায় নারীকে একজন শিক্ষক, মা এবং সমাজের কর্মী হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং এটা জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে শরীর দিয়ে একজন নারীকে মূল্যায়ন করা ঠিক নয়। তাই, হিজাব, সতীত্ব রক্ষা এবং উপযুক্ত পোশাকের উপর জোর দেয়া হয়েছে যাতে কেউ নারীকে উত্যক্ত করতে না পারে।

কুরআন শরীফের সূরা তাহরিমে, আল্লাহপাক বিবি আসিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ফেরাউনের স্ত্রী হিসেবে, একজন সফল ও আদর্শবান নারীর দৃষ্টান্ত হিসেবে যার স্বামী একজন অত্যাচারী ব্যক্তি ছিল এবং সে নিজেকে ঈশ্বর হিসাবে ঘোষণা দিলেও বিবি আসিয়া তার অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করেছিলেন এবং শত অত্যাচার নির্যাতন সত্ত্বেও সৃষ্টিকর্তার প্রতি নিজের বিশ্বাসে অটল ছিলেন। তাই কুরআন বিবি আসিয়াকে একজন অনুকরণীয় নারী হিসেবে উপস্থাপন করেছে এমনকি পুরুষদের জন্যও তাকে আদর্শ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

এরপরও, পশ্চিমারা সবসময়ই ইসলাম এবং ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে এবং শত্রুতা করে আসছে। অথচ ইসলাম ও ইরানের ইসলামি বিপ্লব শোষণবিহীন মানবসমাজ সৃষ্টির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ২০২২ সালে ইরানে মাহসা আমিনীর মৃত্যুর ঘটনার অজুহাতে এবং একজন নারীর কথিত স্বাধীনতার স্লোগান দিয়ে সমগ্র ইরানে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালায় পাশ্চাত্য বিশ্ব। গোলযোগ বাধিয়ে এবং ইরানি কিশোরীদের সরকার বিরোধী বিক্ষোভে উস্কানি দিয়ে তারা ইসলাম ও ইরানের ইসলামি বিপ্লবকে মানুষের কাছে অজনপ্রিয় কোরে তোলার চেষ্টা চালায়।

বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনায় এক প্রতিক্রিয়ায় ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি তখন বলেছিল, ২২ বছর বয়সী তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে যারা দাঙ্গা সৃষ্টি করছে তারা মূলত বিপ্লব বিরোধীদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে, তাদের এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবে।

মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করার পরেও কিছু বিক্ষোভকারী তেহরানের রাস্তায় সহিংসতা শুরু করে যা পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এই সুযোগে দুর্বৃত্তরা ও বিপ্লব-বিরোধীরা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালায় এবং সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করে।

এভাবে নারী অধিকারের নামে পাশ্চাত্য ইরানে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু ফ্রান্সের সংবিধানে গর্ভপাতকে একটি অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে তারা অপরাধের এমন চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছে, যার নিন্দা জানানোর ভাষা খুঁজে পাওয়া কঠিন।

Advertisements