নির্বাচন হয়েই যেতে পারে
Advertisements

খুবই তাজ্জব সব ঘটনা! ‘র’-এর প্রপাগান্ডা মুখপাত্র সেজে চলা সুবীর ভৌমিক এক নয়া লেখা ছেপেছেন গতকাল। এতদিনের বাংলাদেশ নিয়ে ‘র’-এর হয়ে প্রপাগান্ডা (যেমন সুবীর, আবদি বা চন্দন নন্দী ইত্যাদি) মুখপাত্রদের অবস্থান ছিল আমেরিকান স্যাংশন ও চাপে বাংলাদেশের নির্বাচনে হাসিনার আবার জিতে আসা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাহলে ভারতের স্বার্থের কী হবে!!! এনিয়ে সরাসরি নাকি-কান্নায় সবচেয়ে আগিয়ে ছিলেন আবদি! আর এবার সেই তুলনায় একেবারে উল্টারথ অবস্থানে সুবীর ভৌমিক! তিনি হাসিনার নির্বাচন সম্পন্ন যেন না হয় সহানুভুতি ঘুরিয়ে দিয়েছেন। আর এই সহানুভুতি ঘুরানোর পক্ষের কিছু উদাহরণ টানতেই বাংলাদেশে আর্মি ইলেকশনের ডিউটিতে যেতে চাচ্ছে না দাবি করে এবার তাঁর লেখা লিখেছেন। যদিও সুবীরের লেখার সত্য-মিথ্যা আমরা জানি না।

কাজেই সুবীরের লেখার মুডটা আমাদের জন্য প্রধান ইস্যু! সেটা হল যে, হাসিনার নির্বাচন আরামে সম্পন্ন হয়ে যাক এর পক্ষে তো নয়ই বরং বিপরীতে, মানে হাসিনার “এমন করাটা ভাল হবে না” এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি কথা বলেছেন। তিনি বলছেন, বাংলাদেশে আর্মি ইলেকশনের ডিউটিতে না যেতে চাওয়া মনোভাব নাকি বাড়ছে। যুক্তি হল নাকি, এই নির্বাচন বিতর্কিত। দেশে-বিদেশে সরকার ও সাংবাদিকেরা এর অগ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ক্রমাগত লিখে চলেছে। ফলে সরকারের এমন জনস্বার্থবিরোধী ততপরতার কারণে এর সাথে আর্মি প্রতিষ্ঠানটাও কালার হয়ে বা দাগ লেগে যাবে। এনিয়েই তারা উদ্বিগ্ন”। সুবীরের কথা সত্য-মিথ্যা আমরা জানি না। অন্তত প্রকাশ্যে বা মিডিয়ায় এমন নিউজ চোখে পড়ে নাই।

যদিও এটা বুঝা কঠিন না যে বাংলাদেশ আর্মির একটা উভয় সংকট আছে। তা হল, একদিকে সরকার নির্বাচনে তাদেরকে নিয়োগ চাইছে এর কী হবে? আর বিপরীতে এতে কী তাদের এই বিতর্কিত নির্বাচনে অংশগ্রহণ হয়ে যাবে? দেখা হবে? যেখানে, জাতিসংঘের দিক থেকে সাধারণভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজে আমাদের বাহিনীকে সংশ্লিষ্ট হতে সতর্ক করা আছে! তা কী লঙ্ঘন বলে দেখা হবে? এমনিতেই এই নির্বাচন নিয়ে নিয়ে জাতিসংঘ এটাকে খুবই নেগেটিভ মার্কিং ও মূল্যায়ন করছে ও আরো করবে। আর এটা এখন প্রকাশ্য যে, ইতোমধ্যেই জাতিসংঘ আমাদের নির্বাচনে নিজ সহায়তা বা সংশ্লিষ্ঠতা বুঝায় এমন সব কাজ থেকে দূরে সরে গেছে। এই অবস্থায় এটা জাতিসংঘের কাছে আমাদের সেনাদের ইমেজ ভাল হবে না এমন শঙ্কা জোরদার করবে সন্দেহ নাই। আর অনেকেই বোধহয় জানেন যে জাতিসংঘের কাছে আমাদের রাষ্ট্রের গত ১৫ বছরের গুম-খুন-অপহরণ ঘটার অভিযোগ আর অন্যদিকে তাতে আমাদের বাহিনীর সংশ্লিষ্ঠতার অভিযোগের কারণে এখনকার জাতিসংঘের কড়া নির্দেশ হল, কোন মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজে আমাদের বাহিনী সংশ্লিষ্ট হতে পারবে না। হলে এতে মিশন তাদের জন্য আন-ওয়েলকাম বা মিশন তাদেরকে চাচ্ছে না এমন হয়ে যেতে পারে। এই হল অনুমান।

সুবীর এই বাস্তবতাটাকেই কাজে লাগিয়েছে। দাবি করেছেন, এঅবস্থায় এই নির্বাচনে ইলেকশনের ডিউটি করা মানে জবরদস্তিতে হাসিনা সরকারের নির্বাচন করে নেয়া ও আবার ক্ষমতায় থেকে যাওয়া কাজের মূল সহায়ক খুঁটি হিসাবে দেখবে দেশে-বিদেশে, এমন কথাও বলে বসেছেন। এটাকেই আমি বলছি সুবীর ভৌমিকের পল্টি দেওয়া। যারা এতদিন কেন আমেরিকা স্যাংশন দিয়ে হাসিনার সম্ভাবনা কমাচ্ছে এর পক্ষে যুক্তি দিত! কিন্তু এবার এমনকি আগের জেনারেল আজিজের ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনের ঘটনা-কর্তা হিসাবেও তার সাথে তুলনাও করেছেন। আর তা করে এখনকার বাহিনী যেন তা না করুক এমন সেদিকে সুবীরের কামনা ও সমর্থন দেখিয়ে তিনি এলেখা লিখেছেন। আর এটাই সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা। এককথায় তা বললে, ইন্ডিয়া বা ‘র’-এর অবস্থান স্পষ্টত বদলে গেছে! তারা কী হাসিনার এই নির্বাচন ভন্ডুলের পক্ষে যেতে চাচ্ছে? সুবীরের এই লেখার ইঙ্গিত সেটাই!! সেই ইঙ্গিত যাই হোক – মুল প্রশ্ন হল, কেন? কেন এই বদলের আমরা দেখছি? ইন্ডিয়া বা ‘র’-এতদিনের কামনা, এত প্রিয় হাসিনার বিজয়ে এই অনিহা কেন?

সাথে অন্যদিকে আবার বিবিসির বোমাঃ
এককথায় বললে এটা এক আনলাইক বিবিসি রিপোর্ট। এবং মনে রাখতে হবে, ইংলিশ বিবিসি-র রিপোর্ট এটা। আনলাইক বিবিসি মানে বিবিসি এমন করে লেখে না, এটা ব্যতিক্রম।

আর বাংলা বিবিসির গুরুত্ব নাই কেন? মানে এই ইংলিশ রিপোর্টটা বাংলায় হলেও এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু ছিল না। বা দিতাম না! কেন?

বাংলা বিবিসি – অর্থ-রাজস্ব আয়ের দিক থেকে মূল বিবিসির এক লুজিং কনসার্ণ। বাংলা বিবিসি এর স্টাটাস হল মূল ইংরাজি বিবিসিরও অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষায় প্রচারিত এক প্রোগ্রাম। ঠিক যেমন উর্দু বিবিসি। কিন্তু এই ভেঞ্চারটা লাভজনক নয় এখন। সরকারের পক্ষে ভর্তুকি দিয়ে দিয়ে এটা চালানোতে তারা ক্ষমা দিতে চায়! এজন্য অনেক ছাটাইও হয়েছে। আর সেটা করতে গিয়ে এর নীতিতেও কিছু বদল এসেছে। যেমন হাসিনা সরকার বা র-এর পক্ষে প্রপাগান্ডা ছাপিয়ে আয় বাড়ানো। এমন নীতিবিরুদ্ধে কাজে বাংলাকে ছাড় দেয়া আছে। তবু যদি টিকে থাকতে পারে, এই ভেবে! এটা বাংলা বিবিসির বেলায় ছাড় কিন্তু ইংরাজি বিবিসি এটা নীতিগত কারণে করবেই না। অর্থাৎ বাংলা বিবিসি রিপোর্ট অর্থের লোভে প্রপাগান্ডা নিউজ হওয়াটাই বেশী সম্ভাবনা ও সুযোগ! তাই, এই বিচারে বললাম এটা ইংলিশ বিবিসি তাই এই রিপোর্টের গুরুত্ব বেশী! এমনকি ইংলিশ বিবিসি – এতে বৃটিশ সরকারের অবস্থান প্রতিফলিত হয় এমন রিপোর্ট হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী! যদিও তা অপ্রকাশ্যে হবে এবং কাকতলীয় ভাবে হয়েছে ভাব ধরে তা দেখানো হবে!

আলোচিত বিবিসির এই [রিপোর্ট দেখা যাবে এই লিঙ্কে] এর শিরোনামটাই অনেক সাহসী। বাংলায় বললে শিরোনাম হল, “বাংলাদেশঃ যে নির্বাচন এক-নারীর নাটক হয়ে দাড়িয়েছে” । [Bangladesh: The election that has turned into a one-woman show]।

যথেষ্ট ঠেস-মারা ভাষায় এই শিরোনাম। আর পুরা রিপোটটা হল, হাসিনার বিরুদ্ধে সব (মানবাধিকার বা রাজনৈতিক-রিপাবলিক-রাষ্ট্রের নর্মস বা আচার ভঙ্গের) অভিযোগগুলো এক সংকলন। আর সবশেষে ব্যতিক্রমি দুইটা প্যারা যেখানে আরো কড়া ভাষায় ইন্ডিয়ার কানমলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই দু’কথাই হাজার কথার সংকলন হয়ে গেছে।

বিবিসির ভারত ধোলাইয়ের দুইটা প্যারাঃ
মানুষের শোয়ার ঘরের ভিতরে একটা হাতি ঢুকে গেল কেমন হবে? কল্পনা করেন! সেটা হবে একটা তান্ডব ও বিশৃঙ্খলা হিসাবে। কারণ হাতিটা ঘরের ভিতর নুন্যতম নড়াচড়া করলেই একেকটা দেয়ালের সাথে ধাক্কা খাবে তাতে ঘরটাই ভেঙ্গে যেতে পারে। সেটা না হলেও অন্তত ঘরে আসবাব বলতে কিছু থাকবে না। তাই, কারো কারো উপস্থিতির কারণে ঘটনাস্থল একটা তান্ডব হাজির হয়েছে বুঝাতে ঘরের ভিতর হাতির তুলনাটা ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের নির্বাচন ঘটনাবলিতে ভারতের অবস্থান-উপস্থিতিকে বিবিসি তাই ঘরে হাতির ঢুকার মত বলে তুলনা করেছে। লিখেছে The elephant in the room is neighbouring India, which opposes…। যে ভারত বাংলাদেশের ভিতরে কোন পরিবর্তন-সংশোধন করে নেওয়ার বিরোধী। এমনকি ভারত এটাও চায় বিনা-পয়সায় বাংলাদেশের রাস্তা ও নদি দিয়ে ভারতের নর্থ-ইস্টের অবাধ চলাচল চালু থাকুক! এমনই এর আবদার! – ভারতের এমন খারাপ মতলবের কথাও বিবিসি প্রকাশ্যে লিখে দিয়েছে!

The elephant in the room is neighbouring India, which opposes
any coercive action against Bangladesh. Delhi wants road and
river transport access for its seven north-eastern states through Bangladesh.

যদিও শেষে একটু সহানুভুতির সুরে লিখেছে, Officials in Delhi are afraid it is strategically vulnerable in any potential conflict with India’s rival, China. বাংলাকরে বললে, দিল্লিতে ভারতীয় কর্তারা নাকি চীনের ভয়ে চিন্তিত যে যে চীনের চাপে ভারতের বড় – কৌশলগত দুর্দশা – দেখা দিতে পারে। এতে কথাটার মানে হয়ে গেছে যেন চীনের কাছে ভারতের কৌশলগত দুর্দশা কাটানোর জন্যই হলেও জবরদস্তিতে বাংলাদেশ থেকে ভারতের করিডোর সুবিধা জায়েজ বা ভারতকে তা পাইয়ে দিতে হবে…।এই হল পশ্চিমা সমস্যা। মনে করে তাদের এই দালালি আমরা ধরে ফেলব না।

এতদিন মানে ধরেন চলতি নয়া শতক যার এখন ২৩ বছর পার হল। এই তেইশ বছরে দুনিয়ার সচেতন সবাই মনে করেছিল দুনিয়ার প্রধান দ্বন্দ্ব এখন আমেরিকা বনাম চীন। মানে গ্লোবাল নেতৃত্বের এক পালাবদল হতে যাচ্ছে; আর এই পালাবদলকে কেন্দ্র করে এই দ্বন্দ্ব। আবার দুনিয়ার কিছু অবুঝ বেদিশ বা নাদান এটাকে অর্থহীন এক শব্দ -ভূরাজনীতি [geo-politics] – বলেও ব্যাখ্যা করে থাকে! যাই হোক এখন দুনিয়া মানে হল, আমেরিকা-চীনের দ্বন্দ্ব এর দুনিয়া! আর এই দ্বন্দ্ব কাঠামোর মধ্যে ভারত তার কথিত চীনবিরোধিতা দেখানোর উসিলায় আমেরিকার কোলে চড়ে বসতে চেয়ে গেছে অন্তত ২০০৭ সাল থেকে। এটাই আমরা দেখতাম। ভারতের লক্ষ্য আমেরিকা যেন আবার তাকে চীন ঠেকানোর ঠিকা দেক! সেই ঠিকা বা এসাইনমেন্ট যেটা মোটামুটি ২০১৭ সাল থেকেই আমেরিকা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। যদিও চীনবরোধী কোন ইস্যু থাকলে ভারত-আমেরিকা তা নিয়ে পরস্পর সমন্ব্য় করে কাছে থাকার চেষ্টা অব্যহত রাখে।

বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সব পক্ষ-বিপক্ষ এলোমেলোঃ
চীন-আমেরিকার দ্বন্দ্ব ইস্যুতে এটা দেখে এতদিন মনে হতে পারে ভারত তো আমেরিকার কোলেই আছে। যদিও বাংলাদেশে আমেরিকান স্যাংশন আর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রবল হয়ে উঠলে ভারত ছটপট করে উঠছিল। প্রকাশ্যেই তাদের লোকজন বলত যে তাহলে তো স্যাংশনের কারণে ভারতের অধীনে থাকা খেদমতগার হাসিনা আর জিতে আসতে পারবে না। বাংলাদেশে ১৫ বছর ধরে ভারতের লুটেপুটে খাওয়ার স্বার্থের কী হবে তাহলে? কিন্তু তা সত্বেও কোথায় যেন একটা নিজেই আস্থা পেত এই বলে যে শেষে আমেরিকা নিশ্চয় ভারতের স্বার্থকেও একোমডেট মানে ভারতের জন্য লুটের কিছু একটা জায়গা করে দিবে! সরকথায় শেষে আমেরিকা বা আঙ্কেল স্যাম ভারতকে বাঁচাবে! এমন একটা বোধ তাদের মধ্যে কাজ করত!

কিন্তু নাঃ
ভারত এখন টের পেয়েছে বিরাট ওলটপালট হয়ে গেছে! কেন? ব্যাপারটা আগে অতটা বুঝা যায় নাই। কিন্তু এখন যতই ৭ জানুয়ারি এগিয়ে আসছে ততই এক নয়া বাস্তবতা সবাই অনুভব করছে। যেটা এর আগে পর্যন্ত সবাই আঙ্কেল স্যাম এর উপর ভরসা করে বসেছিল। নিশ্চয় তিনি একটা কিছু করবেন যা সকলের জন্যই ভাল হয়! কিন্তু হায়!!!

এটা ঠিক এক নয়া বাস্তবতা হাজির হয়েছে অবশ্যই। যা আর অস্বীকারের উপায় নাই! তাই ভারত অস্থির হয়ে উঠেছে!
আর ব্যাপারটা এসেছে এভাবে – দেখি না কী করে! – সেই গল্পের মত এই ঘটনা! যে গৃহস্তের বাসায় চোর এসেছে আর গৃহস্ত ভাবছে দেখি না চোর কী করে – একেবারে শেষে ধরব! আর এটা করতে করতে চোর তার কাজকর্ম প্রায় শেষ আর বমাল নিয়ে চলে যাবার অবস্থায়…! আঙ্কেল স্যাম এর উপর ভারতসহ সকলের ভরসারই পরিণতি হল যেন এটা!

এখন ভারতের কাছেও পরিস্কার যে ৭ জানুয়ারি দিন শেষ সন্ধ্যা থেকেই হাসিনা দাবি করতে থাকবে যে সে বিজয়ী হয়ে গেছে! এর চেয়েও বড়কথা এক বাস্তবতা সম্ভবত হবে এরকম যে দুই থেকে দশদিনের মধ্যে হাসিনা চীনের সাথে চুক্তি আলাপ আলোচনায় বসে যাবে। মানে যেতে হবেই মূলত এজন্য যে এর মুখ্য কারণ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তলানিতে, মোটা আর নগদ ডলার লাগবে। পাঠকদের কাছে চীন ভাল না মন্দ, চীন পছন্দ করেন কিনা এসব বিবেচনা এখানে একেবারেই অপ্রয়োজনীয়, গুরুত্বহীন। বাস্তবতা হল, এমন নগদ অর্থ (প্রজেক্ট-প্রকল্প নয়) দিবার সম্ভাব্য দাতা যাদের কাছেই একমাত্র হাসিনার একসেস আছে, চাইতে পারে ও তারা দিতেও পারে সেটা হল চীন।

এককথায় বললে, বাংলাদেশে নির্বাচন নামে কিছু একটা হয়েছে আর হাসিনা তাতে নির্রচিত বলে দাবি করতে পারলেই, হাসিনা চীনের কোলে শক্ত হয়ে বসে যাবার সম্ভাবনা প্রায় ষোল আনা! এবং ইন্ডিয়ার তোয়াক্কা না করে, চীন একে পায়ের নিচে রেখে হাসিনার থেকে সবকিছু আদায় করে নিবার এরচেয়ে ভাল সুযোগ চীন আগে কখনই পায় নাই। এই অবস্থাটা তৈরি হবে সেখানে অবলীলায়! অনেকটা টিকা-ইস্যুতে যেমন হয়েছিল! অতএব এখন ইন্ডিয়ার কানে পানি গেছে! কিন্তু তার কিছু করার নাই!

ফলাফলঃ তাই সুবীর ভৌমিক মানে ইন্ডিয়া বা রএর অবস্থান হল তাই হাসিনার নির্বাচন হয়ে যাকে তারা এর বিরোধী! সবচেয়ে তামাশার কথা ২০২১ সাল থেকে ভারত বাংলাদেশে আমেরিকার অবরোধ দেওয়ার বিরোধীতা করে গেছে, হাসিনা তাদের কত পেয়ারের বা হাসিনা ছাড়া বাচবে না – এনিয়ে তারা নাকি কান্না প্রদর্শন করে গেছে। মানে এতদিন তারা একটা প্রহসনের নির্বাচনেরই পক্ষে দ্বিধাহীন সমর্থক ছিল এটাই প্রকাশ্যে স্বীকার ও লিখে বলে করে চলেছিল। অথচ এখন উলটা?

একটা তামাসা দেখেনঃ
ভারতের গোয়েন্দা-গুষ্টির সবাইএখন যারপরনাই হাসিনার নির্বাচনবিরোধী! কিন্তু সেটা কেমনে কী? সুবীর ভৌমিক এলেখায় আমাদেরকে আরেক ভারতীয়ের সাথে পরিচয় করিয়েছেন। যা্র নাম শুখরঞ্জন দাসগুপ্ত [ Sukhoranjan Dasgupta ]। একে তিনি পরিচয় করিয়েছেন এক Bangladesh analyst বলে। আসলে তিনি অনেক পুরানা মানে সেই শেখের আমলের ‘র’-এর এজেন্ট। যখন তার বাইরের পরিচয় ছিল তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার ঢাকার সংবাদদাতা। পরে তিনি আনন্দবাজার ছেড়ে দেন আর কেবল ‘র’-এর এজেন্ট-ই থেকে যান। বাংলাদেশ তার খবর সোর্স এমন সংগ্রহের উতস অনেক। তিনি বাংলাদেশের বিডিনিউজ২৪ কলাম লিখেন, সাথের মাঝে মধ্যে অন্য অনেক বাংলাদেশি ‘প্রগতিশীল’ পত্রিকাতেও। তার বরাতে এবার সুবীর বলছেন, “সক্রিয় ও কার্যকর গণতন্ত্রিক চর্চার ব্যতিক্রম ঘটিয়ে বাংলাদেশে ৭ জানুয়ারির যে নির্বাচনটা হচ্ছে তা পুরানা সংসদটা ভেঙ্গে না দিয়ে আর তাতে মন্ত্রী ও এমপিদের পদাধিকার বহাল থেকে গেছে। ফলে এই নির্বাচন প্রক্রিয়াকে তারা প্রভাবিত করার সব সুবিধা সাথে নিয়েই নির্বাচন করছে”।

এই বক্তব্য (ইংরাজিটা নিচে দেখেন) সুবীর আর সুখরঞ্জনের বাংলাদেশের প্রতি এক দারুণ সার্ভিস!!! যেন আমরা এটা জানতামই না।
কিন্তু ঘটনা হল, ভারতের গোয়েন্দা-প্রবরেরা এতদিন এটা তারাই জানত না ভান করে চেপে থাকত। কিন্তু এখন কেন? এই পল্টি দেয়া কেন?
হাসিনাকে ছাড়া তাদের চলবেই না কিংবা আমেরিকান স্যাংশন্ ভুয়া সেসব কান্না কাটি তারা তাহলে কেন করছিলেন এতদিন?

“Unlike in most functional democracies, Bangladesh is going into the
January 7 polls with a prorogued and not a dissolved parliament which
allows ruling party ministers and MPs to influence the poll process…”

বাংলাদেশের জন্য একটা ভাল নির্বাচন দেখতে চাওয়ার ভারতীয় আকাঙ্খা! তা ভাল কিন্তু এতদিন উলটা গান গেয়ে চলছিলেন আপনারা??? আগে সেটা বলেন।  না। পুণ্যি করলেই কেবল এমনটা দেখতে পাওয়া যেতে পারে!
যদিও এর নীট অর্থ কী? সেটা হল, বাংলাদেশের নির্বাচন পন্ড হয়ে যাক এটাই এখন বদলে যাওয়া ভারতীয় আকাঙ্খা…! মজা না???

ঘটনাটা কিছু শুনেছিলাম অনেকেই বলছিলেন, পিটার হাসের ভারত সফরের ঘটনা। সেখানে ভারতের সাথে কোন আনুষ্ঠানিক কিছু ছিল না। আর সেটা প্রটোকলেও পড়বে না। তবে ভারতে পিটার হাস বেড়াতে গেলে এমবেসিতে বড়দিনের ডিনার বলে ২৫ ডিসেম্বরের সামাজিক সাক্ষাত তো হতেই পারে! আর সাথে কথায় কথায় সেখানে কিছু তিক্ত কথাবার্তাও নাকি উঠে এসেছিল। যার প্রসঙ্গ ছিল চীন! ভারতের অভিযোগ বাংলাদেশে ভারতের স্ট্রাটেজিক স্বার্থ দেখা হচ্ছে না; আমেরিকা দেখছে না। অথচ ভারত তো নাকি এক আঞ্চলিক ‘মহারাজা’। তাসি এটা তো তার অপমান! …! শেষে আলোচনা – কে কত চীনবিরোধী তা জানা আছে, হয়ে গেছে –  টাইপের উদাহরণ দেয়ার দিকে নেয়া যায়। আর তা থেকেই ভারত বুঝে যায় সে একা হয়ে গেছে! বাংলাদেশে কোথাও বা বাংলাদেশকে নিয়ে কোথাও তার বেল নাই…! বলা কথাগুলো শুনেছিলাম সম্ভবত ২৮ ডিসেম্বর!  তবে সাবধান কেউ এগুলোকে হুবহু এরকমই হুবহু ভাষ্য হিসাবে নিবেন না। এটা একজন থেকে আরেকজনেরে এভাবে ছড়ানো কথা!  আমিও শুনেছি দেশের বাইরের বক্তা থেকে। তিনিও শুনেছেন আমেরিকান সোর্স থেকে, এভাবে।
কথাগুলো পরে ভুলেই গেছিলাম। এবার বিবিসির এই রিপোর্টটা পড়ে মনে হচ্ছে পশ্চিমারা এমনি এমনি ইন্ডিয়াকে তান্ডব মানে ঘরের ভিতর হাতি এমন আপদের সাথে তুলনা করে নাই???

রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

Advertisements