গ্লোবাল অর্ডার কী
Advertisements

এবারের ব্রিকস এটা ১৫তম সম্মেলন; মানে হল এটা ২০০৯ সালে প্রথম তার জন্ম সম্মেলন করে যাত্রা শুরু করেছিল। গত ২৪ আগষ্ট এর ১৫তম সম্মেলন দক্ষিণ আফ্রিকায় শেষ হল। কিন্তু এই প্রথম এই সম্মেলন দুনিয়াটাকে ঝাঁকি দিয়েছে – এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি। আর ততধিক বেশি করে পশ্চিমা দুনিয়া (ইউরোপ-আমেরিকা) প্রকাশ্যে নিশ্চুপ কিন্তু তাদের সবগুলো ইন্দ্রিয়ই খাঁড়া; কি জানি হচ্ছে সেদিকে কান খাড়া। এর আগে কোন বিষয় নিয়েই এত করে সবার এন্টেনা খাঁড়া করতে তাদের দেখা যায় নাই। অন্যদিকে আবার, এমনকি আমাদের মত দেশ থেকে যারা গত ২০-২২ বছরের সময়কালে আমেরিকাসহ পশ্চিনা দেশে গিয়ে থাকবার রেসিডেন্স পারমিট যোগাড় করে নিয়েছে এরাও (মানে ব্ল্যাক-ব্রাউনেরা) সাদাদের সাথে মিলে এই প্রথম তাদের সব ইন্দ্রিয় খাড়া করেছে। অথচ এরা দুচার বছর আগেও যেমন ধরেন ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে প্রবল তর্ক করেছে যেন তারা পুর্ণমাত্রায় পশ্চিমা অরিজিনের নাগরিক হয়ে গেছে ফলে তাদের স্বার্থও পশ্চিমারাষ্ট্রের স্বার্থের সাথে এলাইনড, এক লাইনে। তাই তাদের স্বপ্ন-কামনার আমেরিকা বা পশ্চিম কত মহান, কত স্টেবল কত সম্ভাবনাময় আর তা তাদের স্বপ্ন-কল্পনা পূরণের জন্য পারফেক্ট! ফলে চীন-রাশিয়া বা জাতিসংঘের ভাষার গ্লোবাল সাউথ [global south] – এরা তাদের স্বপ্নকল্পনা পুরণের পথে বাধা হয়ে জামা টেনে ধরছে যেন – এই মনোভাব দেখছিলাম আমরা। এরাও কানখাড়া! এমন পরিস্থিতিতে এই পটভুমিটা মাথায় রেখে এবার যদি ব্রিকস এর ১৫তম সম্মেলনের দিকে তাকাই তাহলে বলতে হয়, এবারের সম্মেলন সারা দুনিয়াকে এমন এক মজার জায়গায় নিয়ে ফেলে দিয়েছে; আর যেন বলছে এখন নতুন করে হাটা শিক্ষা কর!! আগের জানাশুনায় আর চলবে না, কাজ হবে না। তাই নতুন করে আগে হাঁটতে শিখে নে তাড়াতাড়ি! বলতে চাচ্ছি, গত প্রায় আশি বছরের আমেরিকান নেতৃত্বের যে পরিচিত দুনিয়া – সেটায় ফাটল ধরেছে। আগের মত থাকছে না। তাই অনেক নয়া জানাশুনা, পড়াশুনা লাগবে! এটাই হল, এবারের ব্রিকস [BRICS] সম্মেলনের নিরবে দুনিয়ার সবার বিশেষত আমাদের মত দেশগুলোসহ সবার কাছে ম্যাসেজ!

ব্রিকস জন্ম নিয়েছিল সেই ২০০৯ সালে, কিন্তু কেন কী পরিস্থিতিতে কি দরকারে এর জন্ম তা বাংলাদেশের একাদেমিক বা মিডিয়া জগত এখনও বেখবর আছে। এর মূল কারণ, ব্রিকস জিনিষটা কী অথবা কেন সেটাই এখনও পুরাপুরিই স্পষ্ট হয় নাই আমাদের দেশের ‘জানার’ জগতে। বিশেষ করে এই সম্মেলন নিয়ে বাংলাদেশের বাংলা মিডিয়াগুলোর রিপোর্ট দেখলে তা বুঝা যায়। তবে ইংরাজি মিডিয়া গুলো একটু ব্যতিক্রম। কারণ ইংরাজি রিপোর্ট এর সুবিধা হল কপি-পেস্ট বা অনুবাদ করে তারা কোনভাবে চালিয়ে দিতে পারেন। যদিও তাতেও তাদের দুর্বলতাও অপ্রকাশ্য নয়)। কারণ, সবচেয়ে মুখ্য প্রশ্ন, কেউ জানেই না বলতে পারছে না বাংলাদেশ কেন ব্রিকস থেকে বাদ??? গত ২৪ আগষ্ট (ব্রিকস সম্মেলনের শেষ দিন) পর্যন্ত সব রিপোর্টের এই এক দশায়। এমনকি ২৪ আগষ্ট রাত বারোটা মানে ২৫ আগষ্ট তারিখের শুরুতে যাদের হুশ হয়েছে জেনেছে তারাও ঘটনা বুঝে উঠে এরপর সেই ভিত্তিতে রিপোর্টে হাজির করতে গিয়ে কেউই ২৫ আগষ্ট সন্ধ্যার আগে পারে নাই। বিশেষ করে সে খবরটা কোথায় আছে, আবার তা পেলেও কী এঙ্গেলে তা দেখতে হবে এটাই তাদেরকে বেশি ভুগিয়েছে। কারণ রয়টার্স কী-কোথায় এটা তাদের অজানা নয় – হলেও সুনির্দিষ্ট হওয়া সহজ ছিল না। তাতে এরপরেও দেখা যায় কোন কোন মিডিয়া হাল ছেড়ে দিয়েছে। তাই তারা ২৫ তারিখে আর ব্রিকস নিয়ে হাজিরই হয় নাই। এরা যে হাল ছেড়ে দিয়েছে তা বুঝা যায় তারা এবার ব্রিকস নিয়ে মহা মাতবর তাদের কূটনীতিক সেকশন কে ক্ষমা দিয়ে দিয়েছে। আর ২৫ তারিখ থেকে তাদের অর্থনীতি সেকশন থেকে ব্রিকস ইস্যুতে কিছু খবর ছেপেছে। এজন্যই বাংলাদেশে সবার রিপোর্টই তাই কমবেশি হালকার উপর ঝাপসায় মারা ধরণের বক্তব্য জুড়ে দেয়া।

আমরা নতুন কোন কিছু দেখলে বা একে চিনতে চেষ্টা করলে বা কাউকে চিনাতে গিয়ে, – ঐ নতুনের সাথে কিছু তুলনীয় এমন কিছুর সাথে তুলনা করেই নয়া ধারণাটা পরিচিত করাতে যাই। তাতে যতটা সমতুল্য যতটা কাছের সদৃশ্য এমন কিছু পাওয়া যায় যা আবার ইতোমধ্যেই সমাজে অনেক পরিচিত থাকে; তবেই নতুন কাউকে এর পরিচয় দেয়া সহজ হয়। মুলকথা একমাত্র কাছাকাছিও জানা কিছুর সাথে তুলনা করেই নয়া বিষয়কে মানুষ পরিচিত করাি আমরা।
কিন্তু ব্রিকস এর বেলায় একে চিনাবো কী করে? আর এর কাছাকাছি ঘটনা ফেনোমেনাই বা কী – তাই তো আমাদের অনেকের জানা নাই! মূলস্মস্যাটা ছিল আসলে এখানে!

ব্রিকস এর বেলায় একে চিনাবো কী করেঃ
আমি আগে বহুবার বলেছি ব্রিকস যা হতে যায় করতে চায় সেই উদ্দেশ্য হল – আমেরিকার নেতৃত্বে যে গ্লোবাল অর্ডারটা কায়েম আছে এখনও (যেটাকে বেশির ভাগই আমরা ভুল করে একে আমেরিকান “পরাশক্তি” বলে বুঝি বা ডাকি) এই গ্লোবাল অর্ডারের মধ্যে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান থাকে বা আছে।

ঠিক যেমন একটা দেশ-রাষ্ট্রে ‘স্টেট ইন্সটিটিউশন’ [রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান] থাকে এটা তেমনই। আসলে (গ্লোবাল অর্ডারের জায়গায়) “লোকাল অর্ডার” বললে সেটাই দেশ বা রাষ্ট্র ধারণা হয়ে যায়। কারণ, রাষ্ট্র মানে সেটা নিজের বা স্থানীয় এই অর্থে রাষ্ট্রকে গ্লোবাল অর্ডারের সাথে তুলনায় লোকাল অর্ডার বলেছি। আর অর্ডার মানে মূলত নিয়ম-শৃঙ্খলায় সাজানো বা বিন্যাস্ত করা। তাই লোকাল অর্ডার বলতে বুঝা যেতে পারে নিজস্ব রাষ্ট্রের নিয়ম-শৃঙ্খলা মানে, বুঝতে হবে তা একটা দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা বা রাষ্ট্রশাসন ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে। তবে লোকাল বলাটা অবশ্যই গ্লোবাল এই ধারণার সাপেক্ষে, এটাও মনে রাখতে হবে। কারণ লোকাল শব্দটা নানান অর্থের ব্যবহার হতে পারে। আর অর্ডার [order], এই অর্ডার বলতে অনেক সময় নির্দেশ বা হুকুম দেয়া অর্থ হলেও এখানে অর্ডার কথাটার মানে নিয়ম-আইন-শৃঙ্খলাময় একটা সিস্টেম [system] যা বাংলায় ব্যবস্থা। যে অর্থে পুলিশ-কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলা হয়।

ঠিক সেরকম ১৯৪৫ সাল থেকে দুনিয়া আমেরিকার নেতৃত্বে এক গ্লোবাল অর্ডার (সেবারই প্রথম) চালু হয়েছিল যেন, তা এক ‘গ্লোবাল রাষ্ট্র ব্যবস্থা’। আর এটাকেই “গ্লোবাল অর্ডার” বলছি। তবে শুধু আমি না, বুঝমান একাদেমিকেদের দেয়া ভাষা এটা; ফলে তাদের থেকে নেয়া এই শব্দ ও এর ব্যবহার। আবার রাষ্ট্রে যেমন অনেক ‘স্টেট ইন্সটিটিউশন’ [রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান] থাকে যেমন সংসদ, নির্বাহি বিভাগ (মানে প্রধানমন্ত্রীর অফিস; আর যার অন্তর্গত থাকে এডমিনিস্ট্রেশন, অর্থ বিভাগ, আইন-শৃঙ্খলা ইত্যাদি মন্ত্রণালয়-বিভাগ ) আর বিচার বিভাগ ইত্যাদিতে একটা রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় তেমন, গ্লোবাল অর্ডার এর বেলায় সেটাও কিছু “গ্লোবাল প্রতিষ্ঠানের” উপর দাঁড়িয়ে থাকে। এমন গ্লোবাল রাজনৌতিক প্রতিষ্ঠানটা হল জাতিসংঘ আর গ্লোবাল অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান হল আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক । মূলত এইদুটো দিয়েই ১৯৪৫ সালে গ্লোবাল অর্ডার খাঁড়া করা; তা যাত্রা শুরু হয়েছিল । তবে এগুলোকে “গ্লোবাল প্রতিষ্ঠানের” এর জায়গায় যেমন আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এর বেলায় এগুলো মাল্টিলেটারাল বডিও [multilateral body] বলা হয়। কারণ, এখানে মাল্টিলেটারাল বলতে তা ‘বহুরাষ্ট্রীয়’ ফলে তা ‘বহুপক্ষীয়’ এমন বুঝানো হয়। তবে মাল্টিলেটারাল বলতে আক্ষরিক বাংলা অর্থ হল, বহু-বাহুবিশিষ্ট। পরবর্তিতে জাতিসংঘ বা আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক ছাড়াও ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন (WTO) অথবা একালে পরিবেশ প্রসঙ্গে [ UNEP], হিউম্যান রাইট [UNHRC] ইত্যাদি নানান মুখ্য গ্লোবাল প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়ে নেয়া হয়েছে। আর এমন গ্লোবাল প্রতিষ্ঠানগুলো মিলিয়েই সমন্বয় করেই একটা “গ্লোবাল অর্ডার” বা বিশ্বব্যবস্থা তৈরি হয়ে আছে। তবে সাবধান আমি গ্লোবাল অর্ডার [Global order] বলেছি কোন জিও [Geo-Order] বলি নাই। এমনকি জিও-পলিটিক্স [Geo-politics] -ও বলি নাই। একালে মানুষ যখন একটা কিছুকে বুঝতে পারে না বা ব্যাখ্যা করতে পারে না তখন এটাকে বলে জিও-পলিটিক্স বা ভূরাজনীতি। তাই কেউ যখন বলবে, “সবই ভুরাজনীতির খেলা” এর মানে হল, বক্তা বুঝতে পারছেন না এটা কিভাবে ব্যাখ্যা করে বলবেন!! এটাই বুঝতে হবে!! যার মানে হল – যা “আমি যা জানি না, বুঝি না” সেটাই ভুরাজনীতি।

কিন্তু আমরা ‘গ্লোবাল অর্ডার’ ধারণাটা – সেটা বহুল প্রচলিতভাবে জানি নাই কেন?
মূল কারণ কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলতা; যার আদিগুরু সেকালের (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ১৯৪৫) সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট, প্রধান কমিউনিস্ট নেতা জোসেফ স্তালিন। যিনি পরে মারা যান ১৯৫৩ সালে। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রধান গ্লোবাল নেতা হয়ে উঠেছিল আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট। ঐ যুদ্ধে ১৯৪২ সাল থেকে হিটলারের অক্ষশক্তি [Axis powers] বিরোধি মিত্রশক্তি [Allied powers] – এভাবে যুদ্ধের দু-পক্ষ; আর হিটলারবিরোধী মিত্রপক্ষের মূল নেতা ছিলেন রুজভেল্ট। তিনিই মিত্রশক্তি নামে জোটবদ্ধতার প্রথম উদ্যোক্তা, মিত্রশক্তির সকলের হয়ে যুদ্ধের মূল মোটা খরচগুলোর একা বহনকারি দেশ, সারা পশ্চিম ইউরোপ মানে যারা সেকালের সারা দুনিয়ার কলোনি দখলদার শক্তি কিন্তু সকলেই এরা যুদ্ধের ব্যয় যোগাতে গিয়ে অর্থ সঙ্কটে দেঊলিয়া অবস্থায় – এঅবস্থায় এদের সকলকেই নিজ অধীনে আনার বা ঐ যুদ্ধে বিজয়ী হলে শেষে তারা সকলেই কলোনি দখল ত্যাগ করতবে এই শর্তে বাধ্য করে রুজভেল্ট এদের সবার সাথে চুক্তি করেছিল। এভাবে বাগে আনা ইত্যাদির মূল কারিগর হলে আমেরিকার নেতা রুজভেল্ট। তাই এই যুদ্ধে রুজভেল্টের প্রধান নেতা হিশাবে উত্থান এভাবেই, এসব কারণেই।

পশ্চিম ইউরোপ মানে যারা কলোনিদখলদার ব্যবসায়ী এদের দেশ সেটা আর এরা, যুদ্ধের ব্যয় যোগাতে বাধ্য হয়ে রুজভেল্টকে নেতা মেনে নিয়েছিল তা বুঝা গেলেও সোভিয়েত ইউনিয়নও কেন এর ভিতরে একইভাবে ঢুকে গেছিল? কারণ, হিটলারের হাত থেকে বাঁচতে চাওয়া স্তালিন যিনি দেখতেছেন হিটলারবিরোধী একটা জোট হচ্ছে আর আবার সেই আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যুদ্ধের মুখ্য খরচগুলো বইবেন – কাজেই হিটলারের হাত থেকে বাঁচতে এত ভাল সুযোগ তিনি হাতছাড়া করেন নাই। তিনিও তাই রুজভেল্টের নেতৃত্বের মিত্রশক্তিতে যোগ দিতে দেরি করেন নাই। আসলে, মূল পলিটিক্যাল চুক্তি মানে যুদ্ধ শেষে আমরা একটা জাতিসংঘ গড়ব – এই চুক্তিতেই ভিত্তিমূলক সবকথা লেখা ছিল যা ১৯৪২ সালের ১ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যা এখন ইতিহাসে “জাতিসংঘের জন্ম ঘোষণা”

এমনকি যুদ্ধ শেষে দেশগুলোর পুনর্গঠনের অর্থও ঋণ হিশাবে দিয়েছিল আমেরিকা। বিশ্বব্যাংকের জন্মের পরে এই প্রতিষ্ঠানে মুখ্য ততপরতা ছিল ইউরোপের পুনঃর্গঠন। আর বিশ্বব্যাংক[WB] যার পুরা নাম হল ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনষ্ট্রাকশন এন্ড ডেভলবমেন্ট [International Bank for Reconstruction and Development (IBRD)] – এই নামের মধ্যে রিকনষ্ট্রাকশন [বা বাংলায়] পুনর্গঠন এই শব্দটাই বিশ্বব্যাংকের জন্ম ও শুরুর কর্মের ইতিহাস এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে। কারণ, বিশ্বব্যাংক যেখন আমাদের মত দেশে দেশে অবকাঠামো গড়তে নামমাত্র সুদে ঋণ দেয় – সেই কাজটা তো পুনর্গঠন নয়। মানে অবকাঠামো (কোন ব্রিজ বা রাস্তা অথবা কারখানা) আগে ছিল যুদ্ধে বা কোন কারণে ভেঙ্গে গেছে এমন নয়, বরং এই প্রথম বারের মত গঠন। তা সত্বেও বিশ্বব্যাংক-কে তার জন্মের দাগ পুনর্গঠন বা রিকনষ্টাকশন শব্দটা নামের মধ্যে বয়ে বেড়াচ্ছে।

স্তালিন কত রুজভেল্টের ঘনিষ্ট ছিলেন, ১৯৪২-৪৫ এই তিন বছর তা বুঝার একটা ভাল উপায় হল, এই তিন বছরে যত দেশ রুজভেল্ট ভ্রমন করেছেন সেখানে তার দুই বগলে সঙ্গে থাকতেন দুই নেতা স্তালিন আর চার্চিল (সেকালের বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী)। কিন্তু যুদ্ধ শেষে সোভিয়েত ইউনিয়ন – এই যুদ্ধে রুজভেল্টের এমন নির্ধারক অবদান যতটা কম পারা যায় এমনভাবে সোভিয়েত ইতিহাসে ছাটাই করে দেয়া হয়। যাতে মনে হয়, স্তালিনের একক কারিশমাতেই তিনি হিটলারের হাত থেকে সোভিয়েতকে বাঁচিয়েছেন। [আমাদের মত দেশগুলোর কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলেরা কেবল লিখিত সোভিয়েত-রুশ ইতিহাসই, সহি বলে পড়ে থাকেন। আমার বহু সিনিয়র (কমিউনিস্ট)-কে এমন ইতিহাসই বলতে শুনেছি। এছাড়া তাদের আরেকটা রুল হল, যা কিছু লাল বইয়ে তাই তাদের জন্য সহি (খাঁটি সত্য) ও শ্রেণীর ইতিহাস। আর লালবইয়ের বাইরের সব “বুর্জোয়া” বা “সাম্রাজ্যবাদের” ইতিহাস – মানে মিথ্যা এই বিবেচনা।]

পরবর্তিতে বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইতিহাসের এভাবে সাফল্যের ব্যাখ্যাটাই জোরদার হয়ে দাড়ায় ও আরেক সাফাই দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। রুজভেল্ট মারা যান ১৯৪৫ সালের আগষ্টে। আর ১৯৫৩ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে নয়া প্রেসিডেন্ট আইসেনহাওয়ার এর আমেরিকা সেটা এবার আর আগের মত “গ্লোবাল প্রতিষ্ঠান” গড়া অথবা গ্লোবাল জনগণের জন্য কাজ ও ইমেজ গড়ার যে আমেরিকা সেটা বদলে হয়ে যায় এক লুটেরা স্বার্থের আমেরিকা। যা শুরু হয়েছিল সিআইএ দল পাঠিয়ে ইরান দখল দিয়ে। তখন থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম আমেরিকাকে “সাম্রাজ্যবাদ” বলে খেতাব দেয় বা ডাকা শুরু করেছিল। অথচ আজ দুনিয়ার খুব কম কমিউনিস্টই বলতে পারবে কবে থেকে কমিউনিস্ট চোখে আমেরিকা সাম্রাজ্যবাদ হয়েছে? বরং প্রায় শতভাগই সম্ভবত বলবে জন্ম থেকে!!! ্ওযডী সেটা আবার কার জন্ম সোভিয়েত ইউনিয়ন নাকি আমেরিকা!!! সে আরেক ঝামেলা!!! আর এই সুযোগেই সোভিয়েত ইতিহাস থেকে বিশ্বযুদ্ধের নির্ধারক আমেরিকা বা প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকেই মুছে ফেলার সুযোগ পোক্ত হয়ে নিয়েছিল!

আবার একটু পিছনে যাই, ওদিকে (১৯৪২-৪৫ এই সময়কালে) মিত্রশক্তির নেতা রুজভেল্টের দেয়া সুবিধা স্তালিন নিতে গিয়ে আমেরিকার প্রস্তাবিত গ্লোবাল অর্ডার গড়ার পরিকল্পনায় সামিল হতে স্তালিন বাধ্য হয়েছিলেন, তা বলা যায়। সেই সাথে ১৯৪৪ সালের দিকে রুজভেল্ট প্রথম তার জাতিসংঘ ধরণের প্রতিষ্ঠান গড়ার ধারণা স্তালিনসহ সেকালের প্রধান মিত্রদের কাছে হাজির করেছিলেন। ভেটো সদস্যপদ রাখার ব্যবস্থা চালু করে স্তালিনের মূল সব আপত্তি সামলিয়েছিলেন রুজভেল্ট। এরপরে এবার স্তালিনকে ঘনিষ্টভাবে পেয়ে নিজ “গ্লোবাল অর্ডার” গড়ার স্বপ্ন-পরিকল্পনায় স্তালিনকে সামিল করে নিয়েছিলেন। এতে স্তালিন একসাথে রুজভেল্টের সাথে মিলে গ্লোবাল পলিটিক্যাল প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘ গড়তে রাজি তো হয়েছিলেনই। জাতিসংঘ গড়ে গড়ে উঠতে পেরেছিল। এমনকি গ্লোবাল অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক গড়তে ১৯৪৪ সালে এর যে জন্মসভা বসেছিল তাতে প্রতিনিধিও পাঠিয়েছিলেন। সেই প্রতিনিধি ২২দিন ব্যাপী লাগাতর চলা জন্মসভায় হাজির থাকলেও এরপর প্রত্যেক রাষ্ট্রের চাঁদা পরিশোধ করা সাপেক্ষে সদস্যপদ গ্রহণের প্রসঙ্গ আসা ও সময় থেকে সোভিয়েত প্রতিনিধি অনুপস্থিত হয়ে যায়। সেই থেকে গ্লোবাল অর্ডার তৈরির উদ্যোগের সাথে কার্যত স্তালিন থেকেও না-থাকা হয়ে যায় – জাতিসংঘ গড়তে হ্যা কিন্তু আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক গড়তে না – এভাবে। কিন্তু এনিয়ে সোভিয়েত পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে কোন আপত্তি অথবা উচ্চবাচ্য কিছু শুনে নাই। কেন স্তালিন আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক না গড়ে ফিরে এলেন – এনিয়ে কোন আর্টিকেল লেখা বা এটা আমেরিকানদের খারাপ কাজ এমন কোন বক্তব্য আনা এমন কোনকিছুই করা বা বলা হইয়েছে জানা যায় না। এমনকি ১৯৫৩ সালে প্রথম রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় এলে আইসেনহাওয়ার – তিনি আমেরিকার ভোল বা ইমেজ বদলানো ততপরতা শুরু করেছিলেন যেটা থেকে সোভিয়েত প্রতিক্রিয়া হল যে আমেরিকা সাম্রাজ্যবাদ। কিন্তু আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক সম্পর্কে কোন ভাল-মন্দ মুল্যায়ন বা নাম নেয়া ইত্যাদি সোভিয়েত সরকারের দিক থেকে হয়েছে, নেতারা কখনও করেছেন এমন কিছু জানা যায় না।

সব মিলিয়ে এসবে রুজভেল্ট-স্তালিন মিলে যে অভিমুখ একটা গ্লোবাল অর্ডার চালু করার যতটুকু একসাথে করার যাচ্ছিল বা পরিকল্পনা ছিল তা ১৯৫৩ সালের পরে শুকিয়ে মারা যায়, কোন চিহ্নই থাকে নাই। পরের সোভিয়েত নেতৃত্ব নিকিতা ক্রুশ্চেভ থেকে ব্রেজনেভ বা গর্বাচেভ পর্যন্ত কেউ কখনও নির্দিষ্ট করে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক নিয়ে কিছু বলেছেন জানা যায় না। তবে আমেরিকা ওটা “পুঁজিবাদী সমাজ বা ব্যবস্থা” ফলে যেন তা তাদের জন্য অগ্রহণযোগ্য ও পাপকাজ এমন অনুমান থেকে কথা বলা, খারাপ চোখে দেখানো এটা বজায় ছিল সব সময়েই। কিন্তু প্রতিষ্ঠান হিশাবে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এর সমালোচনা জানা যায় না।

কিন্তু কেন এমন ছিল? আর এর চেয়ে বড় কথা যে সোভিয়েত ব্লকের রাষ্ট্রগুলোকে (মোট প্রায় ২৫-৩০ রাষ্ট্র) আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এর সদস্য করে না নেওয়াতে বা তারা না হওয়াতেই কী আমেরিকান নেতৃত্বে পশ্চিম এরা কী একটা গ্লোবাল অর্ডার খাড়া করতে ব্যার্থ হয়েছিল বা থমকে দাড়িয়ে গেছিল? সোজা জবাব হল, একেবারেই না। বরং গ্লোবাল অর্ডার নিজের মত করে বিকশি হয়েছে আর এখন অনেক ডালপালা গজিয়ে আরো বিস্তৃত হয়েছে। তবে অবশ্যই এই বিকাশ আদর্শ নয়, দোষত্রুটি আর সীমাবদ্ধতা ও খামতিও প্রচুর। কিন্তু সাফল্যও ফেলনা নয়।

কিন্তু মজার কথাটা হল, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে (১৯৯১) গেলে তা থেকে আলাদা হওয়া ১৫ রাষ্ট্র আর এই সোভিয়েতের প্রভাবাধীন বা বাফার রাষ্ট্র হিশাবে যেমন পোল্যান্ড, রোমালিয়া ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় ২৫-৩০ রাষ্ট্র ছিল যারা সকলে ঐ ১৯৯২ সালেই আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এর সদস্যপদ নিয়ে নিয়েছিল। এখন ছোটখাট পাঁচটা দেশ বাদে দুনিয়ার সকলেই আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এর সদস্য। মানে ১৯৩ রাষ্ট্রের জাতিসংঘের বিপ্রীতে আইএমএফ সদস্য ১৮৮, তাই। এখনকার দুনিয়া গ্লোবাল অর্ডার বানানোর দিক থেকে অনেকটাই অগ্রসর হয়ে গেছে। তবে আগেই বলেছি অবশ্যই দোষত্রুটি প্রচুর। সেসব সংস্কার করে যেতেই হবে প্রত্যেক কালের রাজনৈতিক নেতৃত্ব যতটা একে এলাও করে।

কিন্তু আমাদের মত দেশের বেলায়, তারা ১৯৯১ সালের আগের সোভিয়েত অনুসারি কমিউনিস্ট হয়েই থেকে গেছেন। এরা নিজেদের জন্য আর আমাদের মত দেশের একাদেমিক জগতে তাদের প্রভাবের কারণে এরা না নিজেরা কিছু জেনেছে না কাউকে জানতে দিয়েছে যে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক ঠিক কী ধরণের প্রতিষ্ঠান। কারণ, তাদের আপত্তি এক জায়গাতেই যে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উতপাদন না হওয়া – মানে তাদের সমাজতন্ত্র না হওয়া মানেই এগুলো পাপের ফসল তাই অগ্রহণযোগ্য!!! এই হলো তাদের মূলকথা।এতে তাদের আপত্তিটা দাড়িয়েছে এমন যদি কোন আওয়ামীলীগ নেতাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে বিএনপি কে নিয়ে তোমাদের আপত্তিটা ঠিক কী? আর তাতে যদি লীগ নেতা জবাব দেয় যে ওরা আওয়ামীলীগ নয় এবং ওরা আওয়ামীলীগ করে না – তাহলে এটা যেমন জবাব হবে এটা তাই!!

তো সে যাই হোক তাদের আপত্তি তাদের সাথে থাকুক সেটা কোনই সমস্যা নয়। কিন্তু তাদের প্রভাব আমাদের মত দেশের একাদেমিক জগতে গ্লোবাল সিস্টেম বা অর্ডারটা কী এসম্পর্কে বেখবর করে রেখে দিয়েছে। এদিকে আমেরিকার নেতৃত্বে এক অর্ডারের আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক ব্যবস্থা মানে আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্যের আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে যে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এটা তো বহাল হয়ে এর বয়স প্রায় আশি বছর হয়ে গেছে। আর ওদিকে রাইজিং চীন যে অন্তত অর্থনৈতিক দিক থেকে নেতৃত্ব নিতে উঠে চলেছে (যদিও আরো সময় লাগবে)। ফলে নেতৃত্বের পালাবদলটাই আসন্ন হয়ে উঠেছে আর তাতে চীনা নেতৃত্বের নতুন গ্লোবাল (যা আপাতত কেবল) অর্থনৈতিক অর্ডারটা কেমন হতে পারে – এটা নিয়ে লড়াই ঝগড়ায় তা কোথায় গিয়ে থিতু হবে – এরই সময়কাল চলছে। এখন। একথা শুনে মনে করার কারণ নাই যে এটা কেবল চীন-আমেরিকার লড়াই। তা একেবারেই নয়।

বরং উভয় পক্ষই বাংলাদেশকে নিজের যেদিকে সুবিধা মনে হয় সেদিকে টেনে নিয়ে যেতে চাইবে,চাচ্ছে। কিন্তু আমরা কোন্দিকে যাব বা এই তানাতানি কিভাবে সামলাবো এর প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে গ্লোবাল অর্ডার জিনিষটা কী তাই তো বুঝিনাই!! গ্লোবাল শুধু আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক ধরণের প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক যে গ্লোবাল অর্থনৈতিক অর্ডার এটাও তো বুঝি নাই!! কমিউনিস্ট জ্ঞানিদের তো আরো ধারণা নাই। তাহলে? বাংলাদেশের একাদিমিক জগত বা সুনির্দিষ্ট করে আই আর বা অর্থনীতি কেউই তৈরি নয় – প্রয়োজনটাই বুঝে সারতে পারে নাই অবস্থা!!!!
তাদের আল টপকা কথা হল, হাসিনা চাইলে ব্রিকসে যোগ দিতে পারে!!! যেন বিরাট এক জ্ঞানের কথা বলেছে!!

আমরা নিজের জন্য কী করতে পারিঃ
এদিকে গ্লোবাল পালাবদলে এতদিনের আমেরিকান নেতৃত্বের অবস্থানে চীন উঠে আসতে চলেছে। অথচ কমিউনিস্টেরা ১৯৪৫ সালে দুনিয়ায় কী গুরুত্বপুর্ণ বদলে এসেছে তা খেয়াল করে নাই। শুধু তাই না, দেশের একাদেমিক জগতকেও এটা খেয়াল করা বা বুঝার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নেতি ধারণাই দিয়েছে। তাই আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক কী ধরণের প্রতিষ্ঠান ও কেন, তা নিজেও জানে নাই, অন্যদেরও জানা হয় নাই। তাহলে এখন যখন প্রায় আশি বছর পরে আমেরিকান নেতৃত্বের বিকল্প হিশাবে চীনের নেতৃত্বের ব্রিকস খাড়া হতে চলেছে আর এরই প্রথম অর্থপুর্ণ কিছু পদক্ষেপ চীন নিয়ে ফেলেছে তখন এই ঘটনা-ফেনোমেনা নিয়ে আমাদের একাদেমিক বা কমিউনিস্টেরা কীভাবে আর কথা বলবে, যেটা সে আগে খেয়ালই করে নাই, প্রস্তুতি নেয় নাই?

এজন্যই বলেছি আমেরিকান নেতৃত্বের যে পরিচিত দুনিয়া – সেখানটায় ফাটল ধরেছে। তা আগের মত থাকছে না। তাই অনেক নয়া জানাশুনা, পড়াশুনা লাগবে! এটাই হল, এবারের ব্রিকস [BRICS] সম্মেলনের নিরবে দুনিয়ার সবার বিশেষত আমাদের মত দেশগুলোসহ সবার কাছে ম্যাসেজ!

ফলে কী কী ও কেমন ধরণের বদল আসন্ন তাতে সম্ভাব্য প্রভাবগুলো কী কী হতে পারে সেসব বুঝাবুঝির তরিকা জানতে হবে, পদ্ধতি জানতে হবে – দেখার নতুন অভ্যাস চর্চা লাগবে ইত্যাদি…। তবে সাবধান এটা ১৯৪৫ সালের মত রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক নেতৃত্বে বদল যেমন ঘটেছিল এবার আগে থেকেই পরিস্কার যে এটা কেবল চীনের নেতৃত্বে গ্লোবাল অর্থনীতিক এক অর্ডার আসতে পারে মাত্র। ফলে ডলারে আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য কমে যাবে হয়ত কিন্তু নাই হবে না। আবার গ্লোবাল রাজনৈতিক নেতৃত্ব সহসাই আমেরিকার হাত থেকে যাচ্ছে না। আবার রাজনী আর অর্থনৈতিক গ্লোবাল নেতৃত্ব যদি আলাদা হয় তবে কেমন ফিট করবে্‌, কার্যকরভাবে চলতে পারবে কিনা সেটা এক বিরাট প্রশ্ন যার জবাব অজানা!

সবচেয়ে বড়কথা এই পালাবদল যদি আপোষে না হয়ে যুদ্ধ লেগে যায় বা এড়াতে না পারে মানে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ফয়সালার দিকে চলে যায় তাহলে কী হবে! আর এতে সব পক্ষের জন্যই তা মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে সন্দেহ নাই। এর একটা চিহ্নের কথা বলা যায়। তা হল, আগামি বছর শুরুতে যদি ইউক্রেন যুদ্ধ না থামে তবে সেটা হবে খুবই খারাপ চিহ্ন। কেননা এর মানে হবে আমেরিকার আগামি নির্বাচন যেটা ২০২৪ সালের নভেম্বরে হওয়ার কথা সেটাও যুদ্ধের মধ্যেই হবে??

আর সেসব নিয়ে বুঝাবুঝি আর তাতে গ্লোবাল স্বার্থের ঝগড়াগুলোর মাঝে নিজ-রাষ্ট্রের ভালমন্দ বুঝবার জন্য আমরা কতটুকু যোগ্য হয়ে উঠব? যতটুকু পুরান কমিউনিস্ট প্রভাবের মধ্যে আমরা যে যেমন থেকে যাব তারা তক্তি গভীর অবুঝ থেকে যাব। এর বিকল্প হল, একটা ফ্যাক্টসকে আদর্শগত পক্ষপাতিত্বের ভিত্তিতে গ্রহণ করা বা ব্যখ্যা করা বা ব্যাখ্যা দেয়া ত্যাগ করতে হবে। সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে ঐ আদর্শগত বুঝাবুঝিতে খামতি আছে। সেই খামতি পূরণ করে বরং সামলানো – নিজের চিন্তাকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। একথাটাই আরেকভাবে বললে, আমি কমিউনিস্ট তাই কমিউনিস্ট-চিন্তা-ফ্রেমে ফেলেই আমাকে যেকোন ঘটনা ব্যাখ্যা করতে হবে – এই জিদ ত্যাগ করতে হবে।

গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

Advertisements