কিসিঞ্জার ইউক্রেন যুদ্ধ কেন দ্রুত শেষ চান?
Advertisements

যুদ্ধ বা কোন বড় রাজনৈতিক ততপরতার মধ্যে একাজের পক্ষে ঘটনা শুরুর পরে এতে মরাল [moral] ও এথিক্যাল [ethical] ভিত্তি দিতে বা দাঁড় করাতে দেখা যায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এথেকে ব্যতিক্রম নয়। তবে এখানে সবার আগে পশ্চিম বিশেষত ইউরোপ এনিয়ে সক্রিয়তা দেখাতে শুরু করে। যেমন তাদের বয়ান শুরু হবে এভাবে যে এটা একটা রাশিয়ান আগ্রাসি (aggressive) কাজ। এই শব্দাবলীর ব্যবহার করতে পারা মানে বক্তা দাবি করছে যে আমি না উনিই প্রথম আক্রমণকারি। অতএব মরাল বা ন্যায়-অন্যায়ের বিচারে এবং এথিক্যাল নীতি-নৈতিকতার বিচারে প্রতিপক্ষ দায়ী। ইউরোপ সবার আগে চেষ্টা করে যাচ্ছে এই ভিত্তিটা দাড় করাতে যাতে এরপরে তাদের সবকাজ জায়েজ মনে হয়, সব বয়ান জায়েজ হয়ে যায়।

কিন্তু ভ্যাটিক্যান সিটির পোপ তাদেরকে ব্যতিক্রমিভাবে ফুটা বা অকেজো করে দিয়েছেন। পোপ বলেছেন, আপনি যদি কারও বাসার সামনে গিয়ে অনবরত চিৎকার করেন ভুকেন তো একসময় বাড়ির মালিক আপনাকে পিটাতে আসবে এবং সাথে তিনি পরিস্কার করে দেন যে ন্যাটো নিজেই রাশিয়ার দরজায় গিয়ে প্রথমে ভুকেছে[barking of NATO at the door of Russia]। অর্থাৎ তিনি কোন ছাড় না দিয়ে একেবারে মুখে মেরেছেন। এর মানে তিনি রাশিয়ান অনুপ্রবেশ কিনা সেটা নিয়ে কথা না তুলে বরং উলটা ন্যাটোকেই উস্কানিদাতা মনে করে বলছেন, এই উস্কানির জন্যই ন্যাটো দায়ী[ NATO Provoked Russian Invasion of Ukraine]। সোজা কথায় পোপ ফ্রান্সিস পশ্চিম-কেই মরালি-এথক্যালি ডুবিয়ে ছেড়েছিল গত ০৩ মে ২০২২। ।

এবার আক্রমণ কিসিঞ্জারেরঃ
আর চলতি মে মাসের শেষের সপ্তাহে এসে এবার আক্রমণ হেনরি কিসিঞ্জারের। নিজ ঘরের ভেতর বোমা ফাটানোর মতো ঘটনাটা ঘটিয়েছেন হেনরি কিসিঞ্জার [Henry Kissenger]! হ্যাঁ সেই কিসিঞ্জার! বাংলাদেশের আম মানুষের কাছে সেই কিসিঞ্জার যার অর্থ ‘কুচক্রী’ বা ‘ষড়যন্ত্রকারী’। তবে আওয়াম মানুষের জগতের মত একাডেমিক জগৎ-এ খোলা মনের ভাব সরাসরি বলা যায় না, পারে না বা চলে না। ফলে কিসিঞ্জার সম্পর্ক এখানে ভদ্র ও শোভন ভাষায় সমালোচনা করতে হয়। ভাব করতে হয় একে – কূটনীতি – বলে যে যেখানে এক আরেক জগৎ আছে। আর কিসিঞ্জারের ভাষ্য সেই কূটনীতিক জগতের চোখে গ্রহণযোগ্য, বৈধ!

ঘটনাটা হল, ইউক্রেন ইস্যুতে কিসিঞ্জার কিছু পরামর্শসুচক মন্তব্য রেখেছেন তাতে ব্যাপক হইচই পড়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইম তাতে প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিয়ে সম্পাদকীয় লিখেছে। কিসিঞ্জার তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘ইউক্রেনের উচিত হবে নিজ জায়গা জমি রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিয়ে হলেও এ’যুদ্ধ শেষ করা Ukraine: Cede territory to make peace with Russia.।’ কিসিঞ্জার আরো মনে করেন, ‘রাশিয়াকে অপমান-অবমাননাকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়ার পরিণতি পশ্চিমের জন্যই’ ভালো হবে না [would have dire long-term consequences for stability in Europe.]। সাথে মনে করিয়ে দেন যে, রাশিয়া কিন্তু ইউরোপেরই অংশ, এটা যেন কোনোভাবে অস্বীকার করা বা ভুলে যাওয়া না হয়। তাই এখন তার সোজা সিদ্ধান্ত যে‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে দুই পক্ষ যে যে অবস্থায় ভ‚মিতে আগে ছিল […force Ukraine into accepting negotiations with a “status quo ante,”], সেটিকে স্থিতাবস্থার লাইন মেনে দুই পক্ষই যেন সেই সীমার মধ্যে প্রত্যেকে নিজেকে ফিরিয়ে নেয় এবং এই ভিত্তিতে চুক্তি ও এর বাস্তবায়ন করতে হবে এবং তা আগামী দুই মাসের মধ্যেই [the dividing line should be a return to the status quo ante,” ]।’

কে এই কিসিঞ্জারঃ
বাংলাদেশে যারা আশির দশকের পরে জন্মেছেন তাদের কাছে কম পরিচিত হয়ত এই কিসিঞ্জার। এর একটি কারণ হতে পারে এই যে, গুরুত্বপূর্ণ সরকারে পদ-পদবিতে থেকে হেনরি কিসিঞ্জারের সবচেয়ে সক্রিয়তার বছর বলতে তা ছিল আসলে ১৯৬৯-৭৭ এই সময়কালকে। তিনি মূলত আমেরিকার দুই পরপর প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও ফোর্ড এদের আমলে ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার বা NSA মানে নিরাপত্তামন্ত্রী ছিলেন. এছাড়া কখনো বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সমতুল্য উপদেষ্টাও ছিলেন। এমনকি কখনো এ দুটো পদেই এবং একই সাথে নিয়োজিত থেকেছেন। আর সেই যুগ শেষ হলে এরপর থেকে তিনি মূলত একাডেমিক কাজ যেমন, বইপত্র লেখা বা থিঙ্কট্যাঙ্ক উপদেষ্টা হওয়া; অথবা কোন পরিচালনা বোর্ড বা কমিশন ধরনের সংগঠনের প্রধান বা স্থায়ী উপদেষ্টা হয়ে থেকেছেন। এখনো তিনি ডিকটেশন দিয়ে বই লেখাতে পারেন। বলা যায়, মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ বা স্টেট ডিপার্টমেন্টের আশপাশে যারাই পদচারণা করেন, তাদের চোখে তিনি এখনো নমস্য এবং তার থেকে শেখার আছে বলে তারা মনে করেন!

কথাগুলোকে আরেকভাবে একটু আপন মনে হবে এভাবে বলা যাক! তাই সুনির্দিষ্ট করে বাংলাদেশের বেলায় ১৯৭১ সাল হল কিসিঞ্জারকে আমাদের সবচেয়ে স্মরণ ও স্মৃতিময় ঘটনাবলিতে ভরপুর হয়ে থাকার সময়! তাতে তিনি হয়ত তখন খলনায়ক! কারণ তখন তিনি এরই মধ্যে টানা (১৯৬৯-৭৫) আট বছর প্রেসিডেন্ট নিক্সনের NSA (ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার) ছিলেন। আর সেকালে তার প্রথম সবচেয়ে বড় ভুমিকাটা হল, তিনি ছিলেন প্রথম চীনা-আমেরিকান সম্পর্ক স্থাপনকারী দূত। কথাটা একটু ভেঙে বুঝতে হবে। চীনে মাওয়ের কমিউনিস্ট বিপ্লব সংঘটিত হয় ১৯৪৯ সালে। এরপর থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়কালে নয়াচীন আর আমেরিকার মধ্যে কখনোই কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। আনুষ্ঠানিকভাবে চীন বলতে তাই আমেরিকা তাইওয়ানকে ও এর সরকারকেই বুঝত। আর এই ২২ বছরের বিচ্ছেদ ও উপেক্ষার অবসান হতে নড়াচড়া প্রথম শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালে। যখন আমরা যুদ্ধের মধ্যে ও পাকিস্তানি আক্রমণের মুখে আশ্রয়ের সন্ধানে ভারত সীমান্ত অভিমুখে অথবা তা ক্রস করে ছুটছিলাম। আর তখনই ৯-১১ জুলাই ১৯৭১ কিসিঞ্জার পাকিস্তান সফরে এসেছিলেন সেখান থেকে গোপনে এরপর চীন যাবেন বলে। অথাৎ পাকিস্তান সফরের আড়ালে গোপনে পাকিস্তান থেকে সেই প্রথম মাওয়ের চীন সফর করেছিলেন কিসিঞ্জার। চীনে গিয়ে নয়াচীনের চেয়ারম্যান মাও জে দং ও প্রধানমন্ত্রী চৌএন লাইয়ের সাথে বৈঠক করেছিলেন।

আর গোপন সফরের নির্ধারিত হয় যে পরের বছর প্রেসিদেন্ট নিক্সন চীন সফরে যাবেন। এনিয়ে সেকালে ২৬ জুলাই ১৯৭১ এর টাইমস ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ ছিল এমন। আর একালে আমেরিকার সাউথ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা চীন-আমেরিকা ইন্সটিটিউট খোলা হয়েছে। ঐ বিশ্ববিদ্যালয় কিসিঞ্জারের সেই সফর নিয়ে ডকুমেন্টারি করেছে। এই ছবি তাদের সাইট থেকে নেয়া।

কিন্তু আমাদেরর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ একটা দিক হল, চীন-আমেরিকা সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ নিতে গিয়েই কিসিঞ্জারের আমেরিকা ততকালে হবু বাংলাদেশের স্বার্থকেই পরিত্যক্ত করে ফেলে রেখে হেঁটে চলে গেছিল। তা কার্যত হবু বাংলাদেশের বিপক্ষে ও পাকিস্তানের সামরিক একশনের পক্ষে রাজনৈতিক অবস্থান হয়ে দাড়িয়েছিল। অবশ্য যুদ্ধকালীন ও পরের রিলিফ তৎপরতা বা মানবিক সাহায্যগুলো আমেরিকা বাংলাদেশে চালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ঘটনার এখানেই শেষ নয়। পরবর্তীকালে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে বাংলাদেশ ভেসে যাওয়ার পরের সেবছরের সেপ্টেম্বরে শেখ মুজিব তাঁর আমেরিকা সফরকালে কিসিঞ্জারের সাথে এই প্রথম সাক্ষাৎ করেন। ঘটনাটাকে বলা যায় সেই প্রথম শেখ মুজিব, তাজুদ্দিন এন্ড গংয়ের কমিউনিস্ট ফ্যান্টাসি মানে কথিত “কমিউনিস্ট ইকোনমি” গড়ার ফ্যান্টাসি – এই বেকুবি শখ থেকে বাংলাদেশকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনার প্রথম কার্যকর এক্ট বলা যায়। তিনি কিসিঞ্জারের সাথে দেখা করে সহায়তা চান। বিশ্বব্যাংকের সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতির যোগসূত্র স্থাপন ও তৎপরতা শুরু বলা যায় সেটাকে। কথাটা আরেকভাবে বলা যায় যে, ১৯৭১ সালের হবু বাংলাদেশ উপায়ন্ত না পেয়ে সোভিয়েত ব্লকে ঢুকে অন্তর্ভুক্ত হয়ে এই একমাত্র পথেই স্বাধীন হওয়ার সুযোগ দেখেছিল ও পেয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের পরে সবার হুশ ছুটে যায়। শেখ মুজিব এই ফ্যান্টাসি ভাঙতে তাজুদ্দিন এন্ড গংয়ের হাত থেকে সবক্ষমতা কেড়ে নেন, মন্ত্রীসভা ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। ফলে সেই প্রথম কিন্তু এবার উল্টো পথে মানে বাংলাদেশের অন্তত প্রো-সোভিয়েত ব্লকে থেকে যাওয়াটার ইতি ঘটিয়েছিলেন। শেখ মুজিবের কিসিঞ্জারের সাথে সাক্ষাৎ ও যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে যার শুরু। ‘বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে কিসিঞ্জারের মন্তব্যটা তখনকার! যদিও ১৯৭৩ সালেই বাংলাদেশ আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের সদস্যপদ নিয়েছিল কিন্তু তাহলেও তা কার্যত অকার্যকর করে ফেলে রাখা ছিল। সেই সম্পর্ক কার্যকর ও চালু করে প্রথম বিশ্বব্যাংকের ঋণ-অনুদান ঋণপ্রাপ্তি ঘটতে ঘটতে ১৯৭৬ সালের প্রথমার্ধ লেগে গিয়েছিল; তত দিনে শেখ মুজিব আর নাই। মনে করা হয়, কিসিঞ্জার অনেক কিছুই ওকে করেছিলেন কিন্তু আবার প্রবল পপুলার হয়ে উঠতে পারেন এই শেখ মুজিবকে বেঁচে থাকতে দেন নাই। সেকালে প্রচলিত আমেরিকান ফরেন পলিসির বিভিন্ন ( ভিনদেশে অন্তর্ঘাতমূলক ততপরতা চালানোর স্বভাব ) বৈশিষ্টের কথা মনে রেখে এই অনুমান প্রচলিত আছে। এসব ঘটনার কারণে, কিসিঞ্জার বাংলাদেশ ইস্যুতে খুবই নির্ধারকভাবে জড়িত ছিলেন মনে করা হয়। আসলে গোপন তৎপরতায় কাজ করা, মিটিং বা চুক্তি করা এগুলো যেন সেকালের কোল্ডওয়ারের যুগে কিসিঞ্জারের কূটনৈতিক তৎপরতার মুখ্য বৈশিষ্ট্য!!!

একালে জেনেভায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চলতি সভায় কিসিঞ্জারঃ
বর্তমানে প্রায় ৯৮-৯৯ বছর বয়সের কিসিঞ্জার, সাম্প্রতিকালের খবর, চলতি সপ্তাহেই জেনেভায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক সভায় ভার্চুয়াল বা অনলাইনে যুক্ত হয়ে ইউক্রেন নিয়ে তিনি ওই সব মন্তব্য করেছেন। এটা ইউক্রেন যুদ্ধের এমন একটা সময় যখন প্রায় আপসরফায় সমাপ্তির দিয়ে চলে যাওয়া রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধকে বাইডেনের আমেরিকা উসকানি দিয়ে ফের চাঙ্গা করেছেন নতুন করে অস্ত্র ও অর্থ ঢেলে চলেছেন। একাজে ৪০ বিলিয়ন ডলার কংগ্রেস-সিনেট থেকে অনুমোদন এসেছে, যাতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার রসদ ঠিক থাকে। ঠিক এমন সময়ে ইউক্রেনকে জমি-ভূমি-সীমানা ছেড়ে দিয়ে হলেও রাশিয়ার সাথে আপসে যুদ্ধবন্ধের দিকে যেতে কিসিঞ্জার জেনেভার ভরা হাটে দাবি করেছেন। কিন্তু কেন?

আসলে, খুব পরিষ্কার করে তা বুঝিয়ে বলা হয়নি, এর পেছনের কারণ। তবে কিসিঞ্জারের কয়েকটা বিচ্ছিন্ন বাক্য পাওয়া গেছে এ নিয়ে প্রকাশিত মিডিয়া রিপোর্টে। যেমন লন্ডন টেলিগ্রাফ, নিউজউইক, ওয়াশিংটন পোস্ট বা নিউ ইয়র্ক টাইমস ধরনের মিডিয়ায় যেভাবে এ খবর রিপোর্টেড হয়েছে তা থেকে; যেসবের সারকথা, ইউক্রেনকে নিজ ভূখণ্ড ত্যাগের বিনিময়ে হলেও রাশিয়ার সাথে আপসে যুদ্ধবন্ধের চুক্তি করতে উৎসাহ দিতে হবে। কারণ কিসিঞ্জার মনে করেন কোনোভাবে এতে রাশিয়ার জন্য এটা কোনো অসম্মানজনক হার হলে তাঃ

১. দীর্ঘ মেয়াদে ইউরোপের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করবে । কথাটা কিসিঞ্জার বলেছেন এভাবে‘যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার যে অপমানজনক পরাজয় আশা করছে, তা দীর্ঘ মেয়াদে ইউরোপের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করবে [it could worsen Europe’s long-term stability.]। অর্থাৎ তিনি যেনতেনভাবে রাশিয়ার কোন — এই হার সেই হার- একেবারেই চান না। কারণ লংটার্মে এটা ব্যাকফায়ার করবে মানে আরো বড় ক্ষতি ডেকে আনবে বলে তিনি মনে করেন।

২. পরের বাক্য আরো মারাত্মক। বলছেন ‘রাশিয়া তো তোমাদের ইউরোপই’। তাই বলছেন, “পশ্চিমা বিশ্বের এ বিষয়টি উপলব্ধি করা উচিত যে, রাশিয়া ইউরোপের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই পশ্চিমের উচিত হবে না ‘তড়িঘড়ি’ কোনো সিদ্ধান্তে আসা।” পশ্চিমা বিশ্বের এই বিষয়টি উপলব্ধি করা উচিত যে—রাশিয়া ইউরোপের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু এতে কিসিঞ্জারের কথাগুলো মানে তিনি রাশিয়াকেও কি সাদা শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের প্ররোচনার চোখে দেখে মানে ‘হোয়াইট ককেশিয়ান’ রেস-জাতির ধারণার চোখে গণ্য করে কথা বললেন? যেটা ক্রমেই এখন বাইডেনেরও অব্যক্ত এজেন্ডা হিসেবে উঁকি দিয়ে হাজির হচ্ছে? এক কথায় বললে এর জবাব হল – এখানে কিসিঞ্জারের অবস্থান পুরোপুরি স্পষ্ট নয়; অর্থাৎ কেন তিনি রাশিয়াকে ‘ইউরোপেরই অংশ’ গণ্য করতে বলছেন তা স্পষ্ট করেননি। এ ছাড়া রাশিয়ানরা জাতিগত পরিচয় হিসেবে মানে রেস-জাতির বিচারে আসলে প্রধানত তারা ইস্ট স্লাভিক ট্রাইব [East Slavic Tribe] ba স্ল্যাভ -রেসের অংশ। অর্থাৎ ঠিক ককেশীয় নয় যদিও ফেলে আসা সোভিয়েত ইউনিয়ন হিসেবে বিবেচনা করলে সোভিয়েতের ভেতরের একটি বড় অংশই ছিল সাদা ককেশীয় রেস-জাতির। সে যাই হোক, কিসিঞ্জার এর চেয়ে বেশি কিছু স্পষ্ট করেননি।

৩. কিসিঞ্জারের বক্তব্যের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, তিনি পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি আহবান জানিয়ে বলছেন যে, তারা যেন ইউক্রেনকে রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক ‘আগের স্থিতাবস্থা (স্ট্যাটাস কো অ্যান্টি – status quo ante]’ ফিরিয়ে আনতে আলোচনায় চাপ প্রয়োগ করে। যেটা অনেকটা ২০১৪ সালের সময়কার অবস্থান, যখন ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ বলে ইউক্রেন থেকে কেটে রাশিয়া নিজের সাথে যুক্ত করে নিয়েছিল।

এখানে কিছু পুরনো ফ্যাক্টসঃ
এখানে কিছু কথা পরিষ্কার করে রাখা যেতে পারে। ক্রিমিয়া বিগত রূশ সম্রাট বা জারের আমল থেকেই স্বতন্ত্র রেস-জাতি অর্থে আলাদা ছিল বিবেচিত হত। যদিও ক্রিমিয়া জার সাম্রাজ্যের অধীনস্ত প্রশাসনিক অংশ হিসেবে শাসিত ছিল। কিন্তু ১৯১৭ সালে লেনিনের রাশিয়ান বিপ্লবের পরে, ১৯২২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠনকালে ক্রিমিয়া অঞ্চল প্রশাসনিকভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্রিমিয়ার কেউ কেউ হিটলারের জার্মানিকে সাহায্য করেছিল, এই অজুহাতে নেতা স্তালিন আমলে ক্রিমিয়ার বেশির ভাগ মানুষকেই শাস্তি হিসেবে ‘ফোর্সড’ সাইবেরিয়া [জারের আমল থেকেই রাজা বা কমিউনিস্ট সরকারবিরোধী ব্যক্তিকে নির্বাসনে পাঠাতে সেই ভুমি বা অঞ্চল হিসাবে সাইবেরিয়া ঠান্ডা বনাঞ্চলে পাঠানো হত ] পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল; মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অপেক্ষামান ট্রেনে তুলে দিয়ে। পরবর্তীকালে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে তারা আবার ক্রিমিয়ায় ফিরে আসে কিন্তু প্রশাসনিক দিক থেকে ক্রিমিয়া এবার রাশিয়ার সাথে আবার যুক্ত না হয়ে ক্রিমিয়া সীমান্তের অপর পাড়ে ইউক্রেনের সাথে প্রশাসনিকভাবে যুক্ত হয়েছিল। এদিকে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৯১ সালে ভেঙে গেলে রাশিয়াসহ মোট ১৫টা রাষ্ট্রে তারা আলাদা হয়েছিল। কিন্তু রাশিয়ার প্রভাব বাকি ১৪ নয়া রাষ্ট্রের ওপর থেকে জবরদস্তিতে হটাতে আমেরিকার নেতৃত্বে পাশ্চাত্য এক শর্টকাট ও দায়িত্বজ্ঞানহীন পথ নিয়েছিল। সেটা হল, তারা যেকোনো উপায়ে ওই ১৪ রাষ্ট্রকে ন্যাটোতে যোগদানের নীতি-পলিসিতে অগ্রসর হতে থাকে। আর এতেই রাশিয়ার নিজ ভূখণ্ড-রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দিক থেকে ব্যাপারটাকে হুমকি মনে করতে শুরু করেছিল। সব বিরোধের শুরু এখান থেকে।
তাই একই এই কারণে ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার বিরোধ দেখা দিলে ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়াকে ইউক্রেন থেকে ফেরত নিয়ে নিজ প্রশাসনের অধীনস্ত করে নিয়েছিল। আর এরই প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকা সেই থেকে পুতিনের রাশিয়ার ওপর অবরোধ আরোপ করতে এগিয়ে এসেছিল। নিজের একশনের পক্ষে সাফাই বয়ান যুক্তি শক্ত করার জন্য এটাকে রাশিয়ার ইউক্রেনের ভূমিদখলদার হিসাবে মানে জবরদখল হিসেবে উল্লেখ করতে শুরু করেছিল যেন ক্রিমিয়া তার অতীতে সবসময়ই ইউক্রেনের অংশ ছিল। অথচ মাত্র ১৯৯১ সাল থেকেই সোভিয়েত ভেঙে গেছিল বলেই রাশিয়া ক্রিমিয়াকে যে আপসে ইউক্রেনের প্রশাসনের অধীনে পরিচালিত হতে দিয়েছিল, এই ফ্যাক্টস চেপে যাওয়া হয়ে চলছে এখনও।

ফলে এখন রাশিয়ার হাতেই ‘ক্রিমিয়াকে ছেড়ে দেয়া্র” কিসিঞ্জারের প্রস্তাব এটি ঠিক ইউক্রেনের কোন নিজস্ব ভূখণ্ড রাশিয়াকে ছেড়ে দেয়ার মত ঘটনা একেবারেই নয়। কারণ ইতিহাসে ক্রিমিয়া ইউক্রেনের অধীনস্থ অঞ্চল নয়। বরং ক্রিমিয়া ও ইউক্রেন উভয়েই কয়েক শ’ বছর ধরে রাশিয়ান জার সাম্রাজ্যের অধীনে শাসিত ও পরিচালিত ছিল। এই হিসেবে কিসিঞ্জার যেন নিজেই আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমের শঠতা বয়ানের বাইরে দাঁড়াতে চাচ্ছেন। এ বিচারে পুতিনের রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনকে ভূমি ছেড়ে দিয়ে রাশিয়ার সাথে সমঝোতা করার জন্য কিসিঞ্জারের আহবান – এটা ‘তেমন অস্বাভাবিক’ কিছু নয়। মূলকথা, ক্রিমিয়া ইউক্রেনের কোনো কোর-ভূখণ্ড বা নিজ রেস-জাতিগত ভূখন্ড তা একেবারেই নয়। এই ফ্যাক্টস যদি আমরা মনে রাখি, কেবল তাহলেই আজকের তর্কে পশ্চিমা বয়ানের অসারতার দিকটা বুঝব।

এখন এ ঘটনায় ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি যেন, দিনকে দিন এক রাজনীতিবিদ রাজনৈতিক দায়-দায়িত্ব নিয়ে কথা আচরণের পরিবর্তে অভিনেতার একটিং তাও আবার ভাঁড়ামো কমেডিয়ান হতে চাচ্ছেন বেশি। ইনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি এক মাস আগেও তিনি মিডিয়ায় নিজেই বলেছেন তিনি ইউক্রেনকে আর ন্যাটোর সদস্যপদ নিতে বা পেতে আগ্রহী নন। কারণ আমেরিকান প্ররোচনায় পড়ে – এটা ছিল তাঁর লোভে পড়া, এটাই এখন ইউক্রেনের দুঃখের কারণ হয়েছে। তিনি খোলাখুলি স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি আমেরিকার প্ররোচনায় পড়েছিলেন ঠিকই কিন্তু তিনিও তখন আমেরিকার ওপর হতাশ সে কথাই খোলাখুলি বলেছিলেন। আর এর পরই তুরস্কের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সাথে জেলেনস্কি সমঝোতা এগিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু আবার সেই বাইডেন তখন অস্ত্র-অর্থের লোভ দেখাতে লাগলেন। সেই জেলেনস্কি আলোচনার টেবিল ফেলে এবার আমেরিকান উসকানি তার আবার ভালো লাগতে শুরু করেছিল। তিনি আবার ভোল বদলে ফেলেন। সেই জেলেনস্কি এখন কিসিঞ্জারের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে স্বভাবতই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
জেলেনস্কি বলেছেন, ‘রাশিয়ার সাথে শান্তি আলোচনার পূর্বশর্ত হল – দুই দেশই তাদের মধ্যকার আগের সীমানায় ফিরে যাবে যার সহজ অর্থ রাশিয়া ইউক্রেনের অভ্যন্তরে যা দখল করেছে তার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে যেতে হবে;’ অর্থাৎ তিনি এখন ‘বাইডেন-মুডে’ আছেন।

আসলে কিসিঞ্জারের বক্তব্য অনেককেই প্রভাবিত করতে শুরু করেছে। এদের একজন হলেন উরসুলা লেয়েন [Ursula von der Leyen]। উরসুলা বর্তমানে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলছেন, ‘যুদ্ধ কেবল ইউক্রেনের টিকে যাওয়া নয়, অথবা এটি কেবল ইউরোপীয় নিরাপত্তার ইস্যু নয়, বরং এটি সব গ্লোবাল কমিউনিটির কাজ ও দায় [……war is not only “a matter of Ukraine’s survival” or “an issue of European security” but also “a task for the entire global community.”]। একথা শুনে অনেকের কোন মহা-জ্ঞানের কথা শুনছেন মনে হলেও আসলে তা এর উলটা। যেমন তিনি এরপর দুঃখের ভঙ্গিতে বলছেন, এতে ‘পুতিনের ধ্বংসাত্মক ক্ষোভের খেলাও আছে [Vladimir Putin’s “destructive fury” ।’ আবার সম্ভাবনার দিকে তাকিয়ে যেন বলে রাখতে চাইছেন, ” রাশিয়া এক দিন হয়ত ইউরোপে তাদের বিশেষ জায়গা নিয়ে ফিরে আসবে। তা আসতেই পারে যদি সে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, আন্তর্জাতিক নিয়মশৃঙ্খলা ব্যবস্থায় ফিরে আসার পথ খুঁজে নেয় – কারণ রাশিয়া তো আমাদেরই পড়শি! […Russia could one day recover its place in Europe if it “finds its way back to democracy, the rule of law and respect for the international rules-based order … because Russia is our neighbor.”]। আসলে জাত শ্রেষ্ঠত্ববাদে সবাই কমবেশি আক্রান্ত!!

একালে বাইডেনের আবির্ভাব ও সবকিছুকেই তিনি পশ্চিমাগোষ্ঠীর শ্রেষ্ঠত্ব হিসেবে নিজেদের হাজির করার কায়দা শুরু করেছেন। আর এতে যারাই আমেরিকান নেতৃত্বের বা অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বি – তাদের নিচা দেখানোর এই রেসিয়াল (racial) শ্রেষ্ঠত্ব শো করা যে, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিরা হলো রেস-জাতির দিক থেকে নিচা। মানে নয়া এক ‘বাইডেন রেসিজম বা পশ্চিমা রেসিজমের প্রদর্শন শুরু হয়ে গেছে। আর তাতে মেতে ওঠে এই উরসুলা লেয়েনো ভালোই প্রভাবিত হয়েছেন দেখা যাচ্ছে। তিনি পশ্চিমের গণতন্ত্র, আইনের শাসন বা আন্তর্জাতিক নিয়ম-শৃঙ্খলা দেখানো গর্ব শুরু করে দিয়েছেন। আচ্ছা তিনি কি জানেন তিনি কী করছেন? জানলে তিনি দেখতে [পেতেন, এই কথিত গর্ব-উপাদানের বয়স কত?

অর্থাৎ পশ্চিমের গণতন্ত্র, আইনের শাসন বা আন্তর্জাতিক নিয়ম-শৃঙ্খলা ইত্যাদি এর বয়স মাত্র ৭৫ বছর। আর এর আগে তারা কী ছিলেন? তাদের সারা ইউরোপ ছিল পেশাদার ডাকাত!!! ডাকাত মানে তাদের রাষ্ট্রের প্রধান অর্থনীতি বলতে তা ছিল কলোনি দখলদারের লুটেরা ডাকাত ব্যবসা!! হা তাই, একটুও বাড়ায় বলা হয় নাই। লাগাতার সাড়ে তিন শ’ বছর ধরে যাদের প্রধান ব্যবসা-অর্থনীতি ছিল জাহাজে বিনিয়োগ আর এমন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি খুলে ঐ জাহাজ নিয়ে কলোনি দখলদার লুট আর ডাকাতি করতে বেরিয়ে পড়া। এভাবেই ওসব দেশের প্রধান অর্থনীতি ছিল লুট আর ডাকাতি। অথচ তারা এখন সবাইকে আইনের শাসন শেখান! যেন এটা তাদের সভ্য জীবন ছিল, যেন তারা এভাবেই সেই থেকে কথিত সভ্যতায় এগিয়ে ছিলেন!!! উরশুনার উচিত হবে সবার আগে কলোনিদখলদারদের জীবন কাহিনী তার পুর্বপুরুষদের চিনে নেওয়া……

এনিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্টের শেষে আরো কিছু কথা জুড়ে দেয়া হয়েছে, থেকে নেয়া। তারা লিখছে, কিসিঞ্জার ইউরোপীয় লিডারদেরকে উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলছেন – ইউরোপে রাশিয়ার ভুমিকা অবস্থানকে খাটো করে দেখানো বা, দৃষ্টিশক্তির আড়ালে ফেলা না। আর? আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো, রাশিয়াকে চীনের সাথে কোনো স্থায়ী অ্যালায়েন্সে যেতে দিও না; এতে ইউরোপের নিজেকেই রিস্কের মধ্যে ফেলা হবে! [ ……urged European leaders to not lose sight of Russia’s place in Europe and risk the country forming a permanent alliance with China.}

আশা করি এবার পাঠক পরিস্কার বুঝতে পাবেন যে তা হলে কিসিঞ্জার ঠিক কী চাচ্ছেন? কিসিঞ্জার বাইডেনের নেতৃত্বে পশ্চিমা শক্তির মত তিনিও আসলে চীনা উত্থানে ভীত। কিন্তু তবু একটা জায়গায় তিনি বাইডেন ও ইউরোপের রাশিয়া-ঘৃণার দৃষ্টি থেকে আলাদা। সেটা হল – চীনের ভয়ে তিনিও ভীত, কিন্তু পশ্চিমাশক্তি মানে বাইডেন ও ইউরোপ মিলে যেমন রাশিয়াকে সমানে কোপাচ্ছে, এটাকে তিনি ঠিক মনে করছেন না। কেন? কারণ তিনি মনে করেন এভাবে কোপাতে থাকলে চীন ও রাশিয়ার স্থায়ী অ্যালায়েন্স তৈরি হয়ে যাবে বা অ্যালায়েন্স করতে রাশিয়াকে ঠেলে দেয়া হয়ে যাবে, যা পশ্চিমা স্বার্থের বিরোধী হয়ে হাজির হবে। সারকথায় কিসিঞ্জার মনে করেন চীন ও রাশিয়ার স্থায়ী অ্যালায়েন্স তৈরি হতে দিলে তা আমেরিকার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। একথাটাই তিনি ফেলো পশ্চিমাদের বুঝাতে চাইছেন।

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

Advertisements