ইরাকে হাশদ আশ-শাবির প্রভাব বাড়ছে
Advertisements

পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন সেনা উপস্থিতির কারণে আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়াসহ সমগ্র এ অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ ছাড়া বিদেশিদের ছত্রছায়ায় জাতিগত উত্তেজনা ও উগ্রবাদেরও ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে।

মার্কিন সেনারা ইরাক জবর দখলের পর সমগ্র পশ্চিম এশিয়ায় অরাজকতা ছড়িয়ে পড়েছে। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসির কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেন সালামি ইরাকের জনপ্রিয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাশদ আশ শাবির কমান্ডার ফতেহ আল ফাইজকে দেয়া সাক্ষাতে বলেছেন, উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশ বা আইএস জঙ্গিদের মোকাবেলায় এবং নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় হাশদ আশ শাবির বিরাট ভূমিকা রয়েছে। ইরাকের স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় এই জোট গুরুত্বপূর্ণ সামরিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ইরানের আইআরজিসির কমান্ডার সালামি আরো বলেছেন, ‘হাশদ আশ শাবির মতো ইরাকের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কারণে মার্কিন সেনারা দুর্বল ও হতাশ হয়ে পড়েছে এবং তাদের ব্যয় বহুগুণে বেড়ে গেছে। মার্কিনিরা এখন উভয় সংকটে আছে। তারা যদি ইরাকে থাকে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আবার যদি ইরাক ত্যাগ করে তাহলেও তাদের পরাজয় প্রমাণিত হবে।’

আইআরজিসির প্রধান আরো বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এ অঞ্চলের প্রতিরোধ বাহিনীর প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে এবং আমরা আশা ইরাক থেকে মার্কিন সেনা বহিস্কারের বিষয়ে দেশটির সংসদে পাশ হওয়া প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হবে। বিদেশি সেনাদের উপস্থিতি ছাড়াই ইরাকের শক্তিমত্বা ও স্বাধীনতা বজায় থাকবে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ অঞ্চল থেকে মার্কিন সেনারা চলে গেলে নিরাপত্তা ক্ষেত্রে হুমকি কমে আসার পাশাপাশি আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিস্তারেরও ক্ষেত্র তৈরি হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ অন্যান্য বিদেশি সেনারা আদৌ পশ্চিম এশিয়া থেকে সেনা সরিয়ে নেবে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। এ অঞ্চলে বিদেশি সেনাদের উপস্থিতির অন্যতম একটি নেতিবাচক প্রভাব হচ্ছে নানা অপকর্ম থেকে তাদের বিরত রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ছে।

কারণ মার্কিন সরকার এ অঞ্চলের দেশগুলোকে ভালো ও খারাপ এ দুভাগে বিভক্ত করে এ অঞ্চলে সামরিক হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখার ক্ষেত্র তৈরির চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের এসব অপকর্মের দিন শেষ হয়ে এসেছে। কেননা ইরান সমর্থক ইসলামি প্রতিরোধ সংগঠনগুলো পশ্চিম এশিয়ার নিরাপত্তা ও সামরিক অবস্থা এ অঞ্চলের জাতিগুলোর অনুকূলে নিয়ে আসার ক্ষমতা অর্জন করেছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী দুই বছর আগে ধর্মীয় নগরি কোমের হাজার হাজার মানুষের এক সমাবেশে ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিনীদের পরাজয়ে কুদস ব্রিগেডের প্রধান শহীদ জেনারেল কাসেম সোলাইমানির ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, মার্কিনিরা চেয়েছিল ইরাকে হয় স্বৈরসরকার ক্ষমতায় থাকুক অথবা এ দেশটি সৌদি আরবের মতোই ওয়াশিংটনের প্রতি অনুগত হয়ে থাকবে। কিন্তু ইরাকের ধর্মীয় নেতা ও জনগণের সহযোগিতায় কাসেম সোলাইমানি যুক্তরাষ্ট্রের ওই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেন।

যাইহোক, কুইন্সি ইনস্টিটিউট রিসার্চ সেন্টার এক প্রতিবেদনে সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপ ও যুদ্ধকামী নীতির কথা উল্লেখ করে বলেছে, এ নীতি উগ্র জঙ্গিবাদী ভাবাদর্শকে ধবংস করতে তো পারেনি বরং এর বিস্তার ঘটেছে এবং আফগানিস্তানেও নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তারা ব্যর্থ হয়েছে। ইরাকেও তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে ট্রাম্পের শাসনামলে পশ্চিম এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। তবে ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধারা এ পরিস্থিতি পাল্টে দিতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পার্সটুডে

Advertisements