ঈদের নতুন জামা
Advertisements

ঈদ উপলক্ষে গাজীপুর কালিয়াকৈরে ৩০০জন পথশিশুদের মাঝে ঈদের জামা উপহার প্রদান করেছেন সফিপুর আইডিয়াল পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ এবং আকবর আলী ফাউন্ডেশ।

শনিবার (৮ মে) সফিপুর আইডিয়াল পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ এবং আকবর আলী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পথশিশুদের মাঝে ঈদের জামা উপহার প্রদান করা হয়েছে।

নতুন জামা পেয়ে দারুণ খুশি বিভিন্ন বয়সী পথশিশুরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাসুদ রানা(প্রথম আলো জেলা প্রতিনিধি) আলমগীর (যুগান্তর প্রতিনিধি) সামান উদ্দিন, এশিয়ান টিভি প্রতিনিধি, বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রতিনিধি আলহাজ,বশির উদ্দিন স্যার সহ প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক শিক্ষিকা ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যাক্তি।

পথ-শিশুদের মাঝে ঈদের নতুন জামা-কাপড় বিতরণকালে অতিথিরা বলেন, আমাদের সমাজের নানা প্রান্তরে ছড়িয়ে আছে অভাবী মানুষ।রাস্তাঘাটে ফুটফুটে পথ শিশুরা ঘুরে বেড়ায় পেটে ক্ষুধার জ্বালা নিয়ে,গায়ে ছেঁড়া জামা চড়িয়ে।পথচারী কারো কাছে হাত পাতে ‘দুইডা ট্যাহা দ্যান” বলে।কারো দয়া হলে দেয় না হলে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেয়।বেশীর ভাগ সময়ই নগর জীবনে সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা এসব পথ শিশুদের দিকে কেউ ফিরে তাকায় না।অবহেলা আর করুণা নিয়ে ওরা বেঁচে থাকে আমাদেরই চারপাশে।কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯৪৭ সালে তার ছাড়পত্র কবিতায় লিখেছিলেন,
এসেছে নতুন শিশু,তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংস্তুপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব-তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি—
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

আজ ২০২১ সালেও কি আমরা শিশুদের জন্য বাসযোগ্য করে পৃথিবী গড়ে তুলতে পেরেছি? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খায় হয়তো আমাদের সবার মনেই।সবাই হয়তো কিছু একটা করতে চাই শিশুদের জন্য,সমাজের জন্য। কিন্তু কতজন আমরা সত্যিকারে রাস্তায় নেমে মানবতার পাশে এসে দাঁড়িয়েছি,শিশুদের মুখে হাসি ফুটিয়েছি?কিছু মানুষ আছে যারা নিরবে মানুষের পাশে,মানবতার পাশে,এসে দাঁড়ায়।সফিপুর আইডিয়াল পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান এবং আকবর আলী ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা জনাব মোঃ হাবিবুর রহমান তেমনি একজন ব্যতিক্রমি মানুষ যিনি কিনা সবসময় পথ শিশুদের পাশে এসে দাড়ান।ঈদে নিজে নতুন জামা কিনে দেন পথ শিশুদের জন্য।

এই লেখাটি লেখার সময় যখন তার সাথে যোগাযোগ করি তখন তিনি বলেন ‘‘কি হবে পত্রিকায় লিখে?আমিতো প্রচারের জন্য এ কাজ করি না,পত্রিকায় লেখার মত কোন বড় কাজ করতে পারিনি এখনো।সবাই পথ শিশুদের ঈদকে দশটা সাধারণ মানুষের ঈদের মতই আনন্দময় করে তুলুন,এই আমার চাওয়া।’’

তিনি আরও বলেন,ঈদে আমাদের বাচ্চারা নতুন কাপড় পরে,ওরা পাড়ে না।সেই থেকে ঈদের সময় পথ শিশুদের জন্য নতুন জামা-কাপড় কিনে দেই।কখনো কখনো পরিচিত অনেকেই আমাদেরকে স্বেচ্ছায় অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন।তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই এবং তাদের শুভেচ্ছা উপহার পৌছে দেই পথ শিশুদের কাছে। আমারা হাসি দেখতে চাই সবার মুখে,তারা যেন সবার মত ঈদ উদযাপন করতে পারে সেই চেষ্টা করি।তাদের মুখে হাসি ফুটলেই দেশের মুখে হাসি ফোটে।

হাবিবুর রহমান আরও বলেন “আমি চাই সুবিধাবঞ্চিত বা পথশিশু শব্দটি বিলুপ্ত হয়ে যাক।এই কোমল মতি শিশুদের আমরা কিছু দান করতে চাই না। আমরা চাই তাদের উপহার দিতে।আর তাই ঈদে এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শুরুটা হোক নতুন জামা দিয়ে।প্রতিটি ঈদ সবার জন্য বয়ে আনে অনাবিল আনন্দ।শপিং সেন্টার গুলোতে দেখা যায় উপচে পড়া ভীর।নতুন পোষাক ছাড়া কি ঈদ হয়!শুধু তাই নয়,পোষাক কিনেই লুকিয়ে রাখার চেষ্টা।কেউ দেখলে পুরোনো হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের চারপাশে এমন অনেক সুবিধাবঞ্চিত শিশু আছে যাদের ঈদ কাটে জরাজীর্ন পোষাকেই।আমরা তাদের নিয়ে ভাবি না।অনেকেই তাদের দেখেও না দেখার ভান করে বিরক্তি নিয়ে পাশ কাটাই।অথচ এরাও সমাজের একটা অংশ। এদেরও পাবার ইচ্ছা আছে কিন্তু পেরে ওঠে না।ওরা না হয় পারে না,তাই বলে কি আমরাও পারব না তাদের নতুন কিছু দিয়ে খুশি করতে?অবশ্যয়ই পারি।হোক না সেটা অল্প কিছু মানুষের জন্য। এই শিশু গুলোর জন্য তাই আমাদের ক্ষুদ্র একটি উদ্যোগ এটা।একটি শিশুর মুখের হাসি আমাদের কাছে অনেক দামি।যাদের জীবনে ঈদের আনন্দ আসি আসি করেও ধরা দেয় না,সেই মানুষগুলোর সাথে ঈদের আনন্দ খানিকটা ভাগাভাগি করে নিতে আমাদের এই এগিয়ে আসা।” ব্যক্তিগত ভাবে আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি ”করুণার দান নয়,ঈদে ভালবেসে উপহার দিন পথ শিশুদের।”

ঈদের নতুন জামা উপহার পেয়ে নূপুর নামে এক শিশু বলেন,”আমি খুব খুশি,জামাটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে,আমি ও আমার পরিবার স্যার জন্য দোয়া করবো।”

প্রতিনিধি/ইয়ামিন হোসেন পাটোয়ারী

Advertisements