ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর উপকন্ঠ আশুলিয়ার জামগড়ার একটি ওষুধের দোকানে। হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো।সেখান থেকে নেমে ৪/৫ জন লোক সোজা দোকানে প্রবেশ করল। (যুগান্তর ২৭ ফেব্রুয়ারি)
মালিক নূর উদ্দিনকে বললেন, তারা ঢাকার মিন্টোরোডের ডিবি পুলিশ। এ দোকানে অবৈধ মালামাল আছে। খবর পেয়ে তল্লাশি করতে এসেছেন। পরক্ষণেই দোকানের মালিকের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
জানান, ‘দুই লাখ টাকা দিলে তোর কোনো ক্ষতি হবে না। না দিলে ক্রসফায়ার দিব।’ তাদের একজনের কোমরে পিস্তল আর হাতে ওয়াকিটকি ছিল। ভয় পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ৬৭ হাজার টাকা দেন দোকানের মালিক। আরও ৫০ হাজার টাকা নিতে চারদিন পর আসবেন বলে তারা চলে যান। বিষয়টি র্যাবকে জানান ওই ব্যবসায়ী। চারদিন পর টাকা নিতে এসে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন চার দুষ্কৃতি।
গ্রেফতারের পর জানা গেল, তাদের একজন আশুলিয়া থানার কনস্টেবল মমিনুর রহমান। আর যে মাইক্রোবাস ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করছিলেন, ওই গাড়ির মালিক আশুলিয়া থানার এসআই সাজ্জাদুর রহমান। এদিকে দোকানে প্রবেশ এবং বের হওয়ার দৃশ্য ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
চাঁদাবাজির ঘটনাটি ঘটে গত বছরের ২২ জুলাই। ২৬ জুলাই তারা গ্রেফতার হন। কনস্টেবল মমিনুরের সঙ্গে গ্রেফতার অন্য তিনজন হলেন মো. আ. হামিদ, মো. ওয়াহেদ ও ওয়াজেদ শেখ। এ ঘটনার পর কনস্টেবল মমিনুর রহমান এবং এসআই সাজ্জাদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। মামলার এজাহার এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
র্যাব জানায়, তাৎক্ষণিকভাবে মাইক্রোবাস তল্লাশি করে ১৭০ পিস ইয়াবা, ৪৮০ গ্রাম গাঁজা এবং ৩১টি এক হাজার টাকার জালনোটও উদ্ধার করা হয়। এসআই সাজ্জাদুর রহমানের মাইক্রোবাস দিয়ে আশুলিয়া এবং এর আশপাশের এলাকায় ডিবি পরিচয়ে নানা অপকর্ম করছিল এই চক্রের সদস্যরা। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী নূর উদ্দিন আশুলিয়া থানায় একটি মামলাও করেন। এই মামলার তদন্ত করছে র্যাব-৪। এ ঘটনায় মাদক আইনে একটি এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা হয়েছে।
ব্যবসায়ী নূর উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে একদফা টাকা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট হয়নি। আবার টাকা নিতে আসবে বলে জানায়। বিষয়টি র্যাব-৪কে জানাই। পরে নির্ধারিত সময়ে আবারও টাকা নিতে এলে র্যাব সদস্যরা চারজনকে গ্রেফতার করে। তারপর আমি আশুলিয়া থানায় মামলা করি।
নূর উদ্দিনের দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-৪ এর স্পেশাল কোম্পানির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জমির উদ্দিন আহম্মেদ যুগান্তরকে বলেন, মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ না হলে এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আশুলিয়া এবং আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ী ও নিরীহ ব্যক্তিদের টার্গেট করত। তারপর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করত। বিভিন্ন সময় নিরীহ ব্যক্তিদের মাদক দিয় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা নিত। মাদক ও জালনোটের ব্যবসার সঙ্গেও তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এই চক্রে পুলিশের একাধিক সোর্সও রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা সিভিল পোশাকে এবং রাতে এ ধরনের অপকর্ম করতেন।
এদিকে দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহহিল কাফী যুগান্তরকে বলেন, এসআই সাজ্জাদুর ও কনস্টেবল মমিনুরকে সাময়িক বরখাস্তের পাশাপাশি বিভাগীয় মামলা হয়েছে। মামলা এখনো চলমান।
এ বিষয়ে সাময়িক বরখাস্ত এসআই সাজ্জাদুর রহমান যুগান্তরকে জানান, ওই ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে মাইক্রোবাসটির মালিক তিনি বলে স্বীকার করেন। তার বিরুদ্ধে যে বিভাগীয় মামলা হয়েছে, এগুলো থেকে তিনি খালাস পাবেন বলেও জানান।