ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের এক অসহায় নারী’র থেকে জমি দেওয়ার কথা বলে সম্পূর্ণ টাকা নিয়েও জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে টালবাহানা করছে ওই এলাকার মৃত মো. আলীর সন্তান জালাল উদ্দিন।
ভুক্তভোগী অসহায় নারী উপজেলার জয়পুর গ্রামের মফিজ উদ্দিনের স্ত্রী নাজমা খাতুন (৩৬)। একদিন গভীর রাতে নাজমা খাতুনের বাড়িতে হঠাৎ আগুন জ্বলে উঠে।
এরপর আগুন লাগার ঘটনা ও টাকা নিয়ে জমি রেজিস্ট্রি না দেওয়ায় ফুলবাড়িয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী নাজমা খাতুন।
ওই অভিযোগে অভিযুক্তরা হলেন, একই গ্রামের মৃত মো. আলীর সন্তান জালাল উদ্দিন ওরফে মুচাইরা (৬০) ও মৃত রুস্তম আলীর সন্তান মো. আব্দুর রশীদ।
এ ব্যাপারে নাজমা খাতুন জানিয়েছেন, আমি আরও ৭বছর আগে সোয়া তিন শতাংশ জমি জালালের মাধ্যমে তার ভাই আলম মিয়ার থেকে ৫০ হাজার টাকায় ক্রয় করি। পরে ওই জমিতে বাড়ি নির্মাণ করে বাস করছি।
ওই জমির পূর্বের মালিক আলম মিয়া প্রবাসে থাকায় আমাকে জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে পারেননি, কিন্তু জমির তৎকালীন ন্যায্য মূল্য ৫০ হাজার টাকা ওই সময়-ই দেই।
পরবর্তীতে জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার কথা বললে তারা বিভিন্নভাবে টালবাহানা শুরু করে। এভাবে-ই সাত বছর পার হয়ে যায়।
গত [১৮ নভেম্বর ২০২০] রাত ১০টায় বাড়িতে একা থাকায় আমাকে ডাকতে আসে জালাল। আমি তার ডাকে সাড়া না দেওয়ায় সে তখন বলে, “একটু পরে টের পাবি!” এই কথা বলে চলে যায় জালাল। ওই রাত একটায় আমার রুমে হঠাৎ আগুন জ্বলে উঠে, আমি জেগে না উঠলে হয়তো আমার সন্তানসহ মারা যেতাম। পরে আমার ডাকচিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে আগুন নেভায়।
ওই অভিযোগে যারা স্বাক্ষী হয়েছিল তাদেরকে জালালের নেতৃত্বে ব্যাপক মারধর করেছে বলে জানিয়েছেন নাজমা খাতুনের চাচাতো বোন কুলসুম আক্তার। তিনি আরও বলেন, থানায় নাজমা খাতুন আগে অভিযোগ করার পর ওই অভিযোগে যারা স্বাক্ষি হয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে একটি ঘটনা সাজিয়ে জিডি করেন জালাল।
ওই জিডির তদন্তে আসেন এএসআই হারুন। তিনি তদন্ত করে যাওয়ার পরই জালালের নেতৃত্বে তার সন্তান মাসুদসহ তাদের বাড়ির লোকজন দা ও রড দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এতে গুরুতর আহত হয় আমার মা কল্পনা আক্তার ও আমার ফুফু খোদেজা বেগম। তারা [১২ ডিসেম্বর ২০২০] ফুলবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এ ব্যাপারে এএসআই হারুন জানিয়েছেন, জালালকে হুমকি দিয়েছে এই মর্মে থানায় একটি জিডি করেন জালাল। ওই জিডির তদন্তে গিয়েছিলাম, উভয়পক্ষের সাথে কথা বলে চলে আসার সময় মারামারি’র সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে আবার যাই, গিয়ে দেখি মারামারি শেষ। কয়েকজন আহত হয়, পরে তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে আমি চলে আসি। যারা মারামারি’র ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা উশৃংখল প্রকৃতির, তাদের সাথে পূর্ব শত্রুতা রয়েছে।
জিডির বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১০ জনকে আসামি করে ফুলবাড়িয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী খোদেজার ভাই মকবুল হোসেন।
মামলার বাদী মকবুল হোসেন জানিয়েছেন, আসামিদের মধ্যে দুইজন বাদে সবার জামিন হয়ে গেছে, এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। যাদের জামিন হয়নি তারা হলেন, মৃত রুস্তমের সন্তান রশীদ (৩০) ও জালালের সন্তান মাসুদ (১৮)। এই দুইজনকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
আগুন নেভাতে আসেন প্রতিবেশী মৃত শামসুল হকের সন্তান আব্দুল মজিদ, আব্দুল জলিলের সন্তান সোহেল রানা ও আব্দুল জলিলের স্ত্রী হাসিনা বেগম। তারা সকলেই আগুন ধরার বিষয়টি প্রতক্ষ করেন এবং আগুন নেভাতে সাহায্য করেন। তারা জমি সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়টি এবং মারধরের বিষয়টিও নিজ চোখে দেখেছেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, বিষয়টি জমি সংক্রান্ত। নাজমা জমির জন্য টাকা দিয়েছিল, কিন্তু জালাল বিভিন্নভাবে টালবাহানা করে ঘুরাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ভবানীপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার লাল মিয়া জানিয়েছেন, আমাকে এ বিষয়ে নাজমা খাতুন জানিয়েছে। টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করার ঘটনা সত্য, শুনেছি তার থাকার ঘরে আগুন জ্বলেছিল, কে-বা কারা লাগিয়েছে আমার জানা নেই।
এ ব্যাপারে ভবানীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুর মল্লিক জীবন জানিয়েছেন, এই সমস্যাগুলোর কথা নাজমা খাতুনের স্বামী আমাকে জানিয়েছিল, কোনও লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে সামাজিকভাবে উভয়পক্ষ গ্রাম্য সালিশি সমাধান চাইলে আমি চেষ্টা করবো।
এ ব্যাপারে প্রতিবেদক অভিযুক্ত জালাল উদ্দিনের সাথে দেখা করতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি মহেশপুর বাজারে আছি, বাজারে আসেন”। অতঃপর সাথেসাথে ওই বাজারে গেলে তিনি মোবাইলে টালবাহানা মূলক কথাবার্তা বলে। তখন তিনি বলেন, পরে দেখা করবো। এরপর তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়িয়া থানার এএসআই শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, নাজমা খাতুনের দেওয়া অভিযোগের তদন্তে আমি গিয়েছিলাম, পরে বুঝতে পারি বিষয়টি জমি সংক্রান্ত। আগুন কে বা কারা লাগিয়েছে কেউ বলতে পারেনি। নাজমা খাতুন সাত বছর আগে জালালকে ৫০হাজার টাকা দিয়েছিল, এই বিষয়টি জালাল আমার সাথে স্বীকার করেছে। যখন ওই টাকাটা দেয় তখন ওই জমির মূল্য ৫০ হাজার-ই ছিল।
এ ব্যাপারে জমির প্রকৃত মালিক অভিযুক্ত জালালের ভাই ভাই আলম মিয়া জানিয়েছেন, আমার টাকার খুবই প্রয়োজন ছিল তখন। এখন ১০ হাজার টাকা দিলে যেকোনও সময় আমি ওই জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে রাজি আছি।
রোববার [১৩ ডিসেম্বর ২০২০] বিকেলে মকবুল হোসেনের দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মান্নান জানিয়েছেন, ভুক্তভোগীদের অনেক মারধর করেছে, মেডিক্যাল সার্টিফিকেট পেয়েছি। মামলাটি তদন্তাধীন, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রতিনিধি/ মো. মোজাহিদ