করোনা মহামারীতে টম ক্রুজ যেভাবে হলিউডকে এগিয়ে নিয়েছেন
Advertisements

মিশন ইম্পসিবলের নায়ক টম ক্রুজ বাস্তব জীবনেও প্রায় অসম্ভব এক তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছে বছরখানেক ধরে। গত বছর লকডাউনের সময়েও যে কয়েকটি হলিউড ব্লকবাস্টারের কাজ এগিয়ে চলেছিল তার মধ্যে অন্যতম টম ক্রুজের মিশন ইম্পসিবল সেভেন। অভিনয় থেকে শুরু করে ছবির প্রডাকশনের চ্যালেঞ্জ—সবই সামলাচ্ছিলেন এক হাতে।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে নরওয়েতে মিশন ইম্পসিবল সেভেনের শুটিং শুরু করেন টম ক্রুজ। প্রথম দিনই মোটরসাইকেলে পাহাড়ের খাড়া থেকে এক স্টান্ট দৃশ্যের কাজ করেন তিনি। এবং বড় এক দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যান। বাতাসটা বেশি থাকলে সেদিন হয়তো মাথায় বড় আঘাত পেতে হতো তাকে। শেষমেশ প্যারাসুটের মাধ্যমে পাহাড়ের ঢাল থেকে সমতলে নিরাপদে নেমে আসেন তিনি।

কভিড ১৯-এর কারণে বিপর্যস্ত দুনিয়ায় বন্ধ ছিল হলিউডের সব বড় বড় ছবির শুটিং। শুটিং শুরুর সময়ে কী ভাবছিলেন টম ক্রুজ? ‘আমি ভাবছিলাম সহকর্মী ও ইন্ডাস্ট্রির কথা। ছবির কাজ শুরু করতে পারাটা আমাদের সবার জন্য একটা মানসিক শান্তির ব্যাপার ছিল। সময়টা ছিল খুবই আবেগময়।’

প্যারাশুট দিয়ে নেমে আসার পর আবার গিয়ে সেই স্টান্ট করেন তিনি। একবার, দুবার…পরিচালক ক্রিস্টোফার ম্যাককারিকে সন্তুষ্ট করতে ছয়বার শট দেন টম। সেদিন এটা শুধু একটা ছবির স্টান্ট নিয়ে লড়াই ছিল না, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে শুটিং শুরু করে টম ক্রুজ হলিউডকে আশা দেখিয়েছিলেন। শুরু হয়েছিল সিনেমার দুনিয়া রক্ষা করার লড়াই আর তাতে নেতৃত্ব দিলেন দুনিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় তারকা।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে টম ক্রুজ মিশন ইম্পসিবল সেভেনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, অন্যদিকে কাজ করছিলেন টপ গানের। তিনি এবং পরিচালক ক্রিস্টোফার ম্যাককারি তখন ইতালিতে। হঠাৎই প্যারামাউন্ট স্টুডিও থেকে ফোন আসে তারা, যেন পরবর্তী পরিস্থিতি না দেখে ইতালি ত্যাগ না করেন। টমের কথায় সেই ফোন রাখার একটু পরই এল আরেক ফোন এবং জানানো হলো প্যারামাউন্ট তাদের মিশন ইম্পসিবল ও টপ গানের কাজ স্থাগিত করছেন। খবরটা আমার কাছে হাতুড়ির আঘাতের মতো মনে হয়েছিল।

শুধু মিশন ইম্পসিবল নয়, সবখানেই শুটিং বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। মিশন ইম্পসিবলের আকারের একটি ছবির কাজ বন্ধ হওয়া মানে হাজার খানেক মানুষ কর্মহীন।

এবার টম ক্রুজ পর্দায় নয়, বাস্তব জীবনেই প্রায় অসম্ভব এক তত্পরতা শুরু করেন। টম ক্রুজের ছবির সঙ্গে কয়েক হাজার মানুষের জীবিকা জড়িয়ে ছিল। এটাই তাকে শান্ত থাকতে দিচ্ছিল না। তিনি তখন স্টুডিও এবং হলিউডকে জানিয়ে দেন, ‘আমরা কাজে ফিরছি। আমরা সবাইকে কাজে ফেরাব। আমরা গ্রীষ্মে শুটিং শুরু করব। কীভাবে নিরাপদে কাজ করা যায় সেটা বের করব।’

শুটিং করার জন্য নতুন করে সব নিয়ম তৈরি করতে হচ্ছিল। আর তা করছিলেন স্বয়ং টম ক্রুজ। শুধু নিজের ছবির জন্যই নয়, তিনি পরামর্শ দিচ্ছিলেন অন্য স্টুডিওগুলোকেও। ‘অন্য স্টুডিও-সংশ্লিষ্টদেরও জানাচ্ছিলাম যে আমরা কীভাবে কাজ করছি এবং আমারে প্রটোকলগুলোও তাদের জানাচ্ছিলাম। অন্যরাও আমাদের অনুসরণ করছিল। ব্যাপারটা ছিল এমন যে সবাই বলতে লাগলেন মিশন ইম্পসিবল তো এগিয়ে যাচ্ছে, তারা থামছে না। আমি বন্ধুদের ফোন করে বলতে শুরু করলাম, তোমরা তোমাদের ছবির কাজ শুরু করো। আমরা তো করছি।’

নিত্যনতুন কৌশল করে টম ক্রুজ তার শুটিং এগিয়ে নেন। আবুধাবি, নরওয়ে কিংবা ইতালিতে শুটিংয়ে অনুমতি জোগাড় করা সহজ ছিল না। টম বলেন, ‘স্টুডিও, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং সংশ্লিষ্ট দেশের আইনের সঙ্গে মিলিয়ে আমাদের কাজের প্রটোকল নির্ধারণ করতে হয়েছে। সবাই বলছিলেন এভাবে এগোনো যাবে না। আমি বলেছিলাম, আমরা এগিয়ে চলেছি।’ বড় পর্দার ইথান হান্টকে বাস্তবে হাজির করেছেন টম ক্রুজ।

সূত্রঃ বণিক বার্তা, এম্পায়ার ম্যাগাজিন

Advertisements