মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আবার সেই একটি মান্ধ্যাতার আমলের দেশ হয়ে যাব? সেটা আমরা হতে দেব না। আওয়ামী লীগ সরকার যতদিন আছে আমরা সেটা হতে দেব না। আমাদের তরুণ-তরুণীদের পক্ষে আমি বলতে চাই, এই মৌলবাদী শক্তিকে আমাদের মুছে ফেলতে হবে। তারা যদি আফগানিস্তান এত পছন্দ করে তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে বের করে দিয়ে আফগানিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া উচিত। তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছি, বাংলাদেশকে আধুনিক করেছি। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল করছি। রাজাকারদের মোকাবিলা আমরা করতে জানি।
শনিবার রাতে ৪র্থ ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২০ উপলক্ষ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ১২ বছর’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে মূল প্রবন্ধও উপস্থাপন করেন।
জয় বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে তারা সাহস করেছে জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙার। জাতির পিতার ভাস্কর্যের ওপর হামলা করাটা কি? এটা হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতার চেতনার ওপর হামলা। আমাদের স্বাধীনতার চেতনার ওপর হামলা কারা করেছে? যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তাদেরকে আমরা কি বলি? তাদেকে আমরা কি ডাকি? তাদেরকে আমরা রাজাকার ডাকি। একাত্তরে ছিল জামায়াত, আর এখন হেফাজতও সেই নতুন রাজাকার হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে আমরা কাউকে পিছিয়ে দিতে দেব না। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় আছে, বাংলাদেশের উন্নয়ন হতে থাকবে। আর স্বাধীনতার চেতনা আমরা কাউকে মুছে দিতে দেব না। স্বাধীনতার চেতনার ওপর যারা হামলা করবে তাদের রাজাকারদের মতো বিচার করা হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যারা কথা বলবে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যারা কথা বলবে তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে মুছে ফেলা হবে।
মুজিববর্ষে জাতির পিতাকে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র জয় বলেন, উনার স্বপ্ন, উনার সোনার বাংলা, আমরা বাস্তবায়ন করছি। আমরা পরিশ্রম করছি, এটা উনারই স্বপ্ন ছিল। একটি উন্নয়নশীল বাংলাদেশ। যেখানে কোনো অভাব নেই। যেখানে সব মানুষ ভালো আছে। এটাই হচ্ছে ওনার স্বপ্ন, সোনার বাংলার স্বপ্ন। আসেন আমরা সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করি।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সজীব ওয়াজেদ বলেন, আমাদের ১৬ কোটি মানুষের দেশে মাত্র ১০ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতো। দিনে ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকতো না। আর আজ বিদ্যুতের প্রশ্ন তোলার প্রয়োজনই নেই। এখন আমাদের দেশের ১০ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। আজ পদ্মা সেতু প্রায় সম্পন্ন হয়ে গেছে। মেট্রোরেলের কাজ চলছে। আমরা দেশে সাড়ে আট হাজার ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করেছি। সাড়ে তিন হাজারের উপরে ইউনিয়নে আমরা ফাইবার কেবল নিয়ে গিয়েছি। যেখানে আমাদের থ্রি জি ছিল না, সেখানে আমরা ফোর জি চালু করেছি। আগামী বছরের মধ্যে আমাদের স্বপ্ন ফাইভ জি চালু করা।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রস্তুতি বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, আজ আমরা কিন্তু কোনো দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই। আমরা মহাকাশও জয় করেছি। এটা কিন্তু আগে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। তবে এটার লাভটা কি? এটা কিন্তু তরুণরা বুঝতে পারছে। এই যে ২০২০ সালে এই মহামারীতে একটা অন্যরকম বছরে আমরা আছি, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ যদি না থাকতো, তাহলে আমাদেও কি অবস্থা হতো? আওয়ামী লীগ সরকার, আইসিটি ডিভিশন, আমরা কিন্তু অনলাইনে কাজ করার প্রস্তুতি গত ১২ বছর ধরে নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা ৪০ হাজারের উপরে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরূম বানিয়েছি। সরকারি কার্যক্রম অনলাইনে করতে ই-নথি চালু করেছি। আমরা ২০ হাজারের উপরে সরকারি অফিসকে কানেকশন দিয়েছি। মহামারী শুরু হওয়ার পরে দুই মাসের মতো আমাদের দেশের সবকিছু বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। কিন্তু তখন আমাদের সরকারি কার্যক্রম কিন্তু থাকেনি। আমরা ই-নথিতে চলে গিয়েছিলাম। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে চলে যাই। যে ডিজিটাল সিস্টেম আমরা করেছি, তাতে আমাদের দেশ চলতে থাকে। আমরা ই-জুডিশিয়ারি সিস্টেম আমরা শুরু করেছিলাম।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থার কথা তুলে ধরে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, এখানে কিন্তু এখনও কোভিড বাড়ছে। এরা কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ। সেখানে কিন্তু আড়াই লাখের বেশি মানুষ মারা গেছে। আর বাংলাদেশে এটা ছয় হাজার। তবে এটাও দু:খের বিষয়। কারণ আমরা চাই না একটি প্রাণও হারাতে। তবে এটা সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের কারণে, ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণে। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি, মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছি। পদ্মাসেতু বানিয়ে ফেলেছি। যেটা সবাই বলেছিল- কোনোদিন পারবে না। আমরা সেটা করে দেখিয়েছি। ভবিষ্যতের আরও স্বপ্ন আছে। আমার স্বপ্ন- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশ শুধু অংশগ্রহণই করবে না, আমরা এখানে নেতৃত্ব দেব। আমার বিশ্বাস আছে, আইসিটি টেকনোলজিতে আমরা কিছু আবিস্কার করব। সেই দিকে নজর দিয়েই আমরা অনেকগুলো পলিসি পাশ করিয়েছি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি।