ম্যারিটাল-রেইপ
Advertisements

রেস্ট্রিক্টিভ সেন্সে ম্যারিটাল রেইপ বা বৈবাহিক ধর্ষণের শাস্তি বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনেই প্রদান করা সম্ভব। এর জন্য নতুন কোন আইনের প্রয়োজন নেই।

কথা শুনে অনেকেই অবাক হচ্ছেন?

হুম, কারণ ম্যারিটাল রেইপ নিয়ে আমাদের কিছু ধারণাগত অস্বচ্ছতা আছে। পৃথিবীর যে দেশগুলোতে ম্যারিটাল রেইপের জন্য শাস্তির বিধান আছে, সেসবের অনেকগুলোতেই ‘ম্যারিটাল রেইপ’ এবং ‘নরমাল রেইপ’ উভয়ের জন্য ভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। অর্থাৎ সাধারণ রেইপের সংজ্ঞা ম্যারিটাল রেইপের বেলায় প্রযোজ্য নয়, বরং ম্যারিটাল রেইপ হবার অতিরিক্ত কিছু ভায়োলেন্ট উপাদান আবশ্যক।

আমেরিকার ৫০টি রাজ্যেই ম্যারিটাল রেইপের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে, তবে তন্মধ্যে ৩৩টি রাজ্যেই ম্যারিটাল রেইপকে ভিন্ন ভাবে সংজ্ঞায়িত ও ভিন্ন মাত্রায় শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে। যেমন নর্থ ক্যারোলিনা রাজ্যে ব্যাপারটিকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে- “Spousal sexual battery- as defined in Section 16-3-615, when accomplished through use of aggravated force, defined as the use of a weapon or use of a physical force of a high and aggravated nature, by one spouse against the other spouse……..”

অর্থাৎ ব্যাপারটি তখনই অপরাধ হবে যদি স্বামী বা স্ত্রী তার পার্টনারের সাথে যৌনমিলনের জন্য অস্ত্র বা অত্যাধিক ও ভয়াবহ রকমের শারিরীক বলপ্রয়োগ করে। সাধারণ বলপ্রয়োগ হলে হবে না।

এখানে দুটি বিষয় লক্ষণীয় – প্রথমত সাধারণ রেইপের সংজ্ঞা হতে এটি ভিন্ন, কারণ সাধারণ রেইপে বলপ্রয়োগ অপরিহার্য নয়। অন্যভাবেও হতে পারে। যেমন ‘without her consent’ অর্থাৎ সম্মতি না নিয়ে কেউ ঘুমন্ত নারীর সাথে সঙ্গম করলেও সেটা সাধারণ হবে। কিন্তু তা ম্যারিটাল রেইপ হবে না। এমনকি ছলনা করে সম্মতি আদায় করলেও তা সাধারণ রেইপ হয়, কিন্তু বৈবাহিক রেইপ হবে না খোদ আমেরিকার অধিকাংশ রাজ্যের আইনে। ম্যারিটাল রেইপের জন্য অপরিহার্য শর্ত হলো অস্ত্রের ব্যবহার বা অত্যাধিক ও ভয়ংকর মাত্রার বলপ্রয়োগ।

আর ২য় লক্ষণীয় বিষয় হলো- আমেরিকায় যা করলে তা রেইপ হয়, সেটা বাংলাদেশের একাধিক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কেউ তার স্ত্রীর সাথে শারিরীক যখম, অত্যধিক বলপ্রয়োগ বা অস্ত্র ব্যবহার করলে সেটি বাংলাদেশ দণ্ডবিধি এবং বিশেষ করে ‘ডমেস্টিক ভায়োলেন্স এ্যক্টের’ একাধিক ধারায় তা প্রতিকারযোগ্য। ডমেস্টিক ভায়োলেন্স এ্যাক্টে এমনকি কোন স্বামী স্ত্রীকে মানসিক নির্যাতন করলে তারও প্রতিকার আছে। এজন্যই আমি বলেছি, রেস্ট্রিক্টিভ সেন্সে বাংলাদেশেও ম্যারিটাল রেইপের প্রতিকার আছে।
তারচেয়ে বড় কথা, স্বামীর সংসার অসহ্য লাগলে যেকোন মেয়ে চাইলে স্বামীকে তালাক দিতে পারে।

তবে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বেশির ভাগ বিদেশী আইনে এক্ষেত্রে সরাসরি ‘রেইপ’ বা ধর্ষণ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। এর বদলে ‘spousal sexual violence’ বা ‘conjugal violence’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
এটাই বরং উপযুক্ত শব্দ। কারণ রেইপের ফলে একটা মেয়ের সামাজিক মর্যাদা হানি হয়, সতীত্ব নষ্ট হয়, কিন্তু স্বামীর হাতে রেইপের ক্ষেত্রে ফিজিকাল ভায়োলেন্স হলেও সেসব ক্ষতি হয়না। বরং এখানে সে অভ্যস্ত ও যৌনতার জন্য চুক্তিবদ্ধ কোন একজনের কর্তৃক অপরাধের স্বীকার।

এছাড়া সোশ্যাল এডভোকেসির জন্যেও এক্ষেত্রে রেইপ শব্দটা ব্যবহার বোকামি। কারণ মানুষ রেইপ শব্দটা শুনলে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাবে, গ্রহণ করবে না৷ কিন্তু ‘বৈবাহিক যৌন সহিংসতা’ জাতীয় শব্দ এরচেয়ে তূলনামূলকভাবে অনেক কৌশলগত ও ন্যয্য শব্দ।

তবে নারীবাদীরা ইদানীং সাধারণ রেইপ ও ম্যারিটাল রেইপের মাঝে সংজ্ঞাগত পার্থক্য বিলোপের জন্যেও আন্দোলন করছে। অনেক দেশে সফল ও হয়েছে।

আমাদের বাংলাদেশে যারা আন্দোলন করছে তারা ম্যারিটাল রেইপের কোন সংজ্ঞায় বিশ্বাস করেন তা আগে পরিষ্কার করা দরকার। অন্যথা আপনি কোনদিন বৈবাহিক ক্যামিস্ট্রির উদ্যমতায় ঘুমন্ত অবস্থায় যৌনাচার করলেও সেটাও কিন্তু রেইপ হয়ে যাবে। কারণ এটা- without her consent’…।

সেক্ষেত্রে আমি তার বিরোধিতা করবো। এটা বৈবাহিক সম্পর্কের অদৃশ্য ফ্যাব্রিককেই নষ্ট করে দিবে।

আমার মনে হয় প্রান্তিকতাশ্রয়ী না হয়ে নারীদের ভোগান্তিগুলোকেও বিবেচনায় নিতে হবে। অনেক মদ্যপ স্বামী স্ত্রীকে যাচ্ছেতাই সময় অসময়ে এবিউজ করে, মারধর করে। পিরিয়ড অবস্থাতেও এমনটা করে। এসবের প্রতিকার দরকার অবশ্যই।
তবে সেটার জন্য রেইপের মত একটা সেনসিটিভ টার্মকে না আমন্ত্রণ না জানিয়ে বরং নারীদেরকে বিদ্যমান আইন সম্পর্কে সচেতন করানো দরকার। রাষ্ট্র কর্তৃক বিদ্যমান আইনের প্রয়োগকে শক্তিশালী করা উচিৎ। পাশাপাশি নারীদের আর্থসামাজিক ভাবে ক্ষমতায়ন করা উচিৎ যাতে কোন জালেম স্বামীর অত্যাচারকে সে লাত্থি মেরে চলে আসার সামর্থ্য থাকে। প্রয়োজন হলে বিদ্যমান আইনকেও আংশিক সংশোধন করা যেতে পারে। কারণ সুনির্দিষ্ট বিধান অধিকতর কার্যকরী।

কিন্তু তার জন্য রাষ্ট্রকে বেডরুমে ডেকে আনা আরো নতুনমাত্রিক সমস্যা সৃষ্টি করবে। যে দেশে নারী নির্যাতন মামলার বেশিরভাগ ভুয়া হয়, সেক্ষেত্রে আইন করে রেইপ আর মেরিটাল রেইপের পার্থক্য বিমোচন করা কত বড় অপরিনামদর্শী ব্ল্যাংক চেক দিয়ে দেয়া হবে তা অকল্পনীয়। একটা অপরাধের প্রতিকার করতে আরো হাজারটা অন্যায়ের দরজা খুলবেন তা ভাবতে পারছেন..? যেখানে উন্নত দেশেই প্রমাণের অভাবে রেইপের বিচার হয়না যেখানে, সেখানে ম্যারিটাল রেইপের বিচারই বা কিভাবে করবেন..? বেডরুমে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাবেন?

সব মোরাল ক্রাইসিসকে রাষ্ট্র দিয়ে সমাধান করতে যাবেন না।
পশ্চিমে এখন ৭০% মানুষ বিয়েই করে না। ওরা হয়তো বিয়েটাকে চিরতরে বিদায় জানানোর প্রক্রিয়া হিসেবে বা ‘নিওলিবারেল ওয়ার অন ম্যারিজ’ প্রজেক্টের অংশ হিশেবে এসব এজেন্ডা পুশ করে থাকে। কিংবা বলতে পারেন ওরা সম্পূর্ণ দাগে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী মানুষ হয়ে উঠেছে, যেখানে যেকোন কালেক্টিভিস্ট প্রতিষ্ঠানই অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু বাংলাদেশে যেকোন ধারণাকে আমদানি করার আগেই এদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতাকে না ভাবার কপি-পেস্ট এনলাইটেনমেন্ট মনস্তত্ত্বদের আপনাদের আর কাটলো না।

বাংলাদেশে যারা এই আইডিয়া টাকে পুশ করে তাদের অনেকেই সত্যিকার সিমপ্যাথাইজার। তবে এদের সাথে অনেক অধিকার ব্যবসায়ী দালাল ও আছে।

ইসলামেও পিরিয়ডের সময় যৌনাচার হারাম। স্ত্রীর প্রতি কম্প্যাশনেট ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া ইসলামের অন্যতম মৌলিক শিক্ষা। হাদিসে এমনো এসেছে সঙ্গমের স্বামীর অর্গাজম হলেই যাতে সে স্ত্রীর থেকে পৃথক না হয়ে যায়, বরং স্ত্রীর চাহিদা পূর্ণ হবার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করে।

Advertisements