
‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ’-এর আয়োজনে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত ‘মার্চ ফর গাজা’ গণজমায়েত থেকে প্যালেস্টাইনের প্রতি সংহতি জানিয়ে একটি ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা প্রকাশ করা হয়েছে।
ঘোষণাপত্র পাঠ করেন দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। এতে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে গাজার জনগণের সংগ্রামের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন, জায়নবাদী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের আহ্বান এবং দেশের সরকারের কাছে একাধিক দাবি তুলে ধরা হয়।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ইতিহাস ধারণ করে বলেই গাজার নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো শুধু রাজনৈতিক বা মানবিক নয়, বরং ঈমানি দায়িত্বও। এ আন্দোলনকে শুধুমাত্র প্রতিবাদ নয়, বরং এক ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা, অঙ্গীকার ও শপথ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
ঘোষণায় বলা হয়, গাজায় চলমান গণহত্যা কোনো একক রাষ্ট্রের ব্যর্থতা নয়, এটি গোটা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার নৈতিক পতনের ফল। ইসরাইলকে যে পশ্চিমা শক্তিগুলো অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিচ্ছে, তাদের ভূমিকা সরাসরি এই হত্যাযজ্ঞকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
ঘোষণাপত্রে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়: ইসরাইলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করা, যুদ্ধবিরতির নামে ছলচাতুরি বন্ধ করে গণহত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, ১৯৬৭ সালের সীমান্ত অনুযায়ী ফিলিস্তিনকে ভূমি ফিরিয়ে দেওয়া, পূর্ব জেরুসালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং ফিলিস্তিনিদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করা।
মুসলিম উম্মাহ ও ওআইসির প্রতি আহ্বান জানিয়ে ঘোষণায় বলা হয়, ফিলিস্তিন কেবল একটি ভূখণ্ড নয়, এটি মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের প্রতীক। গাজার ধ্বংস আজ উম্মাহর সম্মিলিত ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। এ প্রেক্ষাপটে ইসরাইলের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন, বাণিজ্যিক অবরোধ আরোপ, গাজার জনগণের প্রতি চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা, ইসরাইলকে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করা এবং ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ঘোষণায় ছয়টি সুস্পষ্ট দাবি জানানো হয়:
ইসরাইলের বিষয়ে বাংলাদেশের পূর্বের অবস্থান পুনঃস্থাপন (পাসপোর্টে ‘Except Israel’ পুনর্বহাল), ইসরাইলি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল, রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রেরণ, জায়নবাদী পণ্য বর্জনে সরকারি নির্দেশনা, ভারতের মুসলিমবিরোধী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং শিক্ষা পাঠ্যক্রমে ফিলিস্তিন ও মুসলিম ঐতিহাসিক সংগ্রাম অন্তর্ভুক্ত করা।
ঘোষণাপত্রের শেষাংশে বাংলাদেশের জনগণের নিজেদের প্রতি একটি চেতনার অঙ্গীকার তুলে ধরা হয়। বলা হয়, আল-কুদস কেবল একটি শহর নয়, এটি ঈমানের অংশ। আল্লাহর সাহায্যে মুসলিম প্রজন্মই একদিন বাইতুল মাকদিস মুক্ত করবে—এই বিশ্বাসকে ধারণ করে গৃহস্থালি থেকে শিক্ষা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি সবখানে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশের জনগণ অঙ্গীকার করে, তারা ইসরাইল-সমর্থিত সকল পণ্য বর্জন করবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আত্মপরিচয় ও ইসলামী চেতনাভিত্তিকভাবে গড়ে তুলবে, জান-মালের ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে এবং ঐক্যবদ্ধ থাকবে যাতে বাংলাদেশ কখনোই হিন্দুত্ববাদী ও জায়নবাদী ষড়যন্ত্রের শিকার না হয়।
ঘোষণাপত্রের শেষাংশে গাজার শহীদদের স্মরণে দোয়া জানিয়ে বলা হয়, গাজার রক্তে পবিত্রতা আরও বেড়েছে। শহীদ হিন্দ রজব, রীম ও ফাদি আবু সালেহসহ সকল শহীদের নাম ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ থেকে জানানো হয় তাদের প্রতি সালাম, ভালোবাসা ও সম্মান।
ঘোষণার সর্বশেষ বাক্য ছিল:
“হে আল্লাহ, গাজার এই সাহসী জনপদকে তুমি সেই পাহাড়ে পরিণত করো, যার ওপর এসে ভেঙে পড়বে জায়নবাদীদের সব ষড়যন্ত্র।”