১.কলামিস্ট সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে লেখেন। চলতি যেসব বিষয় মানুষকে নাড়া দেয় সেসব বিষয়ে তার ভাষ্য লিখে থাকেন। কাজেই একথা বলা যায় যে একজন কলামিস্ট মানুষের নিত্যদিনের মানসিক খোরাক যোগান দেন। কিন্তু এর মানে এই নয় যে একজন কলামিস্ট আজকে যা লিখলেন তা কালকেই ফুরিয়ে যায়। একজন ভাল কলামিস্ট তার দৈনন্দিন ভাষ্যনির্ভর লেখার মধ্যে অনেকসময় তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা এমনভাবে বুনে দেন যে তা-ও কোন কোন সময় স্থায়ীত্ব পেয়ে যায়। সমকালের ভাষ্য থেকে চিরকালের বাণী হয়ে ওঠে।
এবনে গোলাম সামাদ এমনই একজন বিরল সংবাদপত্র কলামিস্ট। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। বিজ্ঞান তিনি শিখেছেন ও শিখিয়েছেন পদ্ধতিগতভাবে। কাজেই তার একটি বৈজ্ঞানিক মানস ও চিন্তারীতি গড়ে উঠেছে। এই বিষয়ে তার সমৃদ্ধ ইউরোপীয় উচ্চশিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতাও রয়েছে। তিনি লিখেছেন:
“আমি ছিলাম, ঐ যাকে সাধারণভাবে বলে অভিজ্ঞতাবাদী (Empiricist)। সবকিছু যুক্তি দিয়ে প্রমাণিত হয় না। কেউ যদি বলে, রাজশাহীর বাজারে ১৪০ রকম আম বিক্রি হয়, তবে তার কথাটা সত্য কি না, সেটা জানবার জন্য যেতে হবে রাজশাহীর বাজারে। বিশুদ্ধ যুক্তি দিয়ে এটার সত্য-মিথ্যা প্রমাণ করা যাবে না।“ [১]
এখান থেকে স্পষ্ট যে তিনি পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণমূলক অভিজ্ঞতাকে সবচাইতে গুরুত্ব দেন। আর এখানেই নিহিত রয়েছে তার নৈর্ব্যক্তিক, নির্মোহ, বস্তনিষ্ঠ এবং ব্যবহারিক বৈজ্ঞানিক মানসের উৎস।
তার আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে যা তার লেখার পরতে পরতে দৃশ্যমান। সেটি হল এদেশের গণমাধ্যমে ও বুদ্ধিবৃত্তির বলয়ে বহুল প্রচলিত যেসব ভাষ্য ও বয়ান পুনরাবৃত্তির মধ্য দিয়ে কর্তৃত্ব করছে তিনি সেগুলিকে তার নিজস্ব পড়াশুনা, জ্ঞান ও বিচার-বিশ্লেষণ দিয়ে যাচাই বাছাই করে নেন। তিনি এমন কোন দল বা পক্ষ অবলম্বন করেন না যেখানে তথ্য ও সত্যের চাইতে রঙ মাখানো প্রচার-প্রপাগান্ডাই মুখ্য। একারণে তাকে এদেশে বহুল প্রচলিত ও প্রচারিত মোটা দাগের বোকা বোকা বয়ানগুলি পুনরুৎপাদন করতে দেখা যায় না। বরঞ্চ তিনি নিঃস্বার্থভাবে ও নির্মোহভাবে তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে প্রতিটি বিষয়কে দেখতে, বুঝতে ও বোঝাতে চান। তিনি লিখেছেন:
“বর্তমান লেখক ব্যক্তিগতভাবে কোন দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। তবে রাজনীতির ক্ষেত্রে তিনি চান রাজনীতির সামাজিকীকরণ। অর্থাৎ মানুষে মানুষে সংঘাত কমিয়ে তাদের অন্তরঙ্গকরণ। লেখকের কোন ধরাবাঁধা রাজনৈতিক দর্শন নাই। তবে রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসাবে তিনি উদার গণতন্ত্রে আস্থাশীল” [২]
তার নির্মোহ নৈর্ব্যক্তিকতার আরেকটা উজ্জ্বল উদাহরণ হল একাত্তর নিয়ে তার যে অভিজ্ঞতা সেটা। তিনি বলেছেন সে সময়ে তার চিন্তা ও কাজ তাকে কর্তৃপক্ষের বিরাগভাজন করেছিল। তিনি নিজেকে অনিরাপদ বোধ করায় সীমান্ত অতিক্রম করে কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানে থেকে তিনি ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন এবং বুঝে যান যে প্রচার-প্রপাগান্ডা আর আসল হাকিকতের মধ্যে বেশ ফারাক আছে। বিশেষ করে ইন্দিরা গান্ধীর প্রভাবে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার যে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছিল না সেটা তিনি তখনই বুঝে উঠতে পেরেছিলেন। ভারতীয় বিভিন্ন কারসাজি তাকে একাত্তরের সম্ভাবনা ও বাস্তবতা সম্পর্কে তখনই সচেতন করে তোলে। ফলে তিনি দেশে ফিরে আসবার পর থেকেই পুরো বিষয়টাকে স্বাধীনভাবে বিচার-বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ণ করতে থাকেন। এখান থেকেই তার একটি স্বকীয় কন্ঠস্বর তৈরি হয়। যা তিনি তার ধারাবাহিক কলামের মাধ্যমে দেশবাসীকে নিয়মিত শুনিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এই প্রসঙ্গে তার বিভিন্ন কলামে লিখেছেন: “১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ে আমি কলকাতায় ছিলাম। কলকাতায় থাকার সময় দেশ নিয়ে ভেবেছিলাম অনেক কিছু। খোঁজ নিয়েছিলাম ইতিহাসের ধারার। কলকাতায় পেয়েছিলাম এ বিষয়ে পড়াশোনা করবার বিশেষ সুযোগ। যেটা দেশে থাকলে হতে পারত না।“ [৩]
“ভারত সরকারের কথাতেই হতে থাকে সব কাজ। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার হয়ে ওঠে একটি কাগজি বাস্তবতা মাত্র। … … … তাজউদ্দীনের নীতি কেবল যে দিল্লীতে তৈরি হতো তা নয়, অনেক পরিমাণে মস্কো থেকেও তা আসতো তৈরি হয়ে। … … …এতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের কার্যত কোনো ভূমিকা ছিল না। তাজউদ্দীন ভারত সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন বাংলাদেশের কোনো পৃথক সেনাবাহিনী থাকবে না। থাকবে কেবল মিলিশিয়া। বৈদেশিক আক্রমণ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করবে ভারতের সেনাবাহিনী। তাজউদ্দীন ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন যে, বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি নির্ধারিত হবে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে। শেখ মুজিব দেশে ফিরে তাজউদ্দীনের এইসব চুক্তিকে মানতে রাজি হন না। তাজউদ্দীনের সঙ্গে সৃষ্টি হয় তার গুরুতর মতবিরোধ।“ [৪]
২.বায়ান্নো থেকে একাত্তর হয়ে পচাত্তর পর্যন্ত এদেশে ইউরো- ও ইন্দোকেন্দ্রিক মনন ও সৃজনের উত্তরোত্তর উত্থান ঘটেছিল। বাঙালি মুসলমানের স্বাতন্ত্র্যচেতনা এই সময়কালে ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এর বিপরীতে বাঙালি সেক্যুলার চেতনা আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল বুদ্ধিবৃত্তি ও সৃজনশীলতার বৃত্তগুলিকে। আবদুল হক, শামসুর রাহমান, বদরুদ্দীন উমর, শহীদ কাদরী, জহির রায়হান, সৈয়দ শামসুল হক, আনিসুজ্জামান, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, আকবর আলী খান, নির্মলেন্দু গুণ, হুমায়ুন আজাদ, আহমদ ছফা, গোলাম মুরশিদ, ফরহাদ মজহার, হুমায়ূন আহমেদ, আফসান চৌধুরী, তসলিমা নাসরীন, সলিমুল্লাহ খান প্রমুখ এই ইউরো- ও ইন্দোকেন্দ্রিকতার বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার রূপকার হয়ে উঠেছেন।
এর ফলে ফররুখ আহমদ, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন, সৈয়দ আলী আহসান, সৈয়দ আলী আশরাফ, শাহেদ আলী প্রমুখ প্রতিভাবানদের মনন ও সৃজনশীলতা ক্রমাগত চন্দ্রগ্রহণের মত আবৃত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু আশি দশকের শেষ থেকে এবং নব্বই দশক থেকে ইসলামকেন্দ্রিক মনন ও সৃজনশীলতায় একটি ধীর অথচ লক্ষণীয় পুনর্গঠন ঘটতে শুরু করেছে। এই বাংলাদেশ-উত্তর ইসলামকেন্দ্রিকতার নবজাগরণ যাদের মাধ্যমে ঘটেছে এবং এখনো ঘটছে তাদের অন্যতম এক কলমযোদ্ধা হলেন প্রবীণ মনীষী ড. এবনে গোলাম সামাদ। তিনি চলতি ঘটনাবলীর উপরে সংবাদপত্রে স্তম্ভের আঙ্গিকে তার বিশ্বকৌষিক জ্ঞান ও বিশ্লেষণ নিয়মিত রচনা করে পাঠকদের উপহার দিচ্ছেন।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। তার বয়স এখন নব্বইয়ের কোঠায়। তিনি রাজধানী ঢাকা নগরভিত্তিক নন। তিনি ঢাকা মহানগরীর বুদ্ধিবৃত্তিক ও সৃজনশীল অধিপতি ধারার বাইরে অবস্থান করেও আঞ্চলিক বলয় অতিক্রম করে জাতীয় বলয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন। এটা কোন উপেক্ষণীয় সাফল্য নয়। এর অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে।
ইবনে খালদুন বলেছিলেন যে মুসলিম নগর সভ্যতাগুলি যখন একটা পর্যায়ে পুনরাবৃত্তি ও অবসাদের কারণে স্থবির ও অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়ে তখন নাগরিক কেন্দ্র থেকে দূরে প্রান্তিক বা মফস্বল অঞ্চল থেকে সজীব ও সচল চিন্তা এবং শক্তি আবির্ভূত হয় এবং অবক্ষয়ী মহানগরকে উদ্ধার করে। বাংলাদেশেও যেন তেমনি একটা প্রপঞ্চ আমরা দেখতে পাচ্ছি।
৩.এবনে গোলাম সামাদের স্বকীয় কণ্ঠস্বরের উদাহরণ স্বরূপ তার কলাম সংকলন থেকে আরো কয়েকটি উদ্ধৃতি দিচ্ছি। এই উদ্ধৃতিগুলি থেকে বুঝতে পারা যাবে যে তিনি কত অনায়াসে তার সহজ-সরল গদ্যের মাধ্যমে সত্যকে উচ্চারণ করেন। তার এই সহজ-সরল কথার ভেতরে ধারণ করেন গভীর অবলোকন ও উপলব্ধি। তিনি লিখেছেন:
“আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাঙ্গালি ছিল বলেই বাংলাদেশ সৃষ্টি হতে পেরেছে। কিন্তু ইতিহাস বলছে, বাঙ্গালি মুসলমান ছিল বলেই বাংলাদেশ হয়েছে। আজকের বাংলাদেশ বাঙ্গালি মুসলমানের সংগ্রামের ফল।
… … …ওপার বাংলা মানেই হল ভারত। পশ্চিম বঙ্গ একটা পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র নয়। বাংলা তার রাষ্ট্র ভাষা নয়। ভারতের রাষ্ট্রভাষা বিশুদ্ধ হিন্দী। ওপার বাংলার মানুষ কোন রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন করেনি। কিন্তু আমরা করেছি। তাদের ইতিহাস আর আমাদের ইতিহাস একই খাতে প্রবাহিত হয়নি। ইতিহাসের এই বিরাট পার্থক্যকে উপলব্ধি করার দরকার।
… … … বাঙ্গালি হিন্দু বেদ-উপনিষদের গৌরব করে। তারা চায় হিন্দু আর্য সভ্যতার ভিত্তিতে এক দেশ, এক জাতি গড়তে। কিন্তু বাঙ্গালি মুসলমানের সে গৌরববোধ ছিল না। এখনো নেই। আর নেই বলেই একটা পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্ম সম্ভবপর হয়েছে।” [৫]
“কোন দেশের মানুষ ধর্মনিরপেক্ষ না হলে, সে দেশ ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে না। রাষ্ট্রকে চলতে হয় জনমত নির্ভর করে। জনমত নির্ধারণের ক্ষেত্রে ধর্মের একটা বিশেষ ভূমিকা আছে।… … …ধর্মনিরপেক্ষতাকে কেবল আইন করে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। কেবল সংবিধান দিয়ে কোন একটা দেশের সমাজ জীবনকে বিচার করতে গেলে বড় রকমের ভুল করতে হয়।
… … … ভারতের সব ধর্মের মানুষের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে সংবিধানে। বলা হয়েছে সব মানুষের সমান অধিকারের কথা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সে দেশের মুসলমানদের কতকটা আমেরিকান নিগ্রোদের মতই অসুবিধা ভোগ করতে হয়। মুসলমানরা সাধারণভাবে হিন্দুদের কাছে হয়ে আছেন ঘৃণা-স্তম্ভ (Hate-object)। তা না হলে, রাম জন্মভূমি ও বাবরী মসজিদের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারত না। সৃষ্টি হতে পারত না হিন্দু-মুসলমানে রক্তক্ষয়ী সংঘাত। ভারতে যা ঘটেছে, তা থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, আইনের দিক থেকে যাই হোক, মনের দিক থেকে ভারত আদৌ একটা ধর্মনিরপেক্ষে দেশ নয়। আইন আর দেশের বাস্তব অবস্থার মধ্যে ফারাক আছে অনেক। ভারতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি।” [৬]
ড. এবনে গোলাম সামাদের এইসব কলাম পাঠ থেকে আমরা সমকালীন রাজনীতি, ধর্ম, সমাজ, সভ্যতা, রাষ্ট্র, জাতিসত্তা, জাতীয়তা, সম্প্রদায়, সংস্কৃতি, ভাষা, শিল্পকলা, ইতিহাস, নৃতত্ত্ব, বিজ্ঞান ইত্যাদি হাজারো চলমান বিষয়ের মধ্য দিয়ে একজন প্রবুদ্ধ ও প্রাজ্ঞ বিজ্ঞান শিক্ষক, ভাবুক ও কলামিস্টের ধারাবিবরণী, বিশ্লেষণ ও বয়ান লাভ করি।
৪.ইসলাম সম্পর্কে এবনে গোলাম সামাদের একটি নিজস্ব বোঝাপড়া আছে। যা তিনি তার আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক ও দলনিরপেক্ষ মনীষা দিয়ে সমকালীন বিভিন্ন ও বিচিত্র বিষয়াবলীর বর্ণনা, বিশ্লেষণ, মূল্যায়ণ ও ব্যাখ্যায় চমৎকারভাবে প্রয়োগ ও ব্যবহার করেন। এই বোঝাপড়ার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে তার উপমহাদেশের জাতীয়তাবাদ ও আজাদী আন্দোলন বিষয়ক ধারণা ও অভিমত। যেমন সম্প্রতি একটি ভিডিও সাক্ষাতকারে এবনে গোলাম সামাদ পাকিস্তান আন্দোলন সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন:
“পাকিস্তান আন্দোলনটি ঠিক ধর্মভিত্তিক আন্দোলন ছিলো না। কারণ এতে কোনো ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব যোগ দিয়েছিলেন না। মুসলমানরা প্রধানত প্রভাবিত ছিলেন ধর্মভিত্তিক যারা ছিলেন, তাঁদের দ্বারা এবং প্রভাবিত ছিলেন দেওবন্দের দ্বারা। দেওবন্দ পাকিস্তান আন্দোলনে কোনো অংশ গ্রহণ করেনি। কোনো ধর্মভিত্তিক শিক্ষিত ব্যক্তিরা এ আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেছিলেন না। যারা এ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, তারা সবাই পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মুসলমান। এমনকি পাকিস্তান রাষ্ট্রের নামটি উদ্ভব হয়েছিলো কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাকিস্তান নামটার উদ্ভব কিন্তু এ উপমহাদেশে হয়নি। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে।” (সাক্ষাতকারের ৩৫ মিনিট থেকে দেখুন/শুনুন) [৭]
এবনে গোলাম সামাদের চিন্তা ও লেখার অনেক অনুরক্ত পাঠক আছে। কারণ আগেই বলেছি তিনি সহজ-সরল ভাষায় ছোট ছোট বাক্যে অনেক অজানা তথ্য পরিবেশন করেন। এছাড়া তিনি তার মত করে বিষয়গুলিকে পর্যবেক্ষণ করেন এবং কোনোরকম উনরঞ্জন বা অতিরঞ্জন না করে একধরনের নির্মোহ ও বস্তুনিষ্ঠ/ফ্যাক্ট-বেজড বর্ণনা করেন। তার বিশ্লেষণ ও বয়ানকে একজন বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানীর মত বর্ণনা করে যান কোনরকম তাত্ত্বিক বা মতাদর্শিক পূর্বানুমান ছাড়াই। তিনি যে একজন বিজ্ঞানের অনুরাগী ও অনুসারী শিক্ষক ও লেখক এটা তার নির্মোহ চিন্তা ও লেখার শৈলীতে স্পষ্টভাবে বিধৃত। তিনি ডানপন্থী মহলে বেশ জনপ্রিয় ও উদ্যাপিত হয়ে উঠলেও আমি খেয়াল করেছি তিনি বিশেষ কোনো ডানপন্থী মতাদর্শের প্রতি অনুরক্ত বা অনুগত নন। তা সে মুসলিম জাতীয়তাবাদ হোক বা ইসলামপন্থা হোক। তিনি বৈজ্ঞানিক বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা ও সমস্যা সমাধান পদ্ধতি প্রয়োগেই বেশী উৎসাহী।
পাকিস্তান আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি সম্প্রতি যা বলেছেন তা তার এই উল্লিখিত ফ্যাক্ট-বেজড পর্যবেক্ষণের-ই আরেকটি নমুনা।
পাকিস্তান আন্দোলনের নেতৃত্বে উপমহাদেশের সাধারণ/ইংরেজী শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মুসলিমেরাই বেশি দৃশ্যমান, একথা সত্য। এর কারণ হল পাকিস্তান আন্দোলনের দাবী প্রতিষ্ঠার জন্য যে লড়াইটি চলেছিল তার প্রতিপক্ষ ছিল যে কংগ্রেস তার নেতৃত্বেও ছিল তৎকালীন বর্ণহিন্দু জেনারেল/ইংরেজী শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি। অবশ্য একটু অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে পাকিস্তান আন্দোলনের বৃহত্তর সমর্থক জনসমাবেশের বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাওয়া যাবে যে এর পেছনে পূর্ব বাংলার নিম্নবর্গ মুসলিম কৃষক ও উঠতি মধ্য জোতদার শ্রেণির ব্যাপক অংশগ্রহণও ছিল। এছাড়া উত্তর-পশ্চিম ভারতের ব্যাপক মধ্য ও নিম্ন-মধ্যশ্রেণির মুসলিমদেরও সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছিল এই আন্দোলনের প্রতি।
এর অনুপ্রেরণা হিশেবে কাজ করেছিল একটি সাধারণ মুসলিম আত্মপরিচয় ও ইসলামিকতার রাষ্ট্রকল্পনা। মুসলিম লীগের নেতৃত্ব অধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের হাতে থাকা সত্ত্বেও তারা এই আন্দোলনকে সাধারণ ধার্মিক আমজনতার কাছে আকর্ষণীয় করে তুলবার জন্য ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব ও সংগঠনের প্রতি হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এর ফলে দেওবন্দ অনুসারীদের একটা বড় অংশ এদের প্রতি সাড়া না দিলেও এদের আরেকটি অংশ মওলানা শাব্বির আহমদ উসমানীর নেতৃত্বে পাকিস্তান আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। তারা পাকিস্তান আন্দোলনের একটি ইসলামিকতা-নির্ভর ব্যাখ্যা ও ভাষ্যও বিনির্মাণ করেছিলেন। তারা পাকিস্তানকে দ্বিতীয় মদিনা আকারে উপস্থাপন করেছিলেন এবং জিন্নাহর সঙ্গে এসব ব্যাপারে মতবিনিময়ও করেছিলেন।
কিন্তু একথা ঠিক দ্বিতীয় মদিনা হিশেবে পাকিস্তানকে গড়ে তোলার জন্য যে পরিমান কাঠামোগত বিউপনিবেশীকরণ করা প্রয়োজন ছিল তা করা সম্ভব হয়নি। কাজেই পাকিস্তান আন্দোলন এক দুর্মর উপনিবেশিত কাঠামোর ছদ্ম-ইসলামিকতাভিত্তিক কামালবাদী সংস্করণ দ্বারা হাইজ্যাক হয়ে যায়।
৫.বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের রয়েছে একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস। এদেশের জাতিসত্তা ও আত্মপরিচয়ের প্রশ্নে এবনে গোলাম সামাদের রয়েছে অত্যন্ত স্বচ্ছ ও স্পষ্ট ধারণা। এই ধারণা বহুল প্রচলিত ও প্রচারিত মতাদর্শ ও দল প্রভাবিত ধারণার মত আংশিক এবং পক্ষপাতমূলক নয়। পক্ষান্তরে এই বিষয়ে তার ধারণা ব্যাপক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ভারসাম্যপূর্ণ। তিনি এই বিষয়ে প্রায়ই তার বিভিন্ন কলামে লিখেছেন, যেমন:
“ভাষার মাধ্যমে গড়ে উঠতে চায় একটি জাতির মন মানসিকতা। কিন্তু জাতীয়তার ব্যাখ্যা কেবল যে ভাষা দিয়ে করা যায়, তা নয়। বাংলা যাদের মাতৃভাষা তাদের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগের বাস বর্তমান বাংলাদেশে। পক্ষান্তরে বাদবাকি চল্লিশভাগের বাস ভারতে। কেন সব বাংলাভাষী মানুষ একরাষ্ট্রের পতাকা তলে আসতে পারলো না। সেটাও হওয়া উচিত আমাদের বিবেচ্য। বাংলাভাষী হিন্দু চিরকাল চেয়েছেন ভারতীয় মহাজাতির অংশ হিসাবে বাস করতে। তারা চাননি কোনো পৃথক স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে।
কিন্তু বাংলাভাষী মুসলমান গড়ে তুলেছেন একটি পৃথক ভাষাভিত্তিক দেশ। এর মূলে আছে কেবল ভাষা ছাড়াও আরও অন্য কিছু বাস্তবতা, যার জরিপ করতে হয়। ভাষা আমাদের জাতিসত্তার মূল্যবান উপকরণ। কিন্তু একমাত্র উপকরণ নয়। আজকের বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে সাবেক পাকিস্তান ভেঙে। সাবেক পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল এই উপমহাদেশে বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্ভূত মুসলিম জাতীয়তাবাদকে নির্ভর করে। আজকের বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদকে উপলব্ধি করতে হলে এই মুসলিম উপাদানকেও বিবেচনায় নিতে হবে। তার কথা একেবারে বাদ দেয়া যাবে না। বাঙালি জাতীয়তাবাদের আওয়াজ উঠেছিল সাবেক পাকিস্তানের রাষ্ট্রিক কাঠামোর মধ্যে।… … …সাবেক পাকিস্তানের রাষ্ট্রিক কাঠামোর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হতে পেরেছিল একটা পৃথক জাত্যাভিমান। যাকে নির্ভর করে উঠেছিল জয়বাংলা ধ্বনি।
কিন্তু এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে। ভারত ঘেরা বাংলাদেশে মানুষ এখন ভাবছে ভিন্নভাবে। এসেছে তাই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারণা। যাকে বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই তিনটি উপকরণ। একটি হল ভৌগোলিক। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারণার উদ্ভব হয়েছে বর্তমান বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে। এই সীমানার বাইরে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। এর দ্বিতীয় উপকরণ হল বাংলা ভাষা। আর তৃতীয় উপকরণ হল ইসলামের স্বাতন্ত্র্য। আজকের বাংলাদেশ সৃষ্টি হতে পেরেছে বাংলাভাষী মুসলমান থাকবার কারণেই। বাংলাদেশে বাংলাভাষী মুসলমান কেবলই একটি ধর্ম সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ নন। তারাই হলেন এদেশের মেরুদন্ড। এভাবেই ভেবে দেখতে হবে আমাদের জাতিসত্তার বিশিষ্টতা ও আত্মপরিচয়ের রূপরেখাকে।“ [৮]
৬.এবনে গোলাম সামাদ একজন সত্যসন্ধানী জ্ঞানসাধক। এই ধরনের মানুষ হন নিভৃতচারী, সৎ এবং বিশ্বাস ও উপলব্ধির আত্মপ্রকাশে নির্ভীক ও সাহসী। তিনি তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকেই তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞাকে তার চিন্তা ও লেখায় প্রয়োগ করেছেন। এসব তার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কেতাবী মুখস্থ বিদ্যা নয়। জীবন ও জগতকে তিনি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে ও নিবিষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন, পর্যালোচনা করেছেন, মূল্যায়ন করেছেন। আর এসবের ভিত্তিতেই তিনি তার জীবন ও কালের চিত্রায়ন করেছেন তার লেখনীর মাধ্যমে। তিনি লিখেছেন:
“…যে বিষয়ে ছাত্র পড়াতাম, তার সঙ্গে … বইয়ের বিষয়বস্তুর নেই কোন সুদূর যোগাযোগ। …যা লিখেছি তার ভিত্তি হচ্ছে, নানা বিষয়ে আমার ঘরে পড়া বিদ্যার (Home Work) ফল। …যা কিছু লিখেছি তাই যে জেনেছি কেবল মাত্র প্রামান্য গ্রন্থ ও দলিল পত্র ঘেটে এমন নয়। আমি আমার দীর্ঘ জীবনে রাজনীতি না করলেও প্রত্যক্ষ করেছি অনেক রাজনৈতিক ঘটনা। যা আমাকে…বই লিখতে সহায়তা করেছে। আমি…বইতে অনেক কিছুই লিখেছি আমার প্রত্যক্ষ জ্ঞান থেকে।
শুধু বইপড়া বিদ্যার উপর নির্ভর করে নয়। …আমি যা কিছু বলেছি তার মধ্যে ভুল থাকা অসম্ভব নয়। মানুষ মাত্রই কিছু না কিছু ভুল করতে পারে। …কিন্তু ইচ্ছা করে কোনো রাজনৈতিক কারণে কোনো ভুল তথ্য প্রচার করতে চাইনি। … … …
“মানুষ হিসাবে মানুষের প্রতি সমবেদনাবোধ আমাকে দেশের রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতি নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে। জানতে উৎসাহ যুগিয়েছে দেশের ইতিহাসকে। যা জেনেছি, যা বুঝেছি, তার ফল হল…বই…। একজন শিক্ষকের কাজ জ্ঞান বিস্তার। …বই…লিখেছি আমার অর্জিত জ্ঞানকে অন্যের কাছে পৌঁছে দেবারই জন্যে। এবং আমার মনন কাঠামো অন্যের কাজে আসতে পারে ভেবে। এছাড়া কোনো বিশেষ প্রাধিকারের দাবি নিয়ে আমি …বই…লিখবার প্রয়াস পাইনি। আমার লেখার ধরন তাই হয়ে পড়েছে অনেক জায়গায় বেশ কিছুটা আত্মজীবনীমূলক। আত্মজীবনী লিখবার অধিকার সবারই আছে। এর জন্যে কোনো বিশেষ পান্ডিত্যের প্রয়োজন হয় না।“ [৯]
তার লেখায় বিধৃত অসংখ্য সাহসী উচ্চারণ থেকে কয়েকটি উদাহরণ এখানে উদ্ধৃত করছি:
“রবীন্দ্রনাথ ভারতের জাতীয় সংগীতের রচক। আবার তিনি হলেন বর্তমান বাংলাদেশেরও জাতীয় সংগীতের রচক। তবে বাংলাদেশের মানুষ চায়নি রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা গানটিকে জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করতে। এই গানটিকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে। … … … আমরা এখন আর ১৯০৫ সালের পরিস্থিতিতে নেই। আমরা চাচ্ছি না কোনো যুক্তবাংলা গড়তে। আমাদের জাতীয় সংগীত হওয়া উচিত এখনকার সময়ের উপযোগী। অর্থাৎ, বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের ভাবাবেগের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।“ [১০]
“বাংলাদেশের রাজনীতিতে গোলাম আযম একটি বিতর্কিত নাম। তিনি মুসলিম মৌলবাদী হিসাবে এখন পরিচিত। আমরা তার রাজনৈতিক জীবন নিয়ে কোনো আলোচনার মধ্যে যেতে ইচ্ছুক নই। ভাষা আন্দোলনে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। যেটা ঐতিহাসিক সত্য। তার কথা এখানে তাই উল্লেখ্য বলে মনে করছি।“ [১১]
“এখন আমরা জানছি যে, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন না। শেখ মুজিব তাঁর ৭ মার্চে বক্তৃতায় বলেছিলেন যে, ‘আমি শুধু বাংলার নয় পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা’। তিনি আরও বলেন যে, যদিও আওয়ামী লীগ মেজরিটি তবুও অন্যরা যদি ন্যায্য কথা বলে, তবে তাদের সেই দাবি আমরা মানবো। আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও কারও ন্যায্য দাবিকে অস্বীকার করব না। অর্থাৎ শেখ মুজিব সে সময় চেয়েছিলেন, গোটা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে, কেবল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে নয়।“ [১২]
৭.এবনে গোলাম সামাদের আরেকটি গুণ আলাদাভাবে উল্লেখ করা দরকার। সেটা হল তিনি যখন কাউকে সমালোচনা করেন তখনো তিনি কাউকে আজকালকার অনেক তরুণতর লেখকদের মত ব্যক্তি আক্রমণ করেন না। তার ভাষা ও আচরণে তখনো একজন শিক্ষকসুলভ স্নিগ্ধ সৌজন্য ও বৈদগ্ধ্য প্রকাশ পায়।
একটি লেখায় দেখলাম তিনি পশ্চিম বঙ্গের বিখ্যাত সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়ের সঙ্গে ১৯৭১ সালে কলকাতায় দেখা করা সূত্রে এক কথোপকথনে নিয়োজিত হয়েছিলেন। সেখানে তিনি দিব্যি সৌজন্যের সঙ্গে এই আলাপের বর্ণনা দিচ্ছেন এবং তার মধ্য দিয়ে অন্নদাশঙ্করকে উন্মোচিত করছেন। কিন্তু কক্ষনো তাকে ব্যাক্তি আক্রমণ করছেন না বা অশীল বা কটু ভাষা ব্যবহার করছেন না। [১৩] অত্যন্ত বৈদগ্ধ্যের সঙ্গে তিনি সূক্ষ্মভাবে অন্যদের চিন্তা ও মতামতের অসামঞ্জস্য ও অসঙ্গতি উপস্থাপন করেন। কখনো কখনো খানিকটা সুমিষ্ট বিদ্রুপের আশ্রয় নেন, এই যা। এর বেশি নয়।
মৈত্রেয়ী দেবীর ক্ষেত্রেও তিনি একই পন্থা অবলম্বন করেছেন। [১৪] তবে সবচাইতে মোক্ষমভাবে এই কাজটি তাকে করতে দেখা গেছে বদরুদ্দীন উমরের ক্ষেত্রে। এই প্রখ্যাত মার্কসবাদী শিক্ষক ও লেখক একসময়ে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাদের সহকর্মী ছিলেন। সেইসূত্রে সামাদকে বদরুদ্দীন উমর তার প্রভাব বিস্তারী গ্রন্থ ‘সাম্প্রদায়িকতা’র রিভিউ করতে দিয়েছিলেন। অধ্যাপক সামাদ সেই গ্রন্থের সাম্প্রদায়িকতা তত্ত্বের একদেশদর্শিতা সুন্দরভাবে উন্মোচিত করে এর সমালোচনা করেছিলেন। তিনি এই রিভিউটি সেকালের বিখ্যাত সাময়িকী ‘সমকাল’-এ প্রকাশও করেছিলেন। কিন্তু তিনি এত চমৎকার ও নৈর্ব্যক্তিকভাবে তার কাউন্টার আর্গ্যুমেন্ট উপস্থাপন করেছিলেন যে তা কোনরকম ব্যক্তিগত অসৌজন্যে পরিণত হয়নি। এই বিষয়ে তিনি লিখেছেন:
“বাংলাদেশে পাকিস্তান আমলে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ নিয়ে প্রথম বই লেখেন বদরউদ্দীন উমর। সম্ভবত, সেটাই এ প্রসঙ্গে বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম বই। জানি না, কেন উমর সাহেব বইটার সমালোচনার ভার দেন আমার উপর। তিনি আর আমি তখন চাকরি করতাম একই বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর লেখা বইটার একটা দীর্ঘ সমালোচনা করেছিলাম, সমকাল নামক মাসিক পত্রিকায়। বইটা পড়ে আমার মনে একটা প্রশ্ন জেগেছিল, যে ব্যক্তির পিতা ভারতে হিন্দুদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে, সপরিবারে পাকিস্তানে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁর পক্ষে এরকম একটি বই লেখা সম্ভব হল কি করে? আমি অবশ্য উমর সাহেবের বইটির সমালোচনায় প্রশ্নটি উহ্য রাখি। আমি আমার সমালোচনায় দেখাবার চেষ্টা করি: উমর সাহেব যেভাবে “সাম্প্রদায়িকতার” সব দায়-দায়িত্ব কেবল মুসলমানদের উপর চাপাতে চেয়েছেন, এই উপমহাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে তা মেলে না।
কারণ, গোটা মুসলিম শাসন আমলে এই উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা হয়নি। হয়েছে ইংরেজ আমলে। আমি সবচেয়ে বিস্মিত হয়েছিলাম ১৮৫৭ সালের সিপাহী অভ্যুত্থানটি সম্পর্কে বইটার এক জায়গায় তাঁর মন্তব্য পড়ে। তাঁর মতে, ঐ বিরাট অভ্যুত্থানটি ছিল ‘একটা প্রতিক্রিয়াশীল ফিউডাল (Feudal) অভ্যুত্থান। অথচ তাঁর পরম গুরু মার্কস সিপাহীদের অভ্যুত্থানকে চিহ্নিত করেছেন এই উপমহাদেশের মানুষের স্বাধীনতা যুদ্ধ হিসেবে। বদরউদ্দীন উমর সাহেব সিপাহী অভ্যুত্থান সম্পর্কে যেরকম মনোভাব দেখিয়েছেন বর্তমানে ভারতের হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদীরাও দেখাচ্ছেন কতকটা একইরকম মনোভাব। তাঁরা বলছেন ওটা ছিল মূলতঃ মুসলমানদের বাদশাহী ফিরে পাবার জন্যে একটা ষড়যন্ত্র। ঐ অভ্যুত্থান সফল হলে এই উপমহাদেশে আবার প্রতিষ্ঠিত হত মুসলমানের রাজত্ব।“ [১৫]
যিনি তথ্যের ভিত্তিতে এবং প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে সবকিছুকে দেখেন তার পক্ষেই কেবল এমন নৈর্ব্যক্তিক ও নিস্পৃহ হওয়া সম্ভব। তিনি তো কোন এজেন্ডা পূরণের উদ্দেশ্য নিয়ে কোন বিশেষ মতাদর্শ বা দলের প্রতি নিজেকে সমর্পিত করেননি। তিনি সরেজমিন বস্তুনিষ্ঠতার একনিষ্ঠ অনুশীলক হিসাবে সত্যকে খুঁজে বেড়ান। এটাই তাকে অন্যের প্রতি সহিষ্ণু ও শ্রদ্ধাশীল করেছে। তার এই পর্যালোচনা কৌশল ও শৈলী থেকে উত্তরপ্রজন্মের অনেক কিছু শেখার আছে।
৮.এবারে আসি তার চিন্তা ও লেখার বিষয় বৈচিত্র্য এবং ভাষা ও গদ্যের অনন্য সহজতা-সরলতা প্রসঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের একজন উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শিক্ষক। এ কারণে আমরা দেখতে পাই যে তিনি বাংলা ভাষায় তার পেশাগত বিষয়ে কয়েকটি বই লিখেছেন, যেমন: ‘উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব’, ‘প্রাথমিক জীবাণুতত্ত্ব’, ‘জীবাণুতত্ত্ব’ এবং ‘উদ্ভিদ সমীক্ষা’।
এছাড়া সামাজিক বিজ্ঞান হিশাবে নৃতত্ত্বের প্রতি তার একধরনের কৌতূহল ও অনুসন্ধিৎসা দেখা গেছে। এর ফলে এই বিষয়ে তিনি বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন, যেমন: ‘নৃতত্ত্বের প্রথম পাঠ’, ‘নৃতত্ত্ব’, ‘বাংলাদেশের আদিবাসী এবং জাতি ও উপজাতি’ এবং ‘বাংলাদেশের মানুষ ও ঐতিহ্য’।
রাজনীতি, ইতিহাস, ভাষা, ধর্ম, রাষ্ট্র, জাতিসত্তা, ইসলাম, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তিনি প্রচুর কলাম ও নিবন্ধ লিখেছেন যা সংকলিত হয়ে বই আকারেও বেরিয়েছে, যেমন: ‘আত্মপক্ষ’, ‘আত্মপরিচয়ের সন্ধানে’, ‘বাংলাদেশ: সমাজ সংস্কৃতি রাজনীতি প্রতিক্রিয়া’, ‘বায়ান্ন থেকে একাত্তর’, ‘আমাদের রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা এবং আরাকান সংকট’, ‘বাংলাদেশে ইসলাম ও ঐতিহ্য’, ‘বর্তমান বিশ্ব ও মার্কসবাদ’ এবং ‘আমার স্বদেশ ভাবনা’। এসব বইয়ের অধিকাংশ লেখাই বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত জনপ্রিয় উপসম্পাদকীয় কলামের সংকলন। প্রকৃতপক্ষে এই কলামগুলি এবং বইগুলিই তার লেখক পরিচিতির মূল কারণ। ‘ইনকিলাব’, ‘নয়াদিগন্ত’ এবং ‘আমার দেশ’ – এই তিনটি জাতীয় দৈনিকেই মূলত তার এইসব জনপ্রিয় কলামগুলি প্রকাশিত হয়েছে। একারণে তিনি বিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব, শিল্পকলা ইত্যাদি বিষয়ে বই লিখলেও তার প্রধান পরিচিতিটা এসেছে একজন চলতি বিষয়ের জনপ্রিয় কলামিস্ট ও ভাষ্যকার হিশেবে।
কিন্তু তিনি একজন সাধারণ সাংবাদিকীয় কলামিস্ট নন। তাকে এভাবে মূল্যায়ন করলে সেটা তার প্রতি সুবিচার করা হবে না। তার একাডেমিক শিক্ষা — ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিনের শিক্ষকতা ও গবেষণা — তাকে একজন পদ্ধতিগতভাবে দক্ষ মানুষ করে তুলেছে। এই শিক্ষা, জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ তাকে এমন চিন্তাশক্তি ও রচনাকৌশল রপ্ত করতে সাহায্য করেছে যা একজন সাধারণ সাংবাদিকের পক্ষে অর্জন করা দুরুহ। এছাড়া তার দলনিরপেক্ষ, নির্ভেজাল ও নির্লোভ জ্ঞানসাধনা ও চিন্তাপ্রণালী তাকে এমন এক বস্তুনিষ্ঠতা ও নৈর্ব্যক্তিকতা দিয়েছে যা সাধারণ সাংবাদিকীয় বলয়ে বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন। রাজধানী ঢাকা নগরের অসংখ্য সুযোগ-সুবিধার ভেতরে ওঁৎ পেতে থাকা নানা রকমের ফাঁদ থেকেও তিনি দূরে থাকতে পেরেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা সূত্রে। এটিও তার জন্যে একটি আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। তিনি লিখেছেন:
“আমি ঢাকায় থাকি না। ঢাকা বাংলাদেশের কেবল রাজধানীই নয়, দেশের এখন প্রধান চিন্তাকেন্দ্রও। আমার সেই চিন্তাকেন্দ্রের সঙ্গে কোনো প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই। আমি থাকি রাজশাহী শহরে। আমি জন্মেছিলামও এই শহরে। আমার কর্মজীবনও কেটেছে এই শহরে। আমার পরিচয় তাই বিশেষভাবে জড়িয়ে আছে এই শহরের পরিমণ্ডলের সঙ্গে। যাকে বাদ দিয়ে আমার কোনো বিচার করা চলতে পারে না।“ [১৬]
বিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব বিষয়ে বই ও সংবাদপত্রের কলাম রচনার পাশাপাশি তিনি শিল্পকলা বিষয়েও তার কৌতূহল এবং আগ্রহ প্রকাশ করে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন, যেমন: ‘মানুষ ও তার শিল্পকলা’, ‘ইসলামী শিল্পকলা’ এবং ‘শিল্পকলার ইতিহাস’।
তার গদ্য ভাষা সহজ ও সরল। ছোট ছোট বাক্যে তিনি তার লেখাগুলিকে সাজিয়ে তোলেন। তার ভিডিও সাক্ষাতকার শুনে মনে হয় যে তার লেখার ভঙ্গী এবং তার বলার ভঙ্গী হুবহু এক রকমের। তার শব্দ ও বাক্য বিন্যাসে কোন জটিলতা ও কুটিলতা নেই। রাজশাহীর শিক্ষিতজনের ভাষার একটি সংস্করণ মেলে তার গদ্যে। ভাষাটি অত্যন্ত সুমিষ্ট এবং আন্তরিক। এটি যেমন ঠিক পশ্চিম বঙ্গের ভাষার মত নয় তেমনি আবার ঢাকায় প্রচলিত “প্রমিত” ভাষা থেকেও বেশ খানিকটা ভিন্ন। তার ভাষাকে আবার আঞ্চলিকতা দুষ্টও বলা যাবে না। গদ্যভাষার সাবলীলতা ও প্রাঞ্জলতার ক্ষেত্রেও তিনি এক অসাধ্য সাধন করেছেন বলা যায়।
তার লেখা পড়লেই বোঝা যায় তিনি বাংলার পাশাপাশি ইংরেজী ও ফরাসি ভাষায় সিদ্ধহস্ত। এর ফলে তার রচনায় বিভিন্ন অজানা অচেনা ইউরোপীয় সমৃদ্ধ উপাদান খুব সহজভাবে তিনি আমাদেরকে উপহার দিতে পেরেছেন। এটি আমাদের দেশে আজকাল খুব সহজপ্রাপ্য নয়। তার বিবিধ ইউরোপীয় ভাষাজ্ঞান তার চিন্তা ও রচনাকে নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ করেছে।
তিনি হলেন মুসলিম ইতিহাসের ধ্রুপদী কালে যেসকল বহুমাত্রিক রেনেসাঁ মানবের আবির্ভাব হয়েছিল তাদের মতই বহুভাষিক, বহুবিষয়ী এবং বহুগুণে গুণান্বিত একজন বিরল জ্ঞানতাপস। বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, মানবিক বিদ্যা এবং শিল্পকলা ইত্যাদি বিষয়ের এমন বিস্ময়কর সমাহার আমাদের দেশে আর কোন সমকালীন প্রবীণ ব্যক্তিত্বের মধ্যে এভাবে দৃষ্টিগোচর হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। একারণে তাকে তার এই নবতিপর বয়সে জাতীয় অধ্যাপকের সম্মান ও মর্যাদা দেয়া উচিত বলে মনে করি।
৯.এটা আসলেই বাংলাদেশের ইসলামকেন্দ্রিক পাঠকদের জন্য একটা সৌভাগ্য যে তারা এবনে গোলাম সামাদের মত একজন প্রবীণ, প্রাজ্ঞ, জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ কলাম লেখক পেয়েছেন। যখন ইউরো- ও ইন্দোকেন্দ্রিক বুদ্ধিবৃত্তি ও সৃজনশীলতার সয়লাব মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্য ও পারঙ্গম লেখক ও বুদ্ধিজীবির ভীষণ অভাব তখন তার মত একজন যে এত পরিণত বয়সেও নিয়মিত ভাবতে ও লিখতে পারছেন তা আমাদের জন্য আল্লাহর এক অশেষ রহমত।
তার এই নিরন্তর বিশ্বকৌষিক ও গভীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা আমাদের উত্তরপ্রজন্মকে ক্রমাগত সমৃদ্ধ ও নির্মোহ অনুসন্ধিৎসায় উদ্বুদ্ধ করুক। আল্লাহ তার হায়াত দারাজ করুন। আমীন।
রেফারেন্স:
[১] এবনে গোলাম সামাদ, মানবেন্দ্রনাথ রায় ও তাঁর অনুসারীরা, আমার স্বদেশ ভাবনা, রাজশাহী (২০২০), পরিলেখ, পৃষ্ঠা ১২৫
[২] এবনে গোলাম সামাদ, আরম্ভের আগে, আমাদের রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা এবং আরাকান সংকট, রাজশাহী (২০১৮), পরিলেখ
[৩] এবনে গোলাম সামাদ, কলকাতার স্মৃতি, আত্মপরিচয়ের সন্ধানে, রাজশাহী (২০১৯), পরিলেখ, পৃষ্ঠা ১৫৩
[৪] এবনে গোলাম সামাদ, তাজউদ্দীন কন্যার স্মৃতিচারণ, আত্মপরিচয়ের সন্ধানে, রাজশাহী (২০১৯), পরিলেখ, পৃষ্ঠা ২১৩-২১৪
[৫] এবনে গোলাম সামাদ, বাঙালি জাতীয়তাবাদের গতি-প্রকৃতি, বাংলাদেশ: সমাজ সংস্কৃতি রাজনীতি প্রতিক্রিয়া, রাজশাহী (২০০৩), পরিলেখ, পৃষ্ঠা ৪০-৪১
[৬] এবনে গোলাম সামাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশ: সমাজ সংস্কৃতি রাজনীতি প্রতিক্রিয়া, পরিলেখ (২০০৩), রাজশাহী, পৃষ্ঠা ৪২-৪৩
[৭] এবনে গোলাম সামাদ, এবনে গোলাম সামাদের সাক্ষাতকার ১, https://www.youtube.com/watch?v=9c_zFptUiGc&ab_channel=JobayerAlMahmud, Accessed on October 1, 2020
[৮] এবনে গোলাম সামাদ, উপসংহার, আত্মপরিচয়ের সন্ধানে, রাজশাহী (২০১৯), পরিলেখ, পৃষ্ঠা ২৫২-২৫৩
[৯] এবনে গোলাম সামাদ, প্রাসঙ্গিক কথা, আত্মপরিচয়ের সন্ধানে, রাজশাহী (২০১৯), পরিলেখ, পৃষ্ঠা ২৫৭-২৫৮
[১০] এবনে গোলাম সামাদ, ভারত ও আমাদের জাতীয় সঙ্গীত, আত্মপরিচয়ের সন্ধানে, রাজশাহী (২০১৯), পরিলেখ, পৃষ্ঠা ২০৬-২০৮
[১১] এবনে গোলাম সামাদ, ভাষা আন্দোলনে গোলাম আযম, আত্মপরিচয়ের সন্ধানে, রাজশাহী (২০১৯), পরিলেখ, পৃষ্ঠা ১২২
[১২] এবনে গোলাম সামাদ, ইয়াহিয়ার আইন কাঠামো আদেশ, আত্মপরিচয়ের সন্ধানে, রাজশাহী (২০১৯), পরিলেখ, পৃষ্ঠা ১৪৯
[১৩] এবনে গোলাম সামাদ, অন্নদাশঙ্কর রায়ের ছড়া, আত্মপরিচয়ের সন্ধানে, রাজশাহী (২০১৯), পরিলেখ, পৃষ্ঠা ১৫৮-১৬১
[১৪] এবনে গোলাম সামাদ, মৈত্রেয়ী দেবীর বাড়িতে, আত্মপরিচয়ের সন্ধানে, রাজশাহী (২০১৯), পরিলেখ, পৃষ্ঠা ১৬১-১৬৩
[১৫] এবনে গোলাম সামাদ, সাম্প্রদায়িকতা, বাংলাদেশ: সমাজ সংস্কৃতি রাজনীতি প্রতিক্রিয়া, রাজশাহী (২০০৩), পরিলেখ, পৃষ্ঠা ৪৮
[১৬] এবনে গোলাম সামাদ, প্রাসঙ্গিক কথা, আত্মপরিচয়ের সন্ধানে, রাজশাহী (২০১৯), পরিলেখ, পৃষ্ঠা ২৫৫