কেনো ইসরাইলের কোনো ভবিষ্যত নেই সেকথা বোঝার জন্য তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জনমত জরিপের দিকে নজর দিলেই হবে। শতকরা মাত্র ৩.২ ভাগ ইসরাইলি ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে চলমান গণহত্যার বিরোধী।
ইসরাইলি অধ্যাপক হাইম ব্রিশিথ-ঝাবনার (Haim Bresheeth-zhabner) কথিত হলোকাস্ট গণহত্যার শিকার একটি পরিবারের সদস্য। তিনি একাধারে একজন লেখক, চলচ্চিত্র গবেষক, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং ইসরাইলি সেনাবাহিনীর একজন সাবেক সেনা।
তবে গত কয়েক দশক ধরে তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে ইসরাইলের অন্যায় আচরণের ঘোরতর সমালোচনা করে আসছেন।
তার মতে, ৭ অক্টোবরের আগে ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রশ্নে ইসরাইল ছিল একটি ফ্যাসিবাদী সরকার। ৭ অক্টোবরের পর এটি নাৎসিবাদী সরকারে রূপ নিয়েছে যে নাৎসিবাদী আচরণ কখনও প্রকাশ পাচ্ছে কখনও বা গোপন থাকছে।
সম্প্রতি দি নিউ আরব ম্যাগাজিনের সাংবাদিক সালওয়া আমরের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে হাইম ব্রিশিথ-ঝাবনারের একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সাক্ষাৎকারটি উল্লেখযোগ্য অংশ দর্শক-শ্রোতার জন্য তুলে ধরা হচ্ছে।
গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে ইসরাইলিরা যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছে তা থেকে কি একথা ধরে নেওয়া যায় যে, ইসরাইলি সমাজে গণহত্যার প্রতি সমর্থন হ্রাস পেতে শুরু করেছে?
আমি একথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি যে, ইসরাইলে যে বিক্ষোভ হচ্ছে তার সঙ্গে ফিলিস্তিনের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসরাইলের বিক্ষোভকারীদের উভয় পক্ষ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যার সমর্থক। তারা ইহুদিদের অধিকার আদায়ের পক্ষে কথা বলছে; ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
ইসরাইলে বর্তমানে চলমান প্রতিবাদ মূলত ফিলিস্তিনিদেরকে গণহত্যার একটি শিবির থেকে আরেকটি শিবিরে স্থানান্তর করার জন্য করা হচ্ছে। নতুন শিবিরটি বরং ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রশ্নে আগের তুলনায় বেশি বর্ণবাদী। আমাদেরকে একথা মাথায় রাখতে হবে যে, ইসরাইল ইহুদিদের জন্য একটি গণতন্ত্র কিন্তু ফিলিস্তিনিদের জন্য নয়।
ইসরাইলের মাত্র ৩.২ শতাংশ ইহুদি মনে করে যে, তাদের সেনারা গাজা উপত্যকায় মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছে। অন্যদিকে ৪৩ শতাংশ মনে করছে, গাজায় তেমন কোনো বলপ্রয়োগই করা হচ্ছে না। আর ৮৭.৪ শতাংশ ইসরাইলি গাজায় ফিলিস্তিনিদের ব্যাপকভাবে হতাহত হওয়ার ঘটনাকে একপ্রকার ন্যায়সঙ্গত বলে মনে করে।
কাজেই কেনো ইসরাইলের কোনো ভবিষ্যত নেই সেকথা বোঝার জন্য তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জনমত জরিপের দিকে নজর দিলেই হবে। শতকরা মাত্র ৩.২ ভাগ ইসরাইলি ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে চলমান গণহত্যার বিরোধী। ইসরাইলি সমাজ যৌক্তিক চিন্তা করার যোগ্যতাই হারিয়ে ফেলেছে, তারা এখন সম্পূর্ণভাবে গণহত্যার সমর্থক।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৯০ এর দশকে শেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে যে ঐতিহাসিক শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সেরকম কোনো শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা করা যায় কি?
আমি কখনও ইহুদিবাদীদের কথা বিশ্বাস করি না। আমি তাদেরকে বয়কটের পক্ষপাতী। ইসরাইলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ইহুদিবাদী সংস্থা। এই সংস্থাটি প্রকৃতিগতভাবে একটি বর্ণবাদী সংস্থা যেটি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে জাতিগত শুদ্ধি অভিযানে বিশ্বাস করে। আপনি ইহুদিবাদীদের সঙ্গে কথায় পেরে উঠবেন না। যেরকমটি কথা বলা যেত না হিটলারের সঙ্গে। ইসরাইল বর্তমানে একটি প্রতিষ্ঠিত ফ্যাসিবাদ থেকে রূপ পরিবর্তন করে একটি নাৎসিবাদী সমাজে পরিণত হয়েছে। শতকরা ৯০ ভাগের বেশি ইসরাইলি চলমান গণহত্যাকে সমর্থন করে যা কখনও ভুলে যাও যাওয়া সম্ভব নয়।
আপনার দৃষ্টিতে যদি শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না হয় তাহলে এই সংঘাতের সমাধান আপনি কীভাবে দেখছেন?
আমার দৃষ্টিতে সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছে ইহুদিবাদের মূলোৎপাটন করা। আমি যেকোনো উপায়ে ইহুদিবাদীদের ঘোর বিরোধী। চলমান ঘটনাপ্রবাহের পর শান্তি প্রতিষ্ঠার কোনো সম্ভাবনা আছে বলে আমি মনে করি না। ইহুদিবাদীদের সঙ্গে কখনও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। ঠিক যেমনটি উপনিবেশবাদী কিংবা নাৎসিবাদীদের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। প্রকৃতিগতভাবেই ইহুদিবাদ অমানবিক ও ফ্যাসিবাদী চিন্তাধারায় সমৃদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসিবাদীদের সঙ্গে যা করা হয়েছে আমার মতে ইসরাইলি ও ইহুদিবাদীদের সঙ্গে তাই করতে হবে। তার আগ পর্যন্ত শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।