Chairman Asaduzzaman struck first
Advertisements

ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লি গ্রামের ৬৫ পরিবারের সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বী। আশপাশের পাঁচ গ্রামের সবাই সনাতনী। ১০ কিমি’র ভিতরে কোন মুসলিম পরিবার নেই। ৫ গ্রামে একটি মাত্র স্কুল। পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলের পাশেই বারোয়ারি কালী মন্দির। বিদ্যালয়ের কক্ষ থেকেই মন্দিরের সবকিছু দেখা যায়।

এক মাস ধরে বিদ্যালয়ের শৌচাগারের নির্মাণকাজ চলছে। শ্রমিকদের সবাই মুসলমান। এখানে ১৮ই এপ্রিল ঘটে এক নজিরবিহীন ঘটনা। সন্ধ্যা ৭টায় হঠাৎ আগুন আগুন চিৎকার। লোকজন মন্দিরের সামনে এসে দেখেন কালী মূর্তি আগুনে জ্বলছে। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হলো তা কেউ নিশ্চিত জানে না। কিন্তু উত্তেজিত জনতা শৌচাগার নির্মাণ শ্রমিকদের সন্দেহ করে বেধড়ক মারধর শুরু করে। এতে ঘটনাস্থলেই দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত হন অন্যরা। কীভাবে সূত্রপাত হলো এই ঘটনার? পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নাকি গুজবের বলি হলেন দুই কিশোর? অনুসন্ধানে উঠে এসেছে নানা তথ্য। কোথা থেকে এই ঘটনার সৃষ্টি। কারা ছিল এর পেছনে? ঘটনাস্থল, প্রত্যক্ষদর্শী, এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার থেকে এসব প্রশ্নের কিছু জবাব মিলেছে।

হামলা থেকে বেঁচে ফেরা নসিমন চালক মো. লিটন মোল্লা বলেন, চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কারও কথা না শুনেই লোহার পাইপ দিয়ে আশরাফুলকে পেটাতে শুরু করেন। তিনি বলতে থাকেন তোর কতো বড় সাহস, তুই মন্দিরে আগুন দিস। দাঙ্গা সৃষ্টি করিস, এসব বলতে বলতে মেরে আশরাফুলকে মাটিতে ফেলে দেন। পরে শ্রমিক আনোয়ারকেও মারধর করেন। মেম্বার অজিৎ কুমারও আরশাদুলকে কাঠ দিয়ে পেটাতে থাকেন। তখন স্থানীয়রা আরও উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং দরজা-জানালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। কিছু লোক জানালা দিয়েই ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে ইট থেকে বাঁচতে চেয়ারম্যান ওই রুম থেকে বের হয়ে যান। পরে লাঠিসোটা নিয়ে শত শত লোকজন রুমে প্রবেশ করে বেধড়ক পেটাতে থাকে। রড ও ইট দিয়ে আরশাদুল, আশরাফুল ও আনোয়ারের হাত-পা ভেঙে দেয়। মাথা থেতলে দেয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আমি অন্ধকারে সিঁড়ির নিচে লুকিয়ে ছিলাম।

ঠিকাদারি কাজ নিয়ে কি ঝামেলা ছিল: অনুসন্ধানে জানা গেছে, কৃষ্ণপুর গ্রামে সার্বজনীন কালীমন্দিরের পাশে অবস্থিত ৬৯নং পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণ প্রকল্পটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। শৌচাগার নির্মাণ প্রকল্পের কাজ পায় ফরিদপুরের মাহিদা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে সাব- কন্ট্রাক্টে ওই কাজ বাগিয়ে নেন নওয়াপাড়া ইউনিয়ের চোপেরঘাট গ্রামের সাব-ঠিকাদার মো. জালাল শেখ। স্থানীয় একটি সূত্র ও নিহতের পরিবার বলছে, শৌচাগার নির্মাণকাজ শুরু করার পর থেকেই স্থানীয় ইউপি সদস্য অজিৎ কুমার সরকার ওই কাজে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করেন।

গত ঈদের আগে অজিতের লোকজন নির্মাণকাজের স্থলে গিয়ে নগদ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে মারধরেরও হুমকি দেন। পরে নির্মাণকাজের রড নিয়ে যেতে গেলে এতে বাধা দেন শ্রমিক (ঘটনাস্থলে নিহত) আশরাফুল খান। পরে ওই যুবকরা উত্তেজিত হয়ে আশরাফুলসহ অন্যান্য শ্রমিকদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যান। পরে পুরো ঘটনাটি আশরাফুল মুঠোফোনে তার বাবা মো. শাহজাহান খানকে বিষয়টি জানান। ভয়ে শাহজাহান খান তার দুই ছেলেকে পঞ্চপল্লী থেকে বাড়ি ফিরিয়ে নেন। পঞ্চপল্লীতে কাজে যেতে বারণ করেন। তবে ঈদের পরে সাব-ঠিকাদার জলিল শেখের অনুরোধে আবার কাজে যোগ দেয় দুই সহোদর আশরাফুল ও আরশাদুল। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দিন ১৮ই এপ্রিল বিকালে ১নং ওয়ার্ড মেম্বার অজিত কুমার সরকারের নির্দেশে পার্শ্ববর্তী জাননগর গ্রামের বাসিন্দা বিনয় সাহা একদল যুবক নিয়ে স্কুলের ভেতর প্রবেশ করেন এবং নির্মাণকাজের এক বান্ডিল রড ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। তখন নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি-ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে দুই পক্ষই নানা বাজে ভাষায় গালমন্দ করতে থাকেন।

এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মন্দিরে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালাতে যান স্থানীয় প্রভাষ কুমার মণ্ডলের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী তপতী রানী মণ্ডল। তিনি প্রতিদিনই মন্দিরে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালান। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তপতী রানী মণ্ডল মানবজমিনকে বলেন, ‘আমি মন্দিরে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালাতে গিয়ে নির্মাণ শ্রমিকদের মন্দিরের সামনে বটগাছের নিচে দেখতে পাই। তারা বিভিন্ন অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করছিল। তবে তারা কাকে এবং কার সঙ্গে গালাগাল করেছে, তা আমি বুঝতে পারিনি’। তপতী রানী আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালানোর পরে আমি আবার গোবর-খড় আনতে মন্দিরের সামনে যাই। তখন সাতজন নির্মাণ শ্রমিক স্কুলের মধ্যেই ছিলেন।’

চাঁদা ও হুমকির বিষয়ে আরশাদুলের মা শারমিন বেগম বলেন, ওদের কাছে ওই এলাকার কিছু ছেলে এসে চাঁদা চায়। টাকা না দিলে মারধরের হুমকি দেয়। কাজ করতে দিবে না বলে শাসিয়ে যান। আশরাফুল ওর বাবাকে এই ঘটনা জানায়। পরে ওদের বাড়ি নিয়ে আসি। ওরা আমার আব্বাদের জান নিয়ে নিবে জানলে আর পাঠাতাম না। আল্লাহ আমি খুনিদের বিচার চাই। আল্লাহ তুমি ওদের বিচার কইরো।

ঘটনার বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহিদা এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মনজিল শেখ জানান, সন্ধ্যার পর শ্রমিকরা আমাকে ফোন করে জানান, স্কুলের পাশে মন্দিরে কে বা কারা আগুন দিয়েছে। তারা মন্দিরে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করেন। এরপর উত্তেজিত গ্রামবাসী শ্রমিকদের স্কুল কক্ষে আটকে রেখেছে বলে জানানো হয়।

যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত: বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে মন্দিরের কালী মূর্তিতে আগুন লাগে। আগুন আগুন চিৎকার শুনে আশপাশের শত শত লোক আগুন নেভাতে এগিয়ে আসেন। ততক্ষণে আগুনে কালী মূর্তির পরনের শাড়ি ও হাতে থাকা তীরশূল পুড়ে যায়। ওইদিন মন্দিরে সন্ধ্যা পূজায় যে প্রদীপ জ্বালানো হয় তা মূর্তির সামনে প্রায় দুই ফুট দূরত্বে ছিল। সরজমিন গিয়েও একই জায়গায় ওই দুটি প্রদীপ দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হলো তা এখনো তারা নিশ্চিত জানেন না। আগুন নেভানোর কাজে শ্রমিকরাও সহায়তা করেন। পরে কয়েকজন উত্তেজিত জনতা স্কুলের নির্মাণ শ্রমিকদের সন্দেহ করা শুরু করেন। ঘটনার পরে একে একে কৃষ্ণপুর, জান নগর, সীধলাজুড়ি ও তারাপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। রাত ৮টার দিকে সাব-ঠিকাদার নসিমন ভরে রড নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ততক্ষণে উত্তেজিত জনতা নির্মাণ শ্রমিক আশরাফুল, আরশাদুল, সিরাজ শেখ, আনোয়ার হোসেনকে মারধরের উদ্দেশ্যে ঘিরে ফেলে। পরে সাব-ঠিকাদার জলিল শেখ ও নসিমন চালক মো. লিটন খানসহ সব শ্রমিকদের ওই নসিমনের দড়ি দিয়েই বেঁধে ফেলা হয়।

স্থানীয় প্রভাষ কুমারের ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য অজিৎ কুমার সরকার। তিনি এসে শ্রমিকদের স্কুলের শিশু শ্রেণিকক্ষে ঢোকান। যেখানে নির্মাণ শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছিলেন। পরে ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার লিংকন বিশ্বাস ঘটনাস্থলে আসেন। তখন উত্তেজিত জনতা ‘ধর ধর’ বলে ইটপাটকেল, রড, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে রুমের দরজা জালানা ভাঙতে শুরু করে। পরে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে ইউপি সদস্য অজিৎ কুমার সরকার স্থানীয় ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপনকে ফোন করলে তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি আশরাফুলকে শাসিয়ে রড দিয়ে প্রথমে আঘাত করেন। পরে স্থানীয়রা মারধর শুরু করেন। ওই হামলায় আশরাফুল ও আরশাদুল ঘটনাস্থলেই মারা যান। তাদের বাড়ি নওপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামে। গুরুতর আহত হন আনোয়ার হোসন ও সিরাজ শেখ।

হামলা থেকে বেঁচে ফেরা নসিমন চালক মো. লিটন মোল্লা বলেন, চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কারও কথা না শুনেই লোহার পাইপ দিয়ে আশরাফুলকে পেটাতে শুরু করেন। তিনি বলতে থাকেন তোর কতো বড় সাহস, তুই মন্দিরে আগুন দিস। দাঙ্গা সৃষ্টি করিস, এসব বলতে বলতে মেরে আশরাফুলকে মাটিতে ফেলে দেন। পরে শ্রমিক আনোয়ারকেও মারধর করেন। মেম্বার অজিৎ কুমারও আরশাদুলকে কাঠ দিয়ে পেটাতে থাকেন। তখন স্থানীয়রা আরও উত্তেজিত হয়ে উঠে এবং দরজা-জানালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। কিছু লোক জানালা দিয়েই ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে ইট থেকে বাঁচতে চেয়ারম্যান ওই রুম থেকে বের হয়ে যান। পরে লাঠিসোটা নিয়ে শত শত লোকজন রুমে প্রবেশ করে বেধড়ক পেটাতে থাকে। রড ও ইট দিয়ে আরশাদুল, আশরাফুল ও আনোয়ারের হাত-পা ভেঙে দেয়। মাথা থেতলে দেয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আমি অন্ধকারে সিঁড়ির নিচে লুকিয়ে ছিলাম।

নিহত আশরাফুল ও আরশাদুলের বড় চাচা আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, আমার ভাতিজাদের পিটিয়ে মাথা দুইভাগ করে ফেলা হয়। মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে দেয়া হয়। লাশ ধরলে মাঝ থেকে ভেঙে পড়ে। আমরা চেয়ারম্যান ও মেম্বারের শাস্তি চাই। হিন্দুরা প্রথমে মারধর করেনি। চেয়ারম্যান এসেই মার শুরু করেন। পরে স্থানীয়রা হামলে পড়ে। দুটি নিরীহ প্রাণ কেড়ে নেয়।

হামলার শিকার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সাব-ঠিকাদার জালাল শেখ বলেন, আমরা উপস্থিত হলে শ্রমিকদের হাতে বালতি, পানি ও জগ দেখতে পাই। তারা আগুন নেভানোর কাজ করেছে। তখন হিন্দুরা শ্রমিকদের সন্দেহ করে এবং গালাগাল করতে থাকে। তারা বলে, এতদিন আগুন ধরলো না আজ ধরলো কেন? ৪ শ্রমিককে রশি দিয়ে বেঁধে রুমে নিয়ে যায়। ঘটনার বিষয়ে সকাল থেকে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপনের মুঠোফোনে ফোন দিলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সরজমিন ঘুরে ওই গ্রামের একাধিক বাড়ি গেলেও কোনো পুরুষ পাওয়া যায়নি। অধিকাংশ বাড়িতে তালা ঝুলছে। কয়েকটি বাড়িতে মহিলাদের দেখা মিললেও ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে কেউ পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারেননি। সবাই বলেছেন, তারা কেউ কিছু জানেন না। কারা আগুন দিয়েছে তারা দেখেননি। কেউ কেউ বলেন, তারা ঘটনার সময় বাড়ি ছিলেন না। বাড়ি থাকলেও ঘটনাস্থলে যাননি। ডুমাইন ইউনিয়নের বাজার ঘাটসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘটনার রহস্য জানার চেষ্টা করা হয়। তবে কেউ কেউ বলেছেন, নির্মাণ কাজ নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে আগুন দিয়ে শ্রমিকদের ফাঁসানো হয়েছে। তাদের শায়েস্তা করতেই এই কাজ করা হয়েছে।

পঞ্চপল্লী স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা গীতা রানী বিশ্বাস বলেন, কালী মা’র গায়ে কারা আগুন ধরিয়েছে জানি না। আমি অনেককে জিজ্ঞাসা করেছি কেউ বলতে পারে না। তারপরেও এমন ঘটনা ঘটেছে। আমি বুঝি কেউ অপরাধ করলেও তাকে মেরে ফেলা যায় না। অপরাধ প্রমাণ হলে আইন তাদের শাস্তি দিবে। তাই বলে মেরে ফেলতে হবে? ঘটনার দিন আমি মধুখালী ছিলাম। এসে শুনেছি।

স্কুলের সহকারী শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, কে আগুন দিয়েছে আমরা কেউ দেখিনি। কেউ বলতেও পারবো না। আর শ্রমিকরা প্রায় ১ মাস ধরে কাজ করছে। তাদের কোনো খারাপ ব্যবহার আমরা লক্ষ্য করিনি। যারা পাপ করেছে তারা শাস্তি পাবেন।

ঘটনাস্থলে গিয়ে যা দেখা গেল: মন্দিরের দরজা খোলা। ভেতরে দুটি প্রদীপ নিভে আছে। কালী মূর্তির শরীরে কাপড় নেই। আগুনে পোড়ার দাগ। চারপাশে সুনসান নীরবতা। আশপাশে কোনো মানুষ নেই। স্কুল বাউন্ডারির মধ্যে মাঠে কয়েকজন পুলিশ সদস্য বসে আছেন। একে অপরের সঙ্গে কথা বলছেন। চারপাশে ইটপাটকেল, রড, বাঁশের লাঠি, কাঠ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বিদ্যালয়ের একটি রুমের দরজা-জানালা ভাঙা। কক্ষের ভেতরে উঁকি মেরে দেখা গেল শ্রমিকদের লেপ, তোশক, কাঁথা, বালিশ, হাঁড়ি-পাতিল ও জামা-কাপড় পড়ে আছে। বেল্টসহ প্যান্ট পড়ে আছে। দেয়ালে ছোপ ছোপ রক্ত। মেঝের কার্পেটের উপরও রক্ত লেপ্টে আছে। পাশেই লোহার রডের স্তূপ। ইট দিয়ে রক্তাক্ত স্থান ঘিরে রাখা হয়েছে। ভাঙা দরজায়ই তালা ঝুলানো। পাশের একটি কক্ষ খোলা। সেখানে ৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে দেখা গেল। রুমে ঢুকে তাদের কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তারা কিছুই জানেন না বলে জানান। কিছুক্ষণ পরেই ওই সার্কেলের এএসপি ঘটনাস্থলে আসেন। এর একটু পরেই সিআইডির একটি টিম আসে। তারা এসে পুরো মন্দির ও ঘটনাস্থল ক্রাইম সিন ফিতা দিয়ে চিহ্নিত করেন।

মামলা ও গ্রেপ্তার: পঞ্চপল্লীতে হামলা ও হত্যার ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। মন্দিরে আগুন দেয়ার ঘটনায় তপতী রানী মণ্ডল বাদী হয়ে মামলা করেছেন। দুই শ্রমিক হত্যার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। আসামি অজ্ঞাতনামা। এ ছাড়া পুলিশের কাজে বাধা এবং পুলিশ হত্যাচেষ্টায় মধুখালী থানার উপ-পরিদর্শক সংকর বালা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। এই মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন রাতেই গোবিন্দ সরকার ও অনয় ভাদুরী নামের দুজনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

হামলায় অংশ নিয়েছিলেন যারা: কৃষ্ণপুর, জান নগর, সীধলাজুড়ি ও তারাপুর মিলে গঠিত পঞ্চপল্লী। এই পাঁচ গ্রামের সবাই সনাতন ধর্মের। হামলার দিন আশপাশের ৫ গ্রামের অন্তত ২ হাজার লোক অংশ নেয়। একটি মামলার এজাহারে হামলায় অংশ নেয়া ও পুলিশের উপর হামলায় ৩১ জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন- গোবিন্দ সরকার, অনয় ভাদুরী, কাঙ্গাল মণ্ডল, কালিপদ মণ্ডল, রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল, কেশব মণ্ডল, সজিব মণ্ডল, মঙ্গল সরকার, প্রেম কুমার মণ্ডল, অনিল কুমার বালা, অসিম বিশ্বাস, কৃষ্ণ বিশ্বাস, হরিচন্দ্র অধিকারী, গোবিন্দ বালা, সজিব মণ্ডল, সুফল ওরফে মুক্ত, মানিক মণ্ডল, গোপাল সরকার, পলাশ সরকার, মনি কুমার বিশ্বাস, উজ্জ্বল দাস, কৌশিক জোয়ার্দ্দার, বিপ্লব মণ্ডল, গণেশ বসু, মিল্টন সরকার, হৃদয় বিশ্বাস, মনোজিৎ বালা, গৌতম মণ্ডল, মিহির সরকার, উজ্জ্বল মিত্র, রাজ কুমার সরকার।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ১নং ওয়ার্ড গ্রাম পুলিশ সদস্য অমৃত কুমার বসু বলেন, বিনয় সাহা মূলহোতা। সে এখানে কেন আসলো। তাকে কে এখানে ফোন করে আনলো? সে সন্দেহজনক ব্যক্তি। তার চরিত্রই ভালো না। সে ধর্মীয় উস্কানিমূলক কাজকর্ম করে। সে ঘটনার সময় নেতৃত্ব দিয়েছে। মেম্বার চেয়ারম্যানের সঙ্গে সেও রুমের ভেতরে ছিল। তার ওখানে কাজ কি?

২নং ওয়ার্ড গ্রাম পুলিশ সদস্য সুজিত অধিকারী বলেন, ঘটনার সময় অসিম বিশ্বাসের হাতে গোড়ালি ছিল। সে খুব উত্তেজিত ছিল। গোবিন্দা নামের ছেলেটি মধুখালী থানার ওসির সঙ্গে অনেক বাকবিতণ্ডা করেছে। গোবিন্দ এলাকায় তরুণদের মধ্যে নেতৃৃত্ব দেয়।

সূত্রঃ মানবজমিন

Advertisements