চলতি পাকিস্তান, ইমরান ও আমেরিকা
Advertisements

পাকিস্তানের পিটিআই [PTI] বা তেহরিকে ইনসাফ যার বাংলায় মানে “ইনসাফের জন্য আন্দোলন” – এই দলের প্রধান ইমরান খান। তিনি পাকিস্তানের রাজনীতিতে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা (যার স্বপক্ষে ইতিবাচক রেটিং ৬১%)তাঁকে গত বুধবার ০৯ মে পাকিস্তান সরকার গ্রেফতার করেছে। অ্যামেরিকান সিএনবিসি [CNBC] নিউজ এঘটনায় শিরোনাম লিখেছে, Former Pakistani Prime Minister Imran Khan arrested amid tensions with military.] সেনাবাহিনীর সাথে উত্তেজনার মধ্যেই ইমরানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও আইনত দেখানো হয়েছে যে গ্রেফতার করা হয়েছে পাকিস্তানের NAB [National Accountability Bureau] আইনে ও মামলায় যেটা আমাদের “দুদুকের” মতই যেন এক প্রতিষ্ঠান তবে এটা দুদুকের চেয়ে আরও ক্ষমতাবান আর আমাদের মতই সরকার অনুগত। তবে সরকার গ্রেফতার করেছে বলছি যে কারণে প্রথমত তা হল, ইমরানকে গ্রেফতার করা হয়েছে আমাদের র‍্যাব এর কাছাকাছি এক প্যারা-মিলিটারি বাহিনী [paramilitary Rangers] দিয়ে এবং তা ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে। বিশেষত যেখানে আদালত (হাইকোর্ট) আগে থেকেই কোন ধরণের গ্রেফতার না করতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছিল। এবং এর পরেও গ্রেফতারের করার বিরুদ্ধে আদালত প্রশাসনকে শো-কজ করেছে। দ্বিতীয়ত, তবে সবচেয়ে বড় ঘটনাটা ঘটিয়েছে সেনাবাহিনী নিজেই এক উস্কানিমূলক বিবৃতি দিয়ে; এখানে দেখেন । ফলে এটা একটা শাহবাজ সরকার আর বর্তমান সেনাবাহিনী এভাবে নেতৃত্বের যৌথ-উদ্যোগের ফসল হয়ে দাড়িয়েছে, তা্রা চাক বা না-চাক!

এতে সবমিলিয়ে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। সীমার বাইরে মানে তা সেনাবাহিনীরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে – বুঝতে হবে। কেন তা বলছি কারণ, এক. ইমরানকে গ্রেফতারের সাথে সাথে পাকিস্তানের চার প্রদেশেই ১৪৪ ধারা জারি করে চারজনের বেশি একসাথে চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু কোথাও “বিক্ষোভকারি জনগণ” তা মানে নাই। রাস্তায় নেমে গিয়েছে – যা লক্ষণ হিশাবে একেবারেই কারও জন্য ভাল ইঙ্গিত নয়। সবচেয়ে বড় কথা সবপ্রদেশেই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিছিল হয়েছে, কোথাও তা সেনাব্যারাক-গেটের বাইরে। তবে লাহোরে পাশের এক সেনা-আবাসনে হামলা পর্যন্ত ঘটেছে। তাই এর মধ্যে পরিস্থিতি সেনা নিয়ন্ত্রণেরও বাইরে চলে যাবার উপাদান আছে। এবং এই অর্থে তা যেন পাকিস্তানে অ্যামেরিকান স্বার্থেরও বাইরে চলে যেতে চাইছে। কারণ, এরই মধ্যে সবচেয়ে খারাপ কাজটা করে ফেলেছে সেনাবাহিনী। সেনা-মিডিয়া আইএসপিআর [ISPR] এর বিবৃতির নামে তারা ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেছে। সেটা এমন ভঙ্গিমায় যেন তারা পাকিস্তানের সব আইনের উর্ধে।

একটু পিছনে থেকে বলা যাকঃ

শুধু সেনার প্রসঙ্গটা একটু পিছন থেকে যদি বলি। গতবছর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এক জনসমাবেশে যোগ দেওয়ার সময় আততায়ীর গুলিতে ইমরান খানের উপর জান-হামলা ঘটেছিল। সৌভাগ্যবশত গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তার পায়ে লেগেছিল ফলে তিনি জানে বেঁচে যান। কিন্তু প্রত্যক্ষ সেই আততায়ী বন্দুকধারী স্পটেই জনতার হাতে ধরাও পড়ে যায়। সেটার ভিডিও ক্লিপও ছড়িয়ে পড়েছিল। ইমরান খান সবসময়ই ভোকাল; তিনি কোনহুমকিতেই ভিতু হন না, চোখে চোখে রেখে কথা বলতে পারেন। দীর্ঘদিন বৃটেনে বসবাসে থাকার কারণে পশ্চিমা ভ্যলুজ ও আচার-কালচার সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল যা থাকাটাই স্বাভাবিক। সর্বোপরি আন্তর্জাতিকভাবে পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে নেতৃত্ব দিয়ে সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়ানোতে সেটা খাটো কোন কাজ ছিল না – বিশেষত দেশকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেওয়ার থেকে তা কোন অংশ দূরে বা খুবই খাটো ছিল – এমনটা ভাল মন্তব্য হবে না। আবার এখনকার পাকিস্তানের বিচারে ইমরান অবশ্যই একজন পাকিস্তানি বড় এলিট কিন্তু আজ তার সেসব অর্জন তাঁর সেসব এলিটজম সবই আজ পাকিস্তানের জনগণের সেবায় তাদের পদতলে সমর্পিত! কাজেই এরচেয়ে মধুর এলিটিজম আর কী হতে পারে!! আবার তিনিই বুকফুলিয়ে বলতে পারেন আমি বিদেশে ডলার পাচার করিনা, দরকার হয় না। বরং দীর্ঘদিন ক্রিকেট খেলে যেসব বিদেশি আয় জমিয়েছি তা সময়ে পাকিস্তানে ফিরিয়ে আনি।

তিনি তাই সরাসরি এই হত্যা প্রচেষ্টার জন্য সিনিয়র মিলিটারি অফিসার ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফকে দায়ী করে বক্তব্য দেন। কিন্তু সেনাবাহিনী সেটাকে “গুন্ডামির” কায়দায় প্রতিহত করার চেষ্টা করতে থাকে। কেন গুন্ডামি বলছি?

আধুনিক বিচার ব্যবস্থায় অভিযোগ আনা বা অ্যামেরিকান ভাষায় যেটা ইনডাইক্টমেন্ট (indictment) এর মানে হল “বিচারের জন্য যেসব অভিযোগ” আনা বা তোলা হয়েছে। এটা বিচার করে দেখার আগে [Pre-] করা অভিযোগ। যার সোজা মানে এগুলো অভিযোগ তবে অবশ্যই প্রমাণিত নয়। কেবল শুনানি-বিচার প্রক্রিয়া শেষেই জাজের রায়ে যা প্রমাণিত গণ্য হতে পারে, এর আগে নয়। এর আগে সবই অপ্রমাণিত এবং কিছু অভিযোগ মাত্র।

সিএনবিসি লিখছে, “…this week for “highly irresponsible and baseless allegations against a serving senior military officer without any evidence,” to which Khan replied via video statement Tuesday: “This is my army and my Pakistan. I don’t need to lie.’ “। যার সারকথাটা বাংলায় বললে্‌, এক সেনা মুখপাত্র ইমরানকে বলেছেন যে ইমরান একজন সিনিয়র সেনা অফিসারের বিরুদ্ধে প্রমাণছাড়া অত্যন্ত দায়ীত্বজ্ঞানহীন ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনেছেন। পরে এনিয়ে ইমরান যার এক ভিডিও জবাবে বলেছেন, ” ‘এই হল আমাদের আর্মি এবং আমাদের পকিস্তান! আমার কি আর মিথ্যা বলার দরকার আছে!’ ” অর্থাৎ সেনা ভাষ্যটা হচ্ছে এমন যেন আমাদের গুলশান-বারিধারার কোন এলিট কাউকে ধমকাচ্ছে আর বলছে তো এত বড় সাহস – তুই জানিষ কার বিরুদ্ধে তুই অভিযোগ করেছিস??????

ফ্যাক্টস হল এটা আধুনিক রাষ্ট্র বা জনগণের ক্ষমতার রাষ্ট্র গড়ার যুগ, রাজা-শাসনের যুগ নয়। রিপাবলিক আর রাজার যুগের ফারাক বুঝতে হবে। ফলে যেকোন কারও বিরুদ্ধেই মামলা করা ও অভিযোগ দাখিল এখন জায়েজ। এবং সবচেয়ে স্বাভাবিক আজকের শাসন ব্যবস্থায়! অন্তত আইনে এটা স্বীকার করে নেয়া আছে! আর তাতে কোন মামলা “…..প্রমাণছাড়া অত্যন্ত দায়ীত্বজ্ঞানহীন ও ভিত্তিহীন” ভাবে কেউ তুলেছে কিনা সেটা দেখার জন্য তো আদালত ও বিচারক তো আছেই। এটা তো জমিদারি কায়দায় ধমক দিয়ে কাউকে বসানোর কিছু নাই, এবং ও দিন গয়া! এছাড়া আপনি কথিত জমিদার চাইলে আপনার স্বার্থ দেখভালের জন্য আরও দশটা উকিল-ব্যারিস্টারও লাগাতে পারেন। কিন্তু ধমকানোর তো কোন সুযোগ নাই। এটাই তো গুন্ডামি!! আর সবচেয়ে বড় কথা, কোন আধুনিক রিপাবলিক রাষ্ট্রে আমরা কেউ-ই আদালত ও বিচারের উর্ধে নই। আদালতই আমার বিরুদ্ধে যেকোন অভিযোগের বিচার করে দেখতে পারে; খালাস অথবা শাস্তি দিতে পারে। এমনকি সেনাপ্রধানসহ যেকোন সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে কোন সিভিলিয়ানের অভিযোগ যদি সেনাদের মনে হয় সেটা সেনা আদালতের ভিতরে হওয়া উচিত তাতেও কোন সমস্যা নাই। সিভিত আদালতে মামলা উঠার পর সেনারা আপীল দিতে পারেন এই যুক্তিতে যে কেন এই মামলাটা সেনা আদালতে হতে হবে, সেনা প্রতিষ্ঠানও নিশ্চিত করুক যে তারা বিচারের নিশ্চয়তা দিচ্ছে আর তা সিভিল বিচারক যদি তার রায়ে এব্যাপারে একমত হয় তাহলে তো হয়েই গেল। আর যদি সিভিল বিচারক নিজেই বিচারের ইক্তিয়ার দেখেন তিনি বিচার চালু রাখবেন আর সেনাদের তা মানতে হবে। এনিয়ে কারোরই নিজেকে সব আইনের উর্ধে বা কোন রাজা বা এলিট ভাববার তো কোন সুযোগ নাই, প্রয়োজন নাই।

অ্যামেরিকান ভুমিকাঃ
আমাদের অনুমান এখানেই আমেরিকার অন্তত কিছু ইতি ভুমিকা আছে; কারণ, পাকিস্তানে অ্যামেরিকান অনেক বড় স্বার্থ জড়িত আছে। যদি শুধুমাত্র চলতি শতকের শুরু থেকেই দেখি সেদিকে তাকাই তবে বলতেই হয় যে ২০০১ সালের ওয়ার অন টেররের লঞ্চিং প্যাড ছিল পাকিস্তানের ভুমি। এবং খামোখা বিনা কারণে জাস্ট অ্যামেরিকান স্বার্থে পাকিস্তানকে আমেরিকা তার লঞ্চিং প্যাড হয়ে থাকতে ২০ বছর ধরে বাধ্য করে গেছে। কোন আইন বা ন্যয্যতা ছাড়াই। লঞ্চিং প্যাড মানে যেমন আফগানিস্তানে মারা আমেরিকার প্রতিটা বোমা বা উড়ে যাওয়া প্রতিটা যুদ্ধযান পাকিস্তানের ভুমি ইচ্ছামত ব্যবহার করেই তা করেছিল। এমনকি আফগানিস্তান তো ল্যান্ড লকড দেশ; কাজেই সেখানে প্রবেশ করতে গেলে পাকিস্তানের উপর দিয়ে তাদের যাওয়াই ছিল একমাত্র উপায়, ভরসা ও সহজ। আর এতে পাকিস্তানের প্রতিটা সাধারণ মানুষের জনজীবন আমেরিকার প্রতিটা ততপরতায় একেবারে তছনছ হয়ে গেছে। তাদের জীবনযাত্রা যারপরনাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমেরিকা ভাবতে পারে পাকিস্তানের দুই পুরানা দলের [নওয়াজের মুলসিল লীগ ও ভুট্টোর পরিবারের পিপিপি] নেতাদেরকে তো আমরা যথেষ্ট পয়সা খাইয়েছি তারা বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে – কিন্তু কে না জানে এসব করে এতে কিছুই শোধ হয় না বা এগুলো কোন প্রতিদানও নয় ঘুষ মাত্র! এখন একালেও আমেরিকা যদি বুঝমান ও বুদ্ধিমান আচরণ করতে চায় তাহলে অন্তত নতুন করে আর অপরাধের মাত্র না বাড়িয়ে একালের যেকোন গণমানুষের স্বার্থের ইস্যুতে সহানুভুতি হয়ে থাকতে পারে। অন্তত কিছু পাপ ধুয়ে যাক এতে, একটু মন জয়ের চেষ্টা করুক!!! এটা কী খুব বেশি চাওয়া? যদি আমেরিকার তাই মনে হয় তবে বুঝতে হবে আমেরিকার গ্লোবাল নেতা থাকার দিন ফুরিয়েছে!

নিশ্চয় আমেরিকার জানা আছে ইমরানের পিটিআই-ই একমাত্র পাকিস্তানি রাজনৈতিক দল যে আমেরিকার এই পাকিস্তানকে লঞ্চিং প্যাড হতে বাধ্য করার বিরুদ্ধে কথা তুলে তৈরি হয়েছে। নিশ্চয় বুদ্ধিমান ও প্রাকটিক্যাল অ্যামেরিকান নীতিনির্ধারকেরা মানবেন যে এজন্য অ্যামেরিকার পাকিস্তানের পিটিআই দলকে আগাম এনিমি ঠাউড়ে রাখা কোন কাজের কথা নয়। এটা স্টুপিডিটি হবে। বরং পিটিআই এর সাথে ইতিবাচকভাবে সহানুভুতির সাথে ওয়ার্কেবল সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টার মধ্যেই সবার ভাল লুকিয়ে আছে – ইতিবাচক কোন কিছু শুরু হতে পারে সেখান থেকে।

তাহলে কী করতে হতঃ
একালের দুনিয়ার প্রধান ট্রেন্ড বা অভিমুখ হল গ্লোবাল অর্থনীতির অংশ হওয়া, নিজ দেশের বিকাশ ঘটানো।
মানে ব্যাপারটা যদি পাবলিকের স্বার্থের চোখে দেখেন তাহলে এটা হল যে কলোনিদখল যুগের শেষ বা ১৯৪৫ সালের পরের কলোনিমুক্ত স্বাধীন আমাদের মত দেশগুলোতে – গ্রাম থেকে লোক জমি থেকে থেকে উচ্ছেদ হয়ে শহরে কাজ- ও নয়া জীবনের খোজে আসতেই থাকে এটা সব দেশেই স্বাভাবিক ঘটনা-ফেনোমেনা। কিন্তু শহরে এসে যে টেম্পর হেলপারির চাকরি জুটাতে পেরেছে তাযদি দেখা পরের পাঁচটা প্রজন্ম হয়ে গেছে কিন্তু জীবন মান একই জায়গায় থেকে গেছে – এটাই হল কমিউনিস্ট চিন্তার নেগেটিভ প্রভাব ও মারাত্মক নেগেটিভ অচলায়তন প্রভাব। এটাই হল অর্থনীতিতে কোন দিকে বিকশিত হতে না দেওয়া। যেন চারি-তে কুকুরের শুয়ে থাকা। যেখানে চারি মানে হল মাটির বড় পাত্র যা গো-পালন ঘরে গরুকে খৈল-ভুসিতে মেখে দেয়া খাদ্যদানের মাটির পাত্র – যেখানে থেকে গৃহপালিত গরু আরামে খেতে পারে। কিন্তু সময়ে আবার এও দেখা যায় যে একটা গৃহপালিত কুকুর ঐ চারিতে আরামে শুয়ে আছে। চারি কুকুরের খাদ্য-পাত্র নয় অথচ সেই পাত্র কুকুর দখল করে রেখেছে আর গরুকেও খেতে দিচ্ছে না। এটাই কমিউনিস্ট-প্রগতিশীল নামের অর্থনৈতিক চিন্তার জন্য খুবই প্রতিকী! তাদের অর্থনীতি-চিন্তা এরকমই যে নিজে ঐ পাচ-প্রজন্মকে ঐভাবে টেম্পো হেল্পার করে আটকে রেখেছে বাড়তে দেয় নাই; নিজেরাও দেশের অর্থনীতিকে বাড়তে দেয় নাই – যেমন বিদেশি পুঁজি হারাম জাতীয় নানান আপ্ত বাক্যে।
এই বিচারে একালের অভিমুখ হচ্ছে আর তথাকথিত কোন আদর্শ আর নয়, বরং গ্লোবাল অর্থনীতির অংশ হওয়া, নিজ দেশের নুন্যতম বিকাশ ঘটানো – গ্লোবাল অর্থনীতিতে আমার জন্য বিশেষ কী সুবিধা লুকিয়ে আছে তা তালাশ করে [Comparative advantage] বুদ্ধিমানের মত তা নিজ অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে কাজে লাগানো। গরীবের জানগুলো একটু বাচুক, একটু শ্বাস নিতে দেন আগে পরে বাঁচলে কোন বাপের নাম আবার নিব না-হয়!!!!!।

আসলে বলতে চেয়েছি পুরানা অচল স্থবির চিন্তা থেকে বের হতে হবে। আর তাই, একালেও পছন্দ না হলে স্বার্থবিরোধ দেখা দিলে গ্লোবাল নেতাদের ভিনদেশের অপছন্দের কোন প্রধানমন্ত্রী-প্রেসিডেন্ট মেরে ফেলা এগুলা খুবই পুরানা ধারণা। অন্তত কোল্ডওয়ারের পরের যুগে এবার তাতে ক্ষান্ত দেয়ার সময় হয়েছে মানা উচিত। একালে চীন-ভারত ঝগড়াও করে আবার ব্যবসায় করে সমান তালে। এটাই বর্তমান কাল তা বুঝতে হবে! এসব খুনোখুনি কলোনি আমলে, কিংবা কোল্ড ওয়ারের যুগে এমনকি আশির দশকের ইউরোপেও হয়ত মানাত। কিন্তু নয়া শতকে সেটা আর নয়, তা একেবারেই বেমানান; অনেক হয়েছে আর নয়। যেই ঘটাক ইমরানকে আততায়ী দিয়ে হত্যা প্রচেষ্টা এটা খুবই নিম্নমানের চিন্তা, কাজ-আচরণ। এটা অগ্রহণযোগ্য। একালে যাকে শত্রু মনে হচ্ছে তার সাথেও বাণিজ্য- ব্যবসায়ীক সম্পর্ক রাখতে জানতে হবে। এটাই একালের ট্রেন্ড, ও নয়া বৈশিষ্ট।

তাহলে আমেরিকার ভুমিকা কী হতে পারত?
এসব আততায়ী-মার্কা ঘটনায় আমেরিকার কোনও সংশ্লিষ্টতা নাই ধরে নিয়েই বলা যায়, আমেরিকার অনেক কিছুই করণীয় ছিল, নিজ স্বার্থেই। তার উচিত ছিল অন্তত বিবদমানদের মধ্যে মধ্যস্ততার ভূমিকা নেয়া, এভাবে করে ব্যাপারটা বাড়তে না দেয়া। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত হতে হত – আমেরিকাকে লিড নিতে হত – সবপক্ষই যাতে মানে ও গ্রহণযোগ্য হয় এমন একটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট তদন্ত ও বিচারের ভিতর দিয়ে ইস্যুটার সমাপ্তি টেনে মিটিয়ে দেওয়া।

ওদিকে যদিও এটা ঠিক যে ২০১৮ সালের পরে একালে আমেরিকাকে পাকিস্তানে জায়গা করে নিতে হয়েছে নওয়াজ-শাহবাজ (সেই সাথে ভুট্টো পরিবার) গংয়ের হাত ধরে, যারা চিহ্নিত সম্পদ লুটেরা। এভাবে স্টার্ট আপ – এটাই আমেরিকার কপালের দুর্ভাগ্য! বাইডেন প্রশাসনের জন্য এটা খুবই খারাপভাবে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের শুরু! যে সম্পর্কের কোনই নুন্যতম স্টান্ডার্ড নাই। যেন কোন নীতি-পলিসির বালাই না থাকাটাই স্বাভাবিক!

এখন এর শেষ হবে কোথায়?
পাকিস্তানের শাহবাজ সরকার এক অদ্ভুত রেওয়াজ চালু করেছে; এতে এই সরকার কত অক্ষম অপারগ ও অযোগ্য আর আনফিট এরই প্রমাণ । তিনি প্রধানমন্ত্রী বলছেন তিনি চীফ জাস্টিসের রায় মানবেন না?????? কারণ চীফ জাস্টিস সমন্বয়ে গঠিত এক আদালত রায় দিয়েছিল যে মে ২০২৩ মাসের মধ্যে প্রাদেশিক নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এদিকে মিডিয়া আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে জেনারেল মোশাররফের পরের পাকিস্তানে এপর্যন্ত আদালত দুইটা প্রধানমন্ত্রীকে শ্রেফ রায় দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল, তা যেন আমরা মনে রাখি!!!

তাহলে পাকিস্তানে সিভিল সরকারের ভবিষ্যত কই?
সেনাবাহিনী কী তাহলে শাহবাজ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে ইমরান ও তার দলকে সামরিকভাবে দমন করে ক্ষমতা নিবে? আর তখনও কী আমেরিকা বসে দেখতেই থাকবে – কিছু না ছুয়ে বা না দেখে? আর কাউকে কী আমেরিকা বিশ্বাস করাতে পারবে যে সে কিছুই করে নাই? আর তাতে কী তার ইজ্জত বাঁচবে?

পাকিস্তানের সামরিক শাসন নিয়ে সেই অর্থে একটা মৌলিক ঘটনা জেনে রাখা ভাল হবে। কোল্ডওয়ারের আমলে মানে সোভিয়েত আমলে বা ১৯৫৩-১৯৯২ এই সময়কালের এক কমন ফেনোমেনা ছিল, আমাদের মত গরীব দেশে পপুলার কমিউনিস্ট-প্রগতিশীলতার কাছে সামাজিক-রাজনৈতিক প্রভাব হারিয়ে আমেরিকাকে একমাত্র নির্ভর করতে হত কোন সামরিক সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়ে। আর এটাকেই যেন সামরিক বাহিনী ক্ষমতালোভী বলে তারা নিজ ইচ্ছায় এমন করে থাকে বলে প্রচার করে থাকে; তারা একদল সুশীল বা বাকশাল-পছন্দের লোক এমন করে থাকে যেমন প্রথম আলোর (মৃত) মিজানুর রহমান খান বা একালের সোহরাব হাসান। আবার প্রায় একই চিন্তার আরেক বৃটেন প্রবাসী পাকিস্তানির অধ্যাপক আছেন নাম আয়েশা সিদ্দিকা [Ayesha Siddiqa] । এটা আমাদের মত দেশের সেনাবাহিনী নিজে নয় বরং এর পিছনে আমেরিকার কাজ করার ধরণই তাদের এমন করেছে – এই অংশটা তারা অজানা রেখে দিতে চায়। এনিয়ে রান্ডের [RAND Corporation] এক গবেষণা রিপোর্ট আche.

সংক্ষেপে ঘটনাটা হল – গত ১৯৯১-৯২ সালে সোভিয়েত রাষ্ট্র ভেঙ্গে যাওয়ার কালে সেসময় ১৯৯৩ জানুয়ারিতে ক্ষমতার শপথ নিয়েছিলেন বিল ক্লিনটন – সেটা তার প্রথম টার্ম ছিল আর তিনি দুই টার্ম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। অ্যামেরিকান রাজনীতি নির্ধারিত হওয়ার একটা বড় সামাজিক জায়গা হচ্ছে ওর থিঙ্কট্যাংকগুলোর যে সমাজ সেখানে; কারণ তাদের থিঙ্কট্যাংকগুলোর ফান্ড সংগ্রহ ও ফান্ড ব্যবহারের কো-অর্ডিনেশন বা সমন্বয় হয়ে থাকে ইনফরমালি কিন্তু খুবই নিবিড়ভাবে – এসব সামাজিক ইনফরমাল আসরে বসে। র‍্যান্ডের ঐ রিপোর্টে আছে – এমনই এক ইনফর্মাল সভায় থিঙ্কট্যাংকগুলোর যুক্তি ছিল – এতদিন আমেরিকান ধারাবাহিক সরকার- প্রশাসনগুলো সোভিয়েত উপস্থিতির যুক্তি দিয়ে বলত ওদের প্রপাগান্ডার জন্যই আমাদের মত দেশে আমেরিকা অজনপ্রিয় আর সেটা পূরণ করতেই আমেরিকাকে সামরিক আইন জারি করে ওসব দেশে ক্ষমতা ও প্রভাব চর্চা করতে হয়ে থাকে। অতএব সোভিয়েত পতনে যেহেতু দুনিয়া এক-মেরুর হয়ে গেছে, অ্যামেরিকান এক-মেরুর দুনিয়া – তাই এখন থেকে অ্যামেরিকান সরকার-প্রশাসকদের সামরিক শাসন থেকে সরে আসার নীতি নেয়া উচিত। এটা সবচেয়ে ভাল সময়। এই প্রেক্ষিতে তাই ক্লিনটন বা ডেমোক্রাটদের পক্ষ থেকে থিঙ্কট্যাংকগুলোর কাছে প্রতিশ্রতি দেয়া হয়েছিল যে তারা আর আমাদের মত দেশকে সামরিক শাসন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করবে না। এর পিছনে মূল আর্গুমেন্ট ছিল যে দুনিয়া যেহেতু আমেরিকাই এক পরাশক্তির কাজেই আমেরিকার আর সেনা শাসন দরকার হবে না। [যদিও ভারত-পাকিস্তান কারগিল সীমিত যুদ্ধ (১৯৯৯) হয় আর এর সব দায় মোশাররফ এর বলে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ ভারতের কাছে মন্তব্য করেন, পরে তিনি মোশাররফকে ক্ষমতাচুত করতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়া আর শেষে কার্যত পালটা মোশাররফ এর নামেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্ষমতাদখল করেছিল – শ্রীলঙ্কা থেকে মোশাররফকে বহনকারী বাণিজ্যিক বিমানকে করাচীর মাটিতে নামতে জায়গা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল যা নওয়াজ সরকার কিছু সময় আটকে রেখে দিয়েছিল।] এই ঘটনার পরে ক্লিনটন তাই সামরিক ক্ষমতা বলেই মোশাররফ এর (১৯৯৯ সালের) এই ক্ষমতা দখলকে স্বীকৃতিই দেয় নাই। চলেছিল ২০০১ সাল পর্যন্ত। এরপরে, ২০০১ সালের নাইন-ইলেভেন বুশের আমলে টুইন টাওয়ার হামলার দিনের শেষভাগে সেকালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোলিন পাওয়েঙ্কে সিএনএন-এ স্বীকার করে নিতে দেখা যায় যে তারা মোশাররফ সরকারের সাথে কাজের কথা বলেছেন – অর্থাৎ তখন থেকে কার্যত বুশের আমেরিকা পাকিস্তান সরকারকে স্বীকার নিচ্ছে। তবে এখন এতকথা বলার মূল বাক্যটা হল, এরপর থেকে পিছনের এই কারণেই এতদিন পাকিস্তানে সামরিক ক্ষমতাদখল আর কখনও হয় নাই বলে মনে করা হয়।

তাহলে স্বভাবতই প্রশ্নঃ পাকিস্তান সেনাবাহিনী কী এবার আবার ইমরান ও তার দলকে সামরিকভাবে দমন করে আবার ক্ষমতাদখলের পথে রওনা দিবে? আর তারপরেও এবার আমেরিকা কাউকে কী বিশ্বাস করাতে পারবে যে সেকিছুই করে নাই, ভুমিকা নাই?

একাল আর সেকাল অনেক ফারাকঃ
এমনিতেই দুনিয়ার সব “একাল আর সেকালে” এর মধ্যে অনেক ফারাকই থাকে, থাকবেই। তাহলে আর এবারের আলাদা বিশেষত্ব কী? মানে এবার গ্লোবাল নেতা হিশাবে অ্যামেরিকার ক্ষেত্রে এর আর বিশেষত্ব কী?

আগে একটু বলে নেই। গ্লোবাল নেতা কথাটার অর্থ কোল্ডওয়ারের আমলে নিশ্চিতভাবে ধরে নেয়া হত এর অর্থ পরাশক্তি – মানে সামরিক পরাশক্তি বা পরাশক্তিগত সামর্থ। অথচ একালে মানে ১৯৯২ সালের পরে থেকেই এটা পরিস্কার হয়ে যায় যে ধারণাটা মোটেও সামরিক নয়। এটা আসলে মূলত দুনিয়ায় মানে কোন দেশের গ্লোবাল অর্থনৈতিক পরিসরে সামর্থ কতটা। অর্থাৎ নিজ অর্থনীতিতে এক বিপুল উদ্বৃত্ব সঞ্চয়ের নয়া এক নিরন্তর ধারাবাহিক সক্ষমতার দেশ হওয়া যা অন্তত পরের শতবছর ধরে এমনি টিকে থাকবে। যারা আরও আগ্রহী তারা “অ্যামেরিকান সেঞ্চুরী” নামের একটা ধারণার তালাশ করতে পারেন। গত ১৯৪১ সালের অ্যামেরিকান টাইমস ম্যাগাজিনের এক নয়া সহযোগী পত্রিকার যার প্রচ্ছদ কাহিনীর নাম ছিল এই “অ্যামেরিকান সেঞ্চুরী” । আমার কোন পুরা লেখায় এই আর্টিকেলটা সংযুক্ত আছে – সেটা এখানে দেখতে পারেন। কেন ওর নাম “দ্যা অ্যামেরিকান সেঞ্চুরী” হল তা বুঝতে হবে। আরেকভাবে বললে এটাই বিনিয়োগ করার সামর্থ বিশেষ করে সারা দুনিয়ার গরীবদেশগুলোকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ঋণ [Infrastructure Dev. loan] এবং সাথে এফডিআই [FDI] দেওয়ার সক্ষমতা আর তা রাষ্ট্রীয় ভাবে বা বিশ্বব্যাংকের মত নানান প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। গ্লোবাল অর্থনৈতিক নেতা কথাটার অর্থ এটাই – এভাবে একালে বুঝতে হবে।

এই সক্ষমতার বিচারেরই একালে আমেরিকা চীনের চেয়ে অনেক পিছনে পড়ে গেছে। এই উপলব্দি বা বুঝাবুঝিটা এমন না যে আপনার পছন্দ আমেরিকা, আর আমার পছন্দ চীন সেজন্য আমি প্রসঙ্গটা তুলছি আর তাই আমি আর আপনি ভিন্ন ভিন্ন কথা বলব। এমন না। যখনই কোন দেশে একালে অ্যামেরিকান এই ঋণ-বিনিয়োগ সক্ষমতায় ঢিলা পড়ছে – মানে সরাসরি জি-টু-জি বা বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ-বিনিয়োগ দিতে পারছে না – আর তখনই ঐ ফাঁক দিয়ে চীনা ঋণ-বিনিয়োগ বিপুল পরিমাণে ঢুকে পড়ছে। আবার কোন দেশের চীনের কাছে নেয়া ঋণ তা সময়কাল পুর্ণ হবার পর ফেরতদান যদি ডিউ [due] মানে বকেয়া হয়ে যাবার তারিখ পার হয়ে যায় তবে অনুরোধ করলে চীনের সেই তারিখ আরো দু এক বছর বাড়িয়ে দেওয়ার সামর্থ প্রচুর – এটাও চীনের আরেক শক্তি অন্য গ্লোবাল নেতা অথবা এর কাছাকাছি দাবিদার যে কারো তুলনায়!

যেমন ধরা যাক আমেরিকা সাপোর্টেড শাহবাজ-ভুট্টো সরকার ক্ষমতায় এলো ইমরানের সরকারকে সরিয়ে। এখন এমনিতেই অর্থনৈতিক চরম সংকটে থাকা পাকিস্তানের অর্থনীতিকে জাগিয়ে তুলতে শাহবাজ সরকারকে চীনে দৌড়াতে হবে কেন? এটা অড! কেন আমেরিকা এই সহায়তা করার উপযুক্ত থাকবে না – এটাই একালের আমেরিকার সামর্থের প্রশ্ন! পাকিস্তানে প্রভাব বিস্তারের রাজনৈতিক সামর্থ তার অটুট আছে কিন্তু অর্থনৈতিক সামর্থ ছাড়া রাজনৈতিক সামর্থ অকেজো – এটাই প্রমাণিত হচ্ছে! এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আজ আমেরিকাকে যদি কাজ করতে হয় তবে কোনভাবেই এসব সেনা গুন্ডামি সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে পারে না। সেনা বনাম জনগণের সংঘাতে নিশ্চুপ দর্শক হতে পারে না। এটা আত্মঘাতি!

এককথায় বললে, আমেরিকান যেকোন ব্যর্থতা, বোকামি বা ভুল এর সুযোগ আপনাতেই বিপরীতে চীনের কোলে গিয়ে জড়ো হবেই। তাতে আমরা কে অ্যামেরিকান সমর্থক আর কে চীনের – সেটা অপ্রয়োজনীয়। তা চোখে আঙুল দিয়ে পাকিস্তানের পরিস্থিতি আমাদের দেখাচ্ছে!

এর উপরে শাহবাজ সরকার এই কথিত বিরাট নায়ক NAB (মানে যেন আমাদের দুদুক), NAB – তারা শাহবাজকে অর্থ পাচার মামলায় নির্দোষ সার্টিফিকেট দিয়েছে। এটাও কী আমেরিকা বসে বসে দেখবে?

এদিকে সর্বশেষ খবর হল সুপ্রিম কোর্ট গত ৯ মে, NAB [এটাই Al-Qadir Trust case] মামলায় ইমরানকে নাটকীয়তা করে গ্রেফতারকে অবৈধ ঘোষণা করে ইমিডেয়েট রিলিজ করে দিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে। আর এসব সমস্ত ঘটনাবলীতে অ্যামেরিকান অবস্থান কোথায়, কোথাও প্রকাশ্য সে হদিস নাই। আর সেনাবাহিনীর অবস্থান তাহলে এখন কোথায় দাঁড়ালো? সেনাদের গণবিরোধী [anti-people] ইমেজ এটা অবশ্যই পাকিস্তানের আমজনতা পাবলিকের কাছে আমেরিকা-ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে।

আর ওদিকে আগামিতে যে মেজর সংঘাতের ইমেজ বা আগমনিবার্তা এসবের ভিতর দিয়ে উঠে আসছে তাতে আদালত শাহবাজ সরকার ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত-নিজস্ব তার ক্ষমতাকে সংহত ও প্রো-পাবলিক এবং তা ন্যায্য বলে প্রতিভাত করে নেয়ার সুযোগ তৈরি করে ফেলল। আর সেনাবাহিনী এখানে দুধ-আম এক হয়ে যাবার পর নিজে শুকনা আঠি হয়ে পাত্রের বাইরে গড়াগড়ি দিচ্ছে.. এমন অবস্থায় চলে গেল। আগামিতেও তা দিতে থাকবে। অর্থাৎ আদালতের পাকিস্তানে প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের রায় ও নির্দেশ অমান্যের দায়য়ে এবার শাহবাজ সরকার শজেই অভিযুক্ত হবে। এবার জনসমর্থন নিয়ে এখন সুপ্রিম কোর্ট নিজ প্রাতিষ্ঠানিক অথরিটি প্রতিষ্ঠা করা সহজ হয়ে যাবে – যার অর্থ শাহবাজ সরকারের জন্য খারাপ সময়ের দিন সামনে , এরই ইঙ্গিত!

আমেরিকা মনে করতে পারে, দাবিও করতে পারে বা নিজেকে বুঝ দিতে পারে যে তারা পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এতে তাদের কিছু বলার নাই করার ছিল না; কাজেই তারা নিরপেক্ষ। কিন্তু সমস্যা হল পাকিস্তানের আম-পাবলিক মাইন্ডে এটা জায়গা পাবে না। পাকিস্তান আর্মি আর আমেরিকা যে আলাদা – আলাদা তাদের স্বার্থ ও উপস্থিতি তা যতটুকুই সত্য হোক না কেন পাবলিক মাইন্ডে – তারা আলাদা – এমন ধারনা তৈরি করার পক্ষে আমেরিকা এতদিন কোন কাজ করেছে বলে জানা যায় না।

তবে এপর্যন্ত পুরা ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে লুজার – সবচেয়ে ইমেজ খুয়ানো ক্ষতিগ্রস্থ সংগঠনের নাম হল পাকিস্তান সেনাবাহিনী – সে এখন সত্যিই গণবিচ্ছিন্ন একটা বোঝা – অন্তত সাময়িক সময়ের জন্য হলেও! আভ্যন্তরীণ নিজ জনগণকে থ্রেট করা বা ধমকানো এ্টা দুনিয়ার কোন সেনাবাহিনীর কাজ হতে পারে না। কিন্তু তাই ঘটেছে পাকিস্তানে – বর্তমান সেনা নেতৃত্ব এমনই বোকা আত্মভরি, উদ্ধত ও আন-সিভিল! তাহলে ইতিহাস বোধহীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইমরানের গ্রেফতারকে ও ততপরবর্তি জনবিক্ষোভকে কালো অধ্যায় [BLACK CHAPTER] বলে চিহ্নিত করেছিল – তার কী হবে এখন???

যদিও পাকিস্তানের মুদ্রাস্ফীতি এখন ৩৬% এর উপরে। ফলে জীবনের উপর উঠে পড়া এই কঠোর সময়েও পাবলিকের রাস্তায় নেমে এসে প্রতিবাদ, এটা উদাহরণ হয়ে থাকবে!

গৌতম দাস
রাজনৈতিক বিশ্লেষক

Advertisements