অক্টোবর মাসেও কম এসেছে প্রবাসী আয়। মাত্র শেষ হওয়া মাসে গত আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশে এসেছে ১৫২ কোটি ৫৪ লাখ (১.৫২ বিলিয়ন) ডলার। সেপ্টেম্বর মাসেও রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কম এসেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীরা অক্টোবরে দেশে ১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের অক্টোবরের তুলনায় ৭ দশমিক ৪ শতাংশ কম এবং চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ১ শতাংশ কম।
গত বছরের অক্টোবরে ১৬৪ কোটি ৬৯ লাখ (১.৬৪ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল। আগের মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৫৪ কোটি ডলার।
অক্টোবরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ কোটি ৭২ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১১৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৭১ লাখ ডলার এবং বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে দুই কোটি ৫০ মার্কিন ডলার।
আর বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৫ কোটি ৮৪ লাখ ডলার।
এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৬৪ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে আট কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে আট কোটি ৬৫ লাখ ডলার এবং আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে আট কোটি ৪৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আগস্ট মাস থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। এতে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকছে না।
তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২ দশমিক ০৩ শতাংশ কমে ৭ দশমিক ১৯ বিলিয়ন হয়েছে।
অন্যদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমছে দিনদিন। রিজার্ভ এখন ৩৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। তবে আগামী সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ নেমে আসবে ৩৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে।
গত বছরের আগস্টে এই রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এক বছর আগে ২৭ অক্টোবর রিজার্ভ ছিল ৪৬ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিট্যান্সের ওপর সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে। রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) যৌথভাবে ব্যাংকগুলোকে রেমিট্যান্স কেনার জন্য দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এতে কোনো কাজ হচ্ছে না, নিম্নগামী হচ্ছে রেমিট্যান্স।
তবে নতুন দর নির্ধারণ করা হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার থেকে। আশা করা হচ্ছে আগামীতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রিজার্ভের পরিস্থিতি ভালো রাখার জন্য রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, দেশের রিজার্ভ যে কয়টি শাখার ওপর দাঁড়িয়ে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্স বাড়াতে কী করণীয় সরকারের তা ভাবতে হবে। আরও প্রণোদনা দেবে নাকি বিদেশে শ্রমবাজার বাড়াবে, তা নিয়ে ভাবতে হবে।