‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না’
Advertisements

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ৩০টি আসন পাবে না। তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।

শুক্রবার বিকালে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ঘাগটিয়া চালার ওয়েলফেয়ার মাঠে বিএনপির প্রয়াত নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহর ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখছে- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ কোনোদিনও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এ কারণেই তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে এত ভয়।

তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার হতে হবে। সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন হতে হবে। এছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলেও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

তিনি প্রশ্ন করে বলেন, আমাদের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। আপনাদের সময় বাধা কোথায়? আমাদের নেত্রী আপনাদের দাবি মেনে নিয়েছিলেন কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এটি জনগণের দাবি। তাই আপনাদেরও জনগণের দাবি মেনে নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এই দেশে আজ কোনো বিচার পাওয়া যায় না। আওয়ামী লীগ তা মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার নাই, আইনের শাসন নাই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জঘন্যতম মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে দশ টাকা কেজি চাল, বিনা পয়সায় সার, ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের সঙ্গে তামাশা করছেন। বর্তমানে ঘরে ঘরে এখন লাখ লাখ যুবক বেকার। শিক্ষকতার চাকরি পেতে বিশ লাখ, কনস্টেবলের চাকরি পেতে ২৫ লাখ, চৌকিদার-দফাদারের চাকরি পেতে ১২ লাখ টাকা ঘুস দিতে হয়। একরাতে পেট্রোল, ডিজেল, কোরোসিনের দাম বেড়েছে ৫৪ ভাগ। তা ছাড়া চাল, ডাল, সবজির দাম আকাশচুম্বি। সবকিছুর দাম এখন নাগালের বাইরে। দ্রব্যমূল্য ও জিনিসপত্রের দাম কমানোর দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে ভোলা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে পুলিশের গুলিতে শাওনসহ নিহত হয়েছে চার নেতাকর্মী।

তিনি আরও বলেন, গোটা পৃথিবী জানে বাংলাদেশে আজ মানবাধিকার নাই, আইনের শাসন নাই। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু, কিন্ত ধর্মান্ধ নয়। খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। অথচ একই মামলায় অন্যদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তারেক জিয়া ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় আজ নির্বাসিত। অসংখ্য আলেম-ওলামা আজ কারাগারে বন্দি। একই সময়ে যারা ব্যাংক ডাকাতি, মানুষ হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন করেছে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

এ সময় প্রয়াত হান্নান শাহ স্মরণে তিনি বলেন, রাষ্ট্র নির্মাণ এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে যে কয়জন অকুতোভয় সৈনিক অবদান রেখে গেছেন, তাদের মধ্যে হান্নান শাহ অন্যতম। দেশের চরম দুর্দিনে, পার্টির চরম দুর্দিনে হান্নান শাহ ছিলেন কাণ্ডারি। তিনি ছিলেন আমাদের উজ্জ্বল নক্ষত্র ও প্রেরণার বাতিঘর। ওনার মতো মহান নেতার কবর জিয়ারত করতে পেরে আমি ধন্য।

মির্জা ফখরুল দুর্গাপূজা নিয়ে সরকারি মহলের প্রচারণা প্রসঙ্গে বলেন, দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নানা কথা রটাচ্ছে।

তিনি বলেন, গত এক বছরে পূজা মণ্ডপে ৯০টির মত ঘটনা ঘটেছে এবং পরে দেখা গেছে এসব কিছু করেছে আওয়ামী লীগের লোকজন। এ কারণে সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাইয়েরা এখন বলতে শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের অধীনে তারাও নিরাপদ নয়।

তিনি সরকারের গণতন্ত্রহীনতার সমালোচনা করে বলেন, এক সময় ছিল এক নেতা এক দেশ। এখন তেমনটাই চলছে, এখানে এক নেতা ছাড়া আওয়ামী লীগে আর কোনো নেতার কোনো মূল্যায়ন নাই।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ স্মৃতি সংসদের আয়োজনে ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধান আলোচক বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বিশেষ আলোচক বিএনপির সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটু।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহ্ রিয়াজুল হান্নান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা।

Advertisements