বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ অভিযোগ করেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকার সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সরকার কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। রোহিঙ্গা ইস্যুকে জিইয়ে রেখে শুধু রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল নয়, ব্যবসাও করছে সরকার।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর পার হলেও সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চরমভাবে ব্যর্থ। মূলত, শুরু থেকেই সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুকে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে বাংলাদেশ ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বোঝা বহন করে চলেছে। গত ২২ আগস্ট জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, প্রতিবছর গড়ে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হচ্ছে।
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করে মির্জা ফখরুল বলেন, নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চাপ প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এ সরকার গণতান্ত্রিক নয় বলেই বিশ্ব দরবারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সমর্থন আদায় করতে পারেনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং সামাজিকভাবে জীবন-জীবিকায় চরম অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মাদক ব্যবসা, নারীপাচার ও নানাবিধ অসামাজিক ও আইনবিরোধী কার্যকলাপ চলছে। এতে পরিস্থিতি অশান্ত ও অস্থির হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গারা মাদক চোরাচালান ও মাদকপাচারে জড়িয়ে পড়ছে। তারা অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত হচ্ছে। এসব বিষয় চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই উপায়ে নিজ দেশে ফিরতে চায়। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার কক্সবাজার ক্যাম্প পরিদর্শনে গেলে তাকেও তারা এ দাবি জানায়। রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধানের জন্য ‘নিরাপদ রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন’ নিশ্চিত করতে হবে। আর এ প্রত্যাবর্তনকে শুধুমাত্র কাগুজে চুক্তিতে বন্দি না রেখে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় চুক্তির কার্যকর প্রয়োগের পথে এগিয়ে নিতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘ, আঞ্চলিক সংস্থা এবং বিশ্বশক্তিগুলোর স্ব স্ব ভূমিকা সুনিশ্চিত করতে হবে। কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতার কথা উপলদ্ধি করাতে হবে। কিন্তু তার আগে মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া হতে হবে স্বেচ্ছায়, মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নিয়ে নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই।
ওদিকে, মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে অবশ্যই রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে বলে দেশটির সামরিক সরকারের প্রতি এমন আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার এ কথা বলেন তিনি।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিখ বলেন, গুতেরেস রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যত নিয়ে অস্পষ্ট আকাঙ্ক্ষা উল্লেখ করেছেন। যারা বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে ব্যাপক বৈষম্যের সম্মুখীন। তারা বেশিরভাগ নাগরিকত্বসহ অন্যান্য অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত।
গুতেরেসের মুখপাত্র আরও বলেন, মিয়ানমারে সংঘটিত সব ধরনের আন্তর্জাতিক অপরাধে জড়িত অপরাধীদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।#