বড় রংবাজ এমপি সবুজ
Advertisements

শ্রীপুর উপজেলা শাখার সভাপতি হুমায়ুন কবির হিমু


বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলা শাখার সভাপতি হুমায়ুন কবির হিমু একটি স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সন্ত্রাসীদের দমন করার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন, যা ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, শ্রীপুরের লাইসেন্স করা সবচেয়ে বড় রংবাজ ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, তারপর আমি এবং আমার সাধারণ সম্পাদক।

সোমবার (২৮ মার্চ) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই বক্তব্যটি ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়

এর আগে শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিম খন্ড গ্রামে (মসজিদ মোড় এলাকায়) বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যায় চাইল্ডহুড আইডিয়াল স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, নব-ঘোষিত আওয়ামীলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির হিমু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ৪ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের একটি জ্বালাময়ী বক্তব্য দেন। ইতিমধ্যে ওই বক্তব্যের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই আপলোড করেছেন।

ওই বক্তব্যের ‘লাইসেন্স করা রংবাজ’ বাক্যটিকে সামনে এনে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

গাজীপুর জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ড. এ কে এম রিপন আনসারী লিখেছেন, ‘অনুসন্ধান ছাড়াই রংবাজ পাওয়া গেলো তাহলে’।

গাজীপুর জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া লিখেছেন, ‘উপজেলা সভাপতির কাছে জনতার প্রশ্ন, লক্ষ লক্ষ ভোট দিয়ে কি রংবাজ কে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছি’ !?

শ্রীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘ওই সন্ধ্যায় আমি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উন্মুক্ত বক্তব্য জানতে চেয়েছিলাম, এরপর তিনি বক্তব্য দেন মূলত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে’।

ওই বক্তব্যে তিনি যা বলেন হুবহু তুলে ধরা হলো: “আমি হুমায়ুন কবির হিমু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হারুন অর রশীদ ফরিদ। আমরা আমাদের জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে, শ্রীপুরের জনগণের এই খুশি আমরা ধরে রাখবো। আজকে এই কেওয়া পশ্চিম খন্ডে দাড়িয়ে আমি বলতে চাই, আমি হুমায়ুন কবির হিমু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হারুন অর রশীদ ফরিদ। আমরা যাকে বলবো সেই-ই ছাত্রলীগ, সেই-ই যুবলীগ, সেই-ই কৃষকলীগ, সেই-ই শ্রমিকলীগ।’শিক্ষা-শান্তি-প্রগতি’, যার আদর্শ নাই তারা ছাত্রলীগের নাম বেঁচতে পারবে না।বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের আমি সভাপতি, আমার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হারুন অর রশীদ ফরিদ। আমরা লাইসেন্স করা রংবাজ আমরা। আপনারা কিসের রংবাজ ?

এই শ্রীপুরের সবচেয়ে বড় রংবাজ ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, তারপরে হুমায়ুন কবির হিমু, হারুন অর রশীদ ফরিদ। এই শ্রীপুরে কোনও সন্ত্রাস চলবে না, মাদক চলবে না।

আজকে এখানে দাড়িয়ে বলে যেতে চাই, আপনারা যতবড় রংবাজ-ই হোন, মাওনা চৌরাস্তায় কোনও চাঁদাবাজি চলবে না। মাওনা চৌরাস্তায় কোনও দোকানদারের কাছ থেকে, এই রাস্তার মালিক ‘রোড’স এন্ড হাইওয়ে’, ‘রোড’স এন্ড হাইওয়ে’র কাছ থেকে যদি অনুমতি আনতে পারেন, তাহলে আপনারা চাঁদা নিতে পারেন।’রোড’স এন্ড হাইওয়ে আপনারে অনুমতি দিবো না, আপনে টেহা তুলবেন, আমরা কি আঙুল চুষমু ? আমি পুলিশ ভাইদেরকে বলতে চাই, শ্রীপুরে কোনও সন্ত্রাস চলবে না, চাঁদাবাজি চলবে না, কোনও বাহিনী চলবে না। প্রত্যেকটা বাহিনীর হাত-পা ভেঙে দিবো ইনশাআল্লাহ্।

সবশেষ আমি শুধু আপনাদের কাছে দোয়া চেয়ে, জননেত্রী শেখ হাসিনা-গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগ, যারা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, যতদিন দায়িত্বে থাকবো ততদিন জনগণের সে কথা বলে-ই যাবো৷ শুধু বলে-ই যাবো না, আমরা সে কথা জনগণের আদর্শ, শান্তি শ্রীপুরে বাস্তবায়ন করবো। যদি বাস্তবায়ন করতে না পারবো, সেদিন-ই ক্ষমতা ছেড়ে চলে যাবো।তাই আমি যাবার বেলায় বলে যেতে চাই, আপনারা ভালো হয়ে যান। আপনাদেরকে আমরা চিনি, আপনাদের বাপ- মা দেরকে আমরা চিনি, কতদূরের পানি, তা-ও আমরা জানি।

আমি আজকে এখান থেকে দাড়িয়ে বলে যেতে চাই, আমি হুমায়ুন কবির হিমু আর অ্যাডভোকেট হারুন অর রশীদের দিন শুরু হলো। ভালো পথে ফিরে আসেন। আপনাদের যদি শিক্ষা-শান্তি প্রগতি আদর্শ না থাকে, ছাত্রলীগের কথা বলবেন, আপনাদেরকে আমরা শ্রীপুরে নামতে দিবো না। এ কথা বলে সকলের কাছে দোয়া চেয়ে, জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া চেয়ে, আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজের জন্য দোয়া চেয়ে আমি আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি। ইনশাআল্লাহ আবারও দেখা হবে রাজপথে। সবাইকে ধন্যবাদ। জয় বাংলা- জয় বঙ্গবন্ধু”।

ওই বক্তব্যের ভিডিওসহ একটি স্ট্যাটাস দেন গাজীপুর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হাফিজুর রহমান। ওই স্ট্যাটাসের মন্তব্যের ঘরে আজকের পত্রিকার শ্রীপুর প্রতিনিধি রাতুল মন্ডল লিখেছেন, ‘এরকম বক্তব্য আত্মঘাতী! দায়িত্বশীলদের এধরণের বক্তব্য বিবেচনা করে দেয়া উচিত’।

সংবাদকর্মী মো. মোজাহিদ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে ওই বক্তব্যের ভিডিয়োটি পোস্ট করলে সৌরভ খান নামের এক ফেসবুকার মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, সভাপতির বক্তব্যে বুঝতে পারলাম, ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি শ্রীপুরের সবচেয়ে বড় রংবাজ। সভাপতি সাহেব এটা কি বললেন ? এই রংবাজ শব্দটি তিনি কি ভেবে চিন্তে ঠান্ডা মাথায় বলেছেন, না-কি গরম মাথায় বলেছেন’ ?

বাংলার মালালা খ্যাত সাহিদা আক্তার স্বর্ণা লিখেছেন, ‘কথা তো ভালই বলেছে, সঠিক কথা বলেছে। মাদককারী, সন্ত্রাস, অপরাধীরা যদি রংবাজ হয়, তাহলে তাদের থেকে বেশি ক্ষমতা রাখে আইনগত, প্রশাসনিক এবং জনমত। নির্বিশেষে সকলের হয়ে এই নেতারাই । সুতরাং, একটি এলাকা ভালো থাকবে, না-কি খারাপ থাকবে তাও নির্ভর করে জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের উপর’।

আলোর দিশারি শিক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক খন্দকার মো. আনোয়ার হোসেন লিখেছেন, ‘হিমু ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে বলছি না। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটা আমি পরিচালনা করেছিলাম এবং আমি জানি এখানে কি বক্তব্য দেওয়া হয়েছিলো। সম্পূর্ণ বক্তব্য শুনুন। এখানে ১৫ জনের মতো বক্তব্য দিয়েছিলেন। প্রত্যকেই এখানে সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী বক্তব্য দিয়েছিলেন। আগে পুরো বক্তব্য শুনুন তারপর মন্তব্য করুন’।

আজকের পত্রিকার শ্রীপুর প্রতিনিধি রাতুল মন্ডল নিজেই তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে লিখেছেন, ‘নেতার হুঙ্কার-লাইসেন্স বিহীন রংবাজ সাবধান! শ্রীপুরে সন্ত্রাস চলবে না’।

ঢাকা বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আকরাম হোসাইন বাবু লিখেছেন, ‘হুমায়ূন কবির হিমু ভাই এবং হারুন অর রশিদ ফরিদ ভাই ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে, জামায়াত-শিবিরের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধের রংবাজ’।

সার্বিক বিষয়ে গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, ‘এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলুন, ওই বক্তব্য প্রসঙ্গে আমার কিছু বলার নেই’।

Advertisements