আগ্রাসন রোধে আফগান জনগণ সাহসিকতা ও প্রতিরোধের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে
Advertisements

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সবসময়ই আফগানদের মধ্যে শক্তিশালী ভ্রাতৃত্ব বন্ধন কামনা করে। তেহরানের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল মিটিংএ ‘আফগানিস্তানে টেকসই শান্তি ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক সম্মেলনে চীন, রাশিয়া, কাজাখস্তানসহ আফগানিস্তানের অন্য প্রতিবেশী দেশগুলো প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

আলোচনায় অংশ নেয়া ইরানের ‘বিশ্ব ইসলামি জাগরণ’ বিষয়ক পরিষদের মহাসচিব আলী আকবর বেলায়েতি আফগানিস্তানে শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নতির প্রতি ইরানের সর্বাত্মক সমর্থনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসন থেকে শুরু করে বর্তমানে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর দখলদারিত্ব পর্যন্ত পুরোটা সময়ে আফগান জনগণ বিচক্ষণতা, সাহসিকতা ও প্রতিরোধের বিরাট দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।’

মার্কিন নেতৃত্বে বিদেশি সেনারা গত ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে মোতায়েন রয়েছে এবং এ পর্যন্ত কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেছে। এরই মধ্যে যদিও অনেক বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে কিন্তু এখনো কিছু সেনা সেখানে রয়ে গেছে এবং সম্প্রতি যুদ্ধ ও নিরাপত্তাহীনতা চরম আকার ধারণ করেছে। মার্কিন সেনারা ইরাকের মতো আফগানিস্তানেও ব্যাপক যুদ্ধাপরাধ করেছে। বর্তমানে ব্যাপক চাপের মুখে বিদেশি সেনারা আফগানিস্তান ত্যাগ করলেও তারাই যুদ্ধ উস্কে দিচ্ছে এবং এটা দেখানোর চেষ্টা করছে যে তাদের অনুপস্থিতির কারণেই ফের যুদ্ধ ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে।

যাইহোক, মার্কিন সেনাদের আফগানিস্তান থেকে বের করে আনার অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে তাদের সেনাদের প্রাণহানী এবং বিপুল ব্যয় এড়ানো। যুক্তরাষ্ট্রের ‘কস্ট অব ওয়ার’ সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান যুদ্ধে গত ২০ বছরে দুই ট্রিলিয়ন ২৬ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। এ ছাড়া মার্কিন এনবিসি টিভি চ্যানেল জানিয়েছে, দীর্ঘতম এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ২৩০০ সেনা নিহত এবং আহত হয়েছে আরো হাজার হাজার সেনা।

বাস্তবতা হচ্ছে, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আফগান জনগণ কখনোই বিদেশি আগ্রাসী বাহিনীকে মেনে নিতে পারিনি এবং রুখে দাঁড়িয়েছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন পারেনি সর্বশেষ মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীও আফগানিস্তানে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী পবিত্র হজ উপলক্ষে সারা বিশ্বের মুসলমানদের উদ্দেশ্যে দেয়া বাণিতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের লজ্জাজনকভাবে বেরিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এ অঞ্চলের প্রতিরোধকামী শক্তিগুলোর ব্যাপারে ভুল উপলব্ধি ও অজ্ঞতার কারণে আমেরিকা আফগানিস্তানে লাঞ্ছিত হয়েছে। বিশ বছর আগে তারা সেখানে হৈ-হুল্লোড় করে প্রবেশের পর নিরপরাধ ও নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বোমা ব্যবহার করতে থাকে। এরপর বুঝতে পারে তারা আসলে চোরাবালিতে আটকা পড়ে গেছে। এখন তারা সেনাবাহিনী ও সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নিয়েছে। অবশ্য সচেতন আফগান জাতিকে অবশ্যই সেদেশে মার্কিন গোয়েন্দা তৎপরতা এবং সফ্‌ট ওয়ার বা কোমল যুদ্ধের সরঞ্জাম সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে ও এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

বাস্তবতা হচ্ছে, ইরানের কর্মকর্তারা বহুবার বলেছেন, তারা আফগান সরকারের সহায়তায় সেদেশে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে আসছে এবং এ ক্ষেত্রে তেহরান চেষ্টার কোনো ত্রুটি করবে না। যাইহোক, আফগানিস্তানের যে অবস্থা তাতে বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপ, আপোষ, ক্ষমার কোনো বিকল্প নেই বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

পার্সটুডে

Advertisements