মার্কিনীদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধ নেয়ার কোরীয় জনগণের অঙ্গীকারের নেপথ্যে
Advertisements

কোরীয় যুদ্ধের ৭৩তম বার্ষিকীতে উত্তর কোরিয়ার জনগণ দেশটির রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের রাজপথে আমেরিকার বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধ নেয়ার যুদ্ধের’ ডাক দিয়েছে।

কোরীয় যুদ্ধটি সেই যুদ্ধ যেটি কোরীয় উপদ্বীপে কমিউনিজমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে মার্কিনীরা শুরু করেছিল যার পরিণতিতে শেষ পর্যন্ত দুই কোরিয়ার বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে। যাইহোক যেহেতু দুই কোরিয়ার মধ্যে এখনো কোনো শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়া এরইমধ্যে নয়টি যুদ্ধের মুখোমুখি রয়েছে এবং সাত দশক ধরে দেশ দুটির মধ্যে আনুষ্ঠানিক শান্তিপূর্ণ সহবস্থান নেই। কারণ ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ কেবল একটি যুদ্ধবিরতিতে সমাপ্ত হয়েছিল।

একটি শান্তি চুক্তিতে পৌছানোর লক্ষ্যে পিয়ংইয়ং ও সিউলের মধ্যে চেষ্টা চললেও দক্ষিণ কোরিয়ার পূর্ববর্তী সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন হস্তক্ষেপে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রচেষ্টা সফল হয়নি।

আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সং ঝংপিং বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র এটা বিশ্বাস করে যে দক্ষিণ কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে দুই কোরিয়া একীভূত হয়ে যাবে। এ কারণে দেশ দুটির মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরে ওয়াশিংটন সবসময় বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে আমেরিকা দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানে তার সামরিক উপস্থিতির ন্যায্যতার পক্ষে সাফাই গেয়ে আসছে। আমেরিকা দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান তার ঘাঁটিতে প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েন করেছে এবং এই বাহিনীকে ক্রমাগত সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে তাদেরকে শক্তিশালী করছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হচ্ছে চীনকে চাপে ফেলার লক্ষে দক্ষিণ কোরিয়া জুড়ে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা। উত্তর কোরিয়া সব সময় বলে আসছে যে তারা তার প্রতিবেশীদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চায়, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ব্যাপক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টির বিরুদ্ধে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই কারণে সাম্প্রতিক সপ্তাহ এবং মাসগুলিতে, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সিউল ও ওয়াশিংটনের উস্কানিমূলক পদক্ষেপের পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসাবে পিয়ংইয়ং তার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বাড়িয়েছে।

এদিকে, উত্তর কোরিয়া এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারী সামরিক ব্যয় চাপিয়ে দেয়ায় এতে উত্তর কোরিয়ার জনগণের জীবনযাত্রার মারাত্মক অবনতি ঘটিয়েছে। এই কারণে কোরিয়ার বিক্ষোভকারীরা “সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা শান্তির ধ্বংসকারী” লেখা প্লেকার্ড বহন কর কোরিয়ার রাস্তায় রাস্তায় ব্যাপক বিক্ষোভ দেখিয়েছে।

আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মোহসেন রুই সেফাত বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার জনগণ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অধীনে সবচেয়ে খারাপ জীবনযাপন করা সত্ত্বেও তারা কখনই আমেরিকার ক্রমবর্ধমান চাপের কাছে আত্মসমর্পণ করেনি, বরং দৃঢ় ইচ্ছার সাথে আমেরিকার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা চাপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে মার্কিন ষড়যন্ত্র এবং অশুভ ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোয়ীয় জনগণের প্রতিরোধকামীতার মাধ্যমে তাদের সতর্কতা এবং বুদ্ধিমত্তার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।

পিয়ংইয়ং সরকার সব সময় বলে আসছে যে সাম্রাজ্যবাদী মার্কিনীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য উত্তর কোরিয়ার কাছে সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র রয়েছে এবং এই ভূমিতে শত্রুর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। এর মানে হল যে উত্তর কোরিয়ার সরকার তার জনগণের সমর্থনে আমেরিকার বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ও ক্ষমতা রয়েছে। আর এটিকে নিপীড়নমূলক মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নীতির বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে। আমেরিকা মনে করেছিল যে কঠোর নিষেধাজ্ঞায় থাকার ফলে কোরিয়ার জনগণ তাদের সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে কিন্তু বিপরীতে উত্তর কোরিয়ার জনগণ পিয়ংইয়ংয়ে মার্কিন বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে কেবল তাদের নিন্দাই করে নি বরং তাদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রতিশোধ নেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। পরিশেষে উত্তর কোরিয়ার জনগণ কখনই মার্কিন হুমকির কাছে নতি স্বীকার করবে না বলেই মনে হচ্ছে।

Advertisements