ন্যাটো জন্ম নেয়ার যে উদ্দেশ্য সেটা অন্তত সফল হয়নি। রাশিয়ার ওপর গুলি ফুটানোর স্বপ্ন নিয়ে ন্যাটো ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। ওই কাজটি করা বাদ দিয়ে অন্যান্য দেশের ওপর গুলি ফুটিয়ে যাচ্ছে দশকের পরে দশক ধরে। এখন রাশিয়া ন্যাটোর কানের নিচ দিয়ে গুলি চালাচ্ছে আর ন্যাটো স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকা বলছে, তারা হামলা করলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগবে। এটা যখন জানেনই তখন ন্যাটো সৃষ্টি করলেন কেন! পরমাণু বোমা তো ন্যাটোর জন্মের আগে থেকেই সোভিয়েতের হাতে আছে। রাশিয়ার ভয় দেখিয়ে ইউরোপকে কব্জা করে পুরো মহাদেশকে শাসন করছে আমেরিকা। ইউরোপ নিরাপত্তাহীন এখন। কথা ছিল নিরাপত্তা দেবে আমেরিকা। কথা রাখেনি তারা। দুনিয়া তাদের কিভাবে জাস্টিফাই করবে? হয় তারা মুনাফিক না হয় ভীতু।
জাতিসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার পরে মাত্র পাঁচটি দেশকে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যের মর্যাদা দেয়া হয়। একটা অলিখিত চুক্তি ছিলো তাদের। অন্তত এই পাঁচ দেশ পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করবে না। এখনো কেউ করেনি। তবে পুতিনের যা অবস্থান তাতে সে কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না এটা তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন।
আমেরিকা ট্রেড অ্যান্ড এডমিনিস্ট্রেশনে ইউনিপোলার পাওয়ার হওয়ার কারণে তাদের ওভার কনফিডেন্ট এখন পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমেরিকার সাথে নিরাপত্তা চুক্তি কি আদতে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম? অন্যভাবে বললে আমেরিকার সাথে বন্ধুত্বও কি নিরাপদ? দুটিই অনিরাপদ বলে ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। মিত্রদেশ, মিত্র সরকারকে প্রয়োজনে সে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। আবার নিরাপত্তা চুক্তির পরও তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি করার ইতিহাস আছে অনেক।
আমেরিকার জন্ম জায়োনিজমের জঠরে। জায়োনিজমের প্রধান প্রতিপাদ্য হলো- কাউকেই বিশ্বাস করা যাবে না। সাফল্যের জন্য সবাইকে সন্দেহের তালিকায় রাখতে হবে। আমেরিকার প্রতিটি স্টেপ থিংকিং জায়োনিজম প্যারাডাইম থেকে তৈরি হয়।
তুরষ্ক এস-৪০০ রাশিয়ার কাছে থেকে কেনার কারণে যুক্তরাষ্ট্র তার উপর নিষেধাজ্ঞা, চাপসহ নানাভাবে বিরোধিতা করে। তুরস্ককে এফ-৩৫ বিমান দেয়ার যে চুক্তি হয় সেটাও বাতিল করে আমেরিকা। এখন আমেরিকা তুরস্ককে চাপ দিচ্ছে তুরস্কের কাছে থাকা রাশিয়ান এস-৪০০ যেন ইউক্রেনকে দিয়ে দেয়! এটাই আমেরিকা।
তুরস্ক জায়নিস্টদের সাথে যতই ইঁদুর-বিড়াল খেলুক, তাকে তারা বিশ্বাস করবে না। তবে এই খেলা থেকে বের হয়েও আসতে পারবে না। এখন পর্যন্ত মুসলিম কোনো দেশ রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে জড়ায়নি। এই আপদ তুরস্ক যদি নিজের কাঁধে না নেয়, তাহলে এ যাত্রা মুসলিম দুনিয়া নিরাপদে থাকবে। তুরস্ক জড়িয়ে গেলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়বে। যুদ্ধে না জড়াতে ইসরাইলের সাথে দহরম মহরম টোটকা দিয়ে পাড়ি দেয়া চেষ্টা করছেন এরদোগান।
শেষ রক্ষা হলেই ভালো। আমেরিকাও যেকথা ইসরাইলও সেই কথা। একই মদ পেয়ালা ভিন্ন।
সর্বজন স্বীকৃত একটা বয়ান চালু আছে- আমেরিকা যার বন্ধু তার শত্রুর দরকার নেই।
বাশার আল আসাদ বিগত ১১ বছরে এই প্রথম কোনো আরব দেশ সফর করছে। আসাদের আমিরাত সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসাদের সফর যদি সফল ও ফলপ্রসূ হয়, তবে এই সফরের ইতিবাচক প্রভাব আমিরাতের তরফ থেকে সৌদি আরবের ওপর এবং সিরিয়ার তরফ থেকে ইরানের ওপর পড়বে। এটা মোটামুটি অনুমান করা যায় নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরা দুনিয়াকে যেভাবে ডিভাইড এন্ড রুল করছে তাদের ইন্টারনাল যুদ্ধ উল্টাভাবে দুনিয়াকে ঐক্যবদ্ধ করবে।
সৌদি আরব চীনের কাছে তেল বিক্রি করবে ইউয়ানে। ইরানের সাথে চীনের লেনদেন হচ্ছে ইউয়ানে আবার রাশিয়া-চীনের লেনদেন যদি ইউয়ান বা অন্য কোনো মুদ্রায় হয় যা ডলারের প্রতিদ্বন্দ্বী তাহলে একটি ভিন্ন ও বৃহৎ অর্থনৈতিক বলয় গড়ে উঠতে যাচ্ছে। মার্কিন অবরোধে রাশিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তবে বেশি হচ্ছে ইউরোপ মহাদেশ। এই ক্ষতি পোষাতে ইউরোপকে সৌদি, ইরান, কাতার, ভেনিজুয়েলার মতো দেশের দ্বারস্থ হওয়া লাগতে পারে।
ইউক্রেনকে সহায়তার পূর্ণ আশ্বাস আর রাশিয়াকে উস্কানি দিয়ে ইউরোপকে চরম অনিশ্চয়তায় ফেলে দেয়া ছাড়া আর কোনো কার্যকর কিছু হয়নি। রাশিয়া অবরোধে পড়েছে, অথচ নাজেহাল হচ্ছে জার্মানি। যদিও জার্মানি বিকল্প উপায়ে সংকট উতরাবে। জার্মানি নিজেদের সর্বকালেই রাশিয়ার ওপরে রাখত বা রাখার ইতিহাস আছে। তাই ওই ইগোর জায়গা থেকে ইউরোপের নতুন লিডার হওয়ার স্বপ্ন সে দেখতে পারে। তবে সেটা কতটুকু সম্ভব সময় বলে দেবে। সুপার পাওয়ারগুলোর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করতেও পারে। সেই সম্ভাবনা আসাদের আমিরাত সফরের ভিতর দিয়ে তৈরি হয়েছে।
তাদের (সুপার পাওয়ার) মধ্যে অবিশ্বাস আর হিংসার বহিঃপ্রকাশ চরম পর্যায়ে না পৌছানো পর্যন্ত মুসলিম দেশগুলো যদি বুদ্ধিমত্তা ও ধৈর্যের সাথে নিরপেক্ষ থাকতে পারে তাহলে যুদ্ধ ক্লান্ত দুনিয়া হয়তো নতুন নেতৃত্বে স্থিতিশীল পরিবেশ দিতেও পারে।
ইউরোপ একটা দীর্ঘমেয়াদি গেরিলা যুদ্ধের মধ্যে ঢুকে গেছে। রাশিয়ান হেভি আর্টিলারি ফাইট যেদিন শেষ হবে সেদিন থেকেই আসল যুদ্ধ শুরু হবে। হালকা অস্ত্রের আঞ্চলিক যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখার অপেক্ষায় আছে ইউরোপ।