খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত, দরিদ্রদের মাঝে বিক্রির জন্য ‘খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি’র গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ বাজার সংলগ্ন দুইজন ডিলার ১০ টাকা কেজির চাল কম দিচ্ছেন। তারা প্রতি ৩০ কেজি চালের দাম ৩০০ টাকা নিলেও দিচ্ছেন ২৭ কেজি। ডিলার মাইন উদ্দিন সিরাজ বলছেন, চেয়ারম্যান আমাকে বলছে ৩০ কেজির স্থলে ২৮ কেজি দেওয়ার জন্য। কিন্তু চেয়ারম্যান বলছেন, আমি এমন কোনও কথা বলিনি, তাদের লাইসেন্স বাতিলের জন্য ইউএনও কে লিখিতভাবে জানাবো।
সোমবার (১৪ মার্চ ২০২২) বেলা সাড়ে এগারোটায় কাওরাইদ রেলওয়ে স্টেশনের পূর্ব পাশে ডিলার মাইন উদ্দিন সিরাজ ও শহিদুল ইসলামের দোকানের সামনে এমন চিত্র দেখা যায়।
কাওরাইদ ইউনিয়নের ধামলই গ্রামের আব্দুল আজিজ শেখের সন্তান আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আমি ডিলার মাইন উদ্দিন সিরাজের থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে ৩০ কেজি চাল নিয়েছি। মেপে দেখি ২৭ কেজি ৯০০ গ্রাম অর্থাৎ দুই কেজি ১০০ গ্রাম চাল কম পেয়েছি। কাওরাইদে প্রায় সকল ডিলাররাই চাল কম দিচ্ছে, আমরা কার কাছে জানাবো ? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো কাউকে চাল কম দিতে বলেননি, তাহলে আমরা চাল কম পাচ্ছি কেন ? আমরা দরিদ্র বলেই তো এই চাল কিনতে হচ্ছে, তবুও যদি চাল কম দেয় তাহলে আমরা কই যাবো’!
একই ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের মফিজউদ্দিনের সন্তান মতিন মিয়া বলেন, ‘আমাকেও ৩০ কেজির স্থলে সাড়ে ২৭ কেজি চাল দিয়েছে, কিন্তু পুরো ৩০০ টাকাই দিয়েছি ডিলার মাইন উদ্দিন সিরাজকে’।
একই ইউনিয়নের বাপ্তা গ্রামের মৃত তাজুল ইসলামের সন্তান তানভীর আহমেদ বলেন, আমি ডিলার শহিদুল ইসলামের দোকান থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে ৩০ কেজি চাল নিয়ে সাথে সাথে পাশের একটি দোকান থেকে মেপে দেখি ২৬ কেজি ৯০০ গ্রাম। আমাকে তিন কেজি ১০০ গ্রাম চাল কম দিয়েছে। চুরি করে চাল কম দেয়ায় আমি তাদের উপযুক্ত বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
এসব বিষয়ে ডিলার মাইন উদ্দিন সিরাজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমাকে ২৮ কেজি দিতে বলেছে। আমি ২৮ কেজির কম কাউকে দিচ্ছি না। ২৮ কেজির থেকেও কম পাওয়া গেছে, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন? জবাবে তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে চাল পড়ে গিয়ে এমনটা হয়ে থাকতে পারে! এরপর তিনি প্রতিবেদককে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং সংবাদ না করার জন্য অনুরোধ জানান।
ডিলার শহিদুল ইসলামের দায়িত্বে ছিলেন তার মা শেফালি আক্তার (সাবেক মহিলা ইউপি সদস্য ১,২,৩) এবং তার স্ত্রী মীম আক্তার। তারা কম দেওয়া প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘আগে কম গিয়েছে, এখন ঠিক করে দেওয়া হয়েছে’। এখন কতটুকু করে দিচ্ছেন ? জবাবে তারা বলেন, ‘২৮ কেজি করে দিচ্ছি’। এরপর তাদের সকলের সামনে একজনের চাল মেপে দেখতে বললে তারা নিজেরাই মেপে দেখেন সেখানে ২৭ কেজি ৭০০ গ্রাম রয়েছে। পরে সেখানে ২৮ কেজি পূরণ করে দেন তারা! ৩০ কেজির স্থলে ২৮ কেজি করে দিচ্ছেন কেন ? জবাবে তারা বলেন, আমাদের প্রতি বস্তায় ৪৮ কেজি করে দিচ্ছে সরকার। তাই ৩০ কেজির স্থলে ২৮ কেজি দিচ্ছি। পরে সকলের সামনে এক বস্তা চাল মাপতে বললে তারা মেপে দেখেন সেখানে বস্তাসহ ৫০ কেজি ৫৫০ গ্রাম চাল রয়েছে। তারা চাল কম দেওয়ার বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কোনও উত্তর জানাতে পারেননি।
কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজিজুল হক আজিজ জানিয়েছেন, ‘চাল কম দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই’। ডিলার মাইন উদ্দিন সিরাজ ও শহিদুল ইসলাম ৩-৪ কেজি করে চাল কম দিচ্ছেন। মাইন উদ্দিন সিরাজ বলেছে আপনি ৩০ কেজির স্থলে ২৮ কেজি চাল দিতে বলেছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন ? জবাবে তিনি বলেন, ‘এসব ফালতু কাজ চেয়ারম্যানে করেনা! চাল কম দিয়ে থাকলে আমি ওয়ার্ড মেম্বারকে পাঠাচ্ছি, তাদের লাইসেন্স বাতিলের জন্য আমি লিখিত দিবো ইউএনও স্যার বরাবর’।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি’।