বাঙলাী রাজনীতিবিদ এবং কর্মীদের হয়রানি করার উদ্দেশ্যে পাকিস্তান সরকার ১৯৫২ সালে একটা আইন তৈরি করে। আইনের নাম সিকিউরিটি অব পাকিস্তান অ্যাক্ট, ১৯৫২। এই আইনে প্রিভেনটিভ ডিটেনশনের বিধান যুক্ত করা হয়। প্রিভেনটিভ ডিটেনশন মানে হচ্ছে, এখনও কোন অপরাধ করেনি কিন্তু ভবিষ্যতে অপরাধ করতে পারে এই আশঙ্কায় আগে থেকে আটক করে রাখা৷
আইনটিকে আরও কার্যকর ( হয়রানি করার জন্য অধিকতর উপযুক্ত করা) করতে ১৯৫৮ সালে জারি করা হয় জননিরাপত্তা অধ্যাদেশ, ১৯৫৮৷ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই এই নিপীড়নমূলক আইনগুলো বাতিল করার জন্য দাবী করে আসছে। ১৯৫৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ ‘সিকিউরিটি অব পাকিস্তান অ্যাক্ট, ১৯৫২’ বাতিলের জন্য পার্লামেন্টে বিল উত্থাপন করেছিল। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসল তখন তারা ঐ নিপীড়নমূলক আইনের প্রিভেনটিভ ডিটেনশনসহ অনেক বিধি বিধান রেখে ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪’ পাশ করে।
আইনটিকে কালো আইন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই আইনের ক্ষমতাবলে জাসদ, সর্বহারা পার্টি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক মানুষজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপরে জিয়াউর রহমানের আমলেও আইনটি বহাল তবিয়তে ছিল।
স্বৈরশাসক এরশাদ আইনটির সদ্ব্যবহার করে বিরোধী নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংখ্যায় আটক করে রাখেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শামিল হওয়া আওয়ামী লীগের জোট, বিএনপির জোট এবং বাম জোট সবাই অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় গেলে তারা এই নিপীড়নমূলক কালো আইনটি বাতিল করবে।
করোনা মহামরি, রাজনৈতিক ও দার্শনিক পর্যবেক্ষণ
এরশাদের পতনের পরে বিএনপি ক্ষমতায় এসে বলতে শুরু করে এই আইনটি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি আইন। এই আইন ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন। বিএনপির এই অবস্থানের বিপরীতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে ঘোষণা করেন তিনি ক্ষমতায় আসলে বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ নামের এই কালো আইনটি বাতিল করবেন।
নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়, বিএনপি বিরোধী দলে। যে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ে আইনটিকে অতি প্রয়োজনীয় বলেছিল সেই বিএনপির পক্ষ থেকে এই আইনকে জংলী আইন বলে সংসদে আইনটি বাতিল করার দাবী করা হয়। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পূর্ববর্তী সরকারগুলোর আমলে এই আইনের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে।
সুতরাং এই আইন বাতিল হবে না৷ ( ১২ জুন, ১৯৯৭) বিএনপি আবার অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় আসলে তারা কালো আইনটি বাতিল করবে। কিন্তু ২০০১-০৬ সময়ে তারা এই আইন বাতিল করেনি। আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে বিএনপি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই আইনের অপব্যবহার অভিযোগ তুলে আইনটি বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু আইনটি এখনও কার্যকর আছে। এভাবেই চলছে বাংলাদেশের ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম।
লেখকঃ শিক্ষার্থী আইন বিভাগ