হাসিনা সম্ভবত ভুল করতেছেন। ভুল পথে ধরতে যাচ্ছেন। আর এতে চীনের থেকে “বাজেট সহায়তা” বলে নগদ ডলারে, প্রায় দুই ডিজিটের ঋণ আনা বোধহয় তাঁর হাত ছুটে যাবে! আর তাতে সব মিলিয়ে মানে কি দাঁড়াবে? বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে ভাঙ্গা অর্থনীতি! যা ক্রমশ আমাদেরকে দুর্ভিক্ষদের দিকে নিবে? আর আমরা তা দাঁড়ায় দাঁড়ায় দেখব?
কেন বলছি একথা?
এটা আর লুকানোর কিছু না যে সরকারের অর্থনৈতিক সংকট কাঁধে নিয়ে হাসিনার একটা খেলনা নির্বাচন শেষে নিজেকে তাতে বিজয়ী-প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা কললেন বটে কিন্তু তাতে করে তার ক্ষমতায় খাড়ায় যাবার চেয়েও আরো বড় ও মারাত্মক সঙ্কট হল ‘অর্থনৈতিক’ – সেটাই এখন সরকারকে জাপটে চেপে ধরেছে! গত মাসে নয়া সরকার গঠনের পর থেকেই ঢাকার চীনা রাষ্ট্রদুত প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন মন্ত্রীর অফিসে গিয়ে সাক্ষাতের রিপোর্ট হচ্ছে মিডিয়ায়। আর এসব রিপোর্টে কেন চীনের এসব সাক্ষাত হচ্ছে বা ইস্যু কি; তা নিয়ে আমাদের জল্পনা কল্পনাও করতে হচ্ছে না। যেমন চীনা রাষ্ট্রদুত ইয়াও ওয়েন এর সাথে নয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ এর যে প্রথম আনুষ্ঠানিক সাক্ষাত হয়েছে এনিয়ে হাতের কাছে দুটা রিপোর্ট দেখছি। বিবিসি বাংলার বেলায় শিরোনাম, “বাংলাদেশ রিজার্ভ সংকটে পড়লে চীন ‘পাশে থাকবে’ কীভাবে?” –আর বণিকবার্তায় শিরোনাম, বাংলাদেশ রিজার্ভ সংকটে পড়লে পাশে থাকবে চীন— রাষ্ট্রদূত” – মানে দুটাই প্রায় একই ভাষার শিরোনাম।
“ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গত বেশ কয়েকমাস যাবত বলে আসছেন যে বাংলাদেশ
রিজার্ভ সংকটে পড়লে চীন পাশে দাঁড়াবে। কয়েকদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সাথে বৈঠকের
পর চীনের রাষ্ট্রদূত আবারো একই কথা বলছেন, যেটি সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট হয়েছে।” – বিবিসি
অর্থাৎ আমাদের জল্পনা-কল্পনার কিছু নাই, কারণ ব্যাপারটা খোলাখুলি-ই যে বাংলাদেশের কঠিন রিজার্ভ সংকট বর্তমান। আর এতে সহায়তা দিতে চীন আগ্রহী বা রাজিও আছে। এরই ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে। এছাড়া বিবিসি দুজন মন্তব্যকারীকেও নিয়ে এসেছে সংকট নিয়ে তাদের মতামত দিবার জন্য। একজন হলেন সিপিডির কর্তা দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। আর অন্যজন ডঃ জাহিদ হোসেন যিনি নিজ কেরিয়ার গড়তে সেই আশির দশকের শেষ থেকেই বিশ্বব্যাংক ওয়াশিংটনের এর সাথে কাটিয়ে শেষটা বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের চীফ ইকোনোমিস্ট হিসাবে শেষ করেছেন। এরপর আনুষ্ঠানিক অবসর নিলেও কনসালটেন্ট হিসাবে বিশ্বব্যাংক ঢাকার এক্সটারনাল বা ছুটাকাজ-সম্পর্কে জড়িত ও অভিজ্ঞ মতামত দিয়ে থাকেন।
দেবপ্রিয় সম্পর্কেও আরেকটু বিস্তারে পরিচয় বলা দরকার। এককথায়, দেবপ্রিয় এখন শুধু সিপিডির কর্তাব্যক্তি শুধু তাই নয়, তিনি প্রায় যেন ভারতের মুখপাত্র হয়েছেন। যদিও বলা হয় সিপিডির জন্ম ১৯৯৩ সালে কিন্তু এটা প্রথম লাইম-লাইটে এসেছিল ২০০৪ সালে। তাও আবার পরের ১/১১ এর ক্ষমতাদখলের পক্ষে প্রস্তুতিমূলক কাজ ২০০৪ সাল থেকেই শুরু হয়েছিল বলে। কিন্তু সার অর্থে সেটা ছিল আসলে ভারতের স্বার্থের পক্ষে ‘কনসালটেন্সি’ এবং তা খোলাখুলি। বিশেষত বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতের নর্থ-ইস্টকে বিনা পয়সায় সব ধরণের করিডোর দেয়ার ওকালতি। এমনকি যারা সিপিডির এই দালালি ব্যবসার সাথে একমত নয় তারা সবই নাকি “অশিক্ষিত” এমন মন্তব্যও করেছিলেন রেহমান সোবহান।
এটুকুই নয়, একেবারে সাম্প্রতিককালে দেবপ্রিয় একেবারে রানা দাসগুপ্তের সাথে পাল্লা দিয়ে তবে একসঙ্গে বাংলাদেশের প্রো-ইন্ডিয়ান প্রধান হিন্দু লিডার হতেও আপত্তি করছেন না। দেবপ্রিয়ের মুল পেশা “উন্নয়ন কনসালটেন্সি” কিন্তু একালে তিনি (সাথে সিপিডির বস রেহমান সোবহানও) এই পরিচয় ছাপিয়ে ভারত-সমর্থিত হিন্দু নেতা হতে দ্বিধা করছেন না। কোন প্রফেশনাল মানুষের এমন কাজ ও নিচা মানের কমবিনেশন (কনসাল্টেন্সি আর প্রো-ইন্ডিয়ান প্রধান হিন্দু লিডার একত্রে) আমরা আগে দেখি নাই। কিন্তু এমন কেন? কারণ, দেখতে দেবপ্রিয়র এটা দুটা পেশা-ততপরতা হলেও এদের মিলটা হল দুইটাই ভারতের স্বার্থ আর তিনি বাংলাদেশে থেকেও সেই স্বার্থের প্রতিনিধি।
মুল ও গুরুতর প্রসঙ্গ হল বাংলাদেশ রিজার্ভঃ
উপরে দেখলাম আমরা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা বা রিজার্ভের মারাত্মক সংকট আছে, তা এখন সরকারিভাবেও স্বীকৃত। তা চীনা রাষ্ট্রদুত আর নয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে প্রথম আলাপেই আলোচিত ও রিপোর্টেড। আর এই সংকট মিটাতে চীন সবচেয়ে সম্ভাব্য এক মুশকিল আহসান বটে! কিন্তু এক বড় কিন্তু আছে। সেটা হল, চীন কেন বাংলাদেশকে বৈদেশিক মুদ্রা দিবে?
এছাড়া এখানেও আবার সব পরিসরেই আরেকটা ভুল বুঝাবুঝি আছে সেটা হল – রিজার্ভ সংকটে পড়লে চীন ‘পাশে থাকবে’ ; এই রিজার্ভ সংকট মানে ঠিক আসলে কি? বাংলাদেশের হাতে বা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঞ্চয় বা মজুদে ‘যথেষ্ট’ নগদ ডলার নাই। আর এটা কমপক্ষে গত দুবছরের ফেনোমেনা। বলা যায় ২০২২ সালের আগষ্টে তেলের দাম ৫১% বাড়ানোর সময়কাল থেকেই রিজার্ভ সংকট মারাত্মক হয়ে উঠেছিল যা এখন সম্ভবত চরমকাল পার করছে।
কিন্তু যে “রিজার্ভ সংকট” শব্দে এটা বলা হচ্ছে সেটা কি চীন যে ২০১৬ সাল থেকে ঢেলে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প দিয়েছে সেসব প্রকল্পের বৈদেশিক মুদ্রা ছাড় দেয়া ত্বরান্বিত করা অথবা নতুন করে চীন বাংলাদেশকে আরো বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে কি??
এর সরাসরি জবাব হল -‘না’ সেটা না। আসলে বলা হচ্ছে ১. চীনের বাংলাদেশকে নগদ ডলার এবং ২. তা বড় পরিমাণ (ধরা যাক দশ বিলিয়নের মত) নগদ ডলার দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। সাথে চালু চীনা উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থছাড়ের কথা অবশ্যই আছে। কিন্তু সেটা এখানে গৌণ ও ভিন্ন বিষয়! চীনের আমাদেরকে নতুন করে নগদ ডলার ঋণ দেয়া আর চীনা উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থছাড় – এদুইটা একই জিনিষ একেবারেই না। আর এখানেই এদুটাকে মাখামাখি করে অনেকের মধ্যেই বুঝাবুঝিতে জট পাকানো ধারণা আছে।
বাংলাদেশের রিজার্ভের দিক থেকে দেখলে একটা ২০ বিলিয়ন ডলারের চীনাসহ যে কারো কোন উন্নয়ন প্রকল্প শুনতে অনেক বড় মনে হলেও প্রতিবছর এর অর্থছাড় বড় জোর মাত্র এক বিলিয়ন ডলার হবে। কারণ প্রকল্প যত বড়ই হোক পুরা প্রকল্পের অর্থ (বৈদেশিক মুদ্রা) তো শুরুতে বা একবারেই বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়া হয় না। বরং প্রকল্প যতটুকু বাস্তবায়ন হয় ততটুকুই অর্থছাড় ঘটে। এছাড়া প্রতিবছরের অর্থছাড়ের সব অর্থ দিয়েই তো যা কেনা হয় এর সবকিছুই বাংলাদেশি পণ্য বা শ্রম নয়। অর্থাৎ বিদেশি পণ্য কেনা মানেই সেই অর্থ (বৈদেশিক মুদ্রা) আবার বিদেশেই চলে যাবেই। তাই সারকথায়, উন্নয়ন প্রকল্পের বৈদেশিক মুদ্রা দেশে্র মধ্যে ধরে রাখা খুবই কঠিন। কারণ, অর্থছাড় ব্যাপারটা আসলে ধীরগতির কাজ-বাস্তবায়ের হারের উপর নির্ভরশীল বা সম্পর্কিত; এছাড়া অর্থছাড় হলেও তা দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য বা শ্রম কেনা হবে যতটুকু কেবল ততটুকু বৈদেশিক মুদ্রাই বাংলাদেশের রিজার্ভে থেকে যাবে। একারণে আমাদের রিজার্ভ সংকট – এটা যত বড়ই বিদেশি উন্নয়ন প্রকল্প নেই না কেন – এটা মিটবে না।
আমাদের দরকার নগদ ডলারঃ
অর্থাৎ আমাদের রিজার্ভ সংকট মিটাতে গেলে আরো বড় বড় নতুন বা পুরানো প্রকল্পের দ্রুত অর্থছাড় দিয়েও মিটবে না। তাই আমাদের রিজার্ভ সংকট মিটানোর চাহিদাকে পরিস্কার করতে বুঝাতে বলা হবে নগদ ডলার (বৈদেশিক মুদ্রা) লাগবে। আর এটা অবশ্যই উন্নয়ন প্রকল্প ঋণ একেবারেই নয় – এভাবেই বুঝতে হবে।
কিন্তু কি নামে দেশে সাধারণত এসে থাকে নগদ ডলার?
এককথায় জবাব – বাজেট সহায়তা নামে এসে থাকে। এটাই এর টেকনিক্যাল বা খাতওয়ারি নাম! মানে সরকারের বাৎসরিক বাজেটের বৈদেশিক মুদ্রা অংশের দায় মিটাতেই কেবল সরকার এই নগদ ডলার ব্যবহার করতে পারবে। এজন্য অনেকে এটাকে “ব্যালেন্স অব পেমেন্টের দায়” মিটানোও জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রাও বলে থাকে। তবে মূল কথাটা হল, এটা প্রকল্প ঋণ সহায়তা নয়। আমরা যেন দুটা ধারণাকে মাখায় না ফেলি।ব্যাপারটা আমরা দেখছি একমাত্র স্পষ্ট করে ধরতে পেরেছেন ও ব্যাখ্যা করেছেন ডঃ জাহিদ হোসেন, ঢাকা বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ।
“চীন তো বলেনি যে বিনিয়োগে সমস্যা হলে, তারা বাংলাদেশের পাশে থাকবে। তারা বলেছে, রিজার্ভের সমস্যা হলে পাশে থাকবে।তার মানে তোমার ক্যাশ নাই, আমরা তোমাকে ক্যাশ দেব। এটাই তো মিন (বোঝানোর) করার কথা।”
জাহিদ হোসেন মনে করেন, তিনভাবে এই সহায়তা বা পাশে থাকার বিষয়টি হতে পারে। … বাজেট সহায়তা কিংবা ব্যালেন্স
অব পেমেন্ট সহায়তা হতে পারে।” – বিবিসি
কিন্তু কোন দাতাদেশই নগদ ডলার বা বাজেট সহায়তা দিতে চায় নাঃ
কেন? কারণ, ২০ বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন প্রকল্প দেয়া তুলনায় সহজ; অথচ ৫-৭ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা দেয়া কঠিন। দাতা দিতে চায় না। তুলনা করে বললে, ৫-৭ বিলিয়ন ডলারের কোন উন্নয়ন প্রকল্পের সব অর্থ যদি দাতা একবারেই একাউন্ট ট্রান্সফার করে দেয় তবে সেটাই তখন কার্যত বাজেট সহায়তা হয়ে যায়। এতে তাহলে সরকার কাজ বাস্তবায়ন অনুযায়ী বছরে মাত্র কয়েক মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে পারে আর বাকি ডলার আমদানি ব্যয়-সহ এমন সব কাজেই ব্যবহার করতে পারবে। একারণে, বাজেট সহায়তা ঋণ কোন সীমার বাইরে খরচ-ব্যবহার করা যাবে না তা কড়াভাবে বলা বা শর্তে বলা থাকে। এই অর্থে বাজেট সহায়তা হচ্ছে উন্নয়ন প্রকল্প ঋণের চেয়েও অনেক বাড়তি সুবিধা ঋণ গ্রহিতা পাবে বা তাকে দেয়া হয় এমন এক ঋণ। এক স্পেশাল ঋণ, যার মোবিলিটি বা ব্যাবহারযোগ্যতা ঋণ গ্রহিদার জন্য বহুগুণ!
তাহলে কোন দাতা দেশ এমন বহুল সুবিধা সম্পন্ন ‘বাজেট সহায়তা’ ঋণ কখন ও কেন দিতে রাজি হবেঃ
এককথায় জবার, দাতাও যখন বিনিময়ে অন্য অনেক সুবিধা পাবে! যেমন বাংলাদেশে চীন ‘বাজেট সহায়তা’ ঋণ দিবে তখন যখন সে বিনিময়ে বিশেষ স্ট্রাটেজিক সুবিধা পাবে; এমন হতে পারে ! এককথায় বিশেষ সুবিধার ঋণ তাই দাতাও এথেকে বিনিময়ে তার বিশেষ সুবিধা আদায় করতে বা পেতে চাইবেই। সম্প্রতি শেয়ার বিজ পত্রিকা ভারতের ঋণ প্রসঙ্গে একটা রিপোর্টের শিরোনাম হল, “পাইপলাইনে আটকে আছে ৮০ শতাংশ ঋণ” । তাও আবার সেটা ১৩ বছর ধরে। এছাড়া এসব ঋণের ৭৫% পণ্য বা শ্রম ক্রয় ভারত থেকে হতে হবে এমন শর্ত দেয়া। এমনিতেই ভারতের এসব প্রকল্প মানেই হল যা বাস্তবায়ন হলে সুবিধা কেবল ভারত পাবে – এমন! মানে বাংলাদেশ থেকে কড়িডোরের সুবিধা নিবে ভারত তাও বিনা পয়সায় আর সেজন্য যে রাস্তাঘাট ব্যবহার ভারত করবে – বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঐ রাস্তাঘাট নির্মাণের খরচ মানে ঋণ গ্রহণ ও সুদ পরিশোধ করবে বাংলাদেশ। এই হল ভারতীয় স্টাইল! যেমন ভারত কলকাতা-ত্রিপুরা রোড বা ট্রেন চলাচলের সুবিধা নিবে; ভারত পদ্মা সেতু ব্যবহার করবে আর সেতুর চীনা-ঋণ নেয়া ও পরিশোধের দায় বাংলাদেশ নিবে। আর ভারত কেবল আখাউড়া থেকে ত্রিপুরা লাইনে পাঁচ-ছয় কিমি ট্রেন লাইন প্রকল্পে অর্থ খরচ করে (যেন পুরা প্রকল্পেই) সেটাতে ভারত বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছে বলে দেখাবে। এককথায় বললে এভাবেই ভারত সমস্ত স্ট্রাটেজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা একপক্ষীয় ভাবে ব্যবহার করবে। আর দাবি করবে ভারত নাকি বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী ঋণদাতা! এমনকি আজকাল অনেক তরুণ ফেসবুকার কেও পাওয়া যাবে যে প্রমান করে দিবে যে বাংলাদেশকে ভারতের দেয়া ঋণ চীনের চেয়েও পরিমাণে বেশী!
কেন এভাবে এই তুলনা করে দেখালাম?
দেখালাম এজন্য যে জাহিদ হোসেনের সাথে একই প্রশ্ন দেবপ্রিয়কে করেছিল বিবিসি। দেবপ্রিয়-ই ভারতের সাথে তুলনা ডেকে এনেছিলেন। বিবিসি লিখেছে “…ভারতের দেয়া ক্রেডিট লাইনের কথা উল্লেখ করে মি. ভট্টাচার্য…”। এটা কি তুলনীয় ঘটনা? ভারত কি অবকাঠামো ঋণ দেয়ার মত নিজে যোগ্য অর্থনীতি হয়েছে? দেবপ্রিয় এর সেখবর নাই, তবুও তিনি কোশেশ চালিয়ে গেছেন। এমনই খেদমতগার তিনি! যে ভারত বিনা পয়সায় স্ট্রাটেজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা একপক্ষীয়ভাবে নিচ্ছে তার সাথে চীনের অবকাঠামো উন্নয়নের ঋণদাতা ভুমিকার তুলনা করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, কেন বাংলাদেশ চীনের নগদ ডলার দেওয়ার বাজেট সহায়তা শিরোনামের ঋণ নিতে পারবে না – এম মিথ্যা ও ভুয়া ধারণায় ভয় দেখিয়েছে।
“তবে, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় চীনের কাছ থেকে ঋণ নেবার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা হতে পারে বলে
উল্লেখ করেন মি. ভট্টাচার্য। কারণ, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ঋণ নিয়েছে এবং সামনে ঋণের আরো কিস্তি আসবে।এমন অবস্থায় চীনের কাছ থেকে ঋণ নিতে গেলে আইএমফ বিষয়টা মানবে কি না সেটাও একটা দেখার বিষয়, বলছিলেন মি. ভট্টাচার্য।” – বিবিসি
দেবপ্রিয় মস্কোর প্লেখানভ রাশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা ও পিএইচডি। ফলে সারাজীবন তিনি “পশ্চিমা পচা-গলা পুঁজিবাদের” বিরোধীতা ও নিন্দা করে এসেছেন। যা বুঝি না তার নিন্দা করা তো খুব আরামেরই। আর এখন মোদির “হিন্দুত্ববাদের পুঁজিবাদ” তাঁর কাছে খুব মিস্টি ও উপাদেয়। অথচ আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক তার কাছেও নিপাত যাক সংগঠন। সুযোগ পেলেই তিনি এ’সংগঠনের বিরুদ্ধে বিষ উগলে দেন। অথচ উনার নিজ অযোগ্যতা হল, আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এটা কি ও কেমন প্রতিষ্ঠান অথবা ১৯৪৫ সালের পরে গ্লোবাল পলিটিক্যাল ও ইকোনমিক ব্যাবস্থা হিসাবে এটা কিভাবে কাজ করে? আবার এটা কোথায় কোথায় গরীব দেশের বিরোধী আবার কোথায় ঐ গরীব দেশের কাছেই “অন্ধের কাছে তাঁর লাঠির” মতই সহায়ক – ইত্যাদি এসব দিকে তিনি বেখবর! এই গ্লোবাল অর্থনৈতিক সিস্টেমটা চালু আছে বলেই কিন্তু তিনি আয়-ইনকাম করার সুযোগ পেয়েছেন সেতাই তিনি মনে হয় খেয়াল করেন নাই!
প্রথম কথা হল, কোন দেশ রিজার্ভ সংকটে পড়লে ওর একটা দিক হল (সবটা নয়) নগদ ডলারের অভাব বা প্রয়োজন হয়ে পরে। এর সবটা আইএমএফ দেয় না বা যোগান দিতে পারে না। এছাড়া এমন সংকটে আইএমএফের কাজ ও প্রধান ভুমিকাটা ঠিক ঋণ দেয়া বা নগদ ডলার যোগান দেয়া না। বরং ১৯৪৫ সাল থেকে আইএমএফের কাজের মধ্যে দিয়ে তৈরি হওয়া যে পেশাদার অভিজ্ঞতা তা দিয়ে সে কোন দেশের পড়ে যাওয়া অর্থনীতিকে টেনে তোলার পথ বাতলানো (যেটাকে কমিউনিস্টেরা আধো বোলে শর্ত দেয়া বলে না-বুঝা হৈ চৈ করে থাকে)। মানে পড়ে যাওয়া ট্রেনকে আবার লাইনে তোলার মত! সেকারণে গ্লোবাল পুঁজি বাজার সংশ্লিষ্ট যেকেউ এসব ক্ষেত্রে ঐ পতিত দেশের অর্থনীতি কারকশন পদক্ষেপগুলো নিয়ে উঠে এসেছে কিনা এব্যাপারে কেবল আইএমএফ এর বক্তব্য-কেই বিশ্বাস করে। এখন অসুবিধা হল মাঙনা পরামর্শ দিলে পতিত দেশ তা আমল করতে চায়না; যেন এতে সিরিয়াসনেস আনতেই বা সেটা ঠেকাতেই কিছু ঋণ ঐ সংকটে পতিত দেশকে আইএমএফও দিয়ে থাকে। যেমন, বাংলাদেশের এখন ৫-১০ বিলিয়ন ক্যাশ ডলার লাগবে বলে কথা উঠেছে সেখানে আইএমএফের দেয়া এখনকার (বছর দেড় আগে শুরু হওয়া) ঋণ হল ৪.৭ বিলিয়ন। কিন্তু তা দেয়া হবে প্রতি ছয় মাসে মাত্র ৬৮২ মিলিয়ন (৬৮.২ কোটি) ডলার করে; মানে সাড়ে তিন বছর ধরে। এভাবে সাত কিস্তিতে অর্থ পাবে। তাও আবার প্রতিবার উন্নতির (রিকভারির) যে টার্গেট আইএমএফ দিবে তা পূরণ সাপেক্ষে পরের কিস্তির অর্থ ছাড় হবে – এভাবে।
কিন্তু ছয় মাসে ৬৮২ মিলিয়ন মানে মাসে ১০০ মিলিয়ন ডলারের মত; এটা কোন অর্থই না। যেখানে শুধু জ্বালানি আমদানিতে আমাদের প্রতি মাসে ব্যয় এক বিলিয়ন ডলার। মানে শুধু জ্বালানি আমদানির মোট অর্থের দশভাগের একভাগ মাত্র আইএমএফের দেয়া ঋণ প্রতি মাসে। অর্থাৎ আইএমএফের ঋণটা “টোকেন” (token) ; বা নাম কা ওয়াস্তে! আগের অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন এই কিস্তির ডলার উনি একলা নিজেই বাংলাদেশকে দিতে পারেন। যেটা এতই অল্প!
অথচ জ্ঞানী দেবপ্রিয় আন্দাজে বলতেছেন যেহেতু “বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ঋণ নিয়েছে এবং সামনে ঋণের আরো কিস্তি আসবে।”– তাই আমরা আর এখাতে চীনের থেকে নগদ ডলার বা বাজেট সহায়তা খাতে নাকি ঋণ নিতে পারব না। যেন বাচ্চা বয়সে আমাদেরব শোনা সেই ডায়লগ যে বলতে চাচ্ছেন- “না না অমন করেনা মা বকবে”। তাই সেই ভাষায় দেবপ্রিয় বলছেন, “এমন অবস্থায় চীনের কাছ থেকে ঋণ নিতে গেলে আইএমফ বিষয়টা মানবে কি না সেটাও একটা দেখার বিষয়”।
আসলে দেবপ্রিয় বলতে চাচ্ছেন বাংলাদেশ বা হাসিনা যেন চীনের কাছে না যায়। এ্যটাই তাদের মন-কামনা!!! আর এখানে এই তাদের মানে ভারতীয় স্বার্থের বুঝতে হবে! হাসিনা যেন চীনের থেকে বাজেট সহায়তার নগদ ডলার ঋণ করতে না যায়। কেন? এতে দেবপ্রিয় এর কি অসুবিধা?দেবপ্রিয় বলতে চাইছেন এতে ভারত রাগ করবে। কারণ, হাসিনার চীনের কাছে যাওয়া মানে তিস্তা প্রকল্প জাতীয় আরো অনেক (ভারতের মাতব্বরি অস্বীকার করে সম্মতি দেয়া) প্রকল্পে হাসিনার সম্মতি দেওয়া বা হাসিনাকে নগদ ডলার সহায়তা ঋণ দেওয়ার বিনিময়ে চীনকে স্ট্রাটেজিক সুবিধা দেয়া। এখন বাংলাদেশ তার নিজ স্বার্থে চীনকে কি দিবে নিবে সেটা একান্তই বাংলাদেশের স্বার্থ! এখানে ভারতের বলার কি আছে? কিন্তু দেবপ্রিয় মনে করেন এটা তার ও ভারতের স্বার্থবিরোধী!
এবার এর উলটা দিক থেকে দেখি। হাসিনা নগদ ডলার সহায়তা যদি না আনতে পারে তাহলে কি হবে? আগামি মাস থেকেই আমদানি ব্যয় মিটাবার সামর্থ ভেঙ্গে সব এলোমেলো হয়ে পড়বে বলা হচ্ছে। অর্থনীতি চরম বিশৃঙ্খলায় পড়বে। মুদ্রাস্ফীতি আকাশ ছুবে করবে – ধরাম করে ছাদে ঠেকবে। মুদ্রাস্ফীতি আকাশচুম্বি হওয়া কথাটার-ই আরেক ভাষ্য হল, গরীব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা শেষ। নুন্যতম খাদ্য কেনার সামর্থটাও নাই হয়ে যাবে। এটাই দুর্ভিক্ষের আরেক নামে। এজ্জন্য কোন দেশের ফরেন রিজার্ভ শুণ্যের দিকে কিনা এটাও দুর্ভিক্ষ আসবার একটা বড় সিগনাল! অর্থাৎ ভারত বা তার এজেন্ট দেবপ্রিয় আমাদের হুমকি-ভয় দেখাচ্ছেন যেন হাসিনা চীন না ভ্রমণে না যায়। কারণ, এতে নাকি ভারতের স্ট্রাটেজিক স্বার্থ চীনের কাছে ক্ষুন্ন হবে! কি আবদার!! অথচ এতে বাংলাদেশের অর্থনীতি ফেল করলে যে দুর্ভিক্ষের দিকে যাবে তবু হাসিনা তা ঠেকাতে ব্যবস্থা না নেক এটাই ভারতের আবদার!অথচ এনিয়ে ক্রমান্বয়ে ভারত হাসিনার উপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। সর্বশেষ বিনা পাবলিক ঘোষণায় অজিত দোভালের সফরও বাংলাদেশ সফরও সেকারণে বলে কানাঘুষা চলছে!
একটা সমতুল্য অভিজ্ঞতাঃ
করোনার টিকা আমরা কোথা থেকে কিনবো? এই টিকা প্রথম অনুমোদন পেলে দেখা দিয়েছিল কাড়াকাড়ি। কারণ, বড়লোক পশ্চিমা দেশগুলো তাদের মোট চাহিদার ছয়-সাত গুণ বেশী টিকা নিজেদের জন্য সংগ্রহ-মজুত শুরু করেছিল। খামোখা নিজ সাদা শ্রেষ্ঠত্বের আকাঙ্খায়। আর এটাই আমাদের মত গরীর দেশের অবস্থা আরো শোচণীয় করেছিল। চীন অফার দিয়েছিল তাদের টিকার গবেষণার শেষ বা তৃতীয় ফেজে যুক্ত হবার বিনিময়ে টিকা পাওয়ার। কিন্তু এতে ভারতের চেয়েও চীনের বাংলাদেশের উপর প্রভাব বেড়ে যাবে তাই এক শয়তানি চাল দিয়েছিল ভারত। বাংলাদেশ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ভারতের টিকা কারখানায় বিনিয়োগ করলে তারা আমাদের প্রয়োজনীয় টিকা সরবরাহ করবে। তাহলে টিকা ক্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যবসায়ী- মন্ত্রী উপদেষ্টারা এই সুযোগে বিরাট আয় করে নিতে পারবে। অর্থ্বের লোভে সরকারও সেদিকেই রওনা দিয়েছিল; সরকারি সহায়তায় বেসবকারি বিনিয়োগও দিয়ে যুক্ত হয়েছিল ভারতের সাথে। তবু চীন এনিয়ে একটাও কথা পাবলিকলি বলে নাই। রয়টার্স মুখে মাইক ধরলেও বলেছিল – নো কমেন্ট!আর সরকার-বেসরকারি দালালেরা ভেবেছিল তারা সহজেই জিতে গিয়েছে। ভেবেছিল চীন কি বোকা যে সহজেই ওয়াক ওভার দিয়ে দিছিল। আর তারা স্বপ্নে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বেড়ে কত হচ্ছে তা গুণা-গুনতি শুরু করেছিল! কিন্তু না, সব হিসাব ভুল!
কয়েকমাসের মধ্যে মোদি ঘোষণা করে বলেছিলেন বাংলাদেশে টিকা পাবে না। আগে ভারতের জনগণ সকলে টিকা পাবে এরপর দেখা যাবে! কিন্তু তখন হাসিনা টিকা পাবেন এমন বিকল্প কোথায়? পশ্চিম উতপাদকেরা সবাই নিজেকে বা অন্য পশ্চিমাদের নিয়েই ব্যস্ত! ফলে হাসিনার আবার সেই চীনের কাজে গিয়েই হাতেপায়ে ধরা! স্বভাবতই চীন এবার হেসেছিল কিনা আমরা জানি না! কিন্তু বাংলাদেশ থেকে চীন তাদের স্টাটেজিক সুবিধা যা তারা আগের বেছে রেখেছিল তা এবার উসুল করে নেওয়ার বিনিময় আমাদেরকে টিকা দিয়েছিল। সেজন্য টিকা চুক্তি করতে চীনা স্বাস্থ্যমন্ত্রী না এর বদলে তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এসেছিল। বড় শিরোনামে বললে, এটাই কক্সবাজারে ছয় কিলোমিটারের (রিফুয়েলিং) রানওয়ে নির্মাণ ও এর সাথে আরো অনেক চীনা স্ট্রাটেজিক স্বার্থ বিষয়ক বিষয়ে তা পাইয়ে দিতে চুক্তিতে উপণীত হতে হয়েছিল আমাদেরকে। তার মানে দাঁড়ালো সেকালে হাসিনাকে এই কাজে ভারত-ই ঠেলে দিয়েছিল! এবারও বাজেট সহায়তা আনতে হাসিনার সম্ভাব্য চীন সফরকে কেন্দ্র করে কি একই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে?
এখন ভারতের মোদিসহ বিরাট বিরাট সব স্ট্রাটেজিক এনালিস্ট, প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা সব যারা যারা আছেন তারা হিসাব দেন! বলেন, বাংলাদেশকে শুরুতে চীনা টিকা গবেষণায় যুক্ত হয়ে টিকা যোগাড়ে বাগড়া দিয়ে ভারতের কি লাভ হয়েছে? অবশ্যই কোন লাভ হয় নাই। উলটা ক্ষতি হয়েছে। স্ট্রাটেজিক দিক থেকে চীনারা ভারতের ও আমেরিকার উপরেও আগিয়ে গেছে। আর ভারতের এসব তথাকথিত স্ট্রাটেজিক পরিকল্পকেরা আপনারা তো নিজের স্বার্থই রক্ষা করতে জানেন না। এটাই প্রমাণিত হয়েছে। মনে করেন অর্থের লোভ আর মনি-পরী হানিট্রাপের মাধ্যেমেই সব অর্জন করে ফেলবেন। আপনারা এতই বুদ্ধিমান! আর ‘র’-এর কাজ আগানোর ভিত্তিও এই অর্থ আর মেয়েমানুষ দিয়ে ট্রাপ করা! অথচ আপনারা ভাবছেন চীনের বুদ্ধি-পরিকল্পনার উপরে আপনি এই অর্থ আর মেয়েমানুষ দিয়ে ট্রাপ দিয়ে জিতে যাবেন; রাজত্ব করবেন!এর সোজা মানে দাঁড়ালো এখন জবাব নাই আপনাদের কাছে? বাংলাদেশের করোনার টিকা চীন থেকে সংগ্রহের প্রথম পরিকল্পনাকে ফেল করিয়ে দিয়ে ভারতের কি লাভ হয়েছে? নাকি আলটিমেটলি ভারতই বাংলাদেশকে আরো বেশী করে চীনে কোলে উঠিয়ে দিয়েছে?ভারতের স্ট্রাটেজিক জ্ঞানীরা এখন আমাদের দিকে না তাকিয়ে ভারতের নিজের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে মুল্যায়ন করেন আগে; সাহস থাকলে!
এরপরে এর ভিত্তিতে ঠিক করেন হাসিনাকে আবার এখন চীন সফরে (বাজেট সহায়তা আনতে) যেতে বাধা দিবেন কোন সাহসে? কোন লক্ষ্যে ও যোগ্যতায়? আপনাদের মূল সমস্যা তো অর্থনৈতিক সামর্থ নয়, হিংসা-ভিত্তিক চিন্তা! তাই চিন্তা, বুদ্ধি পরিকল্পনা সবই এখানে এসে সব শুকিয়ে যাবে আপনাদের! অথচ সেই পুরানা পথ; অজিত দোভালকে পাঠিয়ে চাপ দিবেন??? পেটি (petite বা উচ্চারণে পেতিত মানে ক্ষুদ্র বা সংকীর্ণ) চিন্তা, পেটি দোকানদারি মানসিকতা বা হাভাতে এরা অবশ্য এগুলাই করে থাকে! যারা বিরাট চকচকে লোভের চিন্তায় শেষে সবসময় আত্মঘাতি হয়ে থাকে! মোদি কেন এর ব্যতিক্রম হবেন!
ভারত-চীনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের শিকার না হইঃ
এই বক্তব্যটা মন্ত্রী ওয়ায়দুল কাদেরের। গত ৪ ফেব্রুয়ারি পুরা বক্তব্যটা নিয়ে মিডিয়া শিরোনাম ছিল – আমরা যেন চীন-ভারতের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্ত না হই: ওবায়দুল কাদের । দেখে পড়ে মনে হতে পারে যে হাসিনা খুবই সতর্ক বোধহয় তাই চীন-ভারত দুটা দেশ থেকেই দূরে থাকতেই হাসিনা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। না, এই অনুমান ভাবনাটা ভুল! কারণ, এটা হল আসলে সম্ভবত হাসিনা এখন আর চীন সফরের কথা ভাববেন না! আর তাতে সবকিছু সিদ্ধান্তহীনতায় ফেলে বসে থাকতে চাইছেন। কারণ, হাসিনার চেয়ে কে সবচেয়ে বেশী জানে যে চীনের কাছ থেকে নগদ ডলার না আনা মানে অর্থনৈতিক রিকভারি হবে না; মানে দেশকে ক্রমশ এক দুর্ভিক্ষ এ’দিকে ঠেলে দেয়া হবে?
হাসিনার কাছে পরিস্থিতিটা এখন কোন দুরাষ্ট্রের দ্বন্দ্বের শিকার জড়িয়ে যাওয়া বা না যাওয়ার হিসাবে দেখতে যাওয়াটাই ভুল! হাসিনার জন্য বাংলাদেশের জন্য লক্ষ্যটা হল অর্থনৈতিক রিকভারি আর তা করে, দুর্ভিক্ষ এড়ানো। সবচেয়ে বড় কথা এতে কোন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যাওয়া বা না যাওয়া যাই ঘটুক – তবুও দুর্ভিক্ষ যদি এড়াতে পারে তবে সবের দায় জনগণ এর কাছে সারেন্ডার করলে তারা তা শেয়ার করবে। কিন্তু কেবল মনে রাখেন একটা চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ – এটা বাংলাদেশের অভিমুখ, গতিপথ অপরের প্রত এটিচ্যুড ইত্যাদি সব বদলে দিয়েছিল। পুরা পঁচাত্তর সালটা আমাদের খুনাখুনিতে কেটেছে। ১৯৮১ সালের আগে কিছুই নুন্যতম থিতু হয় নাই! আর সেই থেকে খুড়িয়ে চলা, পড়ছি আর উঠছি, খুড়িয়ে চলছি – জনমত বিভক্ত! কোন রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকেই এরপরে আমরা নুন্যতম বের হতে পারছি না! প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ইত্যাদি নেগেটিভ এটিচ্যুড বার বার ছাপিয়ে উঠছে!
হাসিনা কি করতেছেন তা তিনি নিজেই স্থির মনে এখানে খুঁজে দেখতে পারেন। যেমন, তিনি মনে করেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা শ্রেণীর হয়ে ক্ষমতা নিয়েছেন। ধরে নিলাম তিনি ঠিক ও সৎ ও ন্যায্য কথাই বলছেন। কিন্তু তাহলে স্কুলের পাঠ্যবই তা ভারতে পাঠিয়ে ছাপানোর নামে তাদের অনুমোদন নিতে পাঠান কেন? এটা কি কোন মুক্তিযোদ্ধা শ্রেণীর কাজ হতে পারে? সালমন রহমান কখনও বইয়ের ব্যবসা করেন নাই, ছিলেন না। অথচ তাকেই কেন বই ছাপিয়ে আনার দায়ীত্ব দেয়া হয়েছে কেন? পাঠ্যবই ছোটখাট জিনিষ না। ভারতীয়দের সম্পাদিত বই পড়ালে কি বাংলাদেশ থেকে মুসলমানদের কথিত জঙ্গীবাদী মানসিকতা দূর হয়ে যাবে? কথিত ‘বিজ্ঞানমনস্ক’ হয়ে গেলে জঙ্গীবাদ চলে যাবে – এটাই কি মুক্তিযোদ্ধা শ্রেণীর এসব চিন্তার ভিত্তি নয়? অথচ এটাই তো ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের নিচে বাংলাদেশকে রেখে দেওয়া; নয় কি? আচ্ছা ভারতের পাঞ্জাবের খালিস্তান মুভমেন্ট কি জঙ্গীবাদ নয়, এটাও কি ভারতের সরকারি পাঠবই পড়েই আর তা পড়ার পরেও জন্মাইছে। তাই নয় কি? হায় মুক্তিযোদ্ধা শ্রেণী!!! তাহলে আমরা কোথায় দাড়াবো? আমাদের কোথায় নিয়ে চলেছেন আপনারা?
তাহলে মুক্তিযোদ্ধা শ্রেণীর শত্রু হল ইসলামি জঙ্গীবাদ মানসিকতা আর এটাকে ধুয়ে পরিস্কার করতেই গঙ্গায় ডুব দেওয়ানো্র জন্যই এমন পাঠ্যবই ব্যবস্থাপনা? এভাবে আমরা কি আমাদের মুসলমান পরিচয়কে এভাবে শুদ্ধ ও হিন্দুত্ববাদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে নিতে পারবো? নাকি এরপরও মুক্তিযোদ্ধা শ্রেণী বলে কিছু অবশিষ্ট থাকবে? আসলে, হিন্দুত্ববাদের অধীনস্ত হয়ে একটা “মুক্তিযোদ্ধা শ্রেণী” বা হাসিনার বাংলাদেশ বলেও কিছুই থাকবে না! মানে হবে না!! কারণ, নিজের অস্তিত্বের অর্থ তাতপর্য নিজেকেই তৈরি করতে হয়!
ভারত তার পেটি স্বার্থে যতই বাধা সৃষ্ট করুক সিদ্ধান্ত নিতে হবে একান্তই নিজ দেশ-মানুষের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে তাতে চীনের খুশি-অখুশি নাকি ভারতের খুশি-অখুশি এসব অনেক নিচের প্রায়োরিটি! বাংলাদেশের কাছে নিজ স্বার্থের উপরে কেউ নাই, থাকতে পারে না!
অর্থনৈতিক রিকভারি আর তা করে , দুর্ভিক্ষ এড়ানো এটাই আমাদের মুখ্য স্বার্থ। আমরা আরেকবার দুর্ভিক্ষ দেখতে পারি না! এতে ফেল করা বা পরাজিত হওয়া যাবে না!!!
কাজেই “আমরা যেন চীন-ভারতের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্ত না হই”-এটা হতাশা আর সংকটে পালিয়ে যায় যারা তাদের কথা!
আমাদের শাসকদের নিজ স্বার্থ বুঝতে অন্তত সুমতি হোক!