শ্রীপুরে ছেলের সাথে অভিমান করে বিষপানে মায়ের আত্মহত্যা
Advertisements

বিয়ের তিন বছর পার হলো সাদ্দামের। পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে শ্বাশুড়ির সাথে ঝগড়া শুরু থেকে। দুদিন আগেও ঝগড়া হয়েছিল বউ শ্বাশুড়ির। সেই ঝগড়াকে কেন্দ্র করে তুমুল বাকবিতন্ডায় জড়ায় সাদ্দামের স্ত্রী। তারপর সাদ্দাম ঝগড়া থামানোর উদ্দেশ্যে তার স্ত্রী-কে মারধর করে। এরপর তার মায়ের গালেও চড়থাপ্পড় মারে। সন্তানের হাতে মানুষের সামনে মার খাওয়ার অপমান সইতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছেন প্রতিবেশিরা।

আত্মহননকারী হাজেরা গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার নগর হাওলা গ্রামের আব্দুল বারেকের স্ত্রী।

গত বৃহস্পতিবার (৩ জুন) সকাল ১০ টায় তিনি বিষপানে আত্মহত্যা করেন পরে ওইদিন পোস্টমর্টেমের পর কেউ কোনও অভিযোগ না দেয়ায় তাকে নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

ওই ঘটনার পর এলকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় জড়িত হাজেরার সন্তান সাদ্দামের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন অনেকেই।

এ বিষয়ে সাদ্দাম তার মাকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে মেরেছি। মাকে মারিনি, তবে তিনি সংবাদকর্মীদের তথ্য সংগ্রহে ক্ষিপ্ততা প্রকাশ করে বলেন, সংবাদ করলে কি যে মরে গেছে সে ফিরে আসবে ?

সাদ্দাম আরও বলেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মা কে পোস্টমর্টেম করা হয়েছিল।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ছেলে সাদ্দাম হোসেনের স্ত্রীর সাথে বিভিন্ন কারণে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকত। সাদ্দামের স্ত্রীর সাথে তার মায়ের কোনদিনই ভালো সম্পর্ক ছিল না। সাদ্দামও বাবা মায়ের অবাধ্য সন্তান। ঘটনার দিন বউ শাশুড়ীর ঝগড়ার এক পর্যায়ে সাদ্দাম তার মাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন এবং চড় থাপ্পড় মারেন। থাপ্পর মারার অপমান সইতে না পেরে ছেলের সাথে অভিমান করে ‘মা’ কীটনাশক পান করে। এতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় তার কারও কোনও অভিযোগ না থাকায় মরদেহটি দাফন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সাদ্দামের স্ত্রী সাদিয়া জানান, শাশুড়ি আমাকে আগে থেকেই সহ্য করতে পারত না সব সময়। আমার কাজে দোষ খুঁজতো। এই নিয়ে আমাদের মাঝে প্রায়ই কলহ লেগেই থাকত। একপর্যায়ে আমি বাপের বাড়িতে চলে যেতে চাইলে আমাকে যেতে দেয়া হয়নি। ওইদিন সকালে রান্নাবান্নার কথা বললে আমি রান্না করবোনা বলে জানাই। এতে আমার শাশুড়ির সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আমার স্বামী আমাকে মারধর করে এবং শাশুড়ি ফিরাইতে আসে। এসময় ঝগড়ার কারণ হিসেবে শাশুড়ীকে দোষারোপ করা হয়, এটাই ছিল আমার শাশুড়ীর অভিমান।

সাদ্দাম তার মাকে মারেননি বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীদের। তবে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে কি তার মা ফেরত আসবে ? এমন প্রশ্নও করেন গণমাধ্যমকর্মীদের।

এ বিষয়ে গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি।

শনিবার [৬ জুন ২০২১] এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা দূর্নীতি দমন কমিটির এর সদস্য সাঈদ চৌধুরী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে নৈতিক শিক্ষা বাড়ানোর প্রয়োজন। পরিবার কেন্দ্রিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়ানো প্রয়োজন। সেইসাথে এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এ ঘটনায় জড়িত দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার প্রত্যাশা করছি।

Advertisements