আবহমান বাঙালি - মিশেল ফুকোর চিন্তার আলোকে 'আবহমান বাঙালি' ধারণাটি যে কারণে অধপতিত চিন্তা - সত্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ
Advertisements

আমরা কথায় কথায় শুনি হাজার বছরের বাঙালি, আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, অমুক চেতনা, তমুক প্রেরণা।

এই সব ধারণার বেশ কিছু সমালোচনাও আমরা দেখে থাকি। কিন্তু এই ধরণের সমালোচনার বেশির ভাগই নগদ রাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষ জনিত বিভাজনের আলোকে করা হয়। যার ফলে জ্ঞানতাত্বিক বা মতাদর্শ হিসেবে এইসব জিনিস নিয়ে আলোচনা চোখে পড়ে না। তাই এগুলার চূড়ান্ত জানাজাও সম্ভব হয় না। এগুলা আবার ফিরে আসে নানা ইভেন্টের উপর ভর করে।

কেউ কেউ বলেন, কিসের হাজার বছরের বাঙালি ! এর নামে যা চালাতে চাচ্ছেন, এটা তো মাত্র ৫০/৬০ বছরের, কিসের আবহমান সংষ্কৃতি, এটা তো মাত্র ২০/৩০ বছর ধরে চালু করে আবহমান বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাদের ধারণাটা আবহমান বা হাজার বছর ধরে চলছে বলে যেটা ক্লেইম করা হচ্ছে তা হাজার বছরের হলেই যেন সমস্যা মিটে যেত। ফলে যারা এমন ঠুনকো সমালোচনা করছেন তাতে জিনিসটির গাঁয়ে আচরও লাগছে না। আবার আর একদল বুদ্ধিজিবি আছেন এরা বলেন,

কিছু মুস্টিমেয় শহুরে মধ্যবিত্তের ফালা-ফালিকেই গোটা বাঙালি সংষ্কৃতি বলে প্রচার করা হচ্ছে- এটা অন্যায়। বাট এই ধরণের সমালোচনায় বিষয়টির মূলউৎপটন করা সম্ভব না। আমাদের দরকার থিওরিটিক্যাল ভায়োলেন্স। আমাদের বুঝতে হবে একটি ডিসকোর্স কি ভাবে হেজমনিক বা প্রভুত্ব কায়েম করে। তার দার্শনিক ভিত্তি কি? দেন এটাকে মোকাবেলা করার জন্য এর চেয়ে এডভান্স ও পদ্ধতীগত ভাবে মজবুত ধারণা নিয়ে হাজির হতে হবে। তবে আজ বিস্তারিত আলোচনা না করে কেবল একটা পদ্ধতীর কথা বলব। যার প্রয়োগের ভেতর দিয়ে এই সব ধারণাকে তুড়ি দিয়ে উড়াই দেয়া যাবে।

আমাদের বুঝতে হবে একটি ডিসকোর্স কি ভাবে হেজমনিক বা প্রভুত্ব কায়েম করে। তার দার্শনিক ভিত্তি কি? দেন এটাকে মোকাবেলা করার জন্য এর চেয়ে এডভান্স ও পদ্ধতীগত ভাবে মজবুত ধারণা নিয়ে হাজির হতে হবে।

আপনারা অনেকেই মিশেল ফুকোর নাম শুনেছেন। তিনি ফরাসি দার্শনিক (১৯২৬-১৯৮৪)। উত্তর আধুনিকতা বলে একটি টার্মও অনেক উচ্চারিত হয় আমাদের চারপাশে।আমার সামান্য অভিজ্ঞতা বলে ঢাকার পুলাপান পড়ে না, খালি নাম জপার জন্য আর নিজে কত পন্ডিত তা জাহিরের জন্য কিছু বই ও তাত্বিকের নাম মুখস্ত করে। আবার কিছু পুলাপান আছে ভাল ভাল বই-পত্র পড়েও পচা রাজনৈতিক পজিশন নিয়ে বসে থাকে। অলিক অহংকারে ফেটে পরে। কোন আইডিয়া ক্রিটিক্যালি বুঝবার মেহনত করা পুলাপান আমি এখনও খুব কম দেখি। যা হোক ফুকোর ।

ইন্টারভেনশনের পরে দুনিয়ার জ্ঞানতাত্বিক পরিমন্ডলে একটা ঝড় উঠে, এখনও এটা চলছে।। আগের প্রতিষ্ঠিত অনেক ধারণা ঝর ঝর করে ভেঙে পড়তে থাকে। ফুকোর সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল ‘ক্ষমতা’ ধারণাটিকে তিনি নতুন করে ব্যাখ্যা করেছেন। অনেক অনেক কিছু নিয়ে কাজ করলেও ক্ষমতার নতুন তত্বায়নের জন্য তিনি ব্যাপক ভাবে নন্দিত ও নিন্দিত হয়েছেন। (ঢাকার পুলাপান ফুকো-দেরিদা যতটা পড়েন তার চেয়ে বেশি নাম জপেন আর যারা পড়েও অশিক্ষিত থাকে তার কারণ হল এরা কি ভাবে একজন চিন্তক কে পড়তে হয় তা জানেন না। চিন্তার ইতিহাস ও ক্রিটিক ধরে ধরে না পড়ে হাকাও পন্ডিতির জন্য হুটহাট পড়াশোনা করা কাজে আসে না।

যে এরিস্টটটল ও নিৎসে ভাল করে বুঝবে না সে ফুকো পড়ে একটা উত্তেজনা পাইতে পারে বাট এই পাঠের কোন ক্রিয়েটিভ ইন্টারপ্রিটেশন তৈরি করতে পারবে না। আর সব চেয়ে বড় কথা হল, নিজের মধ্যে চিন্তা ভাবনা করার সহজ স্বভাব তৈরি করা। যা হারিকেন দিয়া খুজেও পাওয়া যাচ্ছে না এখন।)

ফুকোর ক্ষমতা ধারণাটিকে বুঝতে হলে আগে ৩টি বিষয় ভালো করে বুঝে নিতে হবে,

১. সার্বভৌমত্ব ( Sovereignty)

২. অনুশাসন ( Discipline)

৩. প্রশাসনিকতা (Governmentality)

ফুকোর ভাবনা জগতের এই তিনটি মূল খুঁটিকে বুঝতে হলে যে দুটি পদ্ধতীগত পথ সম্পর্ক-এ বিস্তারিত হদিস থাকতে হবে তা হল,

১.প্রত্নতত্ব ( Archaeology)

২. বংশানুচরিত (Genealogy)

ফুকোর আগে ক্ষমতা নিয়ে আলোচনার যে ঘরানা জারি ছিল ফুকো তাকে, Juridico-discursive Tradition বা আইনি-আলোচনার ঘরানা বলেছেন। আমাদের দেশে এখনও যে পদ্ধতীতে ক্ষমতা বিষয়টি বুঝা হয় তা এই ধারণার গন্ডি এখনও পার হতে পারে নাই। এটা ১৭ শতকের পদ্ধতী।

ক্ষমতার এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘সার্বভৌমত্ব’। এটা হল সনাতন রাষ্ট্রক্ষমতা। আইন বা বিধানের আলোকে একচেটিয়া (সার্বভৌম) ক্ষমতা প্রয়োগ করার এই ধারণাটি বেশ পুরানা ও রীতিসিদ্ধ।
ফুকো এটাকে আক্রমণ করেছেন। এটা আর কোন ভাবেই কার্যকর নাই তা তন্নতন্ন করে দেখিয়েছেন।( নাম না নিয়েই বলি, আমাদের দেশের যারা সবচেয়ে এডভান্স বুদ্ধিজিবি তাঁরাও আইনি ঐতিহ্য বাহিত ক্ষমতা ধরনার বাইরে এখনও পন্ত চিন্তা করতে শুরু করেন নাই। বড় জোর তাদের চিন্তা ফ্রাঙ্কপুট স্কুল ও বেনিয়ামিন পন্ত এসে ঠেকেছে।)

ফুকো দেখিয়েছেন ডিসকোর্স কি ভাবে ক্ষমতা তৈরি করে। আমরা যাকে ‘জ্ঞান’ বলি তা তৈরি হয় আসলে ডিসকোর্স এর সহবতে। ডিসকোর্স এর সহজ বাংলা নাই। বলতে পারেন, ‘ কোন বিষয়ে আলোচনার ঘরানা’। শাব্দিক অনুবাদের চেয়ে এটা ভাল। শাব্দিক অনুবাদে দর্শন পড়লে বিপদ। তো ডিসকোর্স কি ভাবে ক্ষমতা উৎপাদন করে তা ফুকো দেখিয়েছেন।

এক ডিসকোর্স-এর সাথে অপরটির বিবাদ মূলত ক্ষমতার বিবাদ। কাজেই কোন ধারণাকে জায়গা মতো ক্রিটিক করতে পারলে তার ক্ষমতার ভর কেন্দ্রও টলে যায়। যেতে বাধ্য। এই জন্য বিশুদ্ধ জ্ঞান চর্চা বলে কিছু নাই । এটা ক্ষমতা চর্চার একটা ধরণ মাত্র। একটি সমাজে একই সাথে অনেকগুলো ডিসকোর্স বা আলোচনার ঘরনা থাকে এবং এদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলে। একটি বিশেষ সময়ে একটি ডিসকোর্স শক্তিশালি হয়ে ওঠে এবং সেটা প্রভুত্বকারি/ডমিনেন্ট হয়ে ওঠে। অন্যগুলা তখন প্রান্তিক হয়ে যায়। তখন পাবলিক বা চিন্তক বা থিংকারকে ইন্টারভেন করতে হয়। সৎ সাহস ও পরিস্কার মগজ নিয়া ঝাপায়া পড়তে হয়। প্রভুত্ব কায়েমকারি ডিসকোর্সকে পদ্ধতীগত ভাবে পিছু হটতে বাধ্য করতে পারলে ক্ষমতার ছকটিও পাল্টে যায়। যাক এটা নিয়ে ডিটেল কথা অন্যসময় বলা যাবে। সেই ইচ্ছেও আছে।

যেটা বলছিলাম, ফুকোর দার্শনিক পদ্ধতীর আলোকে দেখা যাচ্ছে , আমাদের দেশে বামপন্থা বলে, প্রগতীশীলতা বলে যে ধারা গড়ে উঠেছে, এইটা একটা ১৭ শতকের চিন্তার কাঠামোর উপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের বামপন্থাকে অামার অনেক বন্ধু ‘ওহাবি-মার্কসবাদ’ বলেন। মার্কসবাদ একটি ডিসকোর্স । আর পৃথিবীর সব চেয়ে নিকৃষ্ট ধরণের মার্কসবাদ চর্চা হয় বাংলাদেশে। এতো অশিক্ষিত ও আত্মপ্রতারক বামপন্থা দুনিয়ার কোথাও নাই-এখন।

এটা এতোটাই নিজের যুক্তি ও মতের প্রতি ফ্যাসিস্ট যে,এটার অবস্থান সাধারণ জনগনের অবস্থানের বিরুদ্ধে চলে গেলেও এরা নিজেদের পরির্বতন করতে পারেন না। যাক সেই কথা।

ফুকোর দার্শনিক পদ্ধতীর আলোকে দেখা যাচ্ছে , আমাদের দেশে বামপন্থা বলে, প্রগতীশীলতা বলে যে ধারা গড়ে উঠেছে, এইটা একটা ১৭ শতকের চিন্তার কাঠামোর উপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের বামপন্থাকে অামার অনেক বন্ধু ‘ওহাবি-মার্কসবাদ’ বলেন। মার্কসবাদ একটি ডিসকোর্স । আর পৃথিবীর সব চেয়ে নিকৃষ্ট ধরণের মার্কসবাদ চর্চা হয় বাংলাদেশে। এতো অশিক্ষিত ও আত্মপ্রতারক বামপন্থা দুনিয়ার কোথাও নাই-এখন।

আমরা আজ দেখব, হাজার বছরের ‘ডিসকোর্স’ টি কি উপাদান দিয়ে গঠিত। এবং এর পদ্ধতীগত ক্রিটিকটা ফুকোর বরাতে করার চেষ্টা করব। বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে আমরা শুধু ‘জেনেওলজি’ বা বংশানুচরিত পদ্ধতীর আলোকে এই ‘আবহমান’ ধারণাটিকে বিচার করলেই আমরা ধরতে পারব সমস্যাটা কোথায়।

এনলাইটেনমেন্ট যুগের চিন্তা-ভাবনায় দেখা হতো বিশ্বের প্রতিটি ঘটনা সম্পর্ক যুক্ত। প্রতিটি ঘটনার মধ্যে রয়েছে সঙ্গতি ও গভীর সংযোগ ও ধারাবাহিকতা।
ফুকো এই ধারাবাহিকতার পর্দা সরিয়ে জেনেওলজিক্যাল পদ্ধতীর আলোকে দেখান যে প্রতিটি ঘটনা স্বতন্ত্র, বিচ্ছিন্ন, পরম্পরাহীন। এদের মধ্যে ক্রমিক প্রগতীর কোন অনিবার্য শর্ত নাই। ইতিহাস-প্রগতির প্রচলিত ধারণাকে ফুকো বর্জন করেছেন। এর ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা ক্ষমতার ধান্দাটি খুলে দেখিয়েছেন। অনুশাসন এর নামে শাসন করার মতলবটিও পরিস্কার ধরা পরেছে। যদিও এই পদ্ধতী প্রথম ব্যবহার করেছেন বিখ্যাত জর্মন দার্শনিক নিৎসে ( দেখুন, অন দ্যা জেনেওলজি অব মোরালিটি)। নিৎসের এই উদ্ভাবনকে ফুকো একদম অন্য স্তরে নিয়ে গেলেন। ভেঙে পড়ল তথাকথিত অাধুনিকতাবাদি, ধারাবাহিক প্রগতীর ইতিহাস ভাবনার প্রচলিত ছক।
যে বিশ্বজনীন ইতিহাস প্রক্রিয়ার প্রতি হেগেলিয় চিন্তার সূত্র ধরে মার্কসবাদিরা আস্থা রাখতেন তার ভিত গেল কাইত হইয়া। এই অখন্ড, ধারাবাহিক ইতিহাস ভাবনা কাল্পনিক। এটা ম্যাটাফিজিক্যাল বা অচিন্তা থেকে উৎসারিত। এর দার্শনিকতা অতি ভালগার লেভেলের।

জেনেওলজি বা বংশানুচরিত পদ্ধতী মনে করে, প্রতিটি ঘটনা স্বতন্ত্র, তাই তাদের অভিন্ন কোন উৎপত্তিমূল থাকতে পারে না। বিভিন্ন উৎস থেকে তারা উৎপন্ন। এর কোন ধারবাহিক ক্রমবিকাশ প্রক্রিয়া নাই। এটা কল্পিত। আধুনিকতাবাদিদের নিরবিচ্ছিন্ন, ক্রমিক, ধারাবহিক ইতিহাস প্রকল্প বাদ দিয়ে ফুকো বিচ্ছিন্ন, স্থানিক, ছিন্ন ছিন্ন ইতিহাস চিন্তায় মনযোগি। আদি ইতিহাস ভাবনার ধারাবাহিকতার বদলে, বর্তমান ও অতীতের অধিনতার সম্পর্ক ও অাধিপত্যের প্রক্রিয়াগুলি উদাম করতে বেশি মনোযোগি ফুকোর এই জেনিওলজিক্যাল পদ্ধতী।

এই সংক্ষিপ্ত আলাপের আলোকে বলা যায়, হাজার বছরের বাঙালি সংষ্কৃতির নামে যেই স্থুল ও বৈচিত্রহীন কল্পিত ইতিহাস চিন্তা আমাদের সমাজে চালু করা হয়েছে, আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে তার মূল উদ্দশ্য হল, এক অখন্ড-বাঙালি সত্তাকে মূল পরিচয় হিসেবে সবার উপর চাপিয়ে দিয়ে একটি একক ক্ষমতার কাঠামো পয়দা করা। যা করাও হয়েছে। বর্তমানের যে বাঙালি জাতীয়তাবাদ আওয়ামী লীগ ও সরকারী বেসরকারি বামগুলা প্রেসক্রাইব করে এটা শুধু কলকাতার উপনিবেশ সূত্রে প্রাপ্ত তাই নয়, এটা একটি ক্ষমতার ডিসকোর্স। এবং এটি তাদের দার্শনিক পঙ্গুত্ব থেকে উৎসারিত।

যা ফ্যাসিস্ট ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য ক্রমাগত সন্ত্রাসবাদি যুক্তি উৎপাদন করছে।
এর বিপরীতে আমাদের মধ্যে ধর্ম, ভিন্ন চিন্তা, বাঙালি সত্তার বাইরে অন্য হরেক সত্তার ও বিশ্বাসের যে ছোট ছোট, ছিন্ন ছিন্ন, যে বিচ্ছিন্ন, স্বতন্ত্র ইতিহাস ও ডিসকোর্স আছে তাকে প্রান্তিক করে ফেলা হচ্ছে।
কাজেই এই ১৭ শতকী পশ্চাৎপদ চিন্তার গোলামির বিরুদ্ধে জ্ঞানতাত্বিক লড়াই ছাড়া নতুন ক্ষমতা উৎপাদিত হবে না।

যেসব বুদ্ধিজিবিরা এগুলা বুঝেও গোলামি করছেন এরা গণদুশমন শুধু নয় আত্মপ্রতারক। এখন সময় ডিসকোর্স তৈরির। নতুন ক্ষমতার জন্য নতুন ডিসকোর্স। যারা বলবেন সব তো পশ্চিমা চিন্তা হয়ে গেল, তাদের সাথে এখন তর্ক না করে বলব, যে তথাকথিত মূলধারা, যে হাজার বছরের ঐতিহ্য আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে তাও পশ্চিমা চিন্তার ১৭ শতকের মডেল। আমি কেবল সাম্প্রতিক, এডভান্স দিকটা বলতে চেষ্টা করছি। পশ্চিমেই তো এটা বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু মুশকিল হল পশ্চিমা চিন্তার সেকেলে ধরণেই পূজা দেয়া হয় আমাদের এখানে। ওরা যেমন ক্রিটিক করে করে ক্রমাগত নতুন নতুন ভাবনা জগত তৈরি করে আমরা তা না করে নিজের সুবিধা মতো পূজারীতে পরিণত হই।

নিজেদের চিন্তার জমিন তৈরি করতে হবে, একই সাথে দুনিয়া যেহেতু পশ্চিমা বা গ্রিক ফিলোসফির ধারাবাহিকতার ভিতর দিয়ে এই স্তরে উপনিত হয়েছে এটাও ভাল ভাবে বুঝতে হবে। ক্রিটিক করতে পারতে হবে। তাদের টা ভাল করে না শিখে পশ্চিমা বলে নাক সিটকানোটা মূর্খতাজনিত অহংবোধ থেকে তৈরি হয়। যা নিজেকে পিছিয়ে দেয়। পশ্চিমকে পড়ার জন্য, ক্রিটিক করার জন্য পশ্চিমে জন্ম নেয়ার দরকার নাই। সাহেব হওয়ার দরকার নাই। ওরা যেমন অন্য চিন্তা ও ভূমির উপর মাতাব্বরি করেছে। আপনি পশ্চিকে ভাল ভাবে না জানলে তাকে মোকাবেলা করবেন কি ভাবে? মাতাব্বরি না হয় নাই করলেন।

( দ্র: পন্ডিতরা হয়তো আমার এই সরল আলোচনা দেখে অবাক হবেন। আমি আসলে জটিল বিষয় সরল করে বলতে চেষ্টা করি। জানি না কতটা সরল হয়। তবে অবশ্যই এইসব আলোচনা আরও ডিটেইল করতে হবে। তার জন্য আমাদের সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাস্থ্যটা আগে ঠিক করতে হবে। নইলে এইসব ভারি ভারি আলাপের কোন মূল্য থাকবে না। ধন্যবাদ সবাইকে।)

যে সব বই পত্র সামনে ছিল:
Jacques Derrida, Specters of Marx
1993 (Éditions Galileé, in French)1994 (Routledge, in English).
Michel Foucault, Power/ Knowledge, new York, 1980.
Michel Foucault, Politics, Philosophy, Culture, Routledge.
Michel Foucault, reader. penguin.
পার্থ চট্রোপধ্যায় : শাসিতের গণতন্ত্র।
প্রদিপ বসু: উত্তর আধুনিক রাজনীতি, সাহিত্যলোক, ২০১০।

Advertisements