শীপুরে কঙ্কাল উদ্ধারের ১০ মাস পর মিলল পরিচয়
Advertisements

গাজীপুর শ্রীপুরে গত বছরের ৩১ আগস্ট গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী খালের সেতু সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশের ময়লার স্তুপ (ভাগাড়ে) থেকে উদ্ধার করা কঙ্কালের প্রায় ১০ মাস পরে পরিচয় পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে, গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ মে) দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান।

গ্রেপ্তারকৃত যুবকের নাম মো. সাগর (২০)। তিনি নেত্রকোনার পূর্বধলা থানার শালদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। সাগর গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গিলারচালা নামাপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকেন।

নিহত কিশোরের নাম সোহান (১৪)। সে জেলার শ্রীপুর উপজেলার গিলারচালা গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকার আব্বাস আলীর ছেলে।

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার জানান, গত বছরের ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় সোহান। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে তার সন্ধান না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার মা মোসা. নাজমা। নিখোঁজের ২৯ দিন পর ৩১ আগস্ট স্থানীয় গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী খালের সেতু সংলগ্ন ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশের ময়লার স্তুপে (ভাগাড়ে) এক কিশোরের কঙ্কাল দেখতে পায় স্থানীয়রা। কঙ্কালের পাশে পড়ে থাকা ফুল প্যান্ট ও একটি ফুলহাতা পাঞ্জাবি এবং স্যান্ডেল দেখতে পেয়ে কঙ্কালটি সোহানের বলে দাবি করেন তার স্বজনরা। কাপড় ও স্যান্ডেলগুলোর আংশিক আগুনে পোড়া ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কঙ্কালসহ কাপড় ও স্যান্ডেল জব্দ করে।

এ ব্যাপারে অজ্ঞাতদের আসামি করে নিহতের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। পুলিশ প্রায় দুই মাস তদন্তকালে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মো. আজিজুল, মো. সাগর, হৃদয় ও সবুজ নামের চার যুবককে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গাজীপুর জেলা পিবিআইকে। পিবিআইয়ের তদন্তকালে উদ্ধারকৃত কঙ্কালের ডিএনএ পরীক্ষা করে তা সোহানের বলে নিশ্চিত হন তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সুমন মিয়া। পরে গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. সাগরকে (২০) রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এক পর্যায়ে তিনি সোহান হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু (সুইচ গিয়ার) গত রোববার জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত সাগর গতকাল সোমবার আদালতে নিজেকে জড়িয়ে অপর আসামিদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার প্রায় ১০ মাস পর চাঞ্চল্যকর কিশোর সোহান হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়েছে।

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার আরও জানান, সোহান ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা পরস্পর বন্ধু। তারা একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। খুন হওয়ার কয়েকদিন আগে সোহানকে মারপিট করেন সাগর। ছেলের কাছে এ ঘটনা জানতে পেরে সাগরকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আইল্যান্ডের গাছের সঙ্গে বেঁধে জুতা ও লাঠি দিয়ে মারপিট করে সোহানের বাবা। এতে ক্ষুব্ধ হয় সাগর। এছাড়াও সোহানের বাবার তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ২০০ পিস ইয়াবাসহ আজিজুলকে আটক করে। এ মামলায় আজিজুল তিনমাস হাজত খেটে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান। উভয় ঘটনার জেরে ক্ষুব্ধ সাগর ও তাঁর বন্ধুরা সোহানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন ভিকটিম সোহানকে পাশের জঙ্গলে ডেকে নিয়ে যায় তারা। সেখানে নিয়ে সোহানের মাথায় বাঁশ দিয়ে আঘাত করে সাগর এবং বুকে ছুরিকাঘাতে খুন করে আজিজুল। পরে নিহতের লাশ ওই ময়লার স্তুপে চাপা দিয়ে তারা পালিয়ে যায় বলে গ্রেপ্তারকৃত মো. সাগর তার স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছেন।

Advertisements