নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করলেও শেষ ম্যাচে হেরে যায় বাংলাদেশ। শুক্রবার শেষ ম্যাচে ২৭ রানের জয় পায় নিউজিল্যান্ড। এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারের ব্যবধান (৩-২) কমায় কিউইরা।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে জয়ের পর তৃতীয় খেলায় হেরে যায় টাইগাররা। তবে চতুর্থ খেলায় জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বাধীন দলটি।
শুক্রবার শেষ ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৬১ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর করে নিউজিল্যান্ড। টার্গেট তাড়া করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে যাওয়া বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১৩৪/৮ রানে। দলের পরাজয় এড়াতেই একাই লড়াই করে যান আফিফ হোসেন। ৩৩ বলে দুই চার ও তিন ছক্কায় সর্বোচ্চ ৪৯ রান করে অপরাজিত থাকেন এ তরুণ ব্যাটসম্যান।
কিউইদের বিপক্ষে টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ৮.৫ ওভারে ৪৬ রানে স্বাগতিকরা হারায় লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ নাঈম ও মুশফিকুর রহিমের উইকেট।
মোহাম্মদ নাঈমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে মাত্র ২৬ রানের জুটি গড়ে ফেরেন লিটন দাস। আগের দুই ম্যাচে ৬ ও ১৫ রানে আউট হওয়া এ ওপেনার এদিন ফেরেন ১২ বলে ১০ রান করে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে (১,৩৩,১৫,৬ ও ১০) ১৩ গড়ে মাত্র ৬৫ রান করেন লিটন। শুক্রবার শেষ ম্যাচে লিটনের বিদায়ে ২৬ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি।
তিন নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে সুবিধা করতে পারেননি সৌম্য সরকার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে সুযোগ পেয়ে প্রত্যাশিত ব্যাটিং করতে পারেননি এ তারকা ব্যাটসম্যান। চার ম্যাচ পর দলে ফিরে ৯ বলে মাত্র ৪ রানেই আউট হন সৌম্য।
ইনিংসের শুরু থেকে ভালোই খেলছিলেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম। ২১ বলে ২৩ রান করে ফেরেন এ ওপেনার। নাঈম আউট হওয়ার পর ব্যাটিংয়ে নেমে সুবিধা করতে পারেননি মুশফিকুর রহিমও। ৮ বলে ৩ রান করে ক্যাচ তুলে দেন সাবেক এ অধিনায়ক। তার বিদায়ে ৮.৫ ওভারে ৪৬ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
পঞ্চম উইকেটে আফিফ হোসেনের সঙ্গে ৪৩ বল ৬৩ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাদের এই জুটিতে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। জয়ের জন্য শেষ দিকে ২৫ বলে প্রয়োজন ছিল ৫৩ রান। রান রেট বেড়ে যাওয়ায় বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন রিয়াদ। দলীয় ১০৯ রানে ২১ বলে ২৩ রান করে রিয়াদ আউট হলে জয়ের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়।
এরপর নুরুল হাসান সোহান ও শামিম হোসেনরা আফিফকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি। ৪ ও ২ রানে ফেরেন সোহান ও শামিম। ব্যাটসম্যানদের এই আসা-যাওয়ার মিছিলে উইকেটের এক পাশ আগলে রেখে পরাজয়ের ব্যবধান কমান আফিফ। তার একার লড়াইয়ে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রান তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।
এর আগে ফিন অ্যালান ও টম ল্যাথামের ঝড়ো ইনিংসে শেষ ম্যাচে ৫ উইকেটে ১৬১ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়েছে নিউজিল্যান্ড। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫০* রান করেন কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম। এছাড়া ৪১ রান করেন ওপেনার ফিন অ্যালান।
শুক্রবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে উড়ন্ত সুচনা করে নিউজিল্যান্ড। উদ্বোধনীতে ৫.৪ ওভারে স্কোর বোর্ডে ৫৮ রান তুলেন দুই ওপেনার ফিন অ্যালান ও রাচিন রবীন্দ্র। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় সফরকারীরা।
প্রথম ৯ বলে ৩০ রান দিয়ে উইকেটের দেখা পাননি শরিফুল ইসলাম। এরপর কিউই শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন এ তরুণ পেসার। তার শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার ফিন অ্যালান ও রাচিন রবীন্দ্র।
১২ বলে ১৭ রান করে শরিফুলের বলে ক্যাচ তুলে দেন রবীন্দ্র। আর ২৪ বলে ৪টি চার ও তিন ছক্কায় ৪১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে বোল্ড হন ফিন অ্যালন।
এরপর আফিফ হোসেনের বলে উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন উইলি ইয়াং। আগের ম্যাচে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৬ রান করা এ তারকা ব্যাটসম্যানকে এদিন মাত্র ৬ রানে ফেরান আফিফ।
দলীয় ৮৩ রানে নাসুম আহমেদের স্পিনে বিভ্রান্ত হন কলিন ডি গ্রান্ডহোম। আগের চার ম্যাচে ৯ রান করা গ্র্যান্ডহোম এদিন ফেরেন ৯ রানে।
পঞ্চম উইকেটে হ্যানরি নিকোলসকে সঙ্গে নিয়ে ৩৫ বলে ৩৫ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক টম ল্যাথাম। ২১ বলে দুই বাউন্ডারিতে ২১ রান করে নুরুল হাসান সোহানের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন নিকোলস।
এরপর কোল ম্যাককলিনকে সঙ্গে নিয়ে রীতিমতো তাণ্ডব চালান টম ল্যাথাম। শেষ দিকে মাত্র ২১ বলে ৪৩ রানের ঝড়ো জুটি গড়েন তারা। তাদের এই জুটিতেই ১৬১ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে নিউজিল্যান্ড। ৩৭ বলে দুটি চার ও সমান ছক্কায় ৫০ রান করে অপরাজিত থাকেন ল্যাথাম। ১০ বলে তিন চারে ১৭ রান করেন ম্যাককলিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৬১/৫ (টম ল্যাথাম ৫০*, ফিন অ্যালান ৪১, হ্যানরি নিকোলস ২০, ম্যাককলিন ১৭*, রাচিন রবীন্দ্র ১৭; শরিফুল ২/৪৮)।
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৪/৮ (আফিফ হোসেন ৪৯*, মোহাম্মদ নাঈম ২৩, মাহমুদউল্লাহ ২৩, লিটন দাস ১০; এজাজ প্যাটেল ২/২১, স্কট কুগেলেইন ২/২৩)।
ফল: নিউজিল্যান্ড ২৭ রানে জয়ী।
পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৩-২ ব্যবধানে জয়ী বাংলাদেশ।