মুভ-ফাউন্ডেশ-ইসলাম-প্রীতির-মুখোশে-ইসলামবিদ্বেষ
Advertisements

‘ওয়ার অন টেরর’, অথবা অন্য ভাষায় ‘ইসলামের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধে’র আঞ্চলিক-সামাজিক স্বরূপ কি, এইটা লোকালি কিভাবে বিরাজমান এবং এইটা সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে কিভাবে ফাংশন করে সেগুলো ধরতে যে আমরা এখনো পুরোপুরি ব্যর্থ- মুভ ফাউন্ডেশন নিয়ে ইসলামপন্থী তরুণদের মাঝে বিরাজমান কনফিউশন থেকেই এইটা স্পষ্ট হয়।

অথচ মুভ ফাউন্ডেশন যে এই ওয়ার অন টেরর প্রজেক্টের লোকাল এক্সটেনশন, সেইটা তাদের লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য পড়লেই বোঝা যায়। ওয়ার অন টেরর প্রজেক্টের অংশ হিসেবে কাজ করা অন্যসব প্রতিষ্ঠানের মতো মুভ-ও দুইটা বিষয়কে প্রধানত গুরুত্ব দেয়- ১. “মৌলবাদী সন্ত্রাস প্রতিহত করা”  ২. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি-শান্তি বৃদ্ধি করা। বৈশ্বিক ইসলামোফোবিয়া এবং ওয়ার অন টেরর প্রজেক্টকে চিহ্নিত করার কমন দুইটা ট্যাগলাইন।

শান্তির কথা বলা এই সংগঠনগুলা বিশ্বব্যাপী “সন্ত্রাস” বিরোধীতার নামে মূলত রাজনৈতিক, সামাজিক যে কোন কনফ্লিক্টকে “ইসলামিক টেরোরিজম” হিসেবে বাজারজাত করে এবং ইসলামোফোবিয়া ছাড়ানো। সেই সাথে মুসলিম সোসাইটিতে শান্তিবাদীতার নামে একটা “গুড মুসলিম” আইডেন্টিটি তৈরি করা। এই গুড মুসলিমের কোন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ভিশন থাকবে না, বরং সে শুধু ব্যক্তি জীবনে ইসলামের কিছু রিচ্যুয়ালস পালন করবে, এর সামাজিক কোন উপযোগিতাকে অস্বীকার করবে। এই গুড মুসলিমের নিজের মুসলমানিত্ব নিয়ে কোন প্রাইড থাকবে না, তার বিদ্যমান রাজনৈতিক-সামাজিক কাঠামো নিয়ে কোন ভাষা বা বয়ান থাকবে না, প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের ইচ্ছা থাকবেনা, বৈশ্বিক পশ্চিমা আধিপত্যবাদ আর আঞ্চলিক ব্রাহ্মণ্যবাদী আধিপত্যবাদ নিয়ে সে মুখ খুলবে না, মুসলমানদের স্বার্থকে সে কখনো ফিল করবে না। এসবই হচ্ছে এদের তৈরি করা “গুড মুসলিম” চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। আপনি এর বাইরে কোন কিছু করবেন, তাহলে আপনি “ব্যাড মুসলিম”, পটেনশিয়াল টেরোরিস্ট।

পশ্চিমের তৈরি এবং বাজারজাত করা এই “নিরীহ” ইসলাম, এটা আমাদের মুসলিম এইজেন্সিকে নাই করে দেয়। ফলে একটা সময় এসে আপনি নিজের ভূমিতেই “অপর” হইয়া যান। আর আপনার ভূমিতে আপনাকে যে অপর করে দিলো, তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কর‍তে গেলেই আপনি “ব্যাড মুসলিম”, আপনি টেরোরিস্ট- কারণ ইসলাম “শান্তির ধর্ম”। কিছুদিন আগে সম্প্রীতি বাংলাদেশ যে “জঙ্গী সনাক্তকরণ” প্যারামিটার বানাইয়া দেশব্যাপী প্রচার করলো সেইটা ছিলো আপনাদের ভূমিতে ধীরে ধীরে আপনাদেরকেই “অপর” বানানোর প্রাথমিক ক্ষুদ্র নমুনা। বাংলার মুসলমানদের প্রায় হাজার বছরের প্রাত্যহিক সংস্কৃতি, বিশ্বাস, চর্চা, জীবনাচারের অনেক কিছুই হয়ে গেলো জঙ্গীপনা। অর্থাৎ আপনার দাঁড়ি রাখা, মসজিদে যাওয়া, ইসলাম নিয়ে কথা- বিশেষ করে যে ধর্মীয় আচারগুলোর সামাজিক-সাংস্কৃতিক উপযোগিতা বিদ্যমান- সেগুলো আপনাকে পটেনশিয়াল জঙ্গী বানিয়ে দিচ্ছে।

এই যে সম্প্রীতি বাংলাদেশ অথবা মুভ ফাউন্ডেশন কিংবা বাংলাদেশে এদের আম্ব্রেলা সংগঠন Stop Violence Coalition (SVC)- এরা একে অপর থেকে ভিন্ন কিছু নয়। সম্প্রীতি বাংলাদেশ হিন্দুত্ব-ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রজেক্ট আর মুভ ফাউন্ডেশন পশ্চিমা লিব্রেল-সেক্যুলার প্রজেক্ট হইলেও, এদের টার্গেট এবং কমন শত্রু হইলো ইসলাম এবং মুসলমান। আর SVC পুরোপুরি আওয়ামী প্রজেক্ট। অর্থায়ন ও পরিচালনা দুইটাই আওয়ামী লীগ ও তার গুন্ডাদের দ্বারা হয়। আর এইটারে প্রত্যক্ষ সাপোর্ট দেওয়ার মাধ্যমে সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈধতা তৈরি করে জাগোর করভি রাকশাদের মতো তরুণদের আইকনরা।

সম্প্রীতি বাংলাদেশের “জঙ্গীবাদ সনাক্তকরণ” প্যারামিটার মুসলিমদের বিরুদ্ধে নতুন কিছুনা। ওয়ার অন টেরর টিকেই আছে মুসলিমকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারার সফলতার মাধ্যমেই। যেমন, ব্রিটিশ সরকারের “উগ্রাবাদ” বিরোধী PREVENT প্রোগ্রাম, যেখানে Pre-crime বলে একটা ধরণা আছে, যার জন্য আবার কিছু প্যারামিটার নির্ধারিত আছে।
মুভ এর আরেক ইন্টারন্যাশনাল পার্টনার Canadian Counter Terrorism প্রজেক্ট তো আরেক ধাপ এগিয়ে কানাডা এবং কানাডিয়ানদের “স্বার্থ রক্ষার” জন্য বিশ্বের বিভিন্ন মুসলমান দেশগুলোতে গিয়ে “সন্ত্রাস বিরোধী” অপারেশন পরিচালনা করে। কারণ, তাদের ভাষ্যমতে, ওইসব মুসলমান দেশগুলো বইসা মুসলমানরা কানাডার বিরুদ্ধে “ষড়যন্ত্র” করে, “হামলার রুপরেখা” তৈরি করে। হা হা।

বস্তত ইসলামের বিরুদ্ধে অনন্ত এ যুদ্ধে পৃথিবীব্যাপী প্রায় সব Prevent Violent Extrimism, Counter Terrorism প্রোগ্রাম গুলোর টার্গেট মূলত ইসলাম/মুসলমান। আরো সহজ ভাষায়, প্রত্যেকটা “জঙ্গিবাদ/সন্ত্রাসবাদ” বিরোধী যুদ্ধ আসলে ‘মুসলমানদের’ বিরুদ্ধে যুদ্ধ। হয়তো আপনি পশ্চিমা বয়ানে “গুড নিরীহ মুসলিম”- যার কোন মুসলিম এইজেন্সি নাই, আর নয়তো আপনি টেরোরিস্ট বা পটেনশিয়াল টেরোরিস্ট হওয়ার এর সুবাদে এই যুদ্ধের শিকার হবেন। এমনকি সাম্প্রদায়িক/ধর্মীয় সম্প্রীতি বা শান্তিবাদী প্রজেক্টগুলো- যেগুলো হয়তো সরাসরি ইসলামোফোবিয়ার সাথে যুক্ত না, এমনকি এ ধরনের অনেক মুসলিম ইনেশিয়েটিভ- সেগুলোও আমাদের মুসলিম এইজেন্সিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তাদের তৈরি করে দেওয়া শান্তিবাদী-নিরীহ মুসলিম পরিচয় আপনাকে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ময়দানে অপ্রাসঙ্গিক করে দিবে, মুসলিম পলিটিকে নিস্ক্রিয় করে দেয়। ফলে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকভাবে পশ্চিমের বিরোধিতা, এমনকি অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইও আপনাকে ব্যাড মুসলিম তকমা পাইয়ে দেয়। যেমনটা আমরা দেখতে পাই ফিলিস্তিনি মুসলিমদের প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি মুসলিম পিস ফোরামের মনোভাবে।

সুতরাং এই ওয়ার অন টেররের যামানায় মুসলিম হিসেবে আপনার পরিচয় হইতে পারে যেকোন দুইটা- ১. আপনি গুড/সেক্যুলার মুসলিম। যে চাইলে আল্লাহতে বিশ্বাস করতে পারে, ইসলামকে মনে মনে ধর্ম হিসেবে মানতে পারে, কিন্তু সেটা নিয়ে পাবলিকলি আলাপ করতে পারবেন না। আপনি আপনার ঘরে নামায পড়তে পারেন, কিন্তু লম্বা দাঁড়ি রাখতে পারবেন না, হিজাব পরতে পারবেন না, ইসলামিক দিবস উদযাপন করতে পারবেন না। আপনার রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কোন ভিশনের ভিত ইসলাম হইতে পারবে না। অথবা ২. আপনি ব্যাড/উগ্র/মৌলবাদী মুসলিম এবং সন্ত্রাসী/সম্ভাব্য সন্ত্রাসী।

মুভ ফাউন্ডেশন আজকে কওমী মাদ্রাসার স্টুডেন্টদের নিয়ে কাজ করতেছে, কারণ প্রথমত, তাদেরকে এংগেইজ (এইসব প্ল্যাটফর্মে কাজ করার সুযোগ দেওয়া!) করার মাধ্যমে তাদের ইসলামোফোবিক মুখোশকে আড়ালে রাখা এবং মুসলমানদের নিয়ে কাজ করা/কথা বলার একটা নৈতিক গ্রাউন্ড তৈরি করা। দ্বিতীয়ত, একটা “ইসলামপন্থী” শ্রেণীকে ধীরে ধীরে “গুড”/সেক্যুলার মুসলিম হিসেবে তৈরি করে অন্যান্য মুসলমানদের কাছে তাদেরকে রোল মডেল হিসেবে তুলে ধরা।

আরেকটা ইন্টারেস্টিং কিন্তু ভয়ংকর বিষয় হইলো, মুভ ফাউন্ডেশন তাদের প্রত্যেকটা প্রোগ্রামে, প্রচারণায় বাংলাদেশকে মৌলবাদী সন্ত্রাসের আখড়া হিসেবে পরিচিত করানোর চেষ্টা করছে। তাদের প্রোপাগান্ডার অন্যতম বড় মিথ্যাটা হচ্ছে- সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার হার অনেক বেড়ে গেছে। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে হলি আর্টিজান ছাড়া অন্য কোন উল্লেখযোগ্য সন্ত্রাসী হামলার উদাহরণ নাই। এদের এই ধরনের প্রোপাগান্ডার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রথমত নিজেদের কাজকে জনগণের চোখে বৈধতা দেয়া। দ্বিতীয়ত, এই মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে ওয়ার অন টেররকে এই দেশে রাজনৈতিকভাবে টেনে আনার পথ তৈরি করা।

এখন আপনি “গুড মুসলিম” হবেন না “ব্যাড মুসলিম” পরিচয় নিয়ে স্ট্রাগল জারি রাখবেন, সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই আপনি মুভ বা এই ধরনের সংগঠনের সাথে ডিল করবেন। তবে মনে রাখবেন, এদের পেছনে বাংলাদেশ সরকার, জার্মান এম্বাসি প্রকাশ্যে কাজ করে। সুতরাং, ইসলামের বিরুদ্ধে অনন্ত এই যুদ্ধে আপনাকে স্বাগতম।

Move, SVC, CCTP বা PREVENT নিয়ে বিস্তারিত জানতে লিংকগুলো ঘুরে আসতে পারেন।

১. https://www.move-foundation.com/about-us-2/
২. https://www.move-foundation.com/…/countering-violent…/
৩. https://www.cage.ngo/the-science-of-pre-crime
৪. https://www.youtube.com/playlist…
৫. https://www.theguardian.com/…/anti-radicalisation…
৬. https://www.international.gc.ca/…/capacity_building…
৭. https://www.peaceinsight.org/…/stop-violence-coalition/
৮. https://bdplatform4sdgs.net/মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক-গোষ/
৯. http://www.rupantar.org/index.php?option=com_content…

Advertisements