এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা
Advertisements

করোনা পরিস্থিতির কারণে স্কুল-কলেজে লেখাপড়া না হওয়ায়  আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে যেতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত সাধারণ ছুটি আছে। পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে এ ছুটি আরও বাড়তে পারে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক শনিবার যুগান্তরকে বলেন, সাধারণত প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি এবং এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা হয়। করোনাকালে প্রাতিষ্ঠানিক পাঠদান বন্ধ। এ কারণে পরীক্ষা যথাসময়ে নেয়া হবে কিনা সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রতিষ্ঠান খোলার পরে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

সাধারণত বছরের জুলাই মাসে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাক-নির্বাচনী আর অক্টোবরে নির্বাচনী পরীক্ষা নেয়া হয়। আর দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাক-নির্বাচনী বা অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা জুলাই-আগস্টে এবং ডিসেম্বরে নির্বাচনী পরীক্ষা হয়। এরপর নভেম্বরে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করা হয়। ইতোমধ্যে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেছে। আগামী বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষাও হয়নি। একাদশ শ্রেণিতে কলেজ পর্যায়ে নেয়া বিভিন্ন ক্লাস টেস্ট আর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে এসব শিক্ষার্থীকে ‘অটো পাস’ দেয়া হয়েছে।

শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসএসসি প্রোগ্রাম দুই বছরের জন্য হলেও ২৫ মাস পর পরীক্ষা নেয়া হয়। যদিও বাস্তবে এসব শিক্ষার্থী দুই বছরে ১৭-১৮ মাস পাঠদান পেয়ে থাকে। অন্যদিকে এইচএসসি দুই বছরের প্রোগ্রাম হলেও বাস্তবে পাঠদান হয়ে থাকে ১৬ মাসের মতো। সেই হিসাবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আগামী বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা ইতোমধ্যে দাবি তুলেছেন, শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো লেখাপড়া করিয়ে এই দুটি পরীক্ষা নেয়া প্রয়োজন। নইলে শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বা দক্ষতা অর্জনে ঘাটতি থাকবে। পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উচ্চশিক্ষায় গিয়ে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের চেয়ারম্যান জিয়াউল কবীর দুলু বলেন, ‘আমরা চাই এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম শেষ করেই যেন সরকার পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করে। নইলে শেখা ও জ্ঞান অর্জনে যে ঘাটতি থাকবে তা পরবর্তী জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।’ এদিকে করোনাকালে লেখাপড়ার ঘাটতি নিরূপণ করে ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষাবর্ষ শেষ করার লক্ষ্যে কৌশল নির্ধারণ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. মশিউজ্জামান। তিনি এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যক্রম এক বছর মেয়াদি। এগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে পরীক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই, যেটা এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে আছে। এই দুই স্তরের শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয় আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে। সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ পুনর্বিন্যাস হচ্ছে। কিন্তু আমরা এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায় নিয়ে ভাবছি না। এই দুই শ্রেণির শিক্ষাক্রম বা পাঠ্যসূচি কমানোর কোনো সুযোগ নেই। করোনায় যতটুকু পড়ানো সম্ভব হয়নি, করোনা পরবর্তীকালে ততটুকু পড়িয়ে পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক তপন কুমার সরকার যুগান্তরকে বলেন, যৌক্তিক কারণেই এসএসসি ও এইচএসসির সিলেবাস-শিক্ষাক্রম কমানোর সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে গোটা পাঠ্যবই শেষ করেই পরীক্ষা নেয়া হবে। সিলেবাস শেষ করতে কতদিন লাগবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না, যেহেতু কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যাবে- তা অনিশ্চিত। হয়তো পরীক্ষা পেছানোর প্রয়োজন হতে পারে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন এবং বাকি অংশ মূল্যায়ন শেষে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এবারের এইচএসসি : সূত্র জানিয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই পরীক্ষা গ্রহণে ইতোমধ্যে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। রাজধানীর ইন্দিরা রোডের নজরুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক ৮ সেপ্টেম্বর এ ব্যাপারে ৬ দফা প্রস্তাব সংবলিত স্মারকলিপিও দেন। তাতে ৫০ করে ১০০ নম্বরে বাংলা দুই পত্র এবং একইভাবে ইংরেজি দুই পত্র পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়। এছাড়া বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে তত্ত্বীয় ৭৫ নম্বরের পরীক্ষা নিয়ে ব্যবহারিকের ২৫ নম্বর এমনি দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। আইসিটি বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল; বিজ্ঞান, বিজনেস স্টাডিজ ও মানবিক বিষয়ে একটি করে বিষয়ের পরীক্ষা নিয়ে বাকিগুলো ঐচ্ছিক ঘোষণার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, বিশেষ ব্যবস্থায় এই পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ও চিন্তা করছে। সেই কারণে সারা দেশ থেকে সিটপ্ল্যান সংগ্রহ করেছে বোর্ডগুলো। সে অনুযায়ী, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৩ ফুট দূরত্ব রেখে ‘জেড’ সিস্টেমে শিক্ষার্থীদের বসানো হবে। শিক্ষা বোর্ড থেকে নভেম্বরে পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে অবশ্য আরও তিনটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে রাখা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের অতীত পরীক্ষার (জেএসসি-এসএসসি) ফলের ওপর ভিত্তি করে গ্রেড দেয়া; স্বল্পপরিসরে পরীক্ষা নেয়া; (এই দুটি গ্রহণ না করলে) আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করা।

উল্লেখ্য, করোনার কারণে ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে এ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে না পারলে বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের উন্নীত করার চিন্তাভাবনাও চলছে। কিন্তু এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষা গত এপ্রিলে নির্ধারিত থাকলেও তা নেয়া যায়নি। আর এই পরীক্ষা নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় তা বাতিলও করা হয়নি। ইতোমধ্যে এই পরীক্ষার প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন থেকে ঝরে গেছে সাড়ে ৫ মাস। যথাসময়ে পরীক্ষা হলে তারা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করত। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক এ ব্যাপারে বলেন, এবারের এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণের সার্বিক প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি। সরকারি সিদ্ধান্ত পেলে রুটিন ঘোষণা করা হবে।

Advertisements