তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে সাদপন্থী ও মাওলানা জুবায়েরপন্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। গতকাল (১৮ ডিসেম্বর) মাওলানা জুবায়েরপন্থী অন্তত তিনজন নিহত হন এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই সংঘাতকে কাজে লাগিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২০১৪ সাল থেকে তাবলিগ জামাতের ভেতরে বিভক্তি সৃষ্টি করে বিশ্ব ইজতেমাকে বানচাল করার চক্রান্ত চলছে। এই ষড়যন্ত্রে জড়িতদের মধ্যে চলচ্চিত্র পরিচালক অনন্ত জলিল, মুফতি ওসামা এবং সবুজ নামের একজনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধানের সাথেও তাদের সম্পর্ক রয়েছে বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন।
২০১৬ সালে অনন্ত জলিল ও মুফতি ওসামা ইসরায়েল সফর করেন এবং দেশে ফিরে নাশকতার পরিকল্পনা তৈরি করেন। সেই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করলেও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার বাধায় তা সম্ভব হয়নি। বর্তমান সংঘাত এবং রক্তক্ষয়ী ঘটনার পেছনেও এই চক্রের হাত রয়েছে বলে গোয়েন্দারা সন্দেহ করছেন।
গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা মাঠে সহিংসতার পর গোয়েন্দারা সরকারের কাছে ইজতেমার দুই পর্ব স্থগিতের সুপারিশ করেছেন। এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইজতেমা মাঠ এবং আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
গতকাল সাদপন্থী অনুসারীরা ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করলে জুবায়েরপন্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। জুবায়েরপন্থীদের অভিযোগ, সাদপন্থীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত এবং বাঁশ দিয়ে মারধর করে। এতে অন্তত চারজন নিহত হন এবং শতাধিক মুসল্লি আহত হন। এমনকি হাসপাতালে গিয়ে আহতদের ওপরও সাদপন্থীদের হামলার অভিযোগ উঠেছে।
তাবলিগ জামাতের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ সাথি দাবি করেছেন, নিহত এবং আহত সবাই মাওলানা জুবায়েরপন্থী।
সরকারি উদ্যোগে দুই পক্ষের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিয়ে সমঝোতার জন্য বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করা হলেও তারা এক টেবিলে বসতে রাজি হননি। বুধবার পৃথক বৈঠকে সাদপন্থীদের সকাল ১১টায় এবং জুবায়েরপন্থীদের দুপুর ১২টায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা করার জন্য ডাকা হয়।
তাবলিগ জামাতের দ্বন্দ্ব নিরসন না হলে এবারের ইজতেমা আয়োজন কঠিন হয়ে পড়বে। আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি এবং ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি দুই পর্বে ইজতেমার তারিখ নির্ধারিত থাকলেও চলমান পরিস্থিতিতে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
তাবলিগ জামাতের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব বড় ধরনের সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। এই পরিস্থিতি শান্ত করতে প্রশাসন চেষ্টা চালালেও ষড়যন্ত্রকারীদের ভূমিকা এবং দুই পক্ষের অনড় অবস্থান পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে।