আমাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কে আছে
Advertisements

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, টাকার পাহাড় গড়ে কোনো লাভ নেই, এক দিন খালি হাতে চলে যেতে হবে। এজন্য অর্থ-সম্পদের দিকে না দৌড়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে নেতাকর্মীদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করার তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রধান। কারণ বঙ্গবন্ধু সংগঠন গোছানোর জন্য মন্ত্রিত্ব পর্যন্ত ছেড়ে দেন।

শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষে গতকাল ছাত্রলীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্মরণে আলোচনা সভা’র আয়োজন করা হয়।

ছাত্রলীগকে সংগঠনে লোক নিতে সতর্ক হওয়ার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগ এত বড় একটি সংগঠন, এখানে অনেক লোক আসে যারা নিজেরা গণ্ডগোল করে। আর বদনাম হয় ছাত্রলীগের। এজন্য আলতু-ফালতু লোক সংগঠনে ঢোকানো যাবে না। এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। এক শ্রেণির লোক ছাত্রলীগের পেছনে লেগে আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের জন্য মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন, সেটা থেকে শিক্ষা নিতে ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। আগামী দিনের জন্য শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে গড়ে উঠতে ছাত্র নেতাদের তাগিদ দেন ছাত্রলীগের অভিভাবক।এ সময় করোনা মহামারির সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং কৃষকদের ধান কেটে দেওয়ায় ছাত্রলীগের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, করোনার সময় ছাত্রলীগ সবার আগে মাঠে নেমেছে। এভাবেই মানবতার সেবা করে যেতে হবে। পাশাপাশি যেটা সব থেকে বেশি দরকার-লেখাপড়া শিখতে হবে। আমি দক্ষ জনশক্তি চাই। কারণ চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আসবে। তার উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। বিজ্ঞানের যুগ। শিক্ষায়-দীক্ষায় তাল মিলিয়ে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। সেভাবে নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে। দেশ চালাতে গেলে শিক্ষার প্রয়োজন আছে।

ইতিহাস জানার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ চালাতে গেলে ইতিহাস জানার প্রয়োজন আছে। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হতে হবে। এই দেশের ভবিষ্যৎ আমরা কী করবো-সেই চিন্তাভাবনা থাকতে হবে।

বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পাশাপাশি মা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের অবদানের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, মা তার শৈশব থেকেই বাবার পাশে ছিলেন। তখন থেকেই তিনি বাবাকে সহযোগিতা করে এসেছেন। বাবা বারবার কারাগারে যেতেন। কিন্তু কখনও বাবাকে সংসারের ব্যাপারে চিন্তা করতে দেননি। তিনি সব সময় বাবাকে বলতেন- তুমি রাজনীতিতে সময় দাও, আমি সংসার দেখছি। কিন্তু তিনি যে শুধু সংসারই দেখতেন তা নয়, সংগঠনেও সময় দিতেন। নানা প্রতিকূলতায় কখনও মায়ের কোনো অভিযোগ, অনুযোগ দেখিনি। যখন জীবন যেমন, তখন তিনি তা মেনে নিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলে, দেশ ও স্বাধীনতার জন্য আমার বাবার যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রামের সারথি ছিলেন আমার মা। সব সময় আমার মা বাবাকে সাহস জুগিয়েছেন। বাবাও মায়ের সঙ্গে অনেক কথা বলতেন। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম মা-ই সবার আগে জানতেন।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মানবতার সেবার পাশাপাশি লেখাপড়া শিখতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি আমি চাই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আসবে এবং সেজন্য আমাদের আজকের প্রজন্ম বা প্রজন্মের পর প্রজন্ম নিজেদের প্রস্তুত করবে।

সংসদে প্রধানমন্ত্রী
এদিকে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, দেশে জ্বালানি তেলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। জ্বালানি তেলের চাহিদাপূরণ করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহের জন্য ছয় মাসভিত্তিক চুক্তি হয়। বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মজুত জ্বালানি তেল দিয়ে ৩০-৩৫ দিনের চাহিদাপূরণ করা সম্ভব হবে। এসময়ের মধ্যে জ্বালানি তেল নিয়ে দুটি জাহাজ দেশে এসে পৌঁছাবে। অর্থাৎ নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশে জ্বালানি তেল সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম বকুলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৬ আগস্ট পর্যন্ত দেশে জ্বালানি তেলের মজুতের পরিমাণ পরিশোধিত ছয় লাখ ২০ হাজার ১৪৮ মেট্রিক টন, অপরিশোধিত ৮১ হাজার ৮৪৬ মেট্রিক টন। মোট মজুত সাত লাখ এক হাজার ৯৯৪ মেট্রিক টন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) দেশের চাহিদাপূরণের লক্ষ্যে পরিশোধিত জ্বালানি তেল হিসেবে ডিজেল, জেট ফুয়েল, অকটেন, ফার্নেস অয়েল ও মেরিন ফুয়েল এবং অপরিশোধিত জ্বালানি তেল হিসেবে অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রুড ও মারবান ক্রুড অয়েল আমদানি করে।

জ্বালানি সংকটের কারণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। জুলাইয়ে ক্রুড অয়েলের মূল্য ব্যারেলপ্রতি সর্বোচ্চ ১১৭ দশমিক ৪৮ মার্কিন ডলার অতিক্রম করে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দামের পার্থক্য তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে নিয়মিত তেলের মূল্য সমন্বয় করে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায় গত ৬ এপ্রিল ডিজেলের মূল্য লিটারপ্রতি সর্বোচ্চ ৯৯ দশমিক ৮৩ রুপি ও পেট্রলের মূল্য সর্বোচ্চ ১১৫ দশমিক ১২ রুপি নির্ধারণ করা হয়।

এদিকে, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসে বাবলার এক প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, দেশের বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী- উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এদিক থেকে দেশে কোনো বিদ্যুৎ সংকট নেই। বৈশ্বিক চলমান জ্বালানি সংকটের কারণে বাংলাদেশ বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার ও পরিকল্পিত লোডশেডিং করে সংকট উত্তরণের চেষ্টা চালাচ্ছে।

Advertisements