জাতিসংঘের প্রস্তাবকে বৃদ্ধাঙুল
Advertisements

ফিলিস্তিনি ভূমি দখল করে সেখানে অবৈধ বসতি স্থাপন নির্মাণ কাজে আবারো অনুমোদন করেছে ইহুদিবাদী ইসরাইলের শাসক গোষ্ঠী। তেল আবিব সরকার অধিকৃত পশ্চিম তীরে আরো ৫,৬২৩টি নতুন বসতি স্থাপন করবে বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে।

ব্রিটেন, আমেরিকা ও জাতিসংঘের প্রত্যক্ষ মদদে ফিলিস্তিনের ভূখন্ড জবরদখলকারী ভূয়া ইসরাইলি শাসক গোষ্ঠী ফিলিস্তিনিদের জমি ও বাড়িঘর জোরপূর্বক জব্দ করে সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদেরকে বের করে দিচ্ছে এবং এরপর তারা সেসব স্থানে অবৈধ ইহুদিবাদীদের জন্য নতুন নতুন বসতি ও ইউনিট নির্মাণ করছে। ১৯৬৭ সালে ইসরাইলি শাসক গোষ্ঠী জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেম আল কুদস শহর দখল করার পর এসব অঞ্চলে ৪৫০ টিরও বেশি ইহুদিবাদী বসতি তৈরি করেছে যেখানে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ইহুদিবাদী বসবাস করছে। সম্প্রতি এই নীতির ধারাবাহিকতায় ইহুদিবাদী সেনাবাহিনীর অধিভুক্ত সুপ্রিম প্ল্যানিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কাউন্সিল পশ্চিম তীরে ৫,৬২৩টি অবৈধ বসতি স্থাপন ইউনিট নির্মাণে সম্মত হয়েছে।

অধিকৃত ভূখন্ডে এমন সময় অবৈধ বসতি নির্মাণ করার জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে যখন এর আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ২৩৩৪ নম্বর প্রস্তাব পাস করে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে বসতি নির্মাণের নিন্দা করার পাশাপাশি এটি পুরোপুরি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিল। সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক প্রতিবেদনে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী মন্ত্রিসভাকে ইহুদিবাদী বসতি সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং ঘোষণা করেছেন, পূর্ব জেরুজালেমসহ অধিকৃত পশ্চিম তীরে সকল বসতি অবৈধ।

যাইহোক গুতেরেস ইসরাইলের ওই পদক্ষেপের নিন্দার জানানোর পরও ইহুদিবাদী সরকার আরও ৫,৬৩২টি বসতি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি যেসব দেশ ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে তারাও ইসরাইলের এই কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেছে। এক বিবৃতিতে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে এটি স্পষ্ট যে অবৈধ বসতি নির্মাণ যা বছরের শুরু থেকে ১৩,০০০ আবাসিক ইউনিট অতিক্রম করেছে এবং একটি নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে তা একটি টেকসই শান্তি প্রক্রিয়ার ভিত্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন করছে। এই বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে যে ইহুদিবাদী শাসককে অবিলম্বে ফিলিস্তিনিদের অধিকার লঙ্ঘনকারী বসতি নির্মাণের পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে।

ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর অবৈধ বসতি স্থাপন নীতি অব্যাহত রাখার উপর জোর দেওয়ার তিনটি কারণ আছে বলে মনে করা হয়। প্রথম কারণ হল বসতি স্থাপন ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে তেল আবিব সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। আল-কুদসের দখলদার সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রিসভা তাদের শাসনামলে বসতি নির্মাণের কাজ অব্যাহত রেখেছে এবং এইভাবে তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের প্রতি বৃদ্ধাঙুল দেখিয়ে আসছে। দ্বিতীয় কারণটি হলো আধিপত্যাকামী শক্তিগুলোর নিরবতা। ইউরোপ ও আমেরিকা বসতি নির্মাণ অব্যাহত রাখার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তারা ইহুদিবাদীদের এই অপরাধ বন্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি। প্রকৃতপক্ষে, পশ্চিমা শক্তির সবুজ সঙ্কেতেই ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী অবৈধ বসতি স্থাপন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে ।

তৃতীয় কারণটি হলো ইসরাইলের অভ্যন্তরে প্রচন্ড সরকার বিরোধী টানা বিক্ষোভ মিছিল। নেতানিয়াহু এবং তার মন্ত্রিসভা গুরুতর অভ্যন্তরীণ চাপের মধ্যে রয়েছে এবং এ পর্যন্ত টানা ২৫ সপ্তাহ ধরে হাজার হাজার মানুষ তার মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে আসছে। যেহেতু ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা পরিচালিত যুদ্ধগুলো তাদের জন্য তেমন সুবিধা বয়ে আনতে পারে নি তাই ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তেল আবিবের সামরিক ও নিরাপত্তা ব্যর্থতা ঢাকতে এবং জনগণকে সন্তুষ্ট করার জন্য নতুন বসতি এবং নতুন ইউনিট নির্মাণে তৎপর হয়েছে।

Advertisements