চুল রুক্ষ হয়ে ডগা ফেটে যাচ্ছে
Advertisements

মাথার চুল মসৃণ, আলো পিছলোনো পেতে কার না ইচ্ছে করে! কিন্তু চাইলেই তো আর হবে না! পরিশ্রম করতে হবে, চুলের যত্নে সময়ও দিতে হবে। মুশকিল হল, হাজার সময় দিয়েও যদি চুলের ডগা ফাটা থাকে তা হলে কিন্তু কিছুতেই চুল সুন্দর দেখাবে না৷ আজকের ব্যস্ত দিনে চুলের জন্য একগাদা সময় খরচ করা আমাদের অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না৷ চটজলদি শ্যাম্পু, স্টাইলিংয়ের উপরেই আমরা ভরসা করি বেশি৷ ফলে দিনের পর দিন পার্লারের কেমিক্যাল আর হিটিং টুলসের ভরসায় থাকতে থাকতে কখন যে চুল শুকনো হতে শুরু করে আর কখন যে ডগা ফেটে যায়, আমরা টেরও পাই না৷ আর একবার চুলের ডগা ফেটে গেলে চুল তো বাড়েই না, বরং মাঝখান থেকে ভেঙে যায়, চুল রুক্ষ, অসুস্থ ও নিষ্প্রাণ দেখায়। কেটে ফেলা ছাড়া তখন আর কোনও উপায় থাকে না। চুলের রুক্ষতা দূর করতে একগচ্ছ সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছেন ফেমিনা।

কেন ফেটে যায় চুলের ডগা?
এক কথায় উত্তর, আর্দ্রতার অভাব। চুল অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে গেলে বিবর্ণ হয়ে যায়, ডগার দিক থেকে চিরে যায়। নানা কারণে চুল আর্দ্রতাবিহীন, শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। আসুন দেখে নেওয়া যাক, কী কী কারণে চুল শুকনো হয়ে ফেটে যেতে পারে।

ঘনঘন শ্যাম্পু করা
কড়া শ্যাম্পু দিয়ে বারবার চুল ধুলে চুলের আর্দ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। শ্যাম্পু যদি চুলের ধরনের সঙ্গে মানানসই না হয়, তা হলেও তা চুল রুক্ষ করে দিতে পারে। চুল ক্রমাগত রুক্ষ হতে হতে একসময় চুলের ডগা ফেটে যাওয়া খুব স্বাভাবিক!

অতিরিক্ত ব্লো ড্রাই
চুল সেট করে সুন্দর রাখতে সবারই ভালো লাগে। কিন্তু নিয়মিত ব্লো ড্রাই করলেও চুলের আর্দ্রতা হারিয়ে যায়। ড্রায়ারের গরম হাওয়া চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা শুষে নিয়ে চুল নিষ্প্রাণ আর রুক্ষ করে তোলে।

হাইলাইট আর হেয়ার কালার
চুলে রং করা মানেই একগাদা রাসায়নিক চুলে লাগানো। ঘন ঘন চুলে রং করলে বা হাইলাইট করানোর অর্থ বারবার কেমিক্যাল লাগানো। বিশেষ করে কম দামি রং ব্যবহার করলে চুলের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

অতিরিক্ত চুল আঁচড়ানো
খুব দ্রুত হাতে ঘনঘন চুল আঁচড়ালে বা ব্রাশ করলে ঘর্ষণজনিত কারণে চুলের ডগা ফেটে যাওয়া ফেটে যাওয়া বিচিত্র নয়।

অতিরিক্ত স্টাইলিং
চুল বারবার স্ট্রেট করা, কার্ল করা বা পার্ম করানোর কারণে প্রচণ্ড রুক্ষ হয়ে যায়। এ সব ক্ষেত্রে হিটিং টুলস দিয়ে চুলের স্বাভাবিক গঠনটা পালটে দেওয়া হয় এবং হেয়ার ফলিকলের আর্দ্রতা ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকে। ফল, শুষ্ক, নিষ্প্রাণ, ভঙ্গুর চুল।

জিনগত কারণ
শুধু বাহ্যিক কারণেই নয়, জিনের কারণেও অনেকের চুল জন্মগতভাবেই শুষ্ক হয়। তা ছাড়া জিনগত কারণে অনেক ক্ষেত্রে চুলের গঠন কোথাও মোটা আবার কোথাও পাতলা হতে পারে। অসমান টেক্সচারের কারণে চুলের ডগা ফেটে চুল ভেঙে যায়।

ডগা ফাটা চুল থেকে মুক্তি পান ঘরোয়া উপায়েঃ-

চুলের ডগা ছেঁটে রাখুন

ডগা ফাটা চুলের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি এটি। তা ছাড়া চুলের শেপ ঠিক রাখতে আর চুল দ্রুত লম্বা করতে হলেও নিয়মিত ট্রিম করে ফেলা দরকার। প্রতি দু’ তিন মাস অন্তর চুল ছেঁটে ফেলুন, সুস্থ ও সুন্দর চুল পাবেন।

চুল ধোবেন ঠান্ডা জলে

গরম জল চুলের ভীষণ ক্ষতি করে দেয়৷ এতে চুলের স্বাভাবিক তেলাভাব আর আর্দ্রতা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, চুল বিবর্ণ ও রুক্ষ হয়ে যায়৷ আর দিনের পর দিন চুল শুকনো হয়ে যাওয়া মানেই অবধারিত ডগা ফেটে যাওয়া৷ তাই সব সময় চুল ধোওয়ার জন্য ঠান্ডা জলই ব্যবহার করুন৷ প্রথমদিকে যদি একান্তই গরম জল ব্যবহার করতেই হয়, শেষবার ধোওয়ার সময় অবশ্যই ঠান্ডা জল দিয়ে ধোবেন৷

নারকেল তেল লাগান
যে কোনও ধরনের চুলের সমস্যাতেই নারকেল তেল খুব কাজের। বাটিতে পরিমাণমতো নারকেল তেল গরম করে চুলে ভালোভাবে মাসাজ করে লাগান। চুলের ডগার দিকটায় বেশি মনোযোগ দেবেন। ছোট তোয়ালে বা শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে আধ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। নারকেল তেল চুল নরম, আর্দ্র রেখে ডগা ফাটা প্রতিরোধ করে।

প্রচুর পানি খান

আপনার শরীর ভিতর থেকে আর্দ্র থাকলে চুলও আর্দ্র থাকবে৷ আপনার চুলের গঠনের এক-চতুর্থাংশই পানি৷ পর্যাপ্ত পানি না খেলে স্বাভাবিকভাবেই তাই চুল রুক্ষ হতে শুরু করে। চুলের ডগা ফাটা আটকাতে চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখা খুব দরকার। চুল আর্দ্র ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে তাই দিনে অন্তত আট গেলাস পানি খান।

অ্যালো ভেরার যত্ন
অ্যালো ভেরার আর্দ্রতায় ভরপুর প্রাকৃতিক উপাদান চুলের স্বাস্থ্য আর জৌলুস বাড়িয়ে তুলতে খুব ভালো কাজ করে। অ্যালো ভেরার পাতা কেটে ভিতরের জেলির মতো উপাদানটুকু বের করে নিন। সারা চুলে ভালোভাবে মাসাজ করে কিছুক্ষণ রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। চুল রাতারাতি কোমল আর উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

ডিমের পুষ্টি

রুক্ষ, ডগা ফাটা চুলের জন্য ডিমের প্রোটিন আর ফ্যাট ভীষণ কাজের। আপনার চুলের দৈর্ঘ্য আর ঘনত্বের উপর নির্ভর করে একটা বা দুটো ডিম ভেঙে নিন। তার সঙ্গে মেশান আধ চামচ অলিভ অয়েল। ভালো করে মিশিয়ে নিন। সমস্ত চুলে ভালোভাবে মাখিয়ে মিনিট দশেক রাখুন। এরপর কুসুমগরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেললেই চুলে আসবে নতুন সজীবতা।

মধুর ম্যাজিক
চুল আর মাথার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে মধু দারুণ কাজ করে। পরিমাণমতো মধু আর অলিভ অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে 20 মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিন৷

দই দিয়েই জৌলুস
তেলতেলেভাব বাদ দিয়ে শুধু ময়েশ্চারাইজ় করতে চাইলে দইয়ের চেয়ে ভালো কিছু আর হয় না৷ টাটকা টক দই চুলে মাখিয়ে দেখুন৷ চুল আর্দ্র আর ঝলমলে তো হবেই, মজবুতও হবে যথেষ্ট৷

এড়িয়ে চলুনঃ-

চড়া রোদ

রোদের হাত থেকে ত্বক বাঁচানোর জন্য তো সানস্ক্রিন লাগান। চুলের জন্য কিছু ভেবেছেন কি? রোদে বেরোনোর সময় স্কার্ফ বা ওড়না দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন। হেয়ার সিরাম লাগালে বাড়তি সুরক্ষা পাবেন। দূষণ ও অতিরিক্ত ধুলোময়লার কারণেও চুল রুক্ষ আর শুকনো হয়ে যায়, তাই নিয়মিত শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার ব্যবহার করাও খুব দরকার।

কড়া শ্যাম্পু

ডিটারজেন্টের পরিমাণ বেশি এমন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুলে খুব তাড়াতাড়ি চুল রুক্ষ হয়ে পড়ে৷ এ ধরনের শ্যাম্পু এড়িয়ে চলুন৷ বদলে নরম, ভেষজ শ্যাম্পু ব্যবহার করুন৷ শ্যাম্পু আপনার চুলের গঠনের সঙ্গে মানানসই কিনা সেটাও দেখা দরকার৷ শ্যাম্পু করার পর যদি চুল রুক্ষ লাগে, বুঝবেন আপনার চুলের পক্ষে ওই বিশেষ শ্যাম্পুটি ঠিক নয়৷

অতিরিক্ত স্টাইলিং টুলের ব্যবহার
নিয়মিত গরম হেয়ার ড্রায়ার, আয়রন, কার্লার ব্যবহার করলে চুলের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয়ে যায়৷ চুল দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে এবং তার প্রথম চিহ্ন ডগা ফেটে যাওয়া৷ যতটা সম্ভব এই সব স্টাইলিং টুল এড়িয়ে চলুন৷

কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট

চুলের রং বারবার বদলালে বা কেমিক্যাল দিয়ে চুল সেট করালেও চুল শুষ্ক হয়ে যায়। এড়িয়ে চলুন যতটা সম্ভব।

ব্যবহার করুনঃ-

কন্ডিশনার
প্রতিবার শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার লাগাতে ভুলবেন না। কন্ডিশনার লাগানোর সময় চুলের নিচের দিক থেকে লাগাতে শুরু করবেন ও তারপর উপরের অংশে লাগাবেন। শ্যাম্পু আপনার চুলের আর্দ্রতা আর স্বাভাবিক তেলাভাব নষ্ট করে দেয়। কন্ডিশনার হারানো আর্দ্রতা ফিরিয়ে এনে চুল কোমল রাখে, ডগা ফাটতেও দেয় না। চুল বেশি শুষ্ক হলে লিভ-ইন কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন৷

চুলের মাস্ক
যাঁদের চুল অতিরিক্ত শুষ্ক আর বিবর্ণ, তাঁরা জৌলুস ফেরাতে ব্যবহার করুন হেয়ার মাস্ক৷ সপ্তাহে অন্তত দু’দিন শ্যাম্পু করার পর ভেজা চুলে ভালো করে মাস্ক লাগিয়ে আধ ঘন্টা রেখে দিন৷ ডিম, দুধ, অ্যাভোকাডো, তেলের মতো উপাদান দিয়ে বাড়িতেও তৈরি করে নিতে পারেন মাস্ক৷ চুলের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে জুড়ি নেই হেয়ার মাস্কের৷

তেল
চুল চটচটে হয়ে যাওয়ার ভয়ে আজকাল অনেকেই পারতপক্ষে তেল লাগাতে চান না। কিন্তু সত্যিটা হল, তেল চুলের উপর একটি সুরক্ষার আস্তর তৈরি করে চুল নরম আর কোমল রাখে৷ নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, আর্গান অয়েল বা আমন্ড অয়েল চুলে বাড়তি পুষ্টিও জোগায়৷ সপ্তাহে অন্তত একদিন সারা চুলে আর মাথার ত্বকে ভালো করে তেল মেখে সারা রাত রেখে দিন৷ পরের দিন সকালে শ্যাম্পু করে নিলেই চুল ঝলমলে হয়ে উঠবে, কাছে ঘেঁষতে পারবে না রুক্ষতাও৷

হেয়ার সিরাম

শ্যাম্পু আর কন্ডিশনিংয়ের পর ভেজা চুলে হেয়ার সিরাম ব্যবহার করুন৷ হেয়ার সিরাম লাগানো থাকলে চুল দিনভর আর্দ্রতার জোগান পায়, রুক্ষতাও কমে যায় অনেকটাই৷

Advertisements