চলতি বছরেই দেড় লাখের বেশি শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্যপদে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ৪৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার সব আয়োজন শেষ হয়েছে। এখন নতুন করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের (স্কুল ও কলেজ) জন্য এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে ৭০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার লক্ষ্যে নিবন্ধন পরীক্ষার আয়োজন করা হচ্ছে। আাগামী এক মাসের মধ্যেই শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
অপরদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চলমান ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগ শেষে চলতি বছরেই আরো ৩০ হাজার শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনলাইনে বদলির (পাইলটিং) কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেন এ কথা জানিয়েছেন।
এদিকে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের স্কুল ও কলেজের শূন্যপদের শিক্ষকদের তালিকা সংগ্রহ করছে এনটিআরসিএ। এই তালিকা সংগ্রহ শেষ হলেই শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে সংস্থাটি। সূত্র জানায়, আগামী অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) প্রায় ৭০ হাজার শূন্য পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে যাচ্ছে। এর আগে দেশের বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় একসঙ্গে এত বেশি শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি।
এনটিআরসিএ সূত্র বলছে, শূন্য পদগুলোর অনুমোদন ও গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনুমতি চেয়ে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এবার আবেদন ফিও কমিয়ে আনা হচ্ছে। অনলাইন আবেদন পদ্ধতি সহজ করাসহ নানান সুবিধা পাবেন নতুন আবেদনকারীরা।
সর্বশেষ গত বছরের ৩০ মার্চ এনটিআরসিএ ৫৪ হাজার ৩০৪টি শূন্য পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। সে অনুযায়ী এবার সর্বোচ্চ বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে যাচ্ছে এনটিআরসিএ।
এনটিআরসিএ’র নিয়োগ শাখা থেকে জানা গেছে, এ বছরের শুরুতে বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় কত জনবল প্রয়োজন, তা জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। শূন্য পদের সংখ্যা কত, তা এবারই প্রথম অনলাইনে পূরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা সেই তালিকা পূরণ করার পর তা যাচাই-বাছাই করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও পরে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অনুমোদন দেন। সেটিও এবার অনলাইনে করা হয়েছে।
নিয়োগ শাখার কর্মকর্তারা জানান, প্রতিটি জেলার শূন্য পদের চাহিদা আসার পর তা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। সে অনুযায়ী এবার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ৭০ হাজার শূন্য পদ রয়েছে। এসব পদের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হলে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহের যেকোনো দিন চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
সূত্র আরো জানায়, চাকরি প্রার্থীদের খরচ কমাতে এবারই প্রথম অনলাইনে প্রার্থীরা পছন্দের ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচন করার সুযোগ পাচ্ছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে সুযোগ না পেলে অন্য প্রতিষ্ঠানেও চাকরির সুযোগ রাখা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই এসব নিয়ম কার্যকর করা যাবে।
এদিকে এ বছরই প্রথম প্রাথমিকে সর্বোচ্চসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। এতে তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১ জেলা থেকে পরীক্ষার জন্য আবেদন করেন ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ জন প্রার্থী। সে হিসাবে ১টি পদের বিপরীতে প্রতিযোগিতা করতে হয় ২৯ প্রার্থীকে। তিন ধাপে আয়োজন করা হয় নিয়োগ পরীক্ষার।
প্রথম ধাপে দেশের ২২টি জেলায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২২ এপ্রিল। যার ফল প্রকাশিত হয়েছে গত ১২ মে। পরীক্ষার ২০ দিনের মাথায় প্রকাশিত ফলাফলে ৪০ হাজার ৮৬২ জন প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়। এরপর গত ২০ মে ২৯টি জেলায় লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১০০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। সর্বশেষ গত ৩ জুন ৩২ জেলায় লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৫৯৮ জন পরীক্ষার্থী।