পুলিশ - ঘর থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে রড দিয়ে পিটিয়েছে পুলিশ: গ্রেফতার ২ - সত্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ
Advertisements

ওয়ালেক্স টাইলস কারখানা কর্তৃপক্ষ একিন আলীর জমি জবরদখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে বছরখানেক আগে থেকে। ব্যর্থ হয়ে সর্বশেষ পুলিশকে সাথে নিয়ে জবরদখল চেষ্টার সময় একজন কনস্টেবল আহত হয়। এরপর পার্শ্ববর্তী এক বাড়ি থেকে পড়ার টেবিল থেকে তুলে এনে বেধড়ক পিটিয়েছে পুলিশ। হামলার ঘটনা পুলিশ মৌখিক ভাবে স্বীকার করলেও মামলার এজাহারে হামলার ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। সেইসাথে জমির মালিকসহ দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পরই বিরোধপূর্ণ জমিটি বালু ভরাটের মাধ্যমে দখল করছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) জুমার নামাজের পর শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর উত্তরপাড়া গ্রামে এসব ঘটনা ঘটে। ওই রাতে শ্রীপুরের মাওনা অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (এসআই) আবু জাফর মোল্লা বাদী হয়ে ৬ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন।

এছাড়াও নির্মাণাধীন ওয়লেক্স টাইলস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুর রহমান খান বাদী হয়ে শুক্রবার রাতেই ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চাঁদাবাজী মামলা করেন।

এখন পর্যন্ত এসব মামলায় অভিযুক্ত গাজীপুর উত্তরপাড়া গ্রামের মহর আলীর ছেলে একিন আলী (৫৫) ও তার স্ত্রী রোকেয়া আক্তারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হওয়া একিন আলীকে পুলিশ হেফাজতে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এঘটনায় আহত হয়েছেন পুলিশের কন্সটেবল সোহেল।

ভুক্তভোগী পরিবার ও অনুসন্ধানসূত্রে জানাযায়, ঘটনার আগের রাতে মাওনা অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরাসহ ওয়ালেক্স টাইলস কারখানা কর্তৃপক্ষ একিন আলীর টিমেক্স জুট মিল সংলগ্ন এক বিঘা জমি বিক্রি করতে চাপ দেয় এবং একিন আলীর পক্ষের লোকজন নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে জমি বিক্রি করার পরামর্শ দিয়ে যান। একিন আলী এ বছর জমিটি বিক্রি করতে রাজি হননি। দামেও মিলেনি কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। এরপরদিন শুক্রবারে ওই জমিতে সেচের জন্য পানি দিচ্ছিল একিন আলীর ছেলে রমজান আলী। তাৎক্ষণিক জমি জবরদখল নিতে বালু দিয়ে জমি ভরাট করতে আসে কারখানা কর্তৃপক্ষ। তখন কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা রমজান ও একিন আলীকে পানি সেচে নিষেধ করেন। নিষেধ না মানলে রমজানকে লাঠি দিয়ে পিটুনি দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষের লোকজন। এরপর একিন আলীকেও মারধর করতে থাকে। ওই সময় পিতাকে বাঁচাতে লাঠি হাতে থাকা একজন ভাড়াটে সন্ত্রাসীকে দা দিয়ে কোপ দেয় রমজান। পরে জানাজানি হয় ওই ভাড়াটে সন্ত্রাসী ছিল মাওনা অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের কনস্টেবল সোহেল রানা। না জেনে পুলিশ সদস্যকে কোপ দিয়েছে বুঝতে পেরে রমজান সটকে পড়ে। এরপর পুলিশ এবং ভাড়াটে সন্ত্রাসী কর্তৃক একিন আলীর উপর চলে নির্মম নির্যাতন! সেই নির্যাতনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে একিন আলী।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, পুলিশ কর্তৃক
মারধরের একপর্যায়ে রমজান ও একিন আলীর শরীরে গুরুতর জখম হয়। পরে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ হলে পুলিশ কন্সষ্টেবল সোহেল রানার মুখে দায়ের কোপ লাগলে সে আহত হয়। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকেই আহতবস্থায় একিন আলী ও তার স্ত্রীকে রোকেয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদিকে শুক্রবার রাতেই বিরোধপূর্ণ জমিতে নামফলক স্থাপন করে বালু দিয়ে জমি ভরাটের মাধ্যমে দখলযগ্য শুরু করে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

সংঘর্ষের পর পুলিশ সদস্যরা আশপাশের বসত বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে।

গাজীপুর গ্রামের রুকসানা আক্তার বলেন, আমার বাড়ীর পাশেই কারখানা কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও একিন আলীর সাথে সংঘর্ষ হয়। এসময় আমার পরিবারের সবাই ঘরেই ছিল। পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার পর আশপাশের বাড়ী ঘরে এসে পুলিশ হামলা চালায়। তার বাড়ীর টিনের বেড়া ভাংচুর শুরু করে। এসময় আমার ছেলে রাকিবকে পুলিশ ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে তাকে রড দিয়ে পেটায়। পরে শনিবার শুনি আমার কিশোর ছেলে রাকিব ও রফিকুল ইসলামকে কারখানা কর্তৃপক্ষ চাঁদাবাজীর মামলায় আসামী করেছে। তিনি আরো বলেন, বৃহস্পতিবার আমার ছেলে রাকিব স্কুল থেকে টিকা নিয়ে জ্বর আসায় বাড়ীতে বিশ্রামে ছিল।

এ বিষয়ে শ্রীপুর পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবু জাফর মোল্লা বলেন, ভ্রাম্যমান ডিউটির মধ্যেই তারা সংবাদ পান দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এখানে বেশ কিছু লোক জড়ো হয়েছেন। পরে তারা ঘটনাস্থলে যান। এসময় কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই একিন আলী পুলিশের উপর হামলা করলে একজন কন্সষ্টেবল আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে পুলিশ জমি দখলের সাথে জড়িত নয়। তবে পুলিশের এজাহারে কেন পুলিশ সদস্যের আহত হওয়ার ঘটনার উল্লেখ নেই সে বিষয়ে তিনি কোন জবাব দেননি।

এ বিষয়ে স্থানীয় ওয়ালেক্স কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুর রহমানকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষের সংবাদে পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হলে পুলিশের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় একজন সদস্য আহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে ও কারখানা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে থানায় দুটি মামলা রুজু হয়েছে।

Advertisements