আগ্রাসী ইহুদিবাদী ইসরাইল যখন গাজা উপত্যকায় হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনিদের হত্যা অব্যাহত রেখেছে তখন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যকরন গাজার অবকাঠামো ধ্বংস এবং বেসামরিক নাগরিকদের উপর নির্বিচারে হামলার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন।
কথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর লড়াই মানে গাজার ধ্বংস এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে হামলা নয়- সেদিকে ইঙ্গিত করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীকে এ ধরনের হামলা বন্ধ করতে বলেন। কারণ কোনো হামলা সমানুপাতিক হতে পারে না যার মাধ্যমে ওই এলাকার প্রত্যেকের জীবন নষ্ট হয়। ম্যকরন বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং গাজায় একটি মানবিক যুদ্ধবিরতিরও আহ্বান জানিয়েছেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের এসব বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন তিনি এবং তার অন্যান্য ইউরোপীয় মিত্ররা গাজার বাসিন্দাদের উপর ইহুদিবাদী ইসরাইলের হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এটিকে তেল আবিব সরকারের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই বলে মনে করে এবং গাজার অধিবাসীদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছে।
গাজা যুদ্ধের শুরু থেকেই ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইউরোপের অন্যান্য কিছু দেশ ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞ অব্যাহত রাখতে এবং ফিলিস্তিনিদের হত্যার প্রতি আর্থিক সাহায্য ও অস্ত্র দিয়ে সমর্থন করেছে।
ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনিদের হত্যাকে ইসরাইলের আত্মরক্ষা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই বলে অভিহিত করেছে এবং এমনকি ফিলিস্তিনিদের হত্যা, হাসপাতাল, চিকিৎসা কেন্দ্র এবং ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক কেন্দ্রে হামলার নিন্দা জানিয়ে তাদের নিজ দেশে যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে তার বিরোধিতা করেছে। যাইহোক, ফিলিস্তিনিদের হত্যার তীব্রতা এবং গাজায় ইসরাইলের সর্বাত্মক হামলার কারণে ইউরোপীয় কর্মকর্তারা জনমতের চাপে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর নেতাদের সমালোচনা করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে গাজার অবকাঠামো ধ্বসংস এবং বেসামরিক লোকদের ওপর গণহত্যা চালানোর বিষয়ে ম্যাকরন এখন ইসরাইলের সমালোচনা করলেও ফ্রান্স সরকার এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা তেল আবিবের অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো গাজার চলমান পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করে বলেছেন, গাজায় ২০ হাজার মানুষের মৃত্যুকে উপেক্ষা করা যাবে না কারণ ইসরাইল এটি ঘটিয়েছে। আমি ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দকে জোর দিয়ে বলছি যে ফিলিস্তিন ইস্যুতে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেয়ার ব্যাপারে আমাদের অক্ষমতার কারণে ইউনিয়ন বিশ্বব্যাপী তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।
গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তথ্য অফিস তার সর্বশেষ প্রতিবেদনে ঘোষণা করেছে যে গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধের শুরু থেকে গাজায় শহীদের সংখ্যা ২০ হাজার ছুঁয়েছে। এদের মধ্যে ৪ হাজার শিশু এবং ৬,২০০ জন নারী রয়েছেন৷ এছাড়া এই কার্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৫২ হাজার ৬০০ মানুষ আহত হয়েছেন।
গাজায় মানবিক পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটার কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে ইউরোপীয় দেশগুলোকে গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞ ও হামলা বন্ধ করার চেষ্টা করতে এবং এই উপত্যকায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞ বন্ধ করার জন্য ইউরোপের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় নি।