মহামারি করোনা সংক্রমণের মাঝে বাংলাদেশে দক্ষিণাঞ্চলীয় নদীবাহিত এলাকায় ব্যাপকহারে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ার প্রকোপ।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডঃ বাসুদেব কুমার দাস সংবাদমাধ্যমকে জানান, এ সময় দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলিতে সাধারণত: ডায়রিয়া দেখা দেয় । এবার একটু বেশি হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।
তিনি জানান, গত পহেলা জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ৩৬,৪৬৮ এর মধ্য মারা গেছেন ১০ জন। তিনি জানান ভোলা জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশী। তার পরে পটুয়াখালী এবং বরগুনা। তবে গতকাল থেকে আজ সংক্রমণের সংখ্যা কম দেখা গেছে।
উপকূলের নদ-নদীতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও উন্মুক্ত জলাশয় বা নদী থেকে জীবাণুযুক্ত পানি ব্যবহারে ডায়রিয়ার ছড়িয়ে পড়ছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ ধারনা করছে। গ্রাম-গঞ্জসহ সর্বত্র মানুষকে ডায়রিয়ার বিষয়ে সচেতন করতে স্বাস্থ্য বিভাগ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ-নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একটি প্রতিনিধিদল বরগুনায় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। মার্চ মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় মাসব্যাপী আইইডিসিআরের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলটি বরগুনায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা করেন।
দলটির নেতৃত্ব দানকারী রোগতত্ত্ববিদ জাহিদুর রহমান এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানান, প্রতিবছরই এই মৌসুমে বিভাগে কমবেশি ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। কিন্তু এবার আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি।
কারণ অনুসন্ধানের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ, আক্রান্ত ব্যক্তি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছেন । একই সঙ্গে মানুষের খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনের নানা বিষয় সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ধারনা করা হচ্ছে, এ অঞ্চলের মানুষেরা দৈনন্দিন কাজে খালের পানি ব্যবহার করা। বিশেষ করে খালের পানিতে ভিজিয়ে রাখা পান্তা ভাত সকালে খাওয়ার অভ্যাস থেকে এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন গবেষকদল।
বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, আইইডিসিআরের অপর একটি প্রতিনিধিদল ১ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের তালিকা ধরে সমীক্ষা চালায়। এতে ৯৪ শতাংশ লোক গভীর নলকূপের পানি পান করলেও ৭১ শতাংশ মানুষ দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজে খালের পানি ব্যবহার করে।
প্রতিষ্ঠানটি বরগুনার খালের পানির নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের ল্যাবে পরীক্ষা করে খালের পানিতে মলের জীবাণুর উপস্থিতি পেয়েছে। ২০ জন রোগীর মল পরীক্ষায় তিনজনের মলে কলেরা ও ইকোলাই জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।