করোনাকালেও স্বাস্থ্যখাতে ‘দুর্নীতি-অনিয়ম’ পেয়েছে টিআইবি
Advertisements

করোনা মহামারীর সময়ও স্বাস্থ্যখাতে বিদ্যমান দুর্নীতি ও নতুনভাবে সংগঠিত দুর্নীতির উন্মোচন ঘটেছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

আইনের শাসনের ঘাটতি ছাড়াও চিকিৎসা ও সুরক্ষাসামগ্রী ক্রয়, নমুনা পরীক্ষা, চিকিৎসাসেবা, ত্রাণ বিতরণে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ (দ্বিতীয় পর্ব) শীর্ষক গবেষণাপত্র প্রকাশ করে টিআইবি। এতে বলা হয়, করোনাকালে প্রাসঙ্গিক আইন অনুসরণে ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এ সংক্রান্ত দুটি আইনও যথাযথভাবে মানা হয়নি।

এছাড়া করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যখাতে বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পসহ বিভিন্ন জিনিস ক্রয়ে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর) ২০০৮ অনুসরণের ক্ষেত্রেও ঘাটতি লক্ষ করা যায়। পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করে অনলাইন ও টেলিফোন জরিপের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ, ত্রাণ ও সামাজিক নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে এই গবেষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে টিআইবি। গবেষণাপত্রে বলা হয়, একটি দেশে পর্যাপ্ত পরীক্ষা হচ্ছে কি-না তা আক্রান্ত ব্যক্তির শনাক্তের হার দ্বারা বোঝা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী একটি দেশে শনাক্তের হার মোট নমুনা পরীক্ষার ৫ শতাংশ হওয়া উচিত। এর বেশি হলে উক্ত দেশে প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে নির্দেশ করে।

বাংলাদেশে ১৬ জুন থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত গড় শনাক্তের হার ছিল ১৭.৪ শতাংশ, সর্বোচ্চ ৩১.৯ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা সংক্রমণের ‘দ্বিতীয় প্রবাহের’ পূর্বাভাস দিলেও তা মোকাবিলায় কী ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন সে বিষয়ে যথাযথ পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে। করোনা সংক্রমণের সঠিক চিত্র পেতে ও দ্রুততার সাথে আক্রান্ত ব্যক্তি চিহ্নিত করতে গত ৩ জুন কারিগরি পরামর্শ কমিটি আরটি-পিসিআর পরীক্ষার পাশাপাশি অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য সুপারিশ করলেও এখনো তা কার্যকর করা হয়নি। এতে আরো বলা হয়, এখনো বাংলাদেশের জেলা পর্যায়ের চিকিৎসা ব্যবস্থায় সক্ষমতার ঘাটতি লক্ষণীয়। অন্য বিভাগগুলোতে মৃত্যুহার ঢাকা বিভাগের চেয়ে বেশি হলেও চিকিৎসা ব্যবস্থা এখানে জোরদার করা হয়নি। ১৫ জুন-পরবর্তী সময়ে জেলাপর্যায়ের হাসপাতালগুলোর সক্ষমতার ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি হলেও এখনো ব্যাপক ঘাটতি বিদ্যমান।

এখনো জেলাপর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে দক্ষ জনবলের ক্ষেত্রে ৪৮.৬ শতাংশ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে ৫১.৪ শতাংশ এবং নিরাপত্তা সামগ্রীর ঘাটতি ৩৬.২ শতাংশ বিদ্যমান। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ঘাটতি ছিল। এক-চতুর্থাংশ আসন খালি রেখে গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা মানতে দেখা যায়নি। পশুরহাট, গার্মেন্টস, কলকারখানা, শপিংমল খুলে দেয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার শর্ত আরোপ করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা লঙ্ঘিত হতে দেখা যায়।

সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ক্রয় কার্যক্রমের সকল ক্ষেত্রে তথ্য সংরক্ষণ ও তথ্যের উন্মুক্ততা গুরুত্বপূর্ণ হলেও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় চিকিৎসাসামগ্রী ক্রয় প্রকল্পের ক্রয় সংক্রান্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট দফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশে ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তিপত্র প্রকাশ না করা, চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম বা তালিকা প্রকাশ না করা, কার্যাদেশপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও মালিকের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করা, সরবরাহকৃত পণ্য ও সেবার মান যাচাইকরণ দলিল প্রকাশ না করা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সরাসরি সেবা দিতে গিয়ে এ পর্যন্ত সারাদেশে সাত হাজার ২৪৯ জন চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১০০ জন চিকিৎসক ও ১০ জন নার্সের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ৯ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তাদের জন্য ঘোষিত বিশেষ প্রণোদনা বা বিশেষ সম্মানী (দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ এককালীন প্রদান) চার মাস অতিবাহিত হলেও দেয়া হয়নি। জরুরি পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ লঙ্ঘন করে বিভিন্ন প্রকল্পে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি ব্যবহার করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

অনেক ক্ষেত্রে মৌখিক আদেশে ক্রয় করা হয়েছে এবং কোনো ক্রয়ে ই-জিপি ব্যবহার করা হয়নি। কয়েকটি সিন্ডিকেট স্বাস্থ্যখাতের সবধরনের ক্রয় নিয়ন্ত্রণ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে। এসব সিন্ডিকেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, সিএমএসডি, বিভিন্ন হাসপাতালের ঊচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ দুদকের কিছু কর্মকর্তার সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগও পাওয়া যায়।

মাস্ক, গ্লাভস ও পিপিইর মতো জরুরি স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে নামসর্বস্ব যে প্রতিষ্ঠানকে ৩২ কোটি টাকার কাজ দেয়া হয় তা একটি অটোমোবাইল কোম্পানি (গাড়ি ব্যবসায়ী)। একই প্রকল্পের অধীন অপর একটি ক্রয়ে সুরক্ষাসামগ্রী পোশাক ক্রয়ের জন্য ৫০ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা প্রকল্প বাজেট বরাদ্দ করা হয়। প্রতিটি পোশাক বাজার মূল্যের চেয়ে চার-পাঁচগুণ বাড়িয়ে বরাদ্দ রাখা হয়।

কিন্তু প্রস্তাবিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্যে পিপিই ক্রয় করে খরচ হয়েছে মাত্র ১২ কোটি টাকা। সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকি বিবেচনায় চতুর্থ ধাপের পিপিই ক্রয়ের নির্দেশনা থাকলেও প্রকল্প পরিচালকের একক সিদ্ধান্তে চিকিৎসকদের জন্য প্রথম ধাপের এক লাখের বেশি পিপিই ক্রয়ের অভিযোগ রয়েছে।

এসব সুরক্ষাসামগ্রীর মান নিশ্চিত নয় বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের গুদামে মাল ওঠাতে দেয়নি। পরবর্তীতে প্রকল্পের পরিচালক ঢাকা বাদে ৬৩ জেলায় এক হাজার করে এই পিপিই পাঠিয়ে দিয়েছেন। পিপিইর মান যাচাইয়ের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হলেও কমিটির আহ্বায়ক ও কমিটির সদস্যদেরকে কেনাকাটার বিষয়ে অবহিত ক

Advertisements