চাকরি
Advertisements

১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পিতার দেওয়া ভাষণের একটি অংশ উদ্ধৃত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “তিনি বলেছিলেন- ‘আপনি চাকরি করেন আপনার মাইনে দেয় গরীব কৃষক, আপনার মাইনে দেয় ওই গরীব শ্রমিক, আপনার সংসার চলে ওই টাকায়, আমি গাড়ি চড়ি ওই টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন। ইজ্জত করে কথা বলুন। ওরাই মালিক’।”

“অর্থাৎ কোন মানুষকে অবহেলার চোখে দেখবেন না বা তাদেরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন না। মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান দিতে হবে।”

বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১১৬, ১১৭ এবং ১১৮তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, কিশোর গ্যাং তৈরি, মাদক, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির মতো কিছু সমস্যার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। কারও পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে বরং অপরাধীদের অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।’

সরকারি কর্মচারীদের জীবনমান উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশটাকে উন্নত করতে হলে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মতো উপযুক্ত কর্মচারী আমরা গড়ে তুলতে চাই, যেন মানুষ তার সেবাটা পায়। সেটাই আপনারা দেবেন। এটাই আপনাদের কাজ।’

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে রিকশাওয়ালাকে আপনি বলে সম্বোধন করে আসছি। কারণ, আমাদের বাবা-মা সেটাই শিখিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, প্রত্যেকেরই অবদান রয়েছে এই সমাজের প্রতি। এ কথাটা মনে রাখতে হবে। তাছাড়া কর্মক্ষেত্রে সবাই যেন ন্যায়বিচার পায়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের সেবা করা।

সরকারপ্রধান বলেন, সমাজে যেসব উপসর্গ মাঝেমধ্যে দেখা দেয়, যেমন: নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, কিশোর গ্যাং সৃষ্টি, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি- এসবের বিরুদ্ধেও আপনাদের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সেখানে কারও মুখ চেয়ে নয়, যারাই অপরাধী, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখবেন, এটাই আমার কথা। অপরাধী যে দলের হোক বা যে কেউ হোন না কেন, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন। একাডেমির রেক্টর বদরুন নেছা কোর্সের ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেন। ৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া ৫ মাসব্যাপী এবারের কোর্স করোনা বিভ্রাটে পড়ে বিলম্বিত হয়। তবে অনলাইন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে এটি সমাপ্ত হয়। ১১৬ জন অংশগ্রহণকারীর সবাই কৃতকার্য হয়েছেন। এদের মধ্যে ৭০ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন মহিলা। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী তিনজন শিক্ষার্থীর হাতে রেক্টরস পদক তুলে দেন।

সনদপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সাফল্য অর্জন করেছেন। কাজেই এই অর্জিত জ্ঞান অবশ্যই আপনারা দেশের কাজে লাগাবেন। কেননা দেশটাকে আমরা উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোর্স সম্পন্ন করে শিক্ষার্থীরা অনন্য নজির স্থাপন করেছেন উল্লে­খ করে তিনি বলেন, আপনারা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছেন একটি অস্বাভাবিক অবস্থায়। এখন আপনারা যেমন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, আপনার সহকর্মী এবং দেশবাসী যেন মেনে চলে, সে ব্যাপারে সচেতন থাকবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস আমাদের জীবন এবং বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। অনেককে আমরা হারিয়েছি। তাই এটা যেন আর বিস্তার লাভ করতে না পারে, সেজন্য যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। কারণ দ্বিতীয় পর্যায়ের যে ঢেউটা আসছে, সেটা কেমন হবে আমরা জানি না। অনেক দেশ পুনরায় লকডাউনে চলে গেছে। আমরা এখনও সহনশীল অবস্থায় আছি। কিন্তু খুব সাবধানে চলতে হবে। ভ্যাকসিনের জন্য আমরা বুকিং দিয়ে রেখেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, লক্ষ্য স্থির থাকলে এগিয়ে যাওয়া সহজ। ২০০৯ সাল থেকে আমরা সরকারে থাকায় আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগের উপরে অর্জনের যে লক্ষ্য নিয়েছিলাম, তা পূরণ করতে সক্ষম হলেও করোনার কারণে পিছিয়ে গিয়েছি। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের প্রবৃদ্ধি যেখানে ঋণাত্মক ধারায় চলে গিয়েছে, সেখানে আমরা ৫ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছি।

করোনা মোকাবেলায় সরকারের দেয়া প্রণোদনা, নগদ অর্থ সাহায্য এবং মানুষের দ্বারে খাবার পৌঁছে দেয়ার চেষ্টার কথা উল্লে­খ করে তিনি বলেন, মানুষের জীবনযাত্রা যাতে সচল থাকে, এজন্য করোনার মধ্যেও আমরা যথাযথ প্রচেষ্টা চালিয়েছি।

দেশকে জানতে হলে, দেশের উন্নতি করতে হলে নবীন কর্মকর্তাদের জাতির পিতা রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের জাতির পিতাকে নিয়ে করা প্রতিবেদন থেকে প্রকাশিত বইগুলো এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রসিডিংস নিয়ে প্রকাশিত বইটি পড়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে এবং আজ আপনারা যারা প্রশিক্ষণ নিয়ে যাচ্ছেন আপনারাই কিন্তু তখন একটা উচ্চপর্যায়ে যাবেন। ’৪১ এর কর্ণধার আপনারাই হবেন, বাস্তবায়ন আপনারাই করবেন। কাজেই সেভাবেই নিজেদের গড়ে তুলবেন।

সরকার দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন প্রযুক্তিনির্ভর দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায় উল্লে­খ করে সরকারপ্রধান বলেন, দেশকে আমরা এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই যাতে মানুষ নিরাপদে থাকতে পারে, উন্নত জীবন পেতে পারে। আমরা যেন বিশ্বে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলতে পারি। এজন্যই তথ্যপ্রযুক্তির নেটওয়ার্ক যেমন গড়ে তুলেছি; তেমনি রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ নির্মাণ করে সড়কপথসহ জলপথ, রেলপথ এবং আকাশপথের উন্নতি সাধন করে দেশব্যাপী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছি।

‘ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না’- জাতির পিতার এই বক্তব্য উদ্ধৃত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি কারও কাছে হাতপেতে নয়, নিজেরা যেন চলতে পারি। এমনকি এই করোনার মধ্যে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি জনগণের খাদ্য পুষ্টির চাহিদা পূরণেও প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জমি সীমিত হলেও গবেষণার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে আজ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। এটা অব্যাহত রাখতে হবে।

Advertisements