কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফীর পতনের পরে “পশ্চিমের গনতন্ত্র” নামক ইনভিজিবল সাদা হাতির সন্ধান গত ৮ বছরে পায়নি সাধারন লিবিয়রা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে স্বৈরাচার গাদ্দাফীই বরং মডার্ন সো কল্ড ওয়েস্টার্ন ডেমোক্রেসির চেয়ে নিরাপত্তা ও জীবনমান বিচারে উন্নত ছিলো। গাদ্দাফীর ৪২ বছরের রেজিমের কোন বছরই গত ৮ বছরের মত ছিলোনা।কথিত আছে জীবনমান,স্বাস্থ্য,শিক্ষা ও ঐশ্বর্যের বিচারে উত্তর আফ্রিকার এই দেশটি গোটা আফ্রিকা মহাদেশের শীর্ষে ছিলো। আরো ভালো রাখার তাগিদ নিয়ে তাহলে পশ্চিমের গনতন্ত্র কি মুখ থুবড়ে পড়লো লিবিয়ায় এসে! আসলেই তাই। গনতন্ত্র হয়তো দুনিয়ার সব অঞ্চলেই ডিমান্ড করেনা,গনতন্ত্রের মোড়কে বিশ্ব শাসন করার অভিপ্রায় যতটা ডিমান্ড করে।
লিবিয়ায় রুশ প্রভাব কমাতে পঞ্চাশের দশকে ইঙ্গো মার্কিন জোট স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়ার পরে দীর্ঘ চার দশকের বেশি লিবিয়া ছিলো তাদের বলয়ের বাইরের এক পাগলা ঘোড়া। এই পাগলা ঘোড়ার সওয়ারী গাদ্দাফী এটাকে ছুটিয়ে নিয়ে চলেছেন পথ থেকে পথে। তবে সেই বন্ধুর পথে তিনি পশ্চিমের সাথে আঁতাত করেননি, ইসরাইলকেও মেনে নেননি, জাতিসংঘকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আলোচিত হয়েছেন, আন্তর্জাতিক মাফিয়া নেটওয়ার্ক গড়েছেন এসবই ছিলো পশ্চিমের স্বার্থ বিরোধী।
জেনারেল হাফতার
বর্তমানে লিবিয়ার সর্বাধিক আলোচিত আয়রনম্যান খ্যাত ৭৫ বছর বয়সী জেনারেল খলিফা হাফতার এক সময় গাদ্দাফীর সহযোগী ছিলেন। পরবর্তীতে তার উচ্চাভিলাষ আর ভিন্নমতের কারনে লিবিয়া ছেড়ে সপিরবারে থিতু হন মার্কিন মুল্লুকে। এখানে এসে তিনি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর অনুকম্পা পান এবং গাদ্দাফী বিরোধী স্বার্থের সাথে যোগাযোগ রাখেন। তারই ধারাবাহিকতায় গাদ্দাফীর পতনের পর জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ঐক্যমতের সরকারের হাতে ক্ষমতা দেয়া হয়। সেটা ২০১৬ সালের মার্চ মাসের কথা। এর আগে ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিদ্রোহী মিলিশিয়া, উপজাতীয় গ্রুপ, পশ্চিমা দেশগুলোর মদদপুষ্ট ছোট ছোট বাহিনী, গাদ্দাফীপন্থী গ্রুপ, আইএস, আল কায়েদা নানান সশস্ত্রগ্রুপ বিভিন্ন অঞ্চল দখলের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ গোটা দেশব্যাপী চালাচ্ছিলো ভিন্ন ভিন্ন এজেন্ডায়, ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থে। তাদের এই যুদ্ধে (Battle) এত এত গ্রুপ অংশগ্রহন করেছে যে এদের মধ্যে সমন্বয় সাধন প্রায় অসম্ভব। কেউ কাউকে যেমন মানছেনা আবার স্বার্থের টানেই দলছুট বা জোটছুট হয়ে নতুন কারো সাথে যুক্তও হচ্ছে।
তাই ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী সারাজের হাতে ঐক্যমতের সরকারের ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয় একটি স্থিতিশীল(!) লিবিয়া গঠনের উদ্দেশ্যে। ২০১১ সালে গাদ্দাফীকে হত্যা করার পরে লিবিয়া অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছিলেন, পরিবর্তিত লিবিয়া কেমন হবে সেটা নিয়ে আমাদের সঠিক পরিকল্পনা ছিলোনা এবং অস্থিতিশীল পরিবর্তনের দায় পুরোটা তিনি ইংল্যান্ডকে দিয়েছিলেন যদিও লিবিয়ায় সামরিক হামলা শুরু হয়েছিলো ফ্রান্সের নেতৃত্বে। ধারনা করা হয় এই হোমওয়ার্ক বিহীন হামলা মূলত হয়েছিলো ইসরাইলী স্বার্থকে এস্টাবলিশ করতে। ইসরাইল তার শত্রুদেশকে অস্থিতিশীল করে রাখতে চায়। সে বিশ্বাস করে এছাড়া তার পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়। ইসরাইল বিরোধী কঠোর অবস্থান ও মনোভাব নিয়ে কেউ এখনো পর্যন্ত টিকতে পারার ইতিহাস নেই। মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রকে যদি স্বৈরাচারী সাদ্দাম, বাশার,গাদ্দাফীর সাথে তুলনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে এরা শিশুও না। যদিও পশ্চিমা ও তাদের পদলেহী মিডিয়ার কারনে রাজতান্ত্রিক স্বৈরাচার ঢাকা পড়ে আছে। এদের মধ্যে স্বৈরাচার হয়েও যারা ইসরাইল বিরোধী তাদের দিকে তাকালে দেখা যাবে তারা কেমন আছেন আর ইসরাইলের মিত্ররা কেমন আছেন। এটা একটা সাধারন সুত্র। ইসরাইল সাধারনত শত্রু রাষ্ট্রের মধ্যে শক্তিশালী দুটোগ্রুপকে মুখোমুখি রেখে দর কষাকষি করতে পছন্দ করে এবং তার পছন্দনীয় কার্যসিদ্ধির জন্য যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়।
এর আগে ২০১৪ সালে ত্রিপোলীতে নির্বাচনের আয়োজন করা হয় কিন্তু ত্রিপোলীকে নিয়ন্ত্রনে রাখা সশস্ত্র গ্রুপ নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নেয় এবং ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়। নির্বাচনে অংশগ্রহনকারীরা ত্রিপোলী থেকে হাজার কিলোমিটার দুরের বন্দর নগরী তবরুকে গিয়ে নির্বাচন করে প্রতিনিধি নির্বাচিত করেন। কিন্তু ত্রিপোলীর পার্লামেন্ট তাদের স্বীকৃতি না দিলেও তাদের সাথে জাতিসংঘ চেষ্টা করেন চুক্তি করতে এই অর্থে যে জাতিসংঘের প্রচেষ্টাকে তারা সমর্থন করেন। এই নতুন পার্লামেন্ট মেম্বাররা খলিফা হাফতারের নেতৃত্ব চান।
খলিফা হাফতার মূলত মার্কিন গ্রীন সিগনালে ২০১৬ লিবিয়ায় ফিরে আসেন এবং বেনগাজীতে আল কায়েদা ও তার মিলিট্যান্টদের পরাজিত করেন। দ্রুতই তিনি লাইম লাইটে চলে আসেন যার মধ্যে পশ্চিমারা একজন পরীক্ষিত নেতা পেয়ে যান। তবে উচ্চাভিলাষী হাফতার ক্ষমতায় যেতে মার্কিনবলয়ের বাইরেও যোগাযোগ শুরু করেন। তিনি পুতিনের সাথে দেখা করে রাশিয়ার স্বার্থে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। রাশিয়া লিবিয়ায় বিপুল তেল গ্যাস, বিধ্বস্ত লিবিয়ার পুনর্গঠন, ভূমধ্যসাগরে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা,সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি, মধ্যপ্রাচ্যে আরো প্রভাব বাড়ানো এসব কিছু মিলিয়ে হাফতারের পাশে দাড়ায়। তবে এসব কিছুর কারিগর সংযুক্ত আরব আমিরাত। আমিরাতই মূলত রাশিয়াকে এন্ট্রি করে। সংযুক্ত আরব আমিরাত জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নীতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেয় এবং দুনিয়াব্যাপী ইসরাইলের স্বার্থের সহযোগী হিসেবে নিজেকে। উপস্থাপন করে। তারই ধারাবাহিকতায় ভারতে কাশ্মীর নিয়ে সংকট এবং কাশ্মীরি জনগনের উপর অত্যাচার নিপীড়নে ইসরাইল ভারতের সহযোগী হওয়ায় মোদীকে আমিরাতে ডেকে এনে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সেই সাথে কাশ্মীর ইস্যুতে মোদীর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে।
জেনারেল হাফতার লিবিয়ার দক্ষিনাঞ্চলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ তেল খনি দখল করে নিয়ে আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। তিনি লিবিয়া শাসনের স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। কিন্তু জাতিসংঘের একটা শর্ত হাফতারের বাড়া ভাতে ছাই দেয় সেটা হলো, কোন সামরিক অফিসার কখনো লিবিয়ার সরকার প্রধান হতে পারবেনা। এই একটা শর্তই হাফতারকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দেয়। হাফতার সহযোগী হিসেবে রাশিয়াকেই বেছে নেন। এছাড়া প্রতিবেশী মিত্র ইসরাইলের চয়েজ মিশরের আব্দুল ফাত্তাহ সিসি, ইসরাইলের দীর্ঘদিনের চাচাতো ভাই সৌদি আরব, ইসরাইলের আত্মার আত্মীয় আমিরাত হয়ে ওঠেন হাফতারের প্রভু। এই অবস্থায় ইউরোপ এবং আমেরিকা সমর্থন দেয় জাতিসংঘ সমর্থিত (জিএনসি) বা জেনারেল ন্যাশনাল কংগ্রেসকে। মূলত দুটো বড় গ্রুপ এখন লিবিয়া নিয়ন্ত্রন করছে। একটি হাফতারের এলএনএ বা লিবিয়া ন্যাশনাল আর্মি আরেকটি জাতিসংঘ সমর্থিত জিএনসি। জিএনসি নিয়ন্ত্রনে রেখেছে ত্রিপোলি, মিসরাতা,জিনতান,সির্ত । ওদিকে এল এন এ নিয়ন্ত্রণ করছে তবরুক,বেনগাজী,আল শেরেফ, বিন জাওয়াদ,রাসলানুফ।
রাজধানী ত্রিপোলীতে রয়েছে কয়েকটি মিলিশিয়া গ্রুপঃ
১.ত্রিপোলি রেভ্যুলুশনারি,
২. আবু সালিম সেন্ট্রাল সিকিউরিটি ফোর্সেস,
৩.নাওয়াসি ব্যাটালিয়ন,
৪. স্পেশাল ডেটারেন্স ফোর্সেস।
এছাড়া আছে সালাহ আল বুরকি ব্রিগেড। তবে উপরের চারটি মিলে একটি জোট গঠন করেছে যেটার নাম ত্রিপোলি প্রটেকশন ফোর্স। এছাড়া মিসরাতা ৩১০ ব্রিগেড, তারহুনা সেভেন্থ ব্রিগেড এরা সবাই মূলত হাফতার বিরোধী।
হাফতার বাহিনীর সমর্থনে আছে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী মাফিয়া এবং চোরাকারবারিরা। ধারনা করা হয় সম্প্রতি ভাগ্যাহত ২৬ জন বাংলাদেশী হাফতারের মাফিয়াদের হাতেই প্রান হারিয়েছে। কারন সরকারী পুলিশ বাহিনী তাদের বাচানোর চেষ্টা করেছে।
গত বছর নভেম্বর মাসে লিবিয়ার ঐক্যমতের সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী ফয়েজ সারাজ আঙ্কারা সফরে যান। সেখানে তিনি এরদোগানের সাথে দুটি চুক্তি করেন।১.জ্বালানী তেল ও গ্যাস ২.নিরাপত্তা। সাইপ্রাস উপকূলে তুরষ্কের হাউড্রোকার্বন অনুসন্ধানে এমনিতেই গ্রীস চটে আছে তার সঙ্গে লিবিয়ান উপকূলে তুরষ্কের তেল, গ্যাস অনুসন্ধান গ্রীস সহ অন্যান্য বিশেষ করে আমিরাত,মিশর,সৌদি, ইসরাইলের জন্য বিরাট দুঃসংবাদ হয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী সারাজ জেনেভা এবং কুয়ালালামপুরে রাষ্ট্রীয় সফরে যাওয়ার আগে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা চুক্তি যা করেছিলেন তারমধ্যে অন্যতম ইন্টেলিজেন্স, রাডার সিসটেম, মিসাইল এন্ড ড্রোন টেকনোলজিস। যা লিবিয়ান সরকারী বাহিনীর হাতে ছিলোনা। বলতে গেলে লিবিয়ান সরকারী বাহিনী ঠুটো জগন্নাথ যাদের কোন শক্তিশালী সামরিক ইকুয়েপমেন্ট নেই।
তুর্কী সাঁজোয়া যান
তুরষ্ক এসব নিয়ে কৌশলগতভাবে আগ্রহ প্রকাশ করে। তারই ধারাবাহিকতায় তুরষ্ক জাতিসংঘ সমর্থিত সরকারকে সমর্থন ব্যক্ত করে।
এদিকে ফ্রান্স চায় হাফতারকে দিয়ে চাদ, মালি, নাইজারকে নিয়ন্ত্রন বা প্রভাব খাটাতে সেই লক্ষ্যে হাফতারকে সামরিক সরঞ্জাম দিচ্ছে ফ্রান্স। যদিও ফ্রান্স অস্বীকার করছে। রাশিয়া চায় ভূমধ্যসাগরে লিবিয়ার উপকূলে একটি সামরিক ঘাঁটি যেহেতু মিশরের উপকূলে মার্কিন ঘাঁটি আছে। অপরদিকে তুরস্ক ও কাতার চায় আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চল এবং মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুড বা ইসলামী রাজনৈতিক দল ক্ষমতা আসুক, লিবিয়ান উপকূলে তেলগ্যাস অনুসন্ধান, বানিজ্য, চুক্তি রক্ষা, ভূমধ্যসাগরে তুর্কী সামরিক ঘাঁটি সর্বোপরি ভূমধ্যসাগরে কৌশলগত সামরিক প্রভাব প্রতিষ্ঠা ও বিস্তার।
এই সব চতুর্মাত্রিক স্বার্থের দ্বন্দ্বে লিবিয়ায় আঞ্চলিক বিশ্বযুদ্ধ চলছে বলা ই যায়।
এই যুদ্ধে সরাসরি তুরষ্কের অংশগ্রহন যুদ্ধ পরিস্থিতি এমনভাবে পাল্টে গেছে যে আগের কোন পক্ষের পরিকল্পনাই কাটছাট করা ছাড়া উপায় নাই। সম্ভাবনা যখন কমতে থাকে টিকে থাকার প্রয়োজনে পরিকল্পনাও ছোট হয়ে আসে এটাই বাস্তবতা। লিবিয়ায় স্বার্থের দ্বন্দ্বে ইতালী ও ফ্রান্স মুখোমুখি। ইতালী সমর্থন দিচ্ছে জাতিসংঘ সমর্থিত বৈধ সরকারকে সেক্ষেত্রে তুরষ্ক কিছুটা সুবিধা পাচ্ছে। তুরষ্ক প্রমান করেছে তারা দীর্ঘমেয়াদি নয় বরং দ্রুততম সময়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি পাল্টে দিতে সক্ষম। সিরিয়ায় তারা সেটাই করে দেখিয়েছে। একই কাজ তারা লিবিয়াতেও করলো। রাজধানী ত্রিপোলীর পশ্চিমাঞ্চলের আল ওয়াদিয়া বিমানঘাঁটি যেটা ছিলো খলিফা হাফতারের শক্তির অন্যতম উৎস। ওখান থেকে রুশ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে হাফতার সফল যুদ্ধ কার্যক্রম চালাতো, সেটা তুর্কী ড্রোন ও ক্ষেপনাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করে দেয় এবং আল ওয়াদিয়া বিমানঘাঁটি টি দখল করে।এর পরপরই দক্ষিনাঞ্চলে হাফতারের আরো তিনটি ঘাঁটি দখল করে নেয় তুর্কী সাঁজোয়া বাহিনী। ঘাঁটি তিনটি হচ্ছে ১.আল সাওয়ারি, ২.ইয়ারমুক এবং ৩.হামজা।
এই ঘাঁটি তুর্কী বাহিনীর হস্তগত হওয়ায় হাফতার সমর্থিত মিলিশিয়ারা ওই অঞ্চল ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে এবং সরকার সমর্থিত মিলিশিয়ারা প্রবেশ করছে। ছয়মাস আগে তুর্কী বাহিনী যখন লিবিয়ায় প্রবেশ করেনি হাফতার খুব সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলো। হাফতারের মদদদাতা রাষ্ট্রগুলো স্বপ্ন দেখতো নতুন লিবিয়া তারা নিজেদের সুবিধা ও স্বার্থমতো গড়তে পারবেন। তাই জাতিসংঘ হাফতারকে মীমাংসার টেবিলে আলোচনার জন্য ডাকলে প্রভুদের ইশারায় উচ্চাভিলাষী হাফতার সেটা প্রত্যাখ্যান করেন।
বর্তমানে তুর্কী অভিযানের পরে ইইউ এর একাংশ মনে করছে লিবিয়া কার্যত এখন তুরষ্কের হাতে। বৃদ্ধ হাফতার কোনঠাসা হয়ে পড়েছে এবং তাকে সমর্থন করা উপজাতিয় গ্রুপ ও মিলিশিয়ারা নিজেদের রক্ষা করতে পরাজিত জোটে আর থাকতে চাচ্ছেনা। আসাবা শহর থেকে হাফতার বাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে নিয়ন্ত্রন নেয়ায় তুর্কীরা সুবিধাজনক স্থানে আছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া এটাকে রাশিয়ার অবমাননাকর পরাজয় হিসেবে দেখছে। যদিও যুদ্ধটা রাশিয়ার নয়। তবে রাশিয়া যদি সরাসরি এ যুদ্ধে অংশ নেয় তবে যুদ্ধ আবার অন্যদিকে মোড় নেবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
এই ঘটনার পরে রাশিয়া ও তুরষ্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে টেলিফোনে আলাপ হয়। এতে দুই মন্ত্রী আলোচনার টেবিলে বসে অস্ত্রবিরতির ইঙ্গিত দেন। যেহেতু রাশিয়া লিবিয়া ইস্যুতে সরাসরি সংশ্লিষ্ঠতার কথা নাকোচ করে দেয়, তাতে করে মনে হয় রাশিয়া লিবিয়ায় কৌশলগত পজিশন নিলেও সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে না। রাশিয়া জানে লিবিয়া ইস্যুতে কৌশলগত কারনে ন্যাটো জড়িয়ে পড়তে পারে আর সেটা হলে তুরষ্কই বেশি সুবিধা পাবে। কারন তুরষ্ক ন্যাটোর প্রভাবশালী সদস্য দেশ।
হাফতারের হাতে কেবলমাত্র ত্রিপোলির দক্ষিন পূর্বাঞ্চলের একটি ঘাঁটি আছে। এটাও যেকোন সময় তুর্কিরা নিয়ে নিতে পারে। তাই আন্তর্জাতিক মহল ধারনা করছে এ বছরেই হাফতারের পতন হবে।
তুরস্ক বলছে, লিবিয়াকে আমরা দীর্ঘমেয়াদি গৃহযুদ্ধ থেকে রক্ষা করতে পেরেছি। যেখানে গৃহযুদ্ধে কয়েক হাজার নিহত ও আহত এবং চল্লিশ হাজার উদ্বাস্তু হয়েছে। গৃহযুদ্ধের রাশ টেনে না ধরলে এই সংখ্যা বেড়েই চলতো। লিবিয়া দীর্ঘমেয়াদী অনিশ্চয়তার দিকেই কেবল এগুতেই থাকতো যা ভাতৃপ্রতিম রাষ্ট্রের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না।