মহামারি করোনাভাইরাসের টিকা দেয়ায় রক্ত জমাট বেঁধে যায় এমন রিপোর্ট প্রকাশের পর অস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকাদান কর্মসূচি মুলতবি করেছে থাইল্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে, আইসল্যান্ডসহ ইউরোপীয় আরো তিন দেশ। যদিও অভিযোগ নিয়ে কোনো প্রমাণ তাদের হাতে নেই।
এই টিকা দেওয়ায় রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ক্রমবর্ধমান আশঙ্কা থেকেই বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোনো প্রমাণ ছাড়াই দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডও অস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া স্থগিত করেছে।
শুক্রবার থাইপ্রধানমন্ত্রী প্রিয়ুথ চান ওচা নিজে এই টিকা নেওয়ার মধ্য দিয়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করার কথা থাকলেও তা বাতিল করা হয়েছে।
একটি ডোজ নেওয়ার পর রক্ত জমাট বেঁধে ষাট বছর বয়সী এক নারী মারা যাওয়ার পর ডেনমার্ক
অস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। সম্প্রতি মারাত্মক রক্ত জমাটের খবর পেয়ে একই ব্যাচের ডোজ ব্যবহার বন্ধ রেখেছে ইউরোপীয় কয়েকটি দেশ।
এ নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে ইউরোপীয় ঔষধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
ডেনমার্কের পর নরওয়ে ও আইসল্যান্ডও একই পদক্ষেপ নিয়েছে। ইটালি ও রোমানিয়াও ডোজ দেওয়া বন্ধ রেখেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনো টিকা নেওয়ার পরে কিছু লোকের শরীরে দৈবাৎ অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। এটা কেবলই দৈবক্রমে।
কিন্তু ব্যাপক সংখ্যক অসুস্থতার সঙ্গে এই টিকার ডোজ নেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। লাখ লাখ টিকা দেওয়া হয়েছে—এমন অন্যান্য অধিকাংশ দেশের ক্ষেত্রেই এ রকম কোনো ঝুঁকি দেখা যায়নি।
অস্ট্রাজেনেকা টিকার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাভীতি একটি বড় বাধা। যে কারণে এই টিকার চাহিদাও কম।
রোগীভিত্তিক পরীক্ষায় অন্যান্য টিকার চেয়ে ব্রিটিশ-সুইডিস কোম্পানির টিকাটির সার্বিক কার্যকারিতার মাত্রা বেশি না।
কিন্তু উপাত্ত বলছে, অক্সফোর্ড-অস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা নিরাপদ ও কার্যকর। বিশেষ করে মারাত্মক অসুস্থতার ক্ষেত্রে এটি ভালো। বিশ্বের অনেক দেশে এটিই একমাত্র টিকা হিসেবে সহজলভ্য।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তিনটি ইউরোপীয় দেশে ৫০ লাখের বেশি মানুষকে অস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হয়েছে।
বুধবার পর্যন্ত তাদের মধ্যে প্রতিবন্ধকতামূলক রক্তজমাট বাঁধার ঘটনা মাত্র ত্রিশটি।
এটা খুব বড় ধরনের হার না বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ঔষধ সংস্থা। তারা বলছে, টিকা নেওয়ার সুবিধা ঝুঁকির চেয়ে অনেকানেক বেশি।
ইউরোপের একমাত্র ঔষধ সংস্থাটি বলছে, রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনার সঙ্গে এই টিকার কোনো সম্পর্কের আভাস পাওয়া যায়নি।
অস্ট্রাজেনেকার মুখপাত্র গঞ্জালো ভিনা বলেন, কোম্পানির উপাত্তে এ ধরনের নিরাপত্তা ইস্যুর বিষয়টি দেখা যায়নি।
রক্তজমাট বিশেষ করে বড় আকারে হলে মানুষের কোষ বা ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের মতো অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
মারাত্মক রূপ নিলে তা প্রাণঘাতি রূপ নিতে পারে। কিন্তু ছোট আকারে জমাট হলে প্রেসক্রিপশনের ঔষধের মাধ্যমে হাসপাতালে বাইরেই চিকিৎসা সম্ভব।