আমেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন জো বাইডেন। ওয়াশিংটনে মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের ওয়েস্ট ফ্রন্টে স্থানীয় সময় আজ (বুধবার) দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের কাছে শপথবাক্য পাঠ করেন তিনি। একই সঙ্গে সহযোগী বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেওরের কাছে শপথবাক্য পড়েন দেশটির প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
নিজের পরিবারের ১২৭ বছরের পুরোনো বাইবেলের একটি কপি হাতে শপথবাক্য পাঠ করেন বাইডেন। বাইডেনের শপথের পর বক্তব্য দেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।
শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, বিল ক্লিনটন ও জর্জ ডব্লিউ বুশ। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। তবে উপস্থিত ছিলেন না বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এর আগে স্থানীয় সময় বুধবার সকালেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউস ছেড়ে ম্যারিল্যান্ডের সামরিক ঘাঁটি জয়েন্ট বেইজ অ্যান্ড্রুজে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মেলানিয়া। সেখানে দুজনেই বিদায়ী ভাষণ দেন। এরপর হেলিকপ্টার এয়ার ফোর্স ওয়ানে করে তাঁরা ফ্লোরিডার পাম বিচে চলে যান। সেখানে নিজস্ব রিসোর্টে পরবর্তী জীবন শুরু করছেন ট্রাম্প।
বিদায়ী বক্তব্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পও বাইডেন প্রশাসনের সফলতা কামনা করেছেন। ট্রাম্প আগেই জানিয়েছিলেন, তিনি জো বাইডেনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না। তবে হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, বাইডেনকে লেখা একটি চিঠি রেখে গেছেন ট্রাম্প।
বাইডেনের অভিষেক উপলক্ষে ওয়াশিংটন ডিসিসহ প্রতিটি শহরেই এবার নেওয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ওয়াশিংটন ডিসিতে বাইডেনের শপথ উপলক্ষে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় কাজ করেছে ২৫ হাজার সেনাসদস্য। সঙ্গে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও।
এর আগে গত বছরের ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করে জয়ী হন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন। তিনি ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে জয় লাভ করেন। অন্যদিকে ট্রাম্প পান ২৩২টি ইলেকটোরাল ভোট।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের ফল না মেনে তা চ্যালেঞ্জ করায় এবার এই ভোট তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে অঙ্গরাজ্যগুলোতে অনুষ্ঠিত এই ভোটের দিকে চোখ রাখছিলেন সবাই। কারণ নির্বাচনের শুরু থেকেই ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করে আসছিলেন ট্রাম্প। এর জন্য তিনি আদালতেও গিয়েছেন, যদিও ভোট জালিয়াতির সব অভিযোগ খারিজ করে দেয় আদালত।
গত ৬ জানুয়ারি নতুন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জয় অনুমোদনের দিনে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে তাণ্ডব চালান ট্রাম্প সমর্থকেরা। একপর্যায়ে তারা নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন এবং ভবনের ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট পাঁচজনের মৃত্যু হয়। মার্কিন কংগ্রেসে এমন সহিংস হামলার ঘটনায় নিন্দার ঝড় ওঠে বিশ্বজুড়ে। কিন্তু এত কিছুর পরও বিদায় নিতে হলো ট্রাম্পকে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউস ছেড়েছেন তিনি।
পার্সটুডে