কালিগঞ্জের জামাই মেলা
Advertisements

পৌষ সংক্রান্তি বা পৌষ মাসের শেষ দিন উপলক্ষে ১৯১০ সাল বা ১৮ শতক থেকে চলে আসা “মাছের মেলা” গাজীপুর কালিগঞ্জের উপজেলার বিনিরাইল গ্রামের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীন মেলা। শুরুর দিকে মেলার নাম “মাছের মেলা” হলেও পরবর্তীতে এটি “জামাই মেলা” নামে পরিচিতি পায়।

প্রতি বছর মেলা উপলক্ষে গাজীপুরের কয়েকটি উপজেলার মানুষ তাদের মেয়ের জামাতাকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানায়। মেয়েরা তাদের স্বামীদের নিয়ে মেলা উপলক্ষে তাদের পিতা-মাতার বাড়িতে আসেন। জামাইরা মেলা থেকে মাছ ক্রয় করে থাকেন যার ফলে এটি জামাই মেলা নামে পরিচিতি পায়। গাজীপুর ছাড়াও আশেপাশের জেলা থেকেও অনেকে মেলাটিতে আসেন।

বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দিনব্যাপী এমনই চিত্র চোখে পড়ে। মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল দেশের বিভিন্ন জেলা আসা মাছ কেনার জন্য জামাইদের প্রতিযোগিতা। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বড় বড় মাছ নিয়ে ব্যবসায়ীরা মেলায় এসেছেন।

তবে কিছু ব্যবসায়ীকে নিষিদ্ধ পিরানহা বিক্রি করতে দেখা গেছে। উপস্থিত হয়ে দেখা যায় অন্তত ১৩ টি স্পটে বিক্রি হচ্ছে এই নিষিদ্ধ পিরানহা।

বিষয়টি কালীগঞ্জ থানার পুলিশকে অবগত করলে, ফোর্স পাঠিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

নিষিদ্ধ পিরানহা

অন্যদিকে স্থানীয় জামাই-শ্বশুরদের মধ্যেও হয় সেই বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। এ মেলায় মাছের সাথে বস্ত্র, হস্ত ও কুটির শিল্পের নানা পণ্যেরও আমদানি হয়।

মেলায় আসা কয়েকজন ক্রেতা জানান, মেলায় প্রচুর দেশি রুই, কাতল, বোয়াল, আইড়, বাঘাইড়, চিতল, কালবাউশ ও রিটা মাছের সমাগম হয়েছে। এছাড়া কার্পজাতীয় মাছের আমদানি হয়েছে।

এক থেকে বিশ কেজি পর্যন্ত এসব মাছের দাম হাঁকা হচ্ছে ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। সামর্থ্য অনুযায়ী ক্রেতারা এসব মাছ কিনছেন। বড় মাছ কেনার জন্য বিনিরাইলের মাছের মেলাই উত্তম জায়গা।

মেলার মাছ বিক্রেতারা জানান, বিনিরাইলের মাছের মেলায় কেনার চেয়ে দেখতে আসা মানুষের ভিড় বেশি। বিক্রিও একেবারে খারাপ নয়। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক স্থাপন হওয়ায় প্রতি বছর এ মেলায় যোগ দেন তারা। এখানে বেচাকেনাকে মুখ্য মনে করেন না বলেও জানান।

আয়োজক কমিটি জানায়, শুরুতে মেলাটি অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলা একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। বেড়েছে মেলার পরিধিও।

এখানে শুধু মাছ নয়, এ মেলাকে কেন্দ্র করে বস্ত্র, হস্ত, চারু-কারু, প্রসাধনী, ফার্নিচার, খেলনা, তৈজষপত্র, মিষ্টি ও কুটির শিল্পের নানা পণ্যের স্টল বসে। মেলাকে ঘিরে বিনিরাইলের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। মেলা উপলক্ষে মেয়ে-জামাইকে দাওয়াত করে আনা এই এলাকার মানুষের রীতিতে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান ফারুক মাস্টার জানান, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু হওয়া বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা গাজীপুর জেলার সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মিজানুল হক বলেন, মেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। তাদের পাশাপাশি কাজ করছে স্থানীয়রাও।

তিনি আরো বলেন, মাছের মেলা এ অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। মেলায় বেচাকেনা যতই হোক, এ মেলা ঐতিহ্য আর কৃষ্টি-কালচারকে বহন করছে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।

Advertisements